আমি একজন অরাজনীতিবিদ
বিশেষ দিনগুলোয় আমার কোনো কিছুই ঠিকমতো হয় না। আজও হয়নি। ঘুম থেকে উঠতেই কত ভেজাল। ঘড়িতে সাড়ে সাতটা বাজে। রীতিমতো ভোর।
এত সকালে উঠে কী হবে, ভেবে আবার ঘুমালাম। অনেকক্ষণ পর উঠে দেখি, সেই সাড়ে সাতটাই বাজছে। ঘড়ি নষ্ট হওয়ার আর সময় পেল না। তাড়াতাড়ি মোবাইলে সময় দেখে মাথা ঘুরে গেল। সোয়া নয়টা বেজে গেছে।
তিথি আসবে ১১টায়। অতি দ্রুত বের হতে গিয়ে আবারও ভেজাল। ডান পায়ের স্যান্ডেলটা ঠিকই আছে, বাম পায়েরটা কিছুতেই খুঁজে পেলাম না। স্যান্ডেল বাদ। জুতা পরব ভেবে জুতা পায়ে দিতেই বাম পায়ের স্যান্ডেলটা খুঁজে পেলাম।
সামনেই ছিল, খেয়ালই করিনি। শেষে স্যান্ডেল পরেই বেরোলাম। ‘কোথাও তাড়াতাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন হলে কখনোই রিকশা পাবে না’, নিউটনের চতুর্থ সূত্র। সূত্রের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে একটা রিকশা পেয়ে গেলাম। তখনই মনে পড়ল পঞ্চম সূত্রটি।
রিকশা পেলেও তাতে অবশ্যই কোনো না কোনো সমস্যা থাকবে। রিকশাওয়ালা বাসার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের চেয়েও ধীরগতির। তার ওপর একটু পরপর পেছনে তাকিয়ে হাসিমুখে বলে, চেন পড়ছে! কী আনন্দের কথা। চেন পড়ছে! ইচ্ছে করছিল কশে একটা চড় দিয়ে ব্যাটার দাঁত ফেলে দিয়ে বলি, দাঁত পড়ছে! আজকে একটা শুভদিন, তাই কিছু বললাম না। এগারোটা চব্বিশে এসে শুনি তিথি এখনো বাসায়।
আমি নিশ্চিত তার মেকআপ শেষ হয়নি। এ যুগের মেয়েরা পাশের ফ্ল্যাটে গেলেও চোখে মাশকারা দেয়। কিডন্যাপার এসে যদি বলে, ‘চিৎকার করবেন না, আমরা আপনাকে কিডন্যাপ করতে এসেছি। ’ ওরা বলবে, ‘একটু ওয়েট করুন, আমি রেডি হয়ে আসছি। ’ বিরক্তিকর! মেজাজ ঠান্ডা করতে চা খাওয়া দরকার।
মেজাজ গরম, চা-ও গরম, বিষে বিষক্ষয়। তবে আজকাল দোকানে চা খেতে গেলেও মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। হলোও তা-ই। চিকন কাপে অল্প একটু চা। দেখে মনে হয় কোনো শক্তিশালী পালোয়ান চাপ দিয়ে কাপটা চিকন করে ফেলেছে।
সেই কাপের চা-ও ভালো না, চিনি হয়নি। দোকনদারকে বললাম,
‘চায়ে চিনি হয় নাই। ’
‘কী কন? কতগুলা চিনি দিলাম। আরও দিলে চা তো গরম শরবত হইয়া যাইব। ’
তাতে আপনার কোনো সমস্যা আছে? আপনি চিনি দেন, গরম শরবতই খাব।
এমন সময় তিথি এল। আমি হাসিমুখে এগিয়ে বললাম, ‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে’ (খাঁটি মিথ্যে কথা)। তিথি তো মহাখুশি। বললাম, ‘তুমি দেরি করেছ, আমি কিন্তু বেশিক্ষণ থাকব না। অফিসে যেতে হবে।
’
‘ভ্যালেন্টাইন ডে-তে অফিস না করলে কী হয়?’
‘অফিসে তো আমি একা প্রেম করি না, অন্যদেরও একটু সুযোগ দেওয়া দরকার। তাই না?’
মুচকি হাসল তিথি। আমরা হাত ধরে হাঁটা শুরু করলাম। মনে হচ্ছে দেশের সব প্রেমিক-প্রেমিকা এখানে চলে এসেছে। এর সুযোগ নিচ্ছে হকাররা।
চুড়ি, মুড়ি, ফুল, বসার টুল, কানের দুল, পাখা, ব্যাগসহ নানা ধরনের জিনিস নিয়ে রাস্তায় বসে পড়েছে। একপাশে প্রেমিক-প্রেমিকারা কাঠের ব্লকের সাহায্যে হাতে-মুখে রঙের ছাপ দিয়ে আঁকছে হার্ট সাইন। তিথি জোর করে সেখানে নিয়ে গেল আমাকে।
‘তোমার হাতটা দাও, একটা হার্ট সাইনের ছাপ বসাবে। মাঝখানে “টি” লেখা থাকবে।
’
‘থাক না, লোকে কী বলবে?’
‘লোকের কথায় কী হয়? আমার সঙ্গে ভয় পাও নাকি?’
‘ভয় পাব কেন?’
‘তাহলে হাত দাও। ’
আমি হাত দিলাম। মোঁচওয়ালা এক লোক কাঠের ব্লকে চাপ দিয়ে হাতে হার্ট সাইনের ছাপ বসিয়ে দিল। হার্টের ভেতর দিয়ে একটা বাঁকা তীর চলে গেছে, তার ওপর লেখা ‘টি’। তিথির হাতেও একই ছাপ, শুধু ‘টি’র বদলে ‘ই’ লেখা।
হাতের ওপর হার্ট নিয়ে বাদাম খাচ্ছি। এমন সময় ফোন বেজে উঠল। কিন্তু এখন তো নীতুর ফোন করার কথা না, ওকে চারটা থেকে টাইম দিয়েছি। ঘটনা কী? ফোন ধরতেই নীতু কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘তুমি এখনই টিএসসিতে আসো। বিরাট বিপদে পড়েছি।
’
‘কী হয়েছে?’
‘প্লিজ, তুমি তাড়াতাড়ি আসো। ’
আবারও ভেজাল! তিথিকে বললাম, ‘অফিসের সমস্যা। ক্লায়েন্ট এসে ঝামেলা করছে। এখনই যেতে হবে। ’
‘এটা কোনো কথা হলো? অফিসের ঝামেলা বড় ঝামেলা।
ঠিক আছে, যাও। ’
‘রাগ করো না। ঝামেলা শেষ করেই চলে আসব। ওকে? বাই। ’
কার্জন হল থেকে রিকশা নিয়ে দ্রুত টিএসসিতে এলাম।
নীতু ওর গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এ গাড়িটাই আমার কাছে ওর গুরুত্ব বাড়িয়েছে। বললাম, ‘কী হয়েছে?’
‘কিছু না। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল। তাই ঢং করলাম।
রাগ করেছ?’
‘আরে নাহ্। কী যে বলো। ’
‘তুমি সব সময় এসেই আমার হাত ধরো, আজ ধরলে না কেন?’
এ কথা শুনেই আমার হার্টবিট শেয়ারবাজারের মতো ওঠানামা করতে লাগল। সর্বনাশ! এখন কী হবে? কোনোমতে বললাম,
‘ইয়ে মানে বিপদের কথা শুনে তাড়াতাড়ি এসেছি তো, টেনশনে...’
‘এখন ধরো। আজ আমরা হাত ধরে অনেকক্ষণ হাঁটব।
নো গাড়ি। ’
‘অবশ্যই। ’
‘কী হলো? হাত পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছ কেন? নাও, ধরো। ’
‘থাক না...’
আমি কিছু করার আগেই নীতু আমার হাত ধরে টান দিল। হাতের ওপর সুন্দর হার্ট সাইন দেখে আঁতকে উঠল ও।
‘এটা কী? “টি” লেখা কেন? “টি”র মানে কী?’
‘কিছু না, কিছু না। “টি” মানে চা। আমি চা খুব ভালোবাসি তো...’
এমন সময় গাড়িটার একটু সামনে একটা রিকশা থামল। রিকশা থেকে তিথি বলল, ‘ইমন, তুমি না অফিসে যাবে? এই তোমার অফিস, এই তোমার ক্লায়েন্ট?’
আমার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজই বেরোল না। ধরে থাকা হাতটা ছেড়ে দিয়ে নীতু গাড়িতে উঠে চলে গেল।
মামা, যান তো—বলে তিথিও রিকশায় করে চলে গেল। দুজনেই যা বোঝার বুঝে নিয়েছে, শুধু আমিই কিছু বুঝতে পারছি না। একেই বোধ হয় বাংলা ভাষায় বলে কিংকর্তব্যবিমূঢ়
আদনান মুকিত | তারিখ: ১৪-০২-২০১১
ভালবাস দিবসে আমার পাগলামি- ডাইরেক্ট কপি পেস্ট ফ্রম রস+আলো!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।