আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইরানের দিনগুলো - ১

অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম ইরান ভ্রমণ নিয়ে লিখব। কিন্তু লেখা হয়ে উঠছিল না। এর মধ্যে মেজপা আমার পিচ্চিকালের লেখাটা ছয় পর্বে ভাগ করে ব্লগে দিয়ে দিল, তাও আবার আমাকে না জানিয়েই। যা হোক, আমি না হয় আমার মত করেই আবার লিখি (যদিও ঐ লেখাটুকুও আমারই)। সতের বছর আগের কথা।

ঠিকমত সবকিছু মনেও নেই। ঘটনা কিছু আগে-পরে হয়েই যাবে। তারপরও দেখি চেষ্টা করে কতটুকু পারি। ক্লাস নাইনে পড়ি তখন। আরও ছোটবেলা থেকে, ক্লাস ফোর-ফাইভে থাকতেই ক্বেরাত শেখা শুরু করেছিলাম।

নানান প্রতিযোগিতায় অংশও নিতাম তখন থেকেই। মনে করেছিলাম এটাও বুঝি অমনই একটা প্রতিযোগিতা, আম্মা যখন বললেন এর জন্য প্রস্তুতি নিতে। কিন্তু ঠিক আগের রাতে জানতে পেরেছিলাম যে এটা আসলে একটা বাছাই পর্ব, যেখানে নির্বাচিত হলে মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ হবে যেটা অনুষ্ঠিত হবে ইরানে। ভয়ে সারারাত মনে হয় ঠিকমত ঘুমাতেও পারিনি। তারপর কিভাবে কিভাবে প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়ে গেলাম সেই গল্প ডায়রীতে লিখেছি।

এরপর চলতে থাকল প্রস্তুতি। তার গল্পও কিছুটা ডায়রীতে এসেছে। সে সময় আম্মা মোটামুটি দৌড়ের উপর রাখতেন। ক্বেরাত প্র্যাকটিস করতে বসাতেন জোর করে। আমার মত অলস মানুষের পিছনে লেগে না থাকলে তো চলবে না।

মেজপা বলত, আমি এতদিন ভাবতাম বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা প্র্যাকটিসের এত সুযোগ পেয়েও কেন দেশের বাইরে গিয়ে খারাপ খেলে? এখন সামনা-সামনি দেখে বুঝতে পারছি, ওরাও এইরকম আলসেমীই করে নিশ্চয়ই। এমন কি ছোট ভাইটাও ঐ সময় আমাকে শাসন করত। মাত্র ক্লাস টু-তে পড়ত, আমাকে বকা দিয়ে বলত, এই তুমি বসে বসে সময় নষ্ট করছ কেন? যাও ভিসিআর দেখ। আমরা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি। ভিসিআরের কাহিনী হল, ক্বেরাতের কিছু অডিও আর ভিডিও ক্যাসেট ছিল, ওগুলো শুনে শুনে প্র্যাকটিস করতাম।

ছোট ভাই সেটাই বুঝাতে চাইছিল। টুকটাক প্রস্তুতি নিয়ে রাখছিলাম, যদিও ফ্লাইটের তারিখটা নিশ্চিতভাবে জানা ছিল না। বিশেষ করে মেজপা আমার লাগেজ একটু একটু করে গুছিয়ে রাখছিল আগে থেকেই। বড়পা একদিন শপিং-এ নিয়ে গেল টুথব্রাশ, মিনি সাইজের টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, তেল, সাবান আর টুকটাক জিনিসপত্র কিনে দিতে। পুরো সময়টাই আমি এত টেনশনের মধ্যে থাকতাম যে নিউমার্কেটের শুকনো খটখটে রাস্তায়ও কিভাবে যেন দুই পা ছড়িয়ে ধপাস করে পড়ে গিয়েছিলাম।

এর মধ্যে একদিন আম্মা ব্যাংকের কিছু কাজ করতে আমাকে সাথে নিয়ে গেলেন। ওখান থেকে ফিরে এসে শুনি ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে ফোন এসেছিল, আগামীকাল সকাল এগারটায় ফ্লাইট। আমার মাথা ঘুরাতে থাকল। মেজপা আমাকে শান্ত করে বসিয়ে বলল, এত টেনশনের কিছুই নেই। আমি তোমার লাগেজ গুছিয়ে দিচ্ছি, তুমি শুধু দেখে নাও কোথায় কী রাখলাম।

সব কাপড় ইস্ত্রী করে ঢুকিয়ে টুকটাক জিনিসগুলো কোথায় কী রাখল সব আমাকে দেখিয়ে দিল মেজপা। আমি টেনশনে কোন কথাই বলতে পারছিলাম না, খালি হুঁ হুঁ করে গেলাম। রাতে যখন সব ভাই-বোন একসাথে বসে গোছ-গাছের ফিনিশিং টাচ চালাচ্ছি, আব্বা সে সময় ছোট ভাইকে পাশের ঘর থেকে ডাক দিলেন। কিন্তু ছোট ভাইয়ের তখন আমাদের ছেড়ে এক মুহূর্তও কোথায় যেতে ইচ্ছা করছিল না। একটু পর ছোট বোন ওকে বলল, আব্বা না তোমাকে ডেকেছেন? যাও শুনে আসো, নাইলে দেখবা যে কালকে আপুনিকে এয়ারপোর্টে নিয়ে যাওয়ার সময় তোমাকে সাথে নিবে না।

ছোট ভাই ভেবে দেখল আসলেই তো সেরকম হতে পারে। কিন্তু আব্বা ডেকেছেন বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে গিয়েছে। সে দৌড়ে পাশের ঘরে যেতে যেতে বলল, কী হইছিল আব্বা? সেই রাতে খুব একটা ঘুমাতে পেরেছিলাম কি না ঠিক মনে নেই। তবে খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। তৈরী হয়ে পুরো পরিবারসহ রওনা দিলাম ইসলামী ফাউন্ডেশনে, সেখান থেকে সব প্রতিযোগী আর সুপারভাইজাররা একসাথে রওনা দিলাম এয়ারপোর্টে।

কিন্তু সবাই এলেও একজন প্রতিযোগী তখনও এসে পৌঁছায়নি। তাকে বারবার ফোন দিয়েও পাওয়া যাচ্ছিল না। সিনেমার মত এয়ারপোর্টে একেবারে শেষ মুহূর্তে সে দৌড়ে দৌড়ে ঢুকল একটা ছোট সাইডব্যাগ আর ছেঁড়া স্যান্ডেল পরে। আসলে ওর কাজিনরা ওর সাফল্যে এতই ঈর্ষান্বিত ছিল যে ফোন করে বারবার জানানো সত্ত্বেও খবরটা তার কাছে পৌঁছে দিচ্ছিল না। শেষ মুহূর্তে ফোনটা সে নিজে ধরে খবর পেয়ে সাথে সাথে এক কাপড়ে চলে এসেছে।

যা হোক, তবু আসতে পেরেছে এতেই সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। ভাগ্য ভালো যে আমাদের সবার পাসপোর্ট, ভিসাসহ অন্যান্য জরুরী কাগজপত্র আমাদের সুপারভাইজারের কাছেই ছিল। আমরা রওনা দিলাম। আমি টেনশন তখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ডিপার্চার লাউঞ্জে ঢুকবার আগে সবাই পিছন ফিরে সবার আত্মীয়ের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল।

একমাত্র আমি কোনদিক না তাকিয়ে সোজা ঢুকে গেলাম। আমার মাথা কাজ করছিল না একদম। কিন্তু আমার এই আচরণে আমার বাসার সবাই যে কেমন কষ্ট পেয়েছিল সেটা পরে বুঝতে পেরেছি। নাহ, আমি হাবিজাবি এত যে কেন লিখি। রাইসুল জুহালা ঠিকই মন্তব্য করেছিল।

চলবে.......... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.