আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যশোরের বনগাঁ বাসস্ট্যান্ড এখন শুধুই স্মৃতি



ঐতিহাসিক প্রয়োজনে একটি স্থানের নাম-মহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে। আবার প্রয়োজন শেষ হলেই হয়ে যায় অখ্যাত। যেমনটি ঘটেছে যশোর শহরের বার লাইব্রেরী মোড়ের বেলায়। একদিন এর নাম ছিল 'বনগাঁ মোড়'। জমজমাট বাসস্ট্যান্ড, অনেক হোটেল, রেস্টুরেন্ট নিয়ে দিন-রাত হৈ চৈ।

আর এখন নিঃসঙ্গতা তাকে গ্রাস করেছে। বাণিজ্যিকভাবে গুরম্নত্বহীন অফিসপাড়ার যতটুকু, তার চেয়ে পৃথকভাবে এই মোড়কে চিহ্নিত করার উপায় নেই। অবস্থানগত কারণ ছাড়াও অন্যান্য কারণে যশোর শহর দখলদার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে ছিল গুরম্নত্বপূর্ণ। তাই তারা যখন এখানে রাজস্ব আদায়ে শৃঙ্খলা এবং শাসন কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করার উদ্যোগ নেয়, তখন যশোরকেই পছন্দ করে। ১৭৮৯ অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা ঘোষিত হয় যশোর।

তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে ১শ' ১৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত যশোর শহর ক্রমশ গুরম্নত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। গত আঠারো শ' শতাব্দীর চলিস্নশের দশকের শুরম্নতে যশোরের কালী পোদ্দার যশোর শহর থেকে গঙ্গাতীরবতর্ী চাকদা (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার অনত্মভর্ুক্ত) পর্যনত্ম সড়ক নির্মাণ করেন। এই সড়কের বনগাঁ থেকে কলকাতা অংশের গ্রান্ড ট্রাংক রোডও সংস্কার হয় এ সময়। ফলে, কলকাতার সঙ্গে যশোরের যোগাযোগ সহজ হয়ে ওঠে। পরে রেলপথ নির্মিত হলে যশোর-কলকাতা যাতায়াত মাত্র কয়েক ঘণ্টায় নেমে আসে।

যশোরে বাংলার প্রথম মহকুমা আদালত বসে ১৭৮৮ সালে। ১৮৮২ সালে খুলনাকে যশোর থেকে আলাদা করে নতুন জেলা গঠিত হয়। তা সত্ত্বেও যশোরের গুরম্নত্ব কখনও কমেনি। যশোর সদর ছাড়াও দেশভাগের সময় পর্যনত্ম (১৯৪৭) আরও ৪টি মহকুমা ছিল এ জেলায়। যশোর শহরকে কেন্দ্র করে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল এর চারদিকে।

ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও সে সময় জেলার প্রত্যনত্ম এলাকার মানুষকে শহরে আসতে হতো মামলা মোকদ্দমার জন্য। যশোরের জেলা জজ আদালতও নির্মাণ করা হয় মহকুমা আদালত গঠনের পর পর। পরে তা নির্মিত হয় বর্তমান মুজিব সড়কের পাশেই। দেওয়ানী আদালত বসে এরও দৰিণে মুজিব সড়কের পশ্চিম পাশে বর্তমানে যেখানে মূল আদালত ভবন হয়েছে। ফলে গোটা এলাকাটিই ক্রমশ জমজমাট হয়ে ওঠে।

এর জমজমাট এলাকায় বর্তমান মুজিব সড়কে বার লাইব্রেরী থেকে শুরম্ন করে আরও দৰিণে প্রেসক্লাব, সার্কিট হাউস পর্যনত্ম ছিল বনগাঁ বাসস্ট্যান্ড। ইছামতি নদী তীরের বনগাঁ শহর যশোর থেকে ৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে কলকাতা সড়কের ওপরই। ১৭৮৮ সালে গঠিত এই মহকুমা ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় র্যাডক্লিফ রোয়েদাদ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গভুক্ত হয়। এভাবে বনগাঁ বাসস্ট্যান্ডের মৃতু্য ঘটে আজ থেকে ৬৩ বছর আগে। কালী পোদ্দারের গুরুত্বপূর্ণ বৃৰশোভিত যশোর রোডের অংশ বিশেষ যশোর বনগাঁ বাসরম্নট এক সময় ছিল জমজমাট।

অনেক বেশি গাড়ি চলত। এখন বনগাঁ বাসস্ট্যান্ড নেই। আছে শহর থেকে বেশ দূরে দৰিণে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। সেখান থেকে বেনাপোল রম্নটের বাস চলে। শহর এখন অনেক বিসত্মৃত হয়েছে।

হয়ত বনগাঁ যশোরের অন্তর্ভুক্ত থাকলে মানুষের মুখে এখনও উচ্চারিত হতো বনগাঁ বাসস্ট্যান্ড হিসেবে। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় এখন তা বার লাইব্রেরী চত্বর। ওই এলাকায় তখন বহু রেস্টুরেন্ট, মিষ্টির দোকান ছিল, যার খ্যাতিও ছিল, সেগুলোও উঠে গেছে কালক্রমে। পটলা ময়রার মিষ্টির দোকানের নাম এখনও অনেকের কাছে আনন্দঘন স্মৃতি। স্ট্যান্ড ঘেঁঁষে প্রেসক্লাবের পশ্চিম পাশের সেই বিখ্যাত বটগাছও আজ নেই।

কালের গতিপথে অনেক কিছুই মুছে যায়। রয়ে যায় কিছু পুরনো স্মৃতি, সেই কালের স্মারক চিহ্ন হিসেবে। বনগাঁ বাসস্ট্যান্ডের ৰেত্রে এর কিছুই নেই। যা আছে তা প্রবীণদের স্মৃতির পাতায় ধূসর কিছু চিত্র। একদিন তাও হয়ত হারিয়ে যাবে।

(সাজেদ রহমান, যশোর)


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.