আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আগোছালো নস্টালজিক হতে চাওয়া একটা ক্রিকেট পাগল স্মৃতি রোমান্থন।

...

আইডিয়াটা আসল আবিরে রাঙ্গানো-র এই পোস্ট দেখে। ক্রিকইনফো সেরা একাদশ আর সেরা ম্যাচের জরিপ করছে। দর্শক ভোটাভুটিতে সেরা নির্বাচিত হবে। কিন্তু স্মরণীয় ম্যাচের যে সংক্ষিপ্ত তালিকা ধরিয়ে দিয়েছে, সে'টা মোটেও মন ভরাতে পারেনি। সাথে স্মরণীয় ইনিংস আর বলিং ফিগারের জরিপ করলেও জমত! কার্যকর একটা ছোট্ট ইনিংস যেমন অনেক বড় সেঞ্চুরির চেয়েও কাজের, তেমনই দরকারের সময় দু'-তিনটা উইকেট, সহজ ম্যাচে ৫-৭টা উইকেটের চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ।

এমনকি এরকম দুই একটা ইনিংস, দুরন্ত একটা স্পেল বোলিং এর জন্যও অনেক ম্যাচ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্মরণীয় ইনিংস বলতে প্রথম আমার মনে দাগ কেটেছিল '৯৭এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওপেনার আতাহার আলি খানের ৮২ রানের দুর্দান্ত একটা ইনিংস। ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে আতাহারের ব্যাট সে'দিন জানান দিয়েছিল, আসছে বাংলাদেশ!! ৯৭এ-ই চেন্নাইয়ে ড্যাশিং সাঈদ আনোয়ারের সেই ১৯৪রানের ব্যাটের জাদু জীবনেও ভোলার না। খেলাটা লাইভ যারা দেখেছিল, আমার বিশ্বাস, মুগ্ধ না হয়ে উপাই ছিল না। দীর্ঘ এক যুগের বেশিও সময় পর্যন্ত বিশ্বরেকর্ডটা অক্ষুন্ন ছিল ক্রিকেট ইশ্বরের কাছে হারানোর আগ পর্যন্ত।

৯৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে অরবিন্দ ডি সিলভার ঠান্ডা মাথার ১০৭ রান নিঃসন্দেহে হাসিমুখে খুন করার উৎকৃষ্ট উদাহরন। ক্রিকেটের কথা অথচ ক্রিকেট ইশ্বর নাই! তা কিভাবে হয়। ৯৮তে শারজায় ভারত-অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে শেষ গ্রুপ ম্যাচে কঠিন সমীকরনের সামনে ভারত। রানরেটে নিউজিল্যান্ডকে পেছনে ফেলতে হবে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া।

একেবারে মোক্ষম সময়ে 'গ্রেটেস্ট এভার' ব্যাটসম্যানের সেরা পারফর্ম্যান্স। ১৪৩রানের অতিমানবীয় একটা ইনিংস খেলে দলকে একাই নিয়ে গেলেন ফাইনালে, যদিও বাকিদের ব্যার্থতায় ভারত হেরে যায় খেলায়। পরের ম্যাচে আবারও শচিন শো! ফাইনালে শচিনের আরেকটা সেন্চুরিতে সহজেই ধরাশায়ি অস্ট্রেলিয়া। ঠিক একই রকম পরপর জোড়া দুইটা অতিমানবীয় ইনিংসের কথা মনে পড়ছে। ৯৯বিশ্বকাপে।

অস্ট্রেলিয়া বাদ পড়ে, পড়ল বলে। ক্যাপ্টেন কিভাবে সামনে থেকে টেনে তুলে দলকে, সেইটা দেখালেন স্টিভ ওয়াহ। দু'বারই শিকার দক্ষিন আফ্রিকা। প্রথমটায় অপরাজিত ১২০, (১১০বলে), পরের বার মহা মূল্যবান ৫৬, যার কল্যানে নিশ্চিৎ হারা ম্যাচ টাই হয়ে যায়! এর চেয়ে এক্সাইটিং কোনও ম্যাচ আর দেখেছি বলে মনে পড়ে না! ৯৮তে ঢাকায় ইনডিপিন্ডেন্স কাপে ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সৌরভ গাঙ্গুলির ১৩৩বলে ১২৪ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসটা মনে আছে কারও? ২০০২তে লর্ডসে ইংল্যান্ডের ৩২৫ তাড়া করে মোহাম্মদ কাইফের ৮৭রানের ধুমকেতু ইনিংস যে দেখেছে, চেষ্টা করেও ভুলতে পারবে না। কাইফের সেই ৭৩ বলে ৮৭রানই ভারতকে সমর্থ করেছিল সেই সময়ের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিততে।

২০০৪এ অস্ট্রেলিয়ার ৪৩৪ তাড়া করতে গিয়ে গিবস-এর ১১১ বলে ১৭৫ রানের টর্নেডোর কথা কি মনে আছে? আবার, ২০০০এ ঢাকায় এশিয়া একাদশের বিপক্ষে বিশ্ব একাদশের হয়ে মাইকেল বেভানের ১১৫ বলে ১৮৫ রানের সেই 'ব্যার্থ' ইনিংসটার কথা, যেখানে বেভানের দল হেরে গিয়েছিল মাত্র এক রানে! মোহাম্মদ আশার ফুল, ধুতরা ফুল কিংবা ছালগ; যে নামেই ডাকিনা কেন; মনে আছে কি, ২০০৭ বিশ্বকাপে ছাগলটার ৮২ বলে ৮৭ রানের একটা ডিনামাইটই গুঁড়িয়ে দিয়েছিল র‌্যাঙ্কিংএর এক নম্বরে থাকা দক্ষিন আফ্রিকাকে। ২০০৫ এ অস্ট্রেলিয়াকে হারানো সেই ম্যাচে ১০০ বলে ১০০ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসটাই বা ভুলি কি করে! ৯৮মিনি বিশ্বকাপে ঢাকায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের ৯৯ বলে ৮৯ রানের সেই বুকচিতানো লড়াই দলকে জেতাতে না পারলেও ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে থাকবে অম্লান। ঐ একই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ফ্লাড লাইটের আলোয়, শিশির ভেজা স্লো উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হ্যান্সি ক্রনিয়ের ম্যাচ জেতানো দায়ীত্বশীল ৬৯রানের ক্যাপ্টেন্স নক ভোলার না। এক্সাইটিং ম্যাচের কথা বললে একটা খেলার কথা না বললেই নয়। সে'টা হল ৯৬ বিশ্বকাপে টান টান উত্তেজনায় ভারত-পাকিস্তান কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ।

ভারত ৪০রানের বড় ব্যাবধানে জিতলেও প্রতিটা মুহুর্তই ছিল উত্তেজনায় ভরা। টেস্টের কথায় আসি। ২০০১এ অস্ট্রেলিয়ার ভারত ট্যুরটা অনেক কারণে স্মরণীয়। টেস্ট সিরিজ জিতে ভারত, আর অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে। অস্ট্রেলিয়া তখন প্রায় অজেয়।

অপরদিকে সৌরভ গাঙ্গুলির টিম ইন্ডিয়া দারুন শক্ত একটা দল। কিন্তু প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়া একেবারে ভারতকে গুঁড়িয়েই দিল। দ্বিতীয় টেস্ট ভারত পড়ল ফলোঅনে। তাও সাড়ে তিনশ' র বেশি রানের পাহারের নীচে। কে ভেবেছিল, এখান থেকেই ভারত সিরিজ জিতবে!! অবিশ্বাস্য ভাবে ফলোঅন থেকেই লক্ষনের মহাকাব্যিক ২৮১ রানে ময়াচ জিতে নিল ভারত।

আর শেষ ম্যাচ জিতে পুরা সিরিজই! ৯৯তে যুদ্ধপরবর্তী পাকিস্তানের ভারত সফরের প্রতিটা মুহুর্তই তাৎপর্যপূর্ণ। ক্রিকেটের বাইরে রাজনীতির ময়দান তখন থমথমে। তার উপর আগুনে ঘি ঢেলে দেয় শিবসেনা গ্রুপ খেলা বানচাল করতে ওয়াংখোড় স্টেডিয়ামের পিচ উপড়ে ফেলে। প্রথম দুই টেস্ট উভয় দলই একটা একটা জিতে সিরিজে তখন সমতা। শেষ টেস ভারতের লাকি গ্রাউন্ড ইডেনে।

প্রথম ইনিংস শেষে ভারতের লিড বিশাল ব্যাবধানে। দ্বিটীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়াল পাকিস্তান। সাঈদ আনোয়ারের দৃষ্টিনন্দন ১৮৮ রান। সংখ্যার বিচারে না, ঐ অবস্থায়, প্রয়োজনের বিবেচনায়, আমার দেখা এইটাই টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস। শেষ মুহুর্তে মাঠে দর্শকদের দাঙ্গা বেঁধে যায়।

পুলিশ মাঠ খালি করে বাকি খেলা সম্পন্ন হয়। ভারত শেষে হেরে যায় মাত্র ১২ রানে। তাহলে সেরা ইনিংস কোনটা। এই প্রশ্নের আগে বলি, ব্রায়ন লারার ৩৭৫ দেখিনি, ৪০০দেখেছি। কিন্তু '৯৯তে বার্বাডোজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার ১৫৩রানের অপরাজিত ইনিংসটার সাথে তূলনা হবেনা কোনওটারই।

এক উইকেটে জেতা সেই ম্যাচে ইনিংসএর বেশিরভাগ সময়ই টেল এন্ডারদের নিয়ে স্ট্রাইক ধরে রেখে একাই যেভাবে হারিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়াকে, সত্যি অভিভূত হবার মত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।