আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিন্ডিকেট সিন্ড্রোম

আমার এক বন্ধু কাম কাজিনের মুখে শোনা একটা সত্য ঘটনা বলছি। এই ঘটনা একটা বিষয়ের অপপ্রয়োগ-কে তুলে ধরেছে, যা কিনা মানুষের ভালোর স্বার্থেও ব্যবহার করা যায়, বিষয়টি- "সিন্ডিকেট"। আমার এই ভাই কম্পিউটারের রিটেইলার ব্যবসায়ী। তার পরিচিত একজন তরুণ ব্যবসায়ী, মনে করি তার নাম "ক", চীনে যায় ব্যবসার জন্য কিছু প্রোডাক্ট কিনতে। সেখানে গিয়ে সে বাংলাদেশে আমদানী করা যায়, এমন কোন সম্ভাবনাময় পণ্যের খোঁজে ছিল।

"ক" সেখানে দেখতে পায় টুরিস্ট ব্যাগ, বড় চাকাওয়ালা যে ব্যাগ-গুলো বিদেশগামী মানুষ সাধারণত ব্যবহার করে, তার প্রতি পিস দাম বাংলাদেশী টাকায় মাত্র ১৮০০ টাকা, ঠিক যেগুলো আমাদের দেশের খুচরা বাজারে গড়ে প্রতি পিস ৭০০০ টাকা করে বিক্রি হয়। "ক" ব্যবসার উদ্দেশ্যে বেশ বড় এক চালান নিয়ে আসে এই টুরিস্ট ব্যাগের। চট্টগ্রামে এসেই "ক" এখানকার সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার (যেখানে সাধারণ ক্রেতাই বেশী আসে) -এর ব্যাগের বাজারে এসে তার আমদানীকৃত পণ্যের বিপণন শুরু করে। সে প্রতিটি ব্যাগের দাম ঠিক করেন ২৫০০ টাকা। একে একে পুরো মার্কেটের কেউই তার ব্যাগ কিনতে রাজী হয় না, ৭০০০ টাকার ব্যাগের এত কম দাম সত্ত্বেও! তরুণ এই ব্যবসায়ী কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ব্যাগের দাম কমিয়ে ১৯০০ টাকায় নিয়ে আসে, বৃথা চেষ্টা, কেউ এবার-ও রাজী হয় না! নিরুপায় "ক" ঢাকার সব বড় বড় বাজারেও তার আমদানীকৃত পণ্যের বিপণন করে ব্যর্থ হয়।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিজ পদ্ধতিতে সৎ ও সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে না পেরে অবশেষে সে চট্টগ্রামে অন্য এক ব্যবসায়ী বন্ধুর শরণাপন্ন হয়, যার লবিং-এ সে চট্টগ্রামের ঐ বড় পাইকারী বাজারের ব্যাগের বাজারের বিক্রেতা সমিতির সভাপতিকে মৌখিক এবং আর্থিকভাবে সন্তুষ্ট করে এবং তার আমদানীকৃত সব ব্যাগ বিক্রি করতে সক্ষম হয়-- তবে বিক্রেতা সমিতির শর্ত ছিল এই যে সে আর কখনো একা এভাবে বিদেশ থেকে টুরিস্ট ব্যাগ আমদানী করতে পারবে না! ব্যাবসা করতে হলে তাকে একটি নির্দিষ্ট মার্কেটের বণিক সমিতির সদস্য হতে হবে, আমদানী-বিক্রি-লভ্যাংশ ভোগ-খুচরা মূল্য নির্ধারণ সবই হবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। আর সমিতির সদস্য হতে হলে মার্কেট ভেদে গুণতে হবে ৩০ লাখ থেকে শুরু করে তার-ও অধিক টাকা!! ভালো-খারাপ সব পেশাতেই আছে; কিন্ত ভালো এবং খারাপকে যখন একই সাথে বেঁধে দেওয়া হয়, তখন ভালো তার নিজ গতিতে চলতে পারে না, কারণ খারাপের সম্মোহনী শক্তি বেশী! ঠিক যেরকম সিস্টেমের ভিতরে পরে পুলিশ সার্জেন্ট ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও যানবাহন থেকে উতকোচ গ্রহণ করে, টিভির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখানো হয় সার্জেন্টকেই, কিন্তু না জানি সেই টাকা কতভাবে বন্টিত হয়...। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.