আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনেকের মাঝে কিছুটা ভিন্নধর্মিনী, কিছুটা ঐতিহ্য অবলম্বিনী ' তিনি '

---- পূর্বানুমতি ছাড়া এ ব্লগের কোন লেখা সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি, এডিট করে কপি , পূনর্মুদ্রণ নিষিদ্ধ ----

“ ............ আরে না আপা কি যে বলেন !! আমাদের কাদের ছেলে হিসেবে অনেক ভালো , ওর সমস্যা হবে না। আচ্ছা আপা, মেয়ে কিসে পড়ে ?? “ আম্মুর এ কথোপকথনে আমার ঠাস করে চেয়ার থেকে পড়ে যাবার উপক্রম। কাদের ভাইয়ের বিয়ে !! এতো তাড়াতাড়ি ?? যদিও কাদের ভাই একটি টেলিকম কোম্পানির কর্মকর্তা, তবুও তিনি আমার কাছে সেই ক্লাস টেন এর কাদের ভাই। পারিবারিক পূর্ব পরিচয় এবং চাকরির কারণে আমাদের পরিবার পাশাপাশি বাসায় ছিল। সৌভাগ্যক্রমে এখনো আছি।

উনার ব্যবহার, ব্যক্তিত্বের জন্যই উনাকে আগে থেকেই আমার ভালো লাগতো। সেই কাদের ভাইয়ের বিয়ে, ধ্যাত! মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল, কাজে (অকাজে ) উনার বাসায় অবাধ যাতায়াতে ফাটল ধরবে। মনে মনে ভাবলাম, জানি না কোন ডাইনীকে আনবে। একটু পরে শুনলাম, ভাবী নাকি এমবিএ করছেন। সারছে, ভাইয়ের লাইফ তো শেষ, ভাবী তো সারাদিন ক্যারিয়ার , কর্পোরেট এসব নিয়ে পড়ে থাকবে আর উনারে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবে।

আর আমারে সামনে পাইলে তো আর কথাই নাই, একগাদা জ্ঞান দিবে। সেই এক ভয় নিয়ে গেলাম উনার এনগেজমেন্টে, কি জানি কেমন পাবলিক এই ভাবী। যাওয়ার পর দেখলাম ভাইয়া বসে আছে, পাশে উনার হবু স্ত্রী। কাছে যেতেই ভাবী বললেন, ইমন কেমন আছো ? আমি তো পুরা থ’ , খাইছে ! ইনি তো আমার পুরা বায়োডাটা নিয়ে বসে আছে । আরেকটু এগিয়ে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞ্যেস করলাম।

দেখি আমার সম্পর্কে ভালোই জানে। হুম, একটু একটু কথা বলতে গিয়ে দেখি উনি ভালোই মিশুক। যাক বাবা ! যাই হোক, অন্তত মিশুক তো !! তারপর পরিচয়, ভাবীও দেখি বেজায় খুশি দেবরকে পেয়ে ( আফটার অল, বিল্ডিং এর মামু আমি, আমারে তো লাগবেই )। মনে মনে ভাবলাম, বাঁচা গেল, এমবিএ মানেই ডাইনী না। কিন্তু কেন জানি মন বলছিল, আমি মনে হয় আমার ভাবী না, পূর্বজন্মের কোন এক বোনের সাথে পরিচিত হলাম, কেন মনে হয়েছিল জানিনা।

তারপর ভাইয়ার থেকে নাম্বার নিয়ে উনার সাথে কথা বলা শুরু, চরম খাতির। একদমই বোনের মত উনি, খুবই ভালো ব্যবহার। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হল, কিভাবে এমন একটা মানুষকে আমি ডাইনী বানালাম, খুব লজ্জা পেলাম মনে মনে । উনার সাথে অনেক কিছু নিয়েই কথা হয়। অনেক জীবনবাদী উনি।

একদিন উনি কথাচ্ছলে বললেন, “ জীবনে বিয়ে করলে খুব সিম্পল কাউকে কর, দেখবে তোমার জীবন টা অন্যরকম হয়ে যাবে, তুমি অনেক হ্যাপি থাকতে পারবে “ আমি বিস্মিত। এরকম মানুষও কি হয় !! যেখানে আজ অধিকাংশই ভোগবাদী, যেখানে অধিকাংশই সারাদিন পড়ে থাকে টাকা নিয়ে, সেখানে তিনি শোনালেন অন্য কথা । খুব শ্রদ্ধা হল উনাকে। আসলেই জীবনে এত বেশী নেগেটিভ চিন্তা আমি করি যে পজিটিভ শুনলেই জানি কেমন লাগে। নিজের অনেক চিন্তাধারার সাথেই উনার সাথে মিল পেয়েছি।

পারিপার্শ্বিক বাস্তবতায় এরকম মানুষ পাওয়াই দুস্কর। নিজের বড় বোনের মত উনার জন্য আমার শ্রদ্ধার এক পর্যায়ে আমি উনাকে আপু বলে ডাকা শুরু করি। সেই যে শুরু, এখন তো উনি আমার পুরোদস্তুর বোন। উনাকে দুস্টুমি করে বললাম, আপনি তো আমার জন্য কিছুই করেন না, না আছে আপনার ছোট বোন যে আমি নিজেই কিছু করব আমার জন্য। ভাবী তো হাসতে হাসতে বললেন , "এমন কাউকেই এনে দিবো যাকে নিয়ে তুমি খুশি থাকো।

" বিয়ের পর আপুকে নিয়ে ভাইয়া এলেন বাসায়। আমি শুধু তাকিয়েই রইলাম। ভাইয়া-আপু কি অদ্ভুত মিল, মেড ফর ইচ আদার। ভাইয়ার জন্য উনি নিজেকে পরিবর্তন করতে শুরু করেছেন। আবার দেখি ভাইয়া সারাদিন অফিস করে যখন ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরেন, তখন আপু ভাইয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন।

তাছাড়া সারাদিন আনমনা হয়ে বসে থাকা তো আছেই !! সত্যিই কি ভালোবাসা ভাইয়ার প্রতি !! নিজেকে গর্বিত মনে হল এমন কলুষিত সমাজে উনাদের মত ভিন্নমনা মানুষের সান্নিধ্য পেয়ে। দেখানে সবাই স্বার্থান্বেষী, সেখানে তিনি স্বার্থত্যাগী। সত্যিই অনেক কিছু শিখবার আছে উনার কাছ থেকে। আসলেই অনেকের মাঝে কিছুটা ভিন্নধর্মিনী, কিছুটা ঐতিহ্য অবলম্বিনী তিনি । কাদের ভাইয়ের বিয়ে দেখে আমার মনে হল, আমার নিজের দিন ঘনিয়ে আসছে......থাক বাকিটা না হয় নাই বা বললাম !! মানুষ কারণে-অকারণে বদলায়।

জানিনা বিয়ের পর আপু-ভাইয়া কেমন বদলাবেন। কিন্তু আমার এই প্রার্থনা যাতে এই জুটি উদাহরণ হয় আমাদের সবার কাছে , যে সমাজে এখনো এমন মানুষ আছে যারা ভোগবাদী না, যারা জীবনকে উপভোগ করে জীবনের মত করে। আল্লাহ আমাদের সবার জীবন যেন এরকম করে দেন, এই কামনা করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.