আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ , বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার ব্যর্থ

ইয়া

বর্তমান সরকার দেশে বিচার বর্হিভূত অনেক হত্যাকান্ড চালিয়েছে। নিরপরাধ বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদেরকে হত্যা, কারাগারে আটকে রাখার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। নিউইয়র্ক-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, আওয়ামী লীগ সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন বন্ধ এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ সামগ্রিক মানবাধিকার নিশ্চিতের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। গত সোমবার ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট-২০১১’ শিরোনামের বিশ্ব প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অধ্যায়ে এইচআরডব্লিউ এ কথা বলেছে। ৬৪৯ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বিশ্বের মোট ৯০টি দেশ ও ভূখণ্ডের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ, পোশাক শ্রমিকদের হয়রানি ও তাঁদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের মামলা থেকে অব্যাহতি, নারী ও শিশু অধিকার, সীমান্ত হত্যা, দুর্নীতির মামলায় বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরণ এবং শরণার্থীদের অবস্থা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি বা যেকোনো সংস্থার প্রতি তারা কোনো রকমের সহিষ্ণুতা (জিরো টলারেন্স) দেখাবে না। কিন্তু সরকার সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হাতে একের পর এক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে থাকলেও সরকারকে তা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এমনকি ২০১০ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হওয়ার ঘটনায় র‌্যাবের দায় অস্বীকার করেন।

র‌্যাবের দেওয়া তথ্য মতে, ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তাদের হাতে ৬২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে র‌্যাবের দাবি, তাঁরা সবাই ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা সবাই সন্ত্রাসী এবং র‌্যাবের ওপর হামলা করার পর আত্মরক্ষার্থে গুলি চালালে তাঁদের মৃত্যু হয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায়ে এখন পর্যন্ত র‌্যাবের একজন সদস্যেরও বিচার হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালের নভেম্বরে ‘ক্রসফায়ারে’ লুৎফর ও খায়রুল খালাশি নামের দুজন নিহত হওয়ার পর উচ্চ আদালত সুয়োমোটো রুলিং জারি করে দায়ী র‌্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সরকারের কাছে তা জানতে চান।

কিন্তু ওই মামলার শুনানি এখনো হয়নি। এইচআরডব্লিউর এশিয়া-বিষয়ক উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের চোখ বন্ধ করে থাকা উচিত হবে না। কারণ খোঁড়া যুক্তি দিয়ে কাউকেই বোকা বানানো যাবে না। সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের জুলাইয়ে সরকার জোরপূর্বক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করা হয়।

মাহমুদুর রহমান আদালতে অভিযোগ করেছেন, র‌্যাবের কর্মকর্তারা তাঁকে চোখ বেঁধে বেধড়ক পিটিয়েছেন এবং অনাহারে রেখে নির্যাতন করেছেন। এ ছাড়া ২০১০ সালের ২২ মার্চ রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে শহীদুল আলমের ‘ক্রসফায়ার’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী পুলিশ বন্ধ করে দেয়। পোশাক শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালে ন্যূনতম মজুরিকাঠামো নির্ধারণে আন্দোলনরত শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর ওপর সরকার কঠোর আচরণ শুরু করে। ওই বছরের ৩ জুন শ্রমিক অধিকার সচেতনতা-বিষয়ক সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) লাইসেন্স বাতিল করে সরকারের এনজিও-বিষয়ক ব্যুরো। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে পোশাক শ্রমিকেরা আন্দোলন করলে তাঁরা পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন।

পরে বিসিডব্লিউএসের কয়েকজন কর্মকর্তাকে পোশাক শ্রমিকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে আটক করা হয়। আটক করা ব্যক্তিরা তাঁদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার করতে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করা হলেও আইনটি এখনো আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে পারেনি। ২০১০ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের পাঁচ নেতাকে ওই অপরাধের অভিযোগে আটক করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদে নারীরা থাকলেও বাংলাদেশে নারী নির্যাতন কমেনি।

২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৬ জন নারী এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া নারীহত্যা ও ধর্ষণের বহু ঘটনা ঘটেছে। দুর্নীতি মামলায় বৈষম্য প্রদর্শন প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারদলীয় বহু নেতা-কর্মীর মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা হলেও একই ধরনের মামলা থেকে বিরোধী নেতা-কর্মীদের অব্যাহতি দিতে সরকারের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়নি। সূত্র : প্রথম আলো,


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.