আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতিকথা: বরিশালের এক শারীরিক প্রতিবন্ধীর সাথে আদিবাসী মেয়ের কিছুদিনের প্রেম: যার পরিণতি দেখে কষ্ট অনুভব করেছিলাম



২০০৫ সালের দিকে একটি প্রতিষ্ঠানে আমি, বরিশালের ওবদুল (শারীরিক প্রতিবন্ধী) এবং জোছনা চাকমা (ছদ্মনাম)সহ প্রায় ১২ জন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলাম। প্রতিষ্ঠানের হোস্টেলে থাকতাম। ছেলে-মেয়েদের আলাদা হোস্টেল ছিলো। আমি এবং বগুড়ার এক ভাই থাকতাম এক রূমে। ওবদুল এবং হেদু দাদা থাকতো এক রূমে।

পাশের ইউনিটে থাকতো সুন্দরী আদিবাসী কন্যা জোছনা চাকমা এবং অন্যান্য নারী প্রশিক্ষণার্থীরা। তিনমাসের মধ্যে গড়ে ওঠ ওবদুল এবং জোছনার মধ্যে গভীর প্রেম। আমি ওবদুল এবং হেদু দাদার সাথে আড্ডা দিতাম । মাঝে মধ্যে মেয়েটি ওবদুলের নিকট আসতো । ওবদুল আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয় সে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ।

সে চোখে কিছুই দেখে না। তারা প্রেমালাপ করতো। ইয়ার্কি-ফাজলামী করতো । আরো অনেক কিছু আপত্তিকর কাজ করতো। ওবদু অসুস্থ্য হলে তাকে সেবা দিতো ।

মার্কেটে ঘুরতে নিয়ে যেত। কেয়ারটেকার ছিলো পাবনার এক খালা। তাকে খালা ডাকতো বলে ওবদুলের সাথে বেশ খাতির হয়েছিলো। কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করতো না । প্রশিক্ষণ শেষের ২ দিন আগে থেকে সে ওবদুলকে বিয়ের কথা বলে।

কিন্তু ওবদুল রাজী হয় নি। জোছনা কান্নাকাটি শুরু করে। আমি জোছনা চাকমাকে বলি। ওবদুল খোড়া ওকে বিয়ে করে লাভ হবে না। ও গরুর মাংশ খায়।

তুমি বিয়ে করতে চাইলে মুসলীম হতে হবে । সে রাজী । কিন্তু বিয়ে করবে। নাছোড় বান্দা। ওবদুল কে বুঝালাম।

সে রাজি হয় না। বলে বাবা-মা মানবেনা। আমি মুসলীম। সে বৌদ্ধ। সমাজের লোক কি বলবে।

অন্যদিকে আমি বেকার। তারপরে ক্রাচ ব্যবহার করে চলাফেরা করি। এভাবে শেষের দিন জোছনা জিজ্ঞাসা করলো দাদা ওবদুল আর আসবে না। আমি বললাম। ২ দিন পর আসবে।

আপনি কখন রাঙ্গামাটি যাবে। জোছনা বলল: ৫ দিন পর। আমি এবং ওবদুল রিক্সা ভাড়া করে ছুটলাম। দেখি জোছনা চাকমা ঢুকরে ঢুকরে পেট ফুপিয়ে কাদছে। বিষয়টি অনেকে জেনে গেছে।

পাবনার খালা (কেয়ারটেকার) বলেন, জোছনার দোষ। ওবদুলের গা ঘিষে বসতো সব সময়। সে বিয়ে করবে না বহুবার বলেছে। জোছনা চাকমার মুখের দিকে চেয়ে আমারও চোখ দিয়ে যেন জল পড়ছে। আমি ওবদুলকে বলি।

দোস্ত বিয়ে করে ফেলেন জীবন যা আছে। সে রাজী নয়। এভাবে আমরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলাম। বেশ কয়েকমাস পর আবার জোছনা চাকমার সাথে দেখা। সে ওবদুলের মোবাইল নং এবং বাড়ির ঠিকানা চাই।

কিন্তু আমি ওবদুলকে ফোনে জানায়, সে বলে রিকুয়েস্ট করি ওকে ওসব দিবে না । আমার জন্য একটি সার্ট পাঠিয়েছে। ওর গায়ে একটা গন্ধ আছে বিয়ে করা যাবে না। বাড়িতে জানলে খবর আছে। ও অবস্থায় আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।

সমাজে প্রেম ভালোবাসায় ধর্মের দিকটি এখনও বিবেচনা করা হয় গরিবের বেলায়। আর সুলতানা কামাল হিন্দুকে বিয়ে করে দিব্যি সংসার করছে, মানবাধিকার কর্মী হিসেবে কাজ করছে। ফেরদৌসী মজুমদার আরবী সাহিত্যে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে রামেন্দ্র মজুমদারকে বিয়ে করে সুখের সংসার গড়ে তুলেছে। বাপ্পা চাদনীকে বিয়ে করে মজা লুটছে। সুখী জীবন যাপন করছে।

তানিয়া দেবাশীশকে বিয়ে করলো। এ রকম বহু নারী পুরুষ ধর্মের গন্ডি থেকে বেরিয়ে বিয়ে করে সুখী আছে। আর গরিবদের মধ্যে এ গুলো করলে জাত চলে যায়। কথা গুলো বলেই মনকে সান্তনা দিলাম। আর কিছু বলার ছিলো না।

.......শুধু জোছনার জন্য এ গানটি চোখে ভাসতো,,,,,,, তুমি চলে গেলে আমার বলার কিছু ছিলো না নাগো বলার কিছু ছিল না। চেয়ে চেয়ে দেখলাম..................। বেশ কিছুদিন থেকে ওবদুলের লগে মোবাইলে কথা হয় না। মোবাইল চেঞ্জ করেছে। আর জোছনা চাকমার সাথে জীবনেও দেখা হবে না।

কষ্ট পেয়েছিলাম বলেই আজ সিয়ার করলাম মনে কিছু নিবেন না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।