আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"মধ্যবিত্ত সামান্য ত্যাগ করলে" -- এই সামান্য মানে কতটা আর মধ্যবিত্ত কারা??



মধ্যবিত্ত সামান্য ত্যাগ করলে দেশটার আরও উন্নতি হতো "মধ্যবিত্ত সামান্য ত্যাগ করলে দেশটার আরও উন্নতি হতো" -- মন্তব্যটি ড. নুরুল ইসলামের। তিনি অর্থনীতিবিদ। বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান। পাকিস্তান আমলে বহুল আলোচিত দুই অর্থনীতির অন্যতম প্রবক্তা । দীর্ঘদিন কাজ করেছেন জাতিসংঘ কৃষি ও খাদ্য সংস্থায়।

সম্প্রতি তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার প্রদান করে। এ সময় তিনি ঢাকায় অবস্থানকালে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে দেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি, বিশ্বমন্দা, দুর্নীতি ও খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। আলোচনায় আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরও। ঐ সময় তিনি এই মন্তব্যটি করেন । আমি আমজনতা ।

এত কিছু বুঝিনা । কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো এই সামান্য মানে কতটা? মধ্যবিত্তের ত্যাগ করতে করতে যেখানে পাছার চামড়া উঠে গেছে সেখানে উনি আর কতটা ত্যাগ করতে বলেন, কতটা ছাড় দিতে বলেন? সাধানর মানুষের জীবন চালাতে আজ নাভীশ্বাস । বাসায় ডিজিটাল এর বদৌলতে সারাদিন চলে বিদ্যুৎ এর সাথে আমাদের লুকোচুরি খেলা । ফলাফল বাসায় পানি থাকেনা । রান্নাঘরে চুলায় গ্যাস নাই ।

বাজারে জিনিসের আগুন দাম । ৪০টাকার মসুর ডাল কিনতে হয় ১৩০ বা তারও অধিক দামে । চিনি বা তেল যেগুলা নিত্য ব্যবহার্য পন্য সেগুলোর কথা আর নাই বললাম । রাস্তায় বের হলেই গাড়ি আর গাড়ি । বেশির ভাগই প্রাইভেট কার ।

বিলাসবহুল গাড়ি যেমন বি.এম.ডাব্লিউ, হ্যামার, জাগুয়ার ও চোখে পরার মত । এত গাড়ির ফাকে ২/১টা বাস দেখা যায় যেগুলোতে আমজনতা চলাচল করে । কিন্তু অবস্থা তো তার উল্টোটা হবার কথা । বি এন পি আমলে খবর চাউর হল বাংলাদেশ গ্যাস এর উপর ভাসতেছে । আমরা কোন কোন দেশের কাছে গ্যাস বেচবো, গ্যাস দিয়ে কি কি করবো সেটা নিয়ে আমাদের চু-চিল (চু-চিল এই কারনেই বললাম কারন এরা চুষে খেতে ওস্তাদ, আর এরা অনেকটা চিলের মত) সমাজ দিন রাত ব্যস্ত ।

আর এখন...গ্যাস এর অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ । সার কারখানা বন্ধ । বাসা বাড়িতে গ্যাস নাই । গ্যাসের পাম্প এ গ্যাসের চাপ কম । মাইলের পর মাইল গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ।

অথচ কোন নিয়ম নীতির বালাই ছাড়াই একের পর এক গড়ে উঠেছে হাজারে হাজার সি এন জি পাম্প । আমাদের ভাব সাব এমন যে গ্যাস আমরা বাতাস থেকে পাই । প্রাইভেট কার, পিক-আপ থেকে শুরু করে বাস, ট্রাক এমন কি বড় বড় কার্গো ট্রাকগুলোও সিএঞ্জি তে চলে । একদিন অফিস থেকে ফিরছিলাম অফিসের মাইক্রো তে । জ্যাম এর কারনে বসে আছি ।

ঠিক আমাদের পাশেই একটা কার্গো ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে । আমি গুনে দেখলাম সেটার নিচে ৬টা সিলিন্ডার । সব গুলাই ৬০লিটারের । তখন আমাদের মাইক্রোর ড্রাইভার ভাই বল্লো "স্যার সিলিন্ডার ৬টা না, ৮টা । " আমি তো আকাশ থেকে পরলাম ।

এও কি সম্ভব !! তখন বুঝতে পারলাম যে সেদিন আর বেশি দেরি নাই যেদিন বিদেশ থেকে আমাদের গ্যাস আমদানি করতে চলতে হবে । কিন্তু সব অর্বাচীন সরকার, তাদের পা-চাটা আমলা, আমাদের চু-চিল সমাজ কি এই সামান্য বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষন করেনা?? গ্যাস আমাদের আছে, ভালো কথা । তাই বলে এর যথেচ্ছ ব্যবহার আমরা করবো কেন? আমাদের কি উচিত ছিলনা যে অন্তত কিছু নিয়ম নীতি ঠিক করে দেয়া যে কোন কোন যানবাহন গ্যাস/সিএনজি এর আওতায় পড়বে? কোন হিসাবে ট্রাক সিএনজি এর আওতায় পরে সেটা আমার বোধগম্য নয় । একটা গল্প বলি: রাতে স্বা্মী, স্ত্রী শুয়ে আছে । সুখ-দুঃখের গল্প করছে ।

স্বা্মী স্ত্রী কে বলছে "এই বার যা ধানের চারা লাগাইছি সেটা যদি বড় হয় আর ফলন ভালো হয় তাইলে আল্লাহর রহমতে অনেক ধান পামু, আমাদের দুঃখের দিন আর থাকবোনা । " তখন স্ত্রী বলল "ধান বেইচা যা লাভ হইবো সেটা থেকে আমি কিছু কিছু করে টাকা জমাইয়া ১টা ভালো দেইখা গাই গরু কিনমু, বাচ্চাগুলান বড় হইতাছে, অগোর একটু ভাল মন্দ খাওন দেওয়ার দরকার । " তখন স্বা্মী বলল "যা দুধ হইবো তা আমরা খামু, বাচ্চারে খাওয়াইমু, বেশী হলে বাজারে বেচুম । " স্ত্রী বলল "যদি দুধ বেশী হয়, আধা সের দুধ আমি আমার বাপের বাড়িতে পাঠামু" । স্বা্মী তখন উঠে স্ত্রী কে আচ্ছা মত ধোলাই দিল ।

কান্নাকাটি শুনে আসেপাশের থেকে লোক চলে আসলো । পরের দিন বিচার বসলো । গ্রামের মাতব্বর স্বা্মীকে প্রশ্ন করলো “বউরে পিটাইছস কেন?” স্বামীঃ ওই মাগি আমার গাইয়ের দুধ ওর বাপের বাড়ি পাঠাইলো কেন? মাতব্বরঃ ঠিক ই তো আছে । বউ বাপের বাড়ি দুধ পাঠাইলো কেন? গ্রামের লোকঃ তোর আবার গাই আসলো কই থেকে আর তুই দুধ ই বা পাইলি কই থেকে? স্বামীঃ কেন, আমি ধান বুনছিনা ? ওগুলান বড় হইবো, ভালো ফলন হইবো, ধান বেইচা যা লাভ হইবো সেটা দিয়ে গাই কিনুম । বুঝেন তাইলে অবস্থা ।

আমাদের গ্যাস, ময়লা মাটির নিচে । আর সেটা নিয়ে আমাদের খাওয়া-দাওয়া শুরু হয়ে গেছে । আমাদের অবস্থাও একই । মন্ত্রী, এমপি রা নির্বাচন এর আগে ধান বুনে । আমরা আমজনতা সেটা নিয়ে লাফালাফি করি, স্বপ্ন দেখি ।

তখন তারাই আবার আমাদের পেদানি দেয় । আর তাদের গডফাদার রা বলে ঠিক ই তো করেছে । আপনার নামের আগে ডঃ আছে, আগে পরে হয়ত আরো অনেক বিশেষন আছে, অনেক পুরস্কার আপনি পেয়েছেন । দেশের বাইরে থাকায় দেশের সাথে আপনার যোগাযোগ কম । আপনি অর্থনীতিবিদ তাও পাকিস্তান আমলের ।

তাই আপনার চিন্তা ধারা ১৯৬০/১৯৭০ এর মদ্ধেই আটকে আছে । আপনি হয়ত জানেন না যে বাংলাদেশে এখন আর মধ্যবিত্ত বলে কোন শ্রেনী নাই । হয় উচ্চবিত্ত অথবা নিম্নবিত্ত । যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, ১মৌসুমের ফসল ভাল না হলে পরের মৌসুম না খেয়ে থাকতে হয়, জোৎদারের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হয়, আর সেই ঋণের সুদ মিটাতে মিটাতে ঘরের চাল, ভিটা-বাড়ি বিক্রি করতে হয় । আর এই সব জোৎদার’রা আবার নোবেল পুরস্কার পায় ।

আর আরেক শ্রেনীরা ২/৩মাস পরে পরে গাড়ির মডেল পালটায়, একের পর এক গার্মেন্টস গড়ে তোলে; ঈদ,পুজার আগে শ্রমিকদের বেতন বোনাস দিতে পারেনা আর নিজেরা রাতের বেলায় মদ দিয়ে গোসল করে । নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট করে আগামী দিনের বাসস্থান বানাতে ব্যস্ত থাকে, ধর্ম গেল, শিক্ষা গেল বলে রব তুলে আর নিজেদের ছেলে-মেয়ে কে বিদেশ পাঠিয়ে দেয় পড়াশুনা করতে । তার টাকা অঢেল কিন্তু ট্যাক্স, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনের বিল দিতে এদের অনেক অনিহা । ব্যাংকের কাছে এদের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ । এরাই আবার অনেক ব্যাংক এর চ্যেয়ারম্যান, এমডি হয়ে ব্যাংক চালায় ।

যে শরষে দিয়ে ভুত ছাড়াবেন সেই শরষের মধ্যে ভুত থাকলে কি করবেন? মাননীয় অর্থনীতিবিদ আপনি এখন দয়া করে বলবেন যে কারা আরেকটু ছাড় দিবে, কারা আরেকটু ত্যাগ করবে? আপনি, আমি সকলেই জানি যে ছাত্র রাজনীতির চেয়ে নোংরা বিষয় আর নেই । এখন কোন বাবা-মা’ই চায় না তাদের ছেলে মেয়ে রাজনীতি করুক । শিক্ষকরাও এর সাথে জড়িয়ে ব্যাপারটাকে আরো নোংরা করেছেন । এখন কেউ হয়তো বলতে পারেন, অসুখ হলে চিকিৎসা আছে । কিন্তু যখন পচন ধরে তখন ওই অংশ টুকু কেটে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই ।

আপনারাই তো সরকারের বুদ্ধিদাতা, আমলা, পরিকল্পনাকারী । সবকিছুই যখন বুঝেন তখন ব্যাপার টা কেন জিইয়ে রেখেছেন ? আপনাদের ছেলে-মেয়েদের তো বাইরে পাঠিয়ে দেন, আর ভুক্তভোগি আমরা । এখন তাহলে বলবেন কারা আরেকটু ত্যাগ করবে বা কারা ছাড় দিবে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।