আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামান্য এক রিক্সা চালকের কাছ থেকেই শিখলাম- নগদ টাকা পাওয়ার আশা বাদ দিয়ে কি করে সু-বিচার করা যায় !!! এই মুহুর্তে সে যেন আমার কাছে এক চেতনার নায়ক ।

অজানাকে জানতে এক দূর্নিবার যাত্রা।

............... সত্যি অবাক হয়েছি দুপুরের সেই ঘটনার জন্য। কষ্টও পেয়েছি অনেক। কখনো চাই নি , স্বপ্নেও ভাবি নি এমনটি হবে তবুও ঘটনাটি ঘটে গেছে !!! তাই এখন মনটা অনেক বিষন্য। অপারগতা ও অশায়তা আমাকে কেন জানি কুরে কুরে খাচ্ছে।

সত্যি আমি চেয়েছিলাম কিছু করতে , অপেক্ষাতেও ছিলাম অনেকক্ষন কিন্তু সে তো আসে নি !!! আর কি কখনও আসবে কিংবা জীবনে আর কি কোন দিন দেখা হবে ??? ............... দুপুর ঠীক ১২ টার দিকে হঠাৎ করে ফ্যামিলি কাজে জেতে হবে আমার আন্টির বাসায় কিন্তু যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। তবুও যেতে হবে- একরকম মনমরা হয়ে মটর বাইকটা বের করে রাস্তায় গেলাম কিন্তু ভাল লাগছিলো না তাই আমার এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে ডেকে আনলাম। তারপর দুজনে আন্টির বাসা থেকে ঘুরে বাড়ি ফেরার পথে- আমার বন্ধূটি বল্লো- একটু দে বাইকটা চালাই। চালায় ভালোই - আমার কাছ থেকে শিখেছে বলে বলছি না। কিছু সময় চালানোর পর- হটাৎ একটি রিক্সার সাথে ধুম করে মেরে দিল।

নতুন চালক বলে এমনিতে ধিরে চালাছিলো এবং বরাবরই রাস্তার প্রায় ধার ঘেষে। সামনের একটা রিক্সাকে ওবারটেক করতে গিয়েই ঐ রিক্সা চালকটা আসে আমার বাইকের সামনে। আমার বন্ধুটা ঠিক বুঝে ঊঠার আগেই দেখি ,আমারা দুজন রাস্তার ঊপর পরে আছি । মটর বাইকের সামনের বাম্পার ও পা ব্রেক একেবারেই ভেঙ্গে গেছে। ইঞ্জিন কাবারটাও পরে আছে মাটিতে ।

ভাগ্য ভালো আমাদের তেমন কোন ক্ষতি হয় নি। আমার বন্ধুটি শুধু হাতে ও পায়ে একটু চোট পেয়েছিল। আর- ঐ রিক্সা চালকটার যা তা অবস্থা। তার রিক্সার তিনটা চাকাই বোঁচা হয়ে গেছে। তার মাথায় হালকা আঘাত লাগলেও পা ফেটে অঝর ধারায় রক্ত ঝরছে এমন কি মুত্রথলিতেও প্রচন্ড আঘাত পেয়ে -সব মিলিয়ে যা তা অবস্থা।

সে কেমন যেন এবনরমাল হয়ে রাস্তার ঊপর গরাগরি খাচ্ছে। তার পেসেঞ্জার ছিল এক ভদ্র মহিলা আর সম্ভবত তার স্বামি । ঊনাদের বেশ চট না লাগলেও পেয়েছিল খানিকটা। চোখের নিমিষেই জামায়েত হয়ে গেল অসংখ মানুষ। ঐ এলাকার বেশ কিছু যুবকেরা ঘিরে ফেল্লো আমাদের মারমুখি তাদের কথাবার্তা।

এর আগে কখনো এক্সিডেন্ট হয় নি আমার তাই কিছুটা হতবাক হয়ে যাই। রাস্তায় বিসাল জ্যামের সৃষ্টি হল। এক পর্যায়ে ঊত্তপ্ত জনতা এসে আমদের বল্লো - লোকটা গরীব এর যা অবস্থা কমপক্ষে ৭ দিন কাজ করতে পারবে না। রিক্সার যা অবস্থা এটা সারাতেও অনেক টাকা লাগবে । তাই ভদ্র লোকের মত যাবতীয় খরচের টাকা দিয়ে মার না খেতে চাইলে এখান থেকে কেটে পরেন।

আমি বিনয়ের সহিত বললাম আমার কাছে খুব বেশি টাকা নেই। আপনেরা যেভাবে বলছেন তা পূরন করা আমার পক্ষে মোটেই সম্ভব না। আমি অবাক - তারা বলে মিথে কথা বলার জায়গা পাওনা মিয়া,আটকে রাখব বাড়িতে খবর দাও । আমি কিছু না বলে ঐ চালকটির কাছে গিয়ে বললাম ভাই- আপনি আমার অনেক সিনিয়র। আমি খুবই দুঃখিত এটা আমি চাই নি আর আমার বন্ধু ও ইচ্ছে করে এটা করে নি ও খুব ভাল চালায়।

কিন্তু... বিশ্বাষ করেন আমার কাছে ওত টাকা নেই। আপনি যদি ভাবেন আমি দোষী দু গালে দুটো থাপ্পর মারেন কিংবা আমার সাথে আমার বাড়িতে চলেন নয়তোবা আমার বাইকটা আপনার হেফাজতে রেখে দিন আমি বাড়িতে গিয়ে টাকা এনে আপনার সব ক্ষতি পুষিয়ে দেব। অথাচ লোকটি কিছুই বল্লো না শুধু ফেল ফেল করে চেয়েছিল আমার দিকে। মনে হয় তখনও তার ঘোর কাটে নি। এ সময় মুরুব্বি গছের একটা লোক এসে আমাকে বলে- ওর সাথে কথা বলার দরকার নেই, পাওনা মিটিয়ে যাও আমরা দেখছি ।

এক পর্যায়ে সবাই প্রায় আমাদের বাইকটা আটকে রাখার মত অবস্থা করবে ঠিক সেই সময় - ঐ চালকটি এসে সবাইকে বলে ঊনাদের কোন দোষ নেই!!! সবই আমার কপালে ছিল - শুধু শুধু ঊনাগরে হয়রানি করছেন কেন??? তার পর আমাকে বলে- আপনেরা যান গা ,এই হানে থাকলে সবাই মিল্লা আপনেগরে থ্যেন ট্যাহা খসাইবো। আমার কিছু লাগবো না এডা আমার কপালে ছিলো তাই হইছে। সবাইকে বলে- ঊনাগরে যাইবার দেন সরেন এইহান থাইক্যা। সবাই কিছূটা সরার পর আমি চট করে মানি ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে দেখি সে বসে পরে কেমন যেন কাত্রাচ্ছে । তার কাছে গিয়ে বিনয়ের সহিত বললাম ভাই- এইটা কিছু না মনে করে শুধু আপনার রিক্সার চাকা ঠিক লরার জন্য দিলাম।

আপনি আজ সন্ধায় বাজার স্টেশন গীতাঞ্জলি অডিও ভিডিও দোকানের সামনে আসেন ওখানে আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে প্রতি সন্ধায় আড্ডা মারি। আমি সব ব্যাবস্থা করব বিশ্বাষ করেন। সে কিছুতেই টাকা নিতে চাচ্ছিল না তাই জোর করে তার তার হাতের মধ্যে দিতে চেয়ে ও পারিনি তাই বাধ্য হয়ে তার সামনে রাস্তায় রাখি। এবং বলি অবস্যয় কিন্তু আসবেন। সে শুধু ফিস ফিস করে বলছিল- এই হান থেকে যান নইলে বিপদে পরতে পারেন যান যান..... ইচ্ছে না থাকা সত্তেও চলে আস্তে হয় ঊত্তপ্ত পরিবেশের কারনে।

আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি তার ঐ অবস্থার জন্যে। এখনো চোখে চোখে ভাসছে তার ঐ চেহারাটা। আমি এতটাই অসহায় ছিলাম যে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারি নি। আমরা ছিলাম অপেক্ষায় কিন্তু সে আসে নি !!! কেন আসে নি তাও বুজতে পারছিনা শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছি। আমি সত্যি তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম মানবিক দৃষ্টিতে কিন্তু......


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।