আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিক্কা খান : চেঙ্গিস খানের সাথে যার তুলনা করেছিলো হংকং স্ট্যান্ডার্ড...৩ ইন্চ্ঞি পুরু রক্ত জমাট বেধেছিলো দিনাজপুর টিএন্ডটি অফিসের ফ্লোরে

একটা গাড়ী খুজছি , ব্যাক টু দ্য ফিউচারে যাওয়ার গাড়ীটা খুজছি / তথ্যের অংক , যুক্তির জ্যামিতি
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান মানুষের চেহারাধারী খুনে-হিংস্র দূষিত জন্তুরক্ত শিরায় বইতে থাকা এক বুদ্ধিসম্পন্ন প্রানীর নাম। পাকিস্তান আর্মি নামের এক র‌্যাগট্যাগ ব্লাড থার্স্টি শিকারী কুকুরের দলের মাস্টার অ্যান্ড দ্য কমান্ডার এই টিক্কা ..... বাচ্চাবেলার কল্পকাতর বোকা চোখে হা করে গল্প গেলার দিনগুলোতে অনেক বার শুনেছি.... জাজমেন্ট ডে / হাশরের দিন নাকি সব জড় বস্তুকে প্রান দেয়া হবে , কথা বলার শক্তি দেয়া হবে যাতে তারা স্বাক্ষী দিতে পারে .... মাটিও নাকি সেদিন কথা বলবে..... ১৯৭১ এ বাংলাদেশ ভূখন্ডের বোবা জড় নরম দোঁআশ মাটি তার প্রিয় "অ্যাভাটার" অসংখ্য বাঙালীর মৃতদেহের গড়িয়ে পড়া রক্ত শুষে নিয়েছিল... কোরবানীর জবাই খানার মত রক্ত জমাট বেঁধে ছিলো বাছুর দৌড়ানোর মেঠো পথে , সবুজ ঘাসের দাড়িয়াবান্ধা খেলার মাঠে.... একেবারেই শুষ্ক-অসিক্ত - নিরাবেগ ভাবে বলছি কথা গুলো....... মাস্টার অ্যান্ড দ্য কমান্ডার টিক্কার শিকারী কুকুরের দল পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরীহ বাঙালীর রক্ত মাংস নিয়ে এমনই এক কামড়াকামড়ি করেছিলো দিনাজপুর টিএন্ডটি অফিসে...... লাশকাটার ডোমঘর গুলোও লজ্জা পাবে টিক্কার কুকুরের দলের কাছে..... একটি টর্চার সেলের মেঝেতে যখন ১০০০০ বাঙালী কে নির্যাতনের পর ৩ ইন্চ্ঞি পুরু রক্ত জমাট বেঁধে যায় , দেয়ালে -জানালায়- সিলিং এ যখন শুকনো রক্ত লেপ্টে থাকে ...... তখন সহজেই বোঝা যায় সশস্ত্র প্রিডেটর জন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস রক্তারক্তির প্রিডেটর অ্যান্ড প্রে খেলা যেকোন মানুষের ভেতরেই স্নায়বিক অসুস্থতা তৈরী করবে........ হোক সে .....একজন কার্ডিয়াক সার্জন যার অসংখ্য বাইপাস সার্জারীর অভিজ্ঞতা আছে কিংবা একজন ফরেনসিক ডাক্তার , লাশকাটার ঘরে যার অহরহ যাতায়াত.. ইস্পাত স্নায়ুর পরীক্ষা দিতে হবে তাদের কেও..... ফেব্রুয়ারী ১১ , ১৯৭২ , বাংলাদেশ অবজারভার : ফুল রেসোলিউশন ইমেজ পেতে ক্লিক করুন রিপোর্ট হাইলাইট : মানুষ জবাইয়ের জেনোসাইড ৭১ এ কেবল দিনাজপুরেই খুন হয়েছিলো ৭৫০০০ মানুষ টিক্কার ওয়াইল্ড হাউন্ড দের কাছে... পুরো দিনাজপুর জেলায় ৩ লাখ বাড়ীঘর ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিলো.. ১০০০০ এর বেশী নারীকে নির্যাতন করতে করতে মেরে ফেলা হয়... রিপোর্টটিতে যে অংশটি মানুষ চিন্তার মাথার ভেতরে খুব বেশী আঘাত করে সেটা পড়ুন নীচে : THREE INCH THICK CLOTTED BLOOD ON THE FLOOR OF THE DINAJPUR TELEPHONE AND TELEGRAPH HOUSE WHICH WAS USED BY THE PAKISTAN ARMY AS THE SLAUGHTER HOUSE STILL BORE THE TESTIMONY AS TO HOW 10 THOUSAND UNFORTUNATE BENGALEES WERE KILLED IN IT. WALLS , WINDOWS AND FLOORS OF ALL THE FOUR ROOMS OF THE HOUSE BORE THE SLAIN OF HUMAN BLOOD. সরল অনুবাদে যা দাড়ায় : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কসাইখানা দিনাজপুর টিএন্ডটি অফিসের মেঝেতে জমাট বেধে থাকা ৩ ইন্চ্ঞি পুরু রক্ত ক্রুর পরিহাস করে জানিয়ে দেয় নিষ্ঠুর নিয়তির শিকার ১০ হাজার নিরীহ বাঙালী কিভাবে এখানে প্রান হারিয়েছিলো..... চারটি কক্ষের সবকয়টির দেয়ালে , জানালায় , মেঝেতে লেপ্টে আছে পাশবিকভাবে খুন হওয়া মানুষগুলোর রক্ত রিপোর্টটি থেকে আরো যা জানা যায়.... দিনাজপুর সার্কিট হাউজে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ধরে আনা নারীদের উপর ঝাপিয়ে পড়তো... ৩০০০ হাজার মানুষ প্রান হারিয়েছে সেখানে.... ধরে আনা নারীদেরকে জোরপূর্বক যৌনাচার করা হতো..... শেষে মেরে ফেলা হতো। ১৬ ই ডিসেম্বর সারেন্ডার করার ঠিক আগেরদিন বিরল থানার ভাওয়ানীপুর গ্রামে ৫০০ নারীকে মেরে ফেলা হয়। সেতাবগন্জ্ঞ থানার ৪ টি গ্রামের প্রতিটি পুকুর-ডোবা মরালাশ , খুলি , কংকালে ভরে গিয়েছিলো.. এক অবাঙালী বিহারী পিতার পালিয়ে যাওয়া মেয়ের কাছে জানা যায় তার মা খুন হওয়ার করুন কাহিনী...... তার বাঙালী মাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মেরে ফেলে তার বিহারী বাবার হাজারো অনুরোধ সত্ত্বেও.... অপরাধ..... ঐ নারী বাঙালী..... বলতে গেলে প্রত্যেক পাকিস্তান সেনাক্যাম্প ছিলো আমোদ প্রমোদের ফূর্তি খানা যেখানে পর্দানশীন মহিলাদেকেও তারা ধরে এনে জোর করে ধর্ষন করতো , মেরে ফেলতো..... পাকিস্তান আর্মি এবং তাদের দালালরা মিলে জেলাটির সকল রাস্তাঘাট - রেল ওয়ে , টেলিফোন লাইন, গাড়ী ঘোড়া সব ধ্বংস করে দিয়েছে..... বাঙালী রক্তের ভ্যাম্পায়ার টিক্কার স্নায়ু ঠিক এরকমই পাশবিক ছিলো ... লক্ষ মানুষের রক্তে মাঠ ঘাট ভেসে যেতে দেখে যার কোন বিকার হয়না... ইতিহাসে এমন আরো একজনকে খুঁজে পাওয়া যায়.... চেঙ্গিস খান.... মঙ্গল জাতিতে জন্ম নেয়া এক সাক্ষাৎ জানোয়ার... মানব ইতিহাসের বর্বরতম এই চেঙ্গিস খান নাকি শিশুদের রক্ত সবচেয়ে পছন্দ করতো.... সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য ১২০৬-১২২৭ , মাত্র ২১ বছরে এই জানোয়ার ৪০ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলো ইউরো এশিয়া , মধ্যপ্রাচ্য আর চীন- কোরিয়ার জনপদে.... যুদ্ধ শুরুর মাত্র ৩ মাসে টিক্কা নামের আরেক জানোয়ার যা করেছিলো বাংলাদেশের সবুজ চাদরে তার হাউন্ড স্কোয়াড নিয়ে দাবড়ে বেড়িয়ে তাতে করে হংকং স্ট্যান্ডার্ড টিক্কার ভেতরেই চেঙ্গিসের ক্রুরতা খুঁজে পেয়েছিলো : জুন ২৫ , ১৯৭১ , হংকং স্ট্যান্ডার্ড এডিটোরিয়াল : অনুবাদ : শত বছর ধরে ইতিহাসে নিষ্ঠুরতা আর বর্বর হত্যার সমার্থক হয়ে উচ্চারিত হতো চেঙ্গিস খানের নাম। ২০ শতকে এসে মনে হচ্ছে পাকিস্তানী উত্তরসুরী টিক্কা খান তার জান্তব পূর্বসুরী চেঙ্গিসকে ছাড়িয়ে যেতে মুখিয়ে আছে। পাকিস্তানী জেনারেল টিক্কা খান যাকে সভ্য-ভব্য ভাষায় বিদ্রোহী পূর্ব পাকিস্তানের শান্তিরক্ষক বলা হচ্ছে , তারই আদেশে তার পান্জ্ঞাবী-পাঠান বাহিনী ভয়াবহ রক্তস্রোতের ভেতর দিয়ে জন্তুর মত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অসংখ্য প্রমান রয়েছে খুন , ঘুমন্ত শিশু হত্যা , ধর্ষন , পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার মত অপরাধের ... সিনিয়র সব পাক সেনা অফিসার বিরুদ্ধে... যারা ব্যাপক ভাবে বন্য উন্মাদনায় রক্তে ভেসে যাওয়া গনহত্যা চালিয়েছে .. চেঙ্গিস খান অন্তত তার সারা জীবনের রক্তারক্তি খুনোখুনীর বিপরীতে একটি সাম্রাজ্য দাড় করাতে পেরেছিলো। কিন্তু টিক্কা আর তার পোশাকী গলাকাটা কসাই বাহিনীকে কেবল একটি জাতির অর্ধেককে নির্মূল করার জন্যই মনে রাখা হবে। এই টিক্কাকে বেনজীরের বাবা জুলফিকার ভুট্টো ১৯৭১ এর গনহত্যার পুরস্কার হিসেবে পাকিস্তান সেনাপ্রধান করেছিলো জেনারেল র‌্যাংকে প্রমোশন দিয়ে.... ৭৬ এ সেনাপ্রধানের চাকরী থেকে রিটায়ার করার পর যোগ দেয় ভুট্টোর পিপিপি তে... ৭৯ তে ভুট্টো ফাঁসিতে ঝুললে পিপিপি'র মহাসচিব হয় টিক্কা.... ৮৮ তে হয়েছিলো পান্জ্ঞাবের গভর্নর..... রাওয়ালপিন্ডিতে জন্ম নেয়া ২য় বিশ্বযু্দ্ধে বার্মার পলাতক যুদ্ধবন্দী টিক্কা ১৯৭১ এ কুখ্যাত উক্তি করেছিলো : " আমি মানুষ চাই না , দেশ চাই " এই টিক্কা মুক্তিযুদ্ধের গনহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমের কাছে "বাংলার কসাই" / BUTCHER OF BENGAL হিসেবে কুখ্যাত হলেও তারও আগে থেকেই তাকে বলা হতো "বালুচিস্তানের কসাই" / BUTCHER OF BALOCHISTAN. কেন বলা হতো....? বেনজীরের ভাস্তি ফাতিমা ভুট্টোর SONGS OF BLOOD AND SWORD বইটির ১০০ পাতায় ফাতিমা যা বলেছেন...... বাংলার সবুজ জমিন মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে রক্ত লাল করার আগেও এই টিক্কা নামের কসাই মানুষ জবাই এ হাত পাকিয়েছেন ১৯৫০-৬০ এ ওয়ালী খানের অবহেলিত জনপদ বালুচিস্তানের স্বাধীকার-স্বায়ত্বশাসন বুভুক্ষু বিপ্লবী মানুষ মেরে.... মার্চ ২৮ , ২০০২ তে টিক্কার মৃত্যুর পর পাকিস্তানের কোন জাতীয় দৈনিকে - চ্যানেলে কোন স্মৃতিচারন/শোকপ্রকাশ কলাম কেউ লিখেনি , জানায়নি কোন প্রতিক্রিয়া............... কেবল শোকবার্তা জানিয়েছিলেন বাপকা বেটী বেনজির : IN A MESSAGE ADDRESSED TO HIS SON COL KHALID MASUD , THE FORMER PRIME MINISTER PAID GLOWING TRIBUTES TO LATE TIKKA KHAN , AND DESCRIBED HIM AS A PERSON WHO “ROSE TO THE HIGHEST OFFICES OF THIS COUNTRY DUE TO HIS HARD WORK AND RESPECT FOR THE RULE OF LAW . এই মৃত জানোয়ারকে আরেকবার জানোয়ার ডেকে ব্লগটি শেষ করছি...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.