আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিন্ডিকেট



আইজ রাইতে বাসায় আসার সময় এক কেজি চাইল আইনেন,কাইল থেইকা তো রোজা সেহরিতে নাইলে পানি খাইয়া রোজা থাকতে হইবো। কথাগুলো একটু চিৎকার করেই বলল রহিমা। কথাগুলো বলল রমিজউদ্দিনকে। রমিজউদ্দিন একটি পাইকারী দোকানে কাজ করে থাকেন। দোকানে বিক্রি হয় তেল,চাল,চিনি,ময়দা,ঘি ইত্যাদি।

রমিজউদ্দিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেন এই দোকানে। তার কাজ হলো কাস্টমারদের কি লাগবে তা দেয়া,ওজন দেয়া,বস্তা গাড়িতে উঠিয়ে দেয়া। খুব অল্প কিছু টাকা পায় রমিজ এই কাজ করে। সংসারও বলতে গেলে ছোটই রমিজের। বউ এবং একটি মাত্র ছেলে আকবর।

সংসার ছোট হলেও টানাটানি লেগেই থাকে সংসারে। রোজা এসে গেছে এদিকে বাসায় অনেক বাজার লাগবে কিন্তু রমিজের হাত খালি। ধারদেনা করতে করতে এমন অবস্থা হয়েছে যে এখন কেও চাইলেও ধার দেয় না। মাথা চুলকাতে চুলকাতে রমিজ দোকানে ঢুকলো। দোকানের মহাজন বলল,কীরে নবাবের ব্যাটা আইজ এতো দেরী কেন? যা ট্রাকে কইরা অনেক চিনি আর তেল আইছে।

সবগুলা আমার বাড়ীর পাশে যে গোডাওন আছে অইখানে নিয়া যা। রমিজ জিজ্ঞেস করলো অইখানে কেন? মালামাল তো বিক্রি হয় এইখানে। এতো কথা কছ কেন? বিস্তারিত পরে কমুনে,আগে সব গোডাওনে রাইখা আয়। আইচ্ছা যাইতাছি। রমিজ ও আরও কিছু মজুর মিলে সব মালামাল গোডাওনে রেখে আসলো।

তারপর মালিক বলল, এইটারে কয় সিন্ডিকেট। কাইল থেকে রোজা শুরু এখন যত তেল, চিনি বাজারে আছে তা শেষ হইতে হইতে ২০ রোজা পার হইয়া যাইবো। তারপর বাজারে তেল,চিনির হাহাকার শুরু হইয়া যাইবো তখন আমি বেশী দামে এই গোডাওনে রাখা তেল,চিনি বাজারে ছারুম। খালি লাভ হইবো। রমিজ বলল কিন্তু এইটা তো অন্যায়।

তখন গরীব মানুষেরা কিনবো কেমনে? ধুর বেটা অন্যায় কীসের। ব্যাবসা করতে আইছি টাকা কামান হইলো আসল কথা। যা কাম কর। সবাইর কথা চিন্তা করলে কি হইবো। দুইদিন পর পুলিশ আসলো বাজারে সকলের গোডাওন চেক করতে লাগলো যে জমাকৃত মালামাল আছে কিনা।

রমিজের মহাজনের দোকানেও কিছু পেলো না। কারন মালামাল তো রমিজের মহাজন তার বাড়ীর পাশের গোডাওনে রেখেছে। হতাশ হয়ে যখন পুলিশরা চলে যাচ্ছিলো তখন রমিজ একটু দূরে গিয়ে তাদের সব খুলে বলল। পুলিশ সাথে সাথেই রমিজের মহাজনের বাড়ীর পাশের গোডাওনে খোজ করলো। তারপর তথ্যপ্রমান পেয়ে মালামাল জব্দ করলো,এবং রমিজের মহাজনকে গ্রেপ্তার করে নয়ে গেলো।

রমিজ খুশী হয়ে বাড়ী ফিরে গেলো,আর চিন্তা করলো আমি আজ কত মানুষের উপকার করলাম। ছয়দিন পর,রাত একটা রমিজ বাড়ী আছোছ রে? কে? গেট খোল গেট খুলে রমিজ দেখলো তার মহাজন কিছু লোক নিয়ে দাড়িয়ে আছে তার বাসার সামনে। আপনে না জেলে আছিলেন? হ আছিলাম, আবার টাকার জোরে ছারাও পাইলাম। এইবার তোরে সত্য কথা কওনের পুরস্কার দিমু। রমিজকে ধরে নিয়ে গেলো মহাজন।

দুইদিন রমিজকে আটকে রেখে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিয়ে বাড়ীর সামনে ফেলে রেখে গেলো মহাজনের লোকেরা। রমিজের বউ তাকে ধরাধরি করে বিছানায় শুইয়ে দিলো,টাকার অভাবে ডাক্তারও দেখাতে পারলো না। রমিজের বউ কাদতে লাগলো। আকবর জিজ্ঞেস করলো,আব্বা তোমারে হেরা মারলো কেন? রমিজ,ভালো কাম করছিলাম যে বাবা। আকবর, ভালা কাম করলে কি মাইর খাইতে অয়? রমিজ,এই দুনিয়ায় মাইর খাইলেও আখিরাতে যে বাবা অনেক শান্তি পাবি।

আর পাবি মাইনষের ভালোবাসা। আকবর, কী কও আব্বা বুঝলাম না। রমিজ, বুঝবিরে বাবা,তোর শরীলে আমার রক্ত আছে একদিন তুই ঠিকই বুঝবি। এই বলে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরলো রমিজ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.