আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা

কি বলব

নারী ও পুরুষের যৌথ উদ্যোগেই স্থাপিত হয়েছে মানবীয় সমাজের ভীত। সমাজ গঠনে ও উন্নয়নে এ দুটি অংশই একটি অপরটির অনিবার্য পরিপূরক। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, যুগ যুগ ধরে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে অবজ্ঞা ও অবহেলার চোখে দেখা হয়েছে, তাদের অধিকার থেকে বঞ্জিত করা হয়েছে। সপ্তম শতকের শুরুতে ইসলামের আবির্ভাবের পর হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নারীদের বিভিন্ন প্রকার অধিকার প্রদান করেন। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে এ কথা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে যে, নারী ও পুরুষের মর্যাদা আল্লাহর কাছে সমান।

মুসলিম স্কলারগণও এ ব্যাপারে একমত যে, ইসলামে নারীর সামাজীক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষার এবং সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু নীতিগতভাবে ইসলামে নারী-পুরুষ সমান হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে মুসলিম মানসে নারী-পুরুষের ব্যাপারে বৈষম্যমুলক চিন্তা-ভাবনা বিদ্যামান। তাই ইসলামে নারীর অধিকার এর বিচার হবে ইসলামের মূল সূত্রের আলোকে মুসলমানরা কি করে, মুসলিম রাষ্ট্র বা ব্যাক্তি কি করে এর উপর ভিত্তি করে নয়। ইসলামের মূল সূত্র হল আল-কুরআন ও আল-হাদীস। নিন্মে ইসলামের নারীর অধিকার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

প্রাচীন সভ্যতা সমূহে নারীর অবস্থান ঃ নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রদানে তৎকালীন সকল সভ্যতার চেয়ে ইসলাম যে কত অগ্রগামী ছিল তা অনুধাবণ করার জন্যই বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। ১. প্রাচীন প্রাচ্য দেশীয় সভ্যতা সমূহে নারীর অবস্থান ঃ নারীদের প্রতি প্রাচীন চীনাদের আচরণের উদ্ধৃতি পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে। হু সুয়ান নামক কবির লেখায়- “নারী হওয়া বড় দুঃখের, পৃথিবীতে কোনো কিছুই নারীর মত এত সস্তা নয়। ” কনফুসিয়াস বলেন- “নারীর মূল কাজ আনুগত্য, শৈশব কৈশোরের পিতার, বিয়ের পর স্বামী, এবং বিধবা হওয়ার পর পুত্রের, এই আনুগত্য হবে প্রশ্নাতীত এবং একচ্ছত্র”। বৌদ্ধ ধর্ম নারীকে নীচ এবং পাপে পূর্ণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, বলা হয়েছে নারীর মত ভয়াবহ আর কিছুই নেই।

হিন্দুধর্মে বেদ বা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ পড়া বা কোনো ধর্মীয় কর্মকা-ে নারীর কোনো ভুমিকা ছিল না। বিধবা হওয়ার পর পুনর্বিবাহ বা সম্পত্তির অধিকার তো দুরের কথা, স্বামীর সাথে এক চিতায় সহমরণই ছিল তার একমাত্র পরিণতি। ২. পাশ্চাত্য সভ্যতায় নারীর অবস্থান ঃ গ্রীক সভ্যতায় নারী ছিল পুরুষের অধীনা, বিয়ের সময় তার কোনো মতামত নেওয়া হতো না, স্বামী ছিল তার প্রভু। রোমান সভ্যতায় নারী যে পৃথকভাবে কিছু করতে সক্ষম তাই বিশ্বাস করা হতো না। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিকা অনুসারে, কোনো মহিলা বিয়ে করলে স্বাভাবিকভাবেই তার সম্পদের মালিক হতো তার স্বামী।

মহিলারা স্বামীর অনুমতি ব্যতীত নিজের সম্পত্তিও খরচ করতে পারতো না। ৩. প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যে নারীর অবস্থান ঃ প্রাচীনকালে আরবরা যখন শুনতো তার কন্যা সন্তান হয়েছে, তখন রাগে তাদের মুখ রক্তবর্ণ ধারণ করতো। এ সময় কন্যা শিশুদের জীবন্ত মাটিতে চাপা দিয়ে হত্যা করা হতো। পিতার মৃত্যুর পর পুত্ররা সম্পত্তির সাথে পিতার বিধবা স্ত্রীদেরও মালিক হতো। ৪. ব্যতিক্রম ঃ কোনো কোন সভ্যতায় ভদ্র ঘরের নারীদের বিশেষ মর্যাদা ছিল।

প্রতœতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত বেশ কিছু সভ্যতায় দেখা যায়, প্রভুকে নারীর আকৃতিতে কল্পনা করা হয়েছে। মিশরে ওঝওঝ, ব্যবিলনে ঞরধসধঃ, গ্রীসে উবসবঃৎব, রোমে গধষবহ নামে মহিলা দেবীর পুজা করা হতো। ভারতবর্ষে হিন্দু ধর্মে সরস্বতী, লক্ষী, দূর্গা, কালি, ইত্যাদি মহিলা দেবীর পূজা করা হয়। কিন্তু এসব সমাজেও বাস্তবে নারীর অধিকার ও মর্যাদা ছিল না। ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা ঃ ইসলাম নারীকে সন্মানিত করেছে এবং তার মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করেছে।

যদিও কোন কোন মুসলিম সমাজ অজ্ঞতা ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে নারীর ইসলাম প্রদত্ত অধিকার ও মর্যাদা দিচ্ছেনা। তথাপি কুরআন এবং হাদিস বিশ্লেষন করে দেখা যায় যে একমাত্র ইসলামই নারীকে যৌক্তিক অধিকার প্রদান করেছে। ইসলাম প্রদত্ত নারীর অধিকার কে আমরা আলোচনার সুবিধার্থে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করেছি, যেমন-  আত্মিক অধিকার  সামাজিক অধিকার  অর্থনৈতিক অধিকার  রাজনৈতিক অধিকার  শিক্ষার অধিকার এবং  আইনগত অধিকার নিম্নে এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা হল- নারীর আত্মিক অধিকার ঃ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে নারী পুরুষের আধ্যাত্বিক সমতার কথা ঘোষনা করা হয়েছে। যেমন: “তোমাদের যে কেউ, সে মুমীন নারী হোক বা পুরুষ হোক, সৎআমল করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সামান্যতম অবিচারও তাদের প্রতি করা হবে না”। সূরা-নিসা-১২৪ “যে ব্যক্তি মূমীন অবস্থায় সৎ আমল করবে সে নারী পুরুষ যাই হোক না কেন, তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যে আমল করে তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেব”।

সূরা আন-নাহল,৯৭ “ওহে মানব মন্ডলী! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় কর, যিনি তোমাদের কে একটি আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গিনীকে, আর তাদের দু‘জন থেকে বহু নারী পুরুষকে দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন”। সূরা আন-নিসা-১ উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে প্রমানিত হয় যে, ইসলামেই আত্মিকভাবে নারী পুরুষ কে সমান অধিকার ভোগ করার সুযোগ দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ইসলামী বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে ইসলাম নারীদের জন্য বিশেষ শিথিলতা প্রদর্শন করেছে। যেমন- যদি নারী ঋতুবর্তী বা গর্ভবতী হন তাহলে তাকে নামাজ পড়তে হবেনা, রোজা রাখতে হবে না। এভাবেই ইসলাম নারীদের শারিরীক অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে তাদের উপর ধর্মীয় হুকুম পালনের বিধান পুরুষের চেয়ে সহজ করে দিয়েছেন।

ধর্মীয় ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে ইসলাম ঃ খৃষ্টবাদের মত ইসলামে যাজক বা চার্চ নেই। কােেজই ধর্মীয় ক্ষমতাবান হওয়ার সুযোগ ইসলামে কারোর জন্যই নেই। যদিও ইসলাম মুসলমানদের ধর্মীয় জ্ঞান আধ্যাত্বিক ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে বলে, কিন্তু সেটা সাধারনের উপর ধর্মীয় প্রভুত্ব করার সুযোগ বোঝায় না- তারা বিশেষজ্ঞ বা নেতা হতে পারেন মাত্র। ইসলাম নারীকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। যেমন- রাসূল (স স্বামীদের আদেশ দিয়েছেন- “যদি তোমাদের স্ত্রীগণ মসজিদে যেতে চায়, তবে তাদেরকে বাধা দিওনা”।

তবে নারীদেরকে মসজিদে যাওয়ার বিষয়টি ইসলাম তাদের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়েছে। মসজিদে ইমামতির ক্ষেত্রে ইসলাম নারীদেরকে ইমামতি করার সুযোগ দেয়নি। তাত্ত্বিকদের মতে এটি মেয়েদের শারিরীক গঠনের কারনে করা হয়েছে। যেহেতু, মেয়েরা পুরুষের সামনে অথবা পাশে দাড়িয়ে রুকু সিজদা করলে উভয়েরই নামাজের প্রতি মনোযুগ নষ্ট হতে পারে। নামাজের গাম্ভির্য্য ক্ষুন্ন হতে পারে।

কাজেই জামায়াতে নামাজে মেয়েদের পেছনে জায়গা করে দেওয়ার মধ্যে তাদের প্রতি কোন অসম্মানের দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামে নেই, বরং এখানে ভদ্রতা ও রুচিশীলতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশসহ বহু দেশে মেয়েদেরকে মসজিদে যেতে দেওয়া হয়না। যদিও কুরআন হাদিস দ্বারা নিষিদ্ধ হয়নি। নারীর সামাজিক অধিকার ঃ ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে আরবে কন্যা সন্তানদেরকে হত্যা করা হত । পৃথিবীতে কন্যা সন্তানকে অশুভ হিসাব দেখা হত ।

ইসলাম এই খারাপ চর্চাকে শুধু নিষিদ্ধ করেনি বরং কুরআন একে সরাসরি খুন বলে ঘোষনা করেছ। ইসলাম নারীকে বিভিন্ন প্রকার সামাজিক অধিকার দিয়েছে। তা নিম্নে আলোচনা করা হল – মেয়েদের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশ ঃ আল্লাহ তায়ালা কুরআনের অনেক আয়াতে নারীদের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যেমন- নং আয়াতে বলা হয়েছে “আর খাদ্য দানের ভয়ে তোমরা সন্তানদের হত্যা করোনা আমরাই তাদেরকে রিযিক দিই এবং তোমাদের কেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা বড় অপরাধ”। সূরা বনী-ইসরাইল -৩১ “যখন জীবন্ত গ্রোথিত কন্যাকে জিঙ্ঘাসা করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল” ।

সূরা-তাকভীর-৮ একইভাবে হাদীসেও নারীদের মর্যাদার কথা ঘোষনা করা হয়েছে, যেমন- “হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা)হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সাঃ)বলেছেন- যে লোকের তিনটি বোন আছে অথবা দুটি কন্যা আছে বা দুটি বোন আছে এবং সে তাদের সাথে উত্তম সাহচর্য রক্ষা করেছে ও তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করেছে সে জান্নাত লাভ করবে”। তিরমিযী “হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন রাসূল(সাঃ)বলেছেন, যে লোক তার কন্যার ব্যাপারে বিপদগ্রস্ত হবে এবং তাহাদের ব্যাপারে হবে অবিচল ও ধৈর্যশীল, এই কন্যারা তার জাহান্নাম হতে আবরন হয়ে দাড়াবে”। “রাসূল (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি দুটি কন্যা সন্তানকে লালন-পালন করে বড় করবে সে এবং আমি কাছাকাছি থাকব (এই বলে তিনি তার হাতের পাশাপাশি দু আঙ্গুলের অন্তরঙ্গতাকে দেখালেন)। তিনি আর ও বলেন যে , যার একটি কন্যা সন্তান আছে এবং সে তাকে জীবন্ত কবর দিলনা , তাকে অপমানিত করলনা এবং পুত্রদেরকে তার উপর প্রাধান্য দিলনা, আল্লাহ তাকে বেহেস্তে প্রবেশ করাবেন”। উপরোক্ত কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম মেয়েদের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেষ দিয়েছে।

প্রতি বছর ভারতে এক মিলিয়নের অধিক কন্যা ব্রুন গর্ভপাত করানো হচ্ছে। বিবাহের ক্ষেত্রে অধিকার ঃ পাত্র নির্বাচন ও সম্মতির ক্ষেত্রে ঃ কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী মেয়েরা পছন্দমত বিয়ে করার অধিকার ভোগ করে। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে কোথাও বিয়ে দেয়া যেতে পারেনা। বিবি খাদিজা (রা) রাসূল(সাঃ)এর চরিত্রে মাধুর্যে এবং সততায় মুগ্ধহয়ে তার এক মহিলা সহযোগীর সাথে পরামর্শ করে রাসূল (সাঃ) কে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। রাসূল (সাঃ) এর জীবনে দেখা যায়, একবার এক মহিলা তার কাছে উপস্থিত হয়ে তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেন।

যদিও রাসূল(সাঃ) সেই মহিলাকে বিয়ে করেননি, তবুও তিনি এমন কোন কথা বলেননি যে মেয়েরা এভাবে প্রস্তাব দিতে পারেনা । “হযরত আবু হুরাইরা (রা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাবেেলছেন, পূর্বে স্বামী সঙ্গপ্রাপ্তা কনের সুস্পষ্ট আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে বিবাহ দেয়া যাবেনা। এবং পূর্বে স্বামী অপ্রাপ্তা কনের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেয়া যাবেনা। সাহাবীগণ জিঙ্গাসা করলেন উহার অনুমতি কিভাবে নেয়া যাবে? রাসূল (সা বললেন তার চুপ থাকাই অনুমতি”। মুসলীম ,বুখারী, নাসায়ী “একবার একজন মহিলা রাসুল (সা এর কাছে এসে যখন বলেন যে , তার অমতে বিয়ে হয়েছে ।

তখন রাসুল (সা সেই বিয়ে বাতিল করে দেন”। এভাবে পাত্র নির্বাচন ও বিয়ের সম্মতির ক্ষেত্রে পুরুষের মত নারীর সমান অধিকার ইসলাম দিয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিয়ে প্রসঙ্গে ঃ ইসলামে কুরআন এবং হাদীসে বিয়ের ক্ষেত্রে কোন বয়সসীমা নির্ধারিত নেই। সমাজবিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, বাল্যবিবাহের প্রচলন ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেও ছিল, এখনও আছে। পূর্বে বাল্যকালে বিবাহ হলেও স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক সাথে সাথে শুরু হতনা।

এ বিয়ে চুক্তির কারণ ছিল দুটি সমাজ ও পরিবারের মধ্যে বড় মিল ও আন্তরিকতা বৃদ্ধির এক প্রতিশ্রুতি। আগে থেকে প্রচলিত এ ব্যাবস্থাকে ইসলাম কতগুলো শর্ত প্রয়োগ করে বাস্তবতার কছে নিয়ে এসেছে, শর্ত গুলো হল  অপ্রাপ্ত বয়স্কা বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের বা একজন বিচারকের পূর্ব সম্মতি আবশ্যক।  বিয়ের পর মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর মিলন হবেনা। (অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়ে তার বাবা-মার কাছে থাকত)  মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর স্বামীর সাথে মিলিত হওয়ার আগেই বিয়ের ব্যাপারে তার মতামত দিতে পারবে। যদি তার মতামত না বাচক হয় তবে বিয়ে ভেঙ্গে যাবে।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- “হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের জন্য নারীদের জোর করে অধিকারভুক্ত করা জায়েয নেই” সূরা আন-নিসা-১৯ সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মেয়েদের বিয়েতে মতামত দেয়ার স্বাধীনতা ইসলামের গুরুত্বপূর্ন নীতি। স্ত্রী হিসাবে অধিকার ঃ ইসলাম স্ত্রীদেরকে স্বামীর সমান অধিকার প্রদান করেছে। যা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আমরা দেখতে পাই। যেমন- “স্ত্রীরা তোমাদের পরিচ্ছদ, তোমরাও তাদের পরিচ্ছদ” সূরা-বাক্বারা-১৮৭ পোষাক একজন মানুষের সবচেয়ে কাছের জিনিস, এটি সৌন্দর্য্য বর্ধন করে, দোষ ত্রুটি ঢেকে রাখে এবং বৈরী আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে। স্বামী-স্ত্রীও তেমনি এক অপরের সবচেয়ে আপনজন, একে অপরের সৌন্দর্য্য বর্ধন করে এবং বিপদে-আপদে পরস্পরকে সহায়তা করে।

এ আয়াত দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কের মাঝে পুরোপুরি সমতা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। কুরআনের অন্য আয়াতে আছে- “নারীদের পুরুষের উপর তেমনি ন্যায়নুগ অধিকার রয়েছে, যেমনি রয়েছে পুরুষের নারীদের উপর” সূরা-বাক্বারা-২২৮ “মুমিন নর ও নারী একে অপরের বন্ধু ও অভিভাবক, তারা সৎকার্যেও আদেশ দেয় এবং অসৎকার্যে নিষেধ করে” (সূরা আত-তাওবা-৭১) “মুমিন নারী ও পুরুষ পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে কার্য সম্পাদন করে” সূরা আশ-শুরা-৩৮ উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সমান অধিকার দিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যদি ঘরের বাইরে একই পর্যায়ে ব্যস্ত হয়ে যান, তবে সন্তানদের দেখা-শুনা এবং পরিবারের ব্যবস্থাপনার কি হবে? এখানেই কুরআনের আয়াতে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- এভাবে “পুরুষ নারীর কওয়াম (রক্ষক ও ব্যাবস্থাপক) কেননা আল্লাহ তাদের একদল কে অপর দলের উপর সুবিধা প্রদান করেছেন এবং তারা (পুরুষরা) তাদের সম্পদ ব্যয় করে” সূরা আন-নিসা-৩৪ এ আয়াতের অনেকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের উপর পুরুষের শ্রেষ্ঠত্বের কথা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু কুরআন বিশেষ্জ্ঞদের মতে অত্র আয়াতে পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব নয় বরং দায়িত্বের পরিধির কথা বলা হয়েছে। বিখ্যাত তাফসীরকারক ইবনে কাছীর বলেন- ‘পুরুষ দায়িত্বের দিক দিয়ে এক স্তর উপরে-শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে নয় ’ এ দায়িত্ব স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের সম্মতিতে পালিত হবে যা পূর্বে কুরআনের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। বহুবিবাহ ও ইসলাম ঃ ইসলাম বহুবিবাহ প্রথা চালু করেনি।

এটি বহু আগে থেকেই চালু ছিল, ইসলামই বহুবিবাহকে কিছু কঠোর শর্তারোপ করে সীমাবদ্ধ করেছে। তবে বহুবিবাহ ইসলামে কোন অত্যাবশ্যকীয় বা নির্দেশিত কাজ নয়, শুধু বিশেষ কিছু অবস্থার প্রেক্ষিতে সুযোগ মাত্র। যেমন কুরআনে আছে- “তুমি তোমার পছন্দমত মেয়েকে বিয়ে কর, দুটি,তিনটি বা চারটি, কিন্তু তুমি যদি ন্যায় বিচার করতে না পার তবে কেবল একজনকেই বিয়ে কর” সূরা আন-নিসা -০৩ এ আয়াতের মাধ্যমে ইসলামে বহুবিবাহ (সর্বো”্চ চারটি) অনুমোদিত, তবে কেউ যদি দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে সুব্যবহার করবেনা এ মতলবে বিয়ে করে তবে তার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে অনুমোদিত নয়। তথাপি কুরআন বিশেষজ্ঞগণ উল্লেখিত আয়াতের নিম্নলিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন-  বহুবিবাহ মুসলমানদের জন্য আবশ্যক কিছু নয়।  একের অধিক বিয়ে শর্তযুক্ত ।

অর্থাৎ স্ত্রীদের সাথে সমব্যবহার বহুবিবাহের অত্যবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। কুরআনে আছে- “স্ত্রীদের মধ্যে পুরোপুরি ইনসাফ করা তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, তোমরা চাইলেও এ ক্ষমতা তোমাদের নেই, কাজেই এক স্ত্রীকে একদিকে ঝুলিয়ে রেখে অন্য স্ত্রীর প্রতি ঝুঁকে পড়বেনা, যদি তোমরা নিজেদের কর্মনীতি সংশোধন করো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, তাহলে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম করুনাময়” সূরা আন-নিসার ১২৯ রাসুল সাঃ বলেছেন- “যে ব্যক্তি দু‘স্ত্রীর একজনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবে, সে হাশরের ময়দানে শরীরের এক অংশ নীচু অবস্থা নিয়ে হাজির হবে”।  সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী বিয়ে করার সীমা নির্ধারণ করেছে, কিন্তু এটি ইসলামের আইন নয়, বরং ১ম স্ত্রীর চরম অসুস্থতা, দূর্ঘটনা, প্রতিবন্ধী হওয়া, বন্ধ্য হওয়া, ফলে সে স্বামীর চাহিদা পূরণে অক্ষম হয়ে পড়ে-এসব ক্ষেত্রে বহবিবাহ ইসলাম অনুমোদন দিয়েছে।  সূরা আন-নিসার ৩ নং আয়াতে এক বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে বহুবিবাহের কথা বলা হয়েছে, তা হলো মুসলমানের তত্ত্বাবধানে থাকা এতিমের সাথে যথাযথ ব্যবহার প্রসঙ্গে। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায়, ইসলাম পুরুষের ইচ্ছামত চার বিবাহের অনুমোদন দেয়নি বরং বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে এটি অনুমোদন দিলেও অত্যাবশ্যক করেনি।

তালাকের অধিকার প্রসঙ্গে ঃ ইসলামের অভ্যূদয়ের পূর্বে আরবরা কথায় কথায় স্ত্রী তালাক দিত। বর্তমানেও এধারা আবার ফিরে এসেছে। ইসলাম বিয়ে বন্ধনের পবিত্রতা ও গুরুত্ব ঘোষনা করে। সেটাকে স্থায়ী এবং স্থিতিশীল করতে চায়। ইসলাম তালাক পছন্দ করেনা।

“রাসূল (স বলেছেন সমস্ত হালাল বস্তুর মধ্যে তালাকই হচ্ছে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত” তারপর ইসলাম বাস্তবতাকে স্বীকার করে যে, সব বিয়েই যে স্থায়ী তা নয়। এজন্য পুরুষকে তালাকের স্বাধীনতা দেয়ার সাথে সাথে তা কত গুলো শর্তের অধীনে করে দিয়েছেন। সে শর্তের অধীনে পুরুষ কেবল সর্বশেষ হাতিয়ার হিসাবে এ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারেন। যেমন কুরআনে আল্লাহ বলেন- “তাদের সাথে সৎভাবে জীবন-যাপন কর, তোমরা যদি তাদের কে অপছন্দ কর তবে এমনও হতে পারে আল্লাহ তাতে অপূরন্ত কল্যাণ রেখেছেন”। সূরা আন-নিসা-১৯ “ তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীগণের তালাক দিতে ইচ্ছা কর, তবে ইদ্দতের হিসাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দাও, তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় কর, তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দিওনা এবং তারাও বের হয়ে যাবেনা, যদি না তারা প্রকাশ্যে মন্দ কাজে লিপ্ত হয়, এ হচ্ছে আল্লাগর নির্ধারিত সীমা, যে আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে সে নিজেরই উপর অত্যাচার করে” সূরা আত-তালাক-০১ সুতরাং ইসলাম পুরুষকে বিভিন্ন শর্তের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি দিয়েছে, তেমনি স্ত্রীদেরও বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি দিয়েছে।

যেমন কুরআনে আছে- “যদি তোমরা উভয়ের দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশংকা করো, তাহলে উভয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে একজন করে সালিশ পাঠাও, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যদি সংশোধন হওয়ার ইচ্ছা রাখে তাহলে আল্লাহ তাদের জন্য সে উপায় বের করে দিবেন”। সূরা আন-নিসা-৩৫ “হযরত সহল ইবনে আবু হামযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-সহল কন্যা হাবিবা সাবিত ইবনে কাইস ইবনে সিমাস আল আনসারির স্ত্রী ছিল, পরে সে (স্ত্রী) তাকে (স্বামী) ঘৃনা করতে লাগল। কেননা সে (সাবিত) একজন কুৎসিৎ বিভৎস চেহারা ও খারাপ আকৃতির লোক ছিল। এসময় সে (হাবিবা) নবী করীম (সাঃ) এর নিকট এসে বলল, হে রাসুল্লাহ, আমি লোকটিকে দেখি বটে কিন্তু মহান আল্লাহর ভয় যদি না থাকত তাহলে আমি নিশ্চয় তার মুখের উপর থুথু নিক্ষেপ করতাম। তখন রাসুল (সাঃ) বললেন- তুমি কি তার সে বাগান টি ফিরিয়ে দিবে, যা তোমাকে সে মহরানা হিসাবে দিয়েছিল? সে বলল-হা, দিব।

তখন রাসুল (সাঃ) লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন। তখন হাবিবা তার বাগানটি ফেরত দিলেন। অতঃপর রাসুল (সাঃ) তাদের দুজনের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলেন। হাদীসটির বর্ণনাকারী বলেছেন-ইসলামে এটাই ছিল প্রথম খোলা তালাক”। মুসনাদে আহমস,মুসনাদে বাজ্জার তাবারানী কবীর উপরোক্ত কুরআন-হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, স্বামী যদি স্ত্রীর অপছন্দ হয় স্ত্রী যদি স্বামীর সাথে থাকতে রাজী না হয় তার মূলে কোন বাস্তব কারণ বর্তমান থাকে তাহলে স্ত্রী তালাকের অধিকার রাখে বা স্বামীর নিকট তালাক চেয়ে নিতে পারে।

মা হিসাবে অধিকার ইসলামে আল্লাহর ইবাদতের পরেই মায়ের সম্মানের কথা বলা হয়েছে। যেমন- “আর আপনার প্রভু নির্দেশ দিচ্ছেন তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করবেনা,আর পিতা-মাতার মাথে সদাচরণ করবে”। সূরা বনী-ইসরাইল-২৩ একই ভবে সূরা আহকাফ এর ১৫ নং সূরা লুকমানের ১৪ নং আয়াতে মাতা-পিতার প্রতি সদাচরনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন- “মায়ের পায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত” ইবনে মাজাহ ও আহমেদ “একলোক নবী করীম (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন- এ দুনিয়ায় আমার সদ্ব্যবহার ও সম্মান পাওয়ার বেশি হকদার কে? রাসুল (সাঃ) উত্তর দিলেন-তোমার মাতা, তারপর কে? রসূল (সা বল্লেন, তোমার মাতা, তারপর কে? নবী (সাঃ) বললেন তোমার মাতা, লোকটি চতুর্থ বার জিজ্ঞাসা করলে তারপর তিনি বললেন তোমার পিতা। মায়ের সম্মান তিনি চার গুন বাড়িয়ে দিয়েছেন”।

নারীর অর্থনৈতিক অধিকার ঃ সম্পদ অর্জন ইসলামী মতে একজন নারী বিয়ের পূর্বে বা পরে যে কোন পরিমাণ সম্পদ অর্জন করতে পারেন। তার সম্পদ কারো পরামর্শ ছাড়াই তিন ইচ্ছামত বিক্রি করতে ভাড়া দিতে, ঋণ দিতে ও দান করতে পারেন। এক্ষেত্রে স্বয়ং উদাহরণ বিশ্ব নবী (সাঃ) এর সহধর্মিনী হযরত খাদীজা (রাঃ)। তিনি আরবের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। তার ব্যবসায়িক কাজে নবী সাঃ সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন।

কাজ করার অধিকার কুরআন ও সূন্নাহ মতে মেয়েদের কাজ করা, ব্যবসা বানিজ্য করার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই । এর সবচেয়ে বড় উদাহরন হচ্ছেন রাসূল (সাএর স্ত্রী খাদিজ (রা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন,চাকরী করার ক্ষেত্রে ও পুরুষদের মত মজুরীর কথা ইসলাম বলেছে গ্রহস্থলির কাজ কেও ইসলাম গুরুত্বপূর্ন বলেছে। মোহরানার অধিকার কুরআনের অনেক আয়াতে মোহরানা অত্যাবশ্যক করে দেয়া হয়েছে, যা পুরুষ দিতে বাধ্য। “ আর তোমরা নারীদের মোহরানা স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে প্রদান কর”। সূরা আন-নিসা-০৪ হাদীসেও মোহরানার কথা গুরুত্বের সাথে বলা হয়েছে।

মোহরানা ব্যতিত ইসলামে বিবাহ হবে না। এ মোহরানার একক মালিক হল স্ত্রী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখন মুসলিম সমাজে নামকাওয়াস্তে মোহরানা নির্ধারন করা হয়। উ্ত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকার : ইসলামের আগমনে পূর্বে সম্পত্তিতে নারীর কোন অধিকার ছিলোনা। স্বামীর মৃত্যুর পর তার ছেলে সন্তানরা অন্য সম্পত্তির সাথে স্ত্রীদের ও ভাগ করে নিত।

সে যুগেই কুরআন নারী-পুরুষ উভয়ের ন্যায্য অধিকার ঘোষনা করে । যেমন : মা,বাপ আত্মীয় স্বজনরা যে ধন সম্পত্তি রেখে গেছে, তাতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ও অংশ রয়েছে তা সামান্য হইক বা বেশী হইক এবং এ অংশ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত, যেমন- “তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন Ñ পুরুষের অংশ দুজন মেয়েলোকের সমান, যদি দুয়ের বেশী মেয়ে হয় তাহলে তাদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দু‘ভাগ তাদের দাও” । সূরা আন-নিসা-১১ এ আয়াত থেকে স্পষ্টই প্রমাণ হয় যে, ইসলাম নারীদের জন্য সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ বরাদ্দ রেখেছে। কিন্তু মুসলিম সমাজে এখনও কুরআনের আয়াত অমান্য করে মেয়েদের সম্পত্তি থেকে বঞ্জিত করা হয়। অনেক নারীবাদী তাত্ত্বিকরা ইসলামে সম্প্িত্তর উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পুরুষের অর্ধেক দেয়ার কারণে বৈষম্য হয়েছে বলে মতামত ব্যক্ত করেন।

ইসলামী তাত্ত্বিকরা বলেন যে, ইসলামই নারীদেরকে যৌক্তিক এমনকি পুরুষদেরও বেশি অধিকার দিয়েছে। তাদের যুক্তি হল-  বিয়ের পুর্বে বা পরে নারী যা আয় করে, বিয়ের পুর্বে বাগদানের সময় প্রাপ্ত উপহার, বিয়ের সময় মোহরানা এসবই নারীর একক অধিকার। নারী ইচ্ছামত খরচ করতে পারবে।  বিবাহিত জীবনে সে চাকরি করে বা টাকা খাটিয়ে যা আয় করবে তা সবই তার ইচ্ছামত খরচ করতে পারবে।  তালাকের পর ইদ্দতকালে সে পুরো ভরণ-পোষণ পাবে এবং পরবর্তীতেও সন্তানদের পুরো খোর-পোষের খরচ পেতে থাকবে।

 উত্তরাধিকারের যে সম্পত্তি, তাও সে ইচ্ছামত খরচ করবে এটা তার একান্তই অধিকার।  স্ত্রী যতই সম্পদশালী হউক না কেন, তার খাওয়া-দাওয়া, ভরণ-পোষণ সমস্ত খরচ স্বামী বহন করতে বাধ্য থাকবে। সুতরাং দেখা যায় যে, সার্বিকভাবে ইসলাম নারীকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে। পুরুষের উপর সব আর্থিক দায়িত্ব দিয়ে নারীকে তা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পুরুষের এতসব দায়িত্বের জন্যই পিতার সম্পদ বণ্টনের সময় তার অংশ একটু বেশি ধরা হয়েছে।

এ বণ্টন ব্যবস্থা স্বয়ং আল্লাহ করেছেন যিনি নারী বা পুরুষ নন। যিনি সারা জাহানের প্রভু , সর্বশ্রেষ্ঠ ও ন্যায়ের প্রতীক। অতএব ইসলামী তাত্ত্বিকদের মতে আল্লাহ ন্যায় ও যৌক্তিকতার ভিত্তিতে সম্পদ বন্টন করেছেন। নারীর রাজনৈতিক অধিকার ঃ ইসলাম নারীর রাজনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। যেমন আল-কুরআনে আছে- “ঈমান্দার পুরুষ ও ঈমান্দার নারী একে অপরের সহায়ক।

” সুরা আত-তাওবা-৭১ এ আয়াত সম্পর্কে ইসলামী তাত্ত্বিকগণ বলেছেন, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে নারী-পুরুষ পরস্পরের সহযোগী। কুরআন ও হাদীসে যে সব স্থানে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে বলা হয়েছে তা নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য। এটি ব্যক্তি জীবন থেকে রাজনৈতিক জীবন পর্যন্ত পরিব্যপ্ত। নারীর ভোটাধিকার ঃ রাসুল (সা) প্রতিষ্ঠিত ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বর্তমানের মত আধুনিক ভোটের প্রচলন ছিল না। তখন জনগণের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ব্যক্তি জনগণের কাছে বাইয়াত আহ্বান করতেন।

সে সময়ে মেয়েরাও বাইয়াত গ্রহণ করতেন। যেমন কুরআনে আছে- “হে নবী ! মুমিন নারীরা যখন আপনার নিকট আনুগত্যের শপথ নিতে আসবে এই মর্মে যে তারা আল্লাহর সাথে কোনো শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তান হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোনো অপবাদ রটাবে না এবং সৎ কাজে তোমাকে অমান্য করবে না, তখন তাঁদের বাইয়াত গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান। ” সুরা মুমতাহিনা, ১২ ইসলামি তাত্ত্বিকরা বলেন, বাইয়াতে বর্তমান ভোটের চেয়েও অধিক ক্ষমতা বিদ্যমান, কারণ নবী (সা) শুধু আল্লাহর রাসুলই ছিলেন না, তিনি রাষ্ট্রপ্রধানও ছিলেন। নারীরা নবী (সা) এর নিকট আসতেন তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মেনে নিয়ে সম্মতি দিতেন। যেমন-আকাবার বাইয়াতে পুরুষদের সাথে মহিলারাও ছিল।

আইন প্রণয়ণে ও অংশগ্রহণ ঃ রাসুল (সা) কোনো কোনো বিষয়ে মেয়েদের পরামর্শ নিতেন। এক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রী হযরত খাদিজা (রা) এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একটি বিখ্যাত হাদীস, “হযরত উমর (রা এর শাসনামলে তিনি সাহাবীদের সঙ্গে অর্থাৎ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে মোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণের ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন, যাতে বিয়েতে যুবকেরা উৎসাহিত হতে পারে। তখন একজন মহিলা প্রতিবাদ করে বললেন-যখন কুরআন বলে- ‘‘ তুমি মহর হিসাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদও দিতে পার। ” (সুরা নিসা, ২০) অর্থাৎ কুরআন মহরের ব্যাপারে কোনো সীমা নির্ধারণ করেনি, সেখানে সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে উমর কে? তৎক্ষণাৎ খলিফা উমর (রা) বললেন, উমর ভুল করেছেন, মহিলাই সঠিক।

” অত্র হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, তৎকালীন সময়ে মেয়েরা সরাসরি রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে মতামত দিতে পারতেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণ ঃ হযরত মুহাম্মদ (সা) এর যুগে নারীরা যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নিয়েছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে নারী নামে বুখারী শরীফে একটি অধ্যায় রয়েছে। সুতরাং প্রয়োজনে নারীরা যুদ্ধে অংশ নিতে পারেন। স্বাভাবিক অবস্থায় নারীর যুদ্ধে যাওয়া ইসলাম সমীচীন মনে করেনি।

কারণ এটা পুরুষের দায়িত্ব। ওহুদ যুদ্ধে নাসিরা নামে এক মহিলা নবী করীম (সা) এর প্রতিরক্ষায় নিয়োজিতদের মধ্যে একজন ছিলেন। এছাড়াও ইসলামের প্রতিটা যুদ্ধে মহিলাদের এক বিশেষ ভুমিকা ছিল। পর্দা সংক্রান্ত বিধান ঃ মুসলিম সমাজে পর্দার বিধানকে দীর্ঘদিন যাবৎ বিভ্রান্ত করে রাখা হয়েছে। বর্তমান মুসলিম সমাজেও নারীদেরকে পর্দা করার জন্য চাপ দেওয়া হয়।

অথচ ইসলাম নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই পর্দা অত্যাবশ্যক করেছেন। যেমন- “হে রাসূল (সা) আপনি মুমিন পুরুষদের বলুন-তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানসমুহকে হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য উত্তম পন্থা নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাঁদের দৃষ্টিকে সংযত করে, ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের আভরণ প্রদর্শন না করে”। সুরা আন-নিসা,৩০-৩১ “হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়, এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে এর ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না।

আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। ” সুরা আহযাব- ৫৯ “রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো অপরিচিত নারীর প্রতি কামনা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, কিয়ামতের দিন তার চোখে উত্তপ্ত গলিত সীসা ঢেলে দেওয়া হবে। ” ফাতহুল কাদীর উপরিউক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, ইসলাম নারী পুরুষ উভয়কে স্ব স্ব অবস্থান থেকে পর্দা আবশ্যক করেছে। নারীর শিক্ষার অধিকার ঃ ইসলামে নারী-পুরুষের শিক্ষাকে সমানভাবে অত্যাবশ্যক করেছে। যেমন কুরআনে আছে- “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলাক থেকে।

পাঠ কর, আর তোমার প্রভু বড়ই সম্মানিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না”। সুরা আলাক- ১-৫ “বলুন যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান? জ্ঞানবান ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে। ” সুরা যুমার-০৯ “বলুন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? কিংবা অন্ধকারও আলো কি এক হতে পারে।

” সুরা আর-রা’দ-১৬ “হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর জ্ঞানার্জন করা ফরজ। ” আয়েশা (রা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী। তার বর্ণিত হাদীস সংখ্যা ২২১০, তিনি একাধারে ধর্মীয়, ভাষা, সাহিত্য, কবিতা, চিকিৎসা এবং গণিত শাস্ত্রে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি সাহাবা এমনকি খলিফাদেরকেও দিক-নির্দেশনা দিতেন। রাসুল (সা) এর সময় অসংখ্য মহিলা জ্ঞানের ক্ষেত্রে পা-িত্য অর্জন করেছিলেন।

এদের মধ্যে উম্মুল মুমিনীন হযরত সাফিয়্যা, হযরত সালামা, হযরত ফাতিমা বিনতে কায়েস ও হযরত আয়েশা (রা) অন্যতম। উপরোক্ত কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইসলামই নারী-পুরুষের শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশি জোর দিয়েছে। নারীর আইনগত অধিকার ঃ ইসলামী আইন অনুযায়ী নারী-পুরুষ সমান। শরীয়ত নর-নারী উভয়েরই জীবন এবং সম্পদ রক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। যেমন কুরআনে আছে- “পুরুষ চোর এবং নারী চোর যে হোক না কেন, তার হাত কেটে দাও।

এটা তাদের কৃতকর্মের ফল। আল্লাহ পক্ষ হইতে আদর্শ দ-, আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। ” সুরা মায়েদা-৩৮ সুতরাং দেখা যায় যে, স্বামীর অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বা অন্য যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে নারীকে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার অধিকার ইসলামে দেয়া হয়েছে। ইসলামে দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইনে নারী ও পুরুষের মধ্যে পুর্ণ সাম্য কায়েম করা হয়েছে। উপসংহার ঃ ইসলামে নারীর অধিকার নিশ্চিত করলেও মানুষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে নারীর অধিকার দেয়নি।

পুরুষদের অর্থনৈতিক দায়িত্ব দেয়া হলেও তারা এর অপব্যবহার করেছে। নারীদের অর্থনৈতিক পরনির্ভরতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে নানাভাবে বঞ্চিত করেছে। নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হলে তাকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে। ইসলাম নারীর ক্ষমতায়নের পথে বাঁধা নন। আমাদের আলেম ও ধর্মীয় নেতাদের বুঝতে হবে যে, আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে ইসলাম নারীর অধিকার নিশ্চিত করে গেছে, যদিও নারীর অধিকারের আধুনিক ধারণা তৎকালীন মানুষের কাছে খুব স্পষ্ট ছিল না।

হাজার বছর আগের নারী-পুরুষের ভুমিকা এবং চাওয়া-পাওয়া আজকের প্রযুক্তি নির্ভর সমাজের জন্য প্রযোজ্য নাও হতে প।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।