আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঐ দিনগুলো কেমন ছিল - ৩



ঐ দিনগুলো কেমন ছিল - ১ ঐ দিনগুলো কেমন ছিল - ২ ভালোই কাটছিল দিনগুলো। সারা সপ্তাহ মোবাইলে কথা চলত, আর সপ্তাহান্তে ক্লাস ফাঁকি। মোবাইলে কথা-বার্তার এক পর্যায়ে জানা গেল মহাশয় থাকে এমন এক জঙ্গলে যেখানে সন্ধ্যা হতে না হতেই সবাই দোকান-পাট বন্ধ করে ঘুমের আয়োজন করে। ব্যস আর কি, জঙ্গলের রাজার নাম হয়ে গেল টারজান। আর তার রাণীর নাম? সবাই তো জানেই।

তা আমাদের এই সুখ কি আর ষড়যন্ত্রকারীদের সহ্য হয়? উঠে পড়ে লাগল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ষড়যন্ত্র সফল করতে। কিন্তু সামনে আমার পরীক্ষা, আমার ছোট বোনের পরীক্ষা। এমনিতেই বড় বোনের অনুষ্ঠানের সময় আমি ছাড়া বাকী দুই বোনের পরীক্ষা ছিল বলে ওদের উপর অনেক ঝামেলা গিয়েছে, ছোট বোন তাই বলেই রেখেছে এইবারও যদি ওর পরীক্ষার মধ্যে কিছু করা হয় তো সে কারও সাথে আর কথাই বলবে না, কারুর বাসায়ও যাবে না, অনুষ্ঠানে তো পা-ও রাখবে না। কাজেই পরীক্ষার দোহাই দিয়ে ষড়যন্ত্রের মূল পর্বকে পিছিয়ে দেয়া গেল। মূল পর্ব পেছালেও প্রাক-ষড়যন্ত্রের দিন ঘনিয়ে এল।

ফেব্রুয়ারীর ২১ তারিখ স্থির হল এই পর্ব সম্পন্ন করার জন্য। আব্বার সাথে ছোট বোন আর আমি গেলাম আংটি আনতে। ছেলেদের আংটির তেমন কোন ভ্যারাইটিজ পাই না, সবই এক ধরণের। এর মধ্যে থেকেই একটা পছন্দ করলাম। স্বর্ণের দোকানে কিছু কিনলে সফট ড্রিংকস খাওয়ানোর একটা রেওয়াজ আছে।

এরাও তার ব্যতিক্রম করল না। ঐ সময় পেপসি ব্লু নতুন নতুন বের হয়েছিল। দেখে মনে হয় গ্লাস ক্লিনার মিঃ হোয়াইট, খাওয়ার আর রুচি হয় না। দুই চুমুক খেয়ে আর পারলামও না। ওদিকে আব্বা আর ছোট বোনও বলে চলেছে, কি বিচ্ছিরি জিনিস রে বাবা, কোথায় পেয়েছে এই জিনিস, কার মাথা থেকে এই জিনিস বানানোর বুদ্ধি বের হল, এই জিনিস খায় কেমনে মানুষে।

বলে চলেছে ঠিকই, আবার সেই সাথে চুমুকও দিয়ে চলেছে। পরে দেখা গেল দুজনেই বোতল খালি করে ফেলেছে, তবু গজ গজ করা এখনও থামেনি। আমি বললাম, তোমাদের কাছে মনে হয় ভালোই লেগেছে পেপসি ব্লু । ওরা বলল, আরে ছি ছি, এই জিনিস মুখেই তো দেয়া যায় না। তাহলে দুজনেই বোতল খালি করে ফেললা কিভাবে? ছোট বোন বলল, আমার খুব পিপাসা পেয়েছিল, তাই খেয়েছি।

আব্বা বললেন, ফাউ জিনিস এমনি এমনি রেখে দিব নাকি? যা হোক, আংটি কেনা হয়ে গেল। দিনটাও ঘনিয়ে এল। পেঁয়াজ রঙের নতুন কোরা কাতান শাড়ির সাথে বড় বোন তার বিয়ের ওড়না পরিয়ে আমাকে একেবারে বউ সাজিয়ে দিল। ঐজন্যই মনে হয় একটু বেশিই লজ্জা লাগছিল। সবার মাঝে চোখ তুলেই তাকাতে পারছিলাম না আর।

ড্রয়িং রুমে যেখানে সবাই বসেছিল সেখানে মাথা নিচু করে ঢুকলাম। কে জানি আস্তে করে বলল, লম্বা আছে তো বেশ। আমি মনে মনে বলি, হাই হিল পরেছি তো, সেটা তো আর দেখতে পাচ্ছেন না, হে হে। এক মুরুব্বী তার পাশে আমাকে জায়গা করে দিল বসার জন্য। যাব্বাবা, আমি কি মুরুব্বীর পাশের বসতে এসেছি নাকি ।

কিছু বলতে তো পারছিই না, চোখও তুলতে পারছি না, জানি যে এই রুমের শুধু এক জোড়া ছাড়া আর প্রতি জোড়া চোখ আমার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে। ঐ এক জোড়া চোখের মালিক যে কোথায় বসেছে কে জানে। একটু খানি তুললাম চোখ, কারুর মুখের দিকে না, কোলের দিকে। খুব সাবধানে ঐটুকুর মধ্যেই চোখ দুটো পুরোটা ঘরে একবার বুলিয়ে নিলাম। হ্যাঁ, মনে হয় পেয়েছি যাকে খুঁজছি।

এক কোণায়, একেবারে কোণায় নীল পাঞ্জাবী পরা একটা কোলে খুব সাবধানে আলতো করে রাখা এক জোড়া পরিচিত হাত। কিন্তু তাকে এভাবে এক কোণায়, এত দূরে বসিয়ে রেখে কী গভীর ষড়যন্ত্র করতে চাচ্ছে এরা? এক মমতাময়ী তার হাতে আমার হাতটা তুলে নিলেন। প্রথমেই আমার তর্জনীতে পরাতে গেলেন আংটি। পেছন থেকে আমার সখী আস্তে করে বলল, আন্টি, এই আঙ্গুলে না। মমতাময়ী এবার আমার মধ্যমায় আংটি পরিয়ে দিচ্ছিলেন।

সখী আবারও বাধা দিল। এবার তিনি আমার অনামিকায় পরিয়ে আজকের অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য সফল করলেন। আব্বাকে দেখতে পেলাম নীল পাঞ্জাবীর দিকে এগিয়ে গেলেন। আন্দাজ করলাম ওখানেও এমনই কিছু ঘটে গেল। দুটো মানুষের ভবিষ্যৎ বাঁধা হয়ে গেল শুধু দুটো আংটি পরানোর মধ্য দিয়ে।

ষড়যন্ত্র প্রায় সফল। এখন শুধু চুড়ান্ত পর্ব বাকী। সবাই এই খুশীতে হাত তুলে দোয়া করল। কিন্তু এই জিনিসটা কেউ খেয়াল করল না, যাদের জন্য এই সমস্ত আয়োজন তারা এখনও কেউ কাউকে পাশে পায়নি । পরে বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছিলাম, এক ভাবীর খুব ইচ্ছা ছিল রাজা-রাণীকে একান্তে কিছু মুহূর্ত একা (মানে দোকা আর কি) কাটাতে দিবে, নিদেন পক্ষে পাশাপাশি বসিয়ে ছবি তোলা হবে।

কিন্তু ঐ বেরসিক মুরুব্বীর সামনে সেও মুখ খোলার সাহস পায়নি। এজন্য ঐ ভাবীকে পরে ঝাড়িও খেতে হয়েছে টারজানের কাছে, যেমন খেয়েছে টারজানের জানের দোস্তরা। এই কিনা তাদের জানের দোস্তির নমুনা? তারাও কি না মুরুব্বীদের সাথে মিলে টারজান-বড় বিলাইকে দূরে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্রে সামিল হয়ে গেল! মুরব্বীদের ষড়যন্ত্র বড়ই বেদনাদায়ক পর্যায়ে চলে গেল যখন তারা জানালেন গায়ে হলুদের নামে কোন বেলেল্লাপনা তারা মেনে নিতে পারবেন না, কাজেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান বাতিল। তারপরও গায়ে হলুদ হয়েছিল বটে। সেই গল্প আরেক দিন।

চলবে..............

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।