আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এবং বৃহৎ সংকোচন

বিপ্লবী : ভার্চ্যুয়াল পৃথিবীর
এ মহাবিশ্বের এমন কোনো স্থান খূঁজে পাওয়া যাবে না যা মূলত স্থির রয়েছে। আমাদের ক্ষুদ্র এ পৃথিবীও সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রতি সেকেন্ডে ১৬ মাইল বেগে ছুটে চলেছে। সূর্য গ্যালাক্সিকে আবর্তন করে চলেছে তার সমস্ত পরিবার নিয়ে। আমাদের মিল্কওয়ে গ্যালাক্সি, যার ব্যাস হচ্ছে এক লক্ষ আলোকবর্ষ সেও সূর্যের কক্ষপথকে ২৪০ মিলিয়ন বছরে একবার আর্বতন করছে। আইনস্টাইনের চোখে যেমন কোনো কিছুই ধ্রুব নয় তেমন্ মহাবিশ্বের পরম স্থিতি বলেও কিছু নেই।

মহাবিশ্বের প্রতিটি অনু পরমানু ও গতিশীল। গ্রিক বিজ্ঞানী অ্যারিস্টল পৃথিবী কে মহাবিশ্বের কেন্দ্র করে অসীম মহাবিশ্বেটাকে একদম ছোট করে ফেলেছিলেন। চরম ভুল করেছিলেন তিনি। নিউটনের পক্ষেও মহাবিশ্বের কেন্দ্র নির্ণয় করা সম্বব হয়নি। মহাবিশ্বের কেন্দ্র নির্ণয় আদৌ সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ আছে।

১৯২৯ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবল ঘোষনা করেন যে গ্যালাক্সি সমূহ প্রতিনিয়ত আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এ তথ্য থেকে আপাতদৃষ্টিতে অ্যারিস্টটলের ধারনাই সঠিক মনে হতে পারে । আসল ঘটনা হচ্ছে হাবল যদি পৃথিবীর বাইরে অন্য কোন গ্রহে বসে এরকম ঘোষনা দিতেন তবে তিনি একই কথা বলতেন। মূলত আমাদের মহাবিশ্ব সব জায়গা থেকে প্রসারিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এ মহাবিশ্বের সম্প্রসারন ঘটছে।

আর এ সম্প্রসারনীল মহাবিশ্বের কথাই বলেছেন বিজ্ঞানী এডউইন হাবল। ব্যস্ততম এ সম্প্রসারনশীল মহাবিশ্বের ধারণা থেকেই বিজ্ঞানীগন এ প্রশ্নের স্বচ্ছ উত্তর খুঁজে পেয়েছেন। এটি সমস্ত মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বের এমন একটি অবস্থা যখন অসীম ঘনত্বের এক উত্তপ্ত বিন্দু ব্যতীত সমস্তটাই সীমাহীন শূন্য। এই অসীম ঘনত্বের বিন্দুটিকে সিঙ্গুলারিটি বলা হয়। সিঙ্গুলারিটি নামক এই অসীম ঘনত্বের উত্তপ্ত বিন্দুটির মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমেই মহাবিশ্ব ছড়িয়ে পড়ে।

মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রাথমিক এ ঘটনাকে বিগ ব্যাংগ থিওরি বলা হয়। এ বিগ ব্যাংগ সংঘটনের মাধ্যমেই সময়ের সৃষ্টি হয়। আজ থেকে প্রায় ১৩০০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাংক পর্যায়ে শীতল ও ঘনীভূত অবস্থায় সৃষ্টি হয় গ্যালাক্সি। গ্যালাক্সিগুলোর অভ্যন্তরে চক্রাকারে ঘূর্ণায়মান নীহারিকা ঘনীভূত হয়ে তৈরি হয় নক্ষত্র। গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের থেকে প্রতিনিয়ত দূরে সরে যাচ্ছে।

যে সমস্ত গ্যালাক্সির দূরত্ব অন্য গ্যালাক্সির থেকে যত বেশি সে সমস্ত গ্যালাক্সির দূরে সরে যাবার বেগও তত বেশি। এভাবেই মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে যে সম্প্রসারন শুরু হয়েছিল বিগ ব্যাংগ সংঘঠিত হওয়ার মুহূর্ত থেকে। মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে হতে বিরাট আয়তন প্রাপ্ত হবে এবং তারপর আবার চুপসে যাবে। এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম বইয়ে এমনটিই লিখেছেন তাত্ত্বিক পর্দাথবিজ্ঞানী স্টিফেন ডব্লু হকিং। এ মহবিশ্ব যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে তেমনি এক সময় সংকুচিত হবে।

বর্তমানে প্রাপ্ত উপাত্তহতে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন এ মহাবিশ্বে হয়তো সমতল এবং অসীম সময় পর্যন্ত এর সম্প্রসারণ চলতে থাকবে এবং এরপর থেমে যাবে। পরে হয়তো নক্ষত্রপুঞ্জসমূহ পরস্পরের দিকে ধাবিত হবে এবং সংকোচন ঘটাবে। স্টিফেন হকিং এর মতে এক অর্থে কৃষ্ণগহ্বর থেকে দূরে থাকলেও (বিশ্ব চুপসে গেলে বা সংকোচিত হলে) আমাদের সবার মৃত্যু অবধারিত। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এ মহাবিশে¡র প্রতিটি বস্তুই ইলেকট্রন প্রোটন এবং নিউটন এ তিনটি মৌলিক কণিকা নিয়ে গঠিত। কোনো বস্তু হতে যখন কোয়ান্টাম বা ফোটন নির্গত হয় তখন আমরা উক্ত বস্তুকে দেখতে পাই।

মহাবিশ্বে এমন অজস্র বস্তু রয়েগেছে যা আজও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা এরকম বস্তুর অস্তিত্ব আছে এবং শুধু অস্তিত্বই নয় বরং তা আমাদের পরিচিত বস্তু সমূহকেও পরিমানে ছাড়িয়ে যাবে। ধারণা করা হয় মহাবিশ্বর ৯০ শতাংশ এ অনাবিস্কৃত বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত। এ অদৃশ্য বস্তুসমূহকে ডার্ক ম্যাটার বলা হয়। এ অনির্ণীত ডার্ক ম্যাটার এর অদৃশ্য শক্তিই মহাবিশ্বকে পরিচলিত করেছে বলে ধারনা করা হয়।

মহাবিশ্বের ভারসাম্যও বজায় রাখছে ডার্ক ম্যাটার। সাম্প্রতিককালে বহু বছর পূর্বের দুটি বিশাল গ্যালাক্সির মধ্যাকার সংঘর্ষের তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণ করে গবেষকরা ডার্ক ম্যাটার এর অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রায় নিশ্চিত হতে চলেছেন। এ ব্যাপারে ম্যাক্সিম মার্কেডি এর মন্তব্য হচ্ছে বিগ ব্যাংয়ের পরে এটাই সবচেয়ে বড় মহাজাগতিক ঘটনা। ভবিষ্যতে যদি ডার্ক ম্যাটার এর অস্তিত্ব পুরোপুরি ভাবে নির্ণয় করা যায় তবে এ মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি সম্পর্কে সঠিক বিষয় বির্ধারন করা যাবে। অতএব মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.