আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইনের শাসন বলতে আসলে কি বুঝায়

জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস নয়, জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক।

কথায় কথায় আমাদের নেতা নেত্রীরা বলে থাকেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বুদ্ধিজীবীরা হয়ত বলেন, দেশে আইনের শাসন বলে কিচ্ছু নেই। এই শাসন বলতে আসলে কি বোঝান আমাদের নেতা নেত্রীরা, বুদ্ধিজীবীরা? আমরাই বা কি বুঝি? আইনের শাসন নিয়ে আগে কিছু তাত্বিক কথা বলি। সতেরো শতকে এই “আইনের শাসন” শব্দজোড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রথম ব্যবহৃত হলেও এটার থিম খুঁজে পাওয়া যায় প্রাচীন দর্শনে।

এয়ারিষ্টটল বলেছিলেন, “আইনকেই শাসন করা উচিত”। প্লেটো লিখেন, “যদি আইন হয় সরকারের প্রভু আর সরকার হয় আইনের দাস, তখন সবকিছুতে একটা প্রতিশ্রুতি থাকে এবং তখন নাগরিক একটি রাষ্ট্রে ঈশ্বরের ঢেলে দেয়া পুরো রহমত উপভোগ করে” (জন কুপার, কমপ্লিট ওয়ার্কস অব প্লেটো, পৃঃ ১৪০২)। তাই বলে “আইনের শাসন” ধারণাটি কিন্তু পুরোপুরি ওয়েস্টার্ন কনসেপ্ট নয়। প্রাচীন চীনা দর্শনে দেখা যায়, যীশুর জন্মের তিন শতক আগে হান ফেই যি বলেন, শাসক (ব্যক্তি) নয়, শাসন করবে আইন, আর আইন হতে হবে লিখিত ও প্রকাশ্য। ইসলামী খলিফাদের শাসনামলে আইনের প্রাধান্যের উপর জোর দেয়া হয়।

বলা হয়, খলিফাও যদি আইন লঙ্ঘন করে, তবে আইন মোতাবেক তাঁকেও শাস্তি পেতে হবে। ১২১৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা জন বিখ্যাত দলিল “ম্যাগনা কার্টা”য় সই করেন। ফলে কিছুটা হলেও ইংল্যান্ডের শাসককূল আইনের অধীনে আসে। আধুনিক দর্শনে দার্শনিক আইনবিদ জন লক, মথেস্কু-র চিন্তা চেতনায় বার বার প্রতিফলিত হয় আইনের শাসন তত্ব। স্যামুয়েল রাদারফোর্ড বই লিখেন, “রেক্স লেক্স”, যার অর্থ, রাজা (রাজার কথা) আইন নয়, বরং আইনই রাজা।

বৃটিশ আইনবিদ, এ ভি ডাইসির কথা না বললে “আইনের শাসন” নিয়ে আলোচনা ঠুনকো। ডাইসি “আইনের শাসন” বলতে মূলতঃ নিম্নোক্ত তিনটি বিষয়কে বুঝিয়েছেনঃ ১। আইন ভংগ করা ব্যতীত কাউকে শাস্তি দেয়া যাবেনা। কেউ আইন ভংগ করেছে- তা সাধারণ আদালতে প্রমান হতে হবে। ২।

সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে সবাই আইনের চোখে সমান। ৩। ব্যক্তি-অধিকার বিচারিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। থিওরিটিকাল আলাপ হলো। বোঝাই যাচ্ছে, আইনের শাসন কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

স্বৈরাচার শাসকের স্বেচ্ছাচারিতার বিপরীতে আইনের শাসন কত বড় একটি রক্ষাকবচ। রাজা, বাদশাহ, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, আমলা, বিচারপতি, সেনা, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, উকিল, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, নেতা, রাষ্ট্রদূত, জেলে, কামার, রিকশাওয়ালা, লম্বা, খাটো, কালো, ফরসা, শিশু, বুড়ো, বৌদ্ধ, মুসলিম সবাই শুধুমাত্র আইনের অধীন থাকবে। শাসকের কথা বা ইচ্ছা নয়, রাষ্ট্র বা সমাজ চলবে আইন এবং শুধুমাত্র আইন দ্বারা। আইন-ই রক্ষা করবে নাগরিককে, আইন-ই ঠিক করবে নাগরিকের অধিকার, দেবে নিরাপত্তা, নাগরিকের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করবে আইন, কোন ব্যক্তি নয়। আইন হতে হবে পরিষ্কার, মানুষ যাতে সহজে বুঝতে পারে।

আইনের আশ্রয় যাতে সবাই সহজে পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। আদালতে সবাই যেতে পারবে। বিচার বিভাগ থাকবে নির্বাহী বিভাগ বা অন্য যেকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রভাব হতে স্বাধীন। বিচারক হবেন নিরপেক্ষ ও স্বাধীন, তবে স্বেচ্ছাচারী নয়। বিচারক সব পক্ষকেই শুনবেন, সমান সুযোগ দেবেন।

আদালত হবে প্রকাশ্য। গোপনে গোপনে যেনতেনভাবে বিচার করে শাস্তি দেয়া যাবেনা কাউকে। আইন বিভাগ তো আবার খারাপ (অনেকে বলেন, কালো) আইনও প্রনয়ণ করতে পারে। কাজেই প্রণীত আইন আবার জনস্বার্থবিরোধী হোলো কিনা, বিচার বিভাগ তা খতিয়ে দেখবে, প্রয়োজনে বাতিল করবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.