আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমরত্বের পার্শপ্রতিক্রিয়া

জীবন মানেই, অনিশ্চয়তায় গা ভাসিয়ে নিশ্চিন্তে পথ চলা। বেঁচে থাকার আশা মানুষের চিরন্তন। এই ধরণীর মায়া ত্যাগ করে যেতে চায়না কেউ। এক মুহুর্ত বেশী বাঁচার জন্য মানুষের চেষ্টার অন্ত নেই। কি হত যদি মানুষ মারা না যেত? তাদের জীবন কি এমনি স্বাভাবিক থাকত, নাকি সেখানে যোগ হত নতুন কোন মাত্রা, নাকি মানুষ বেঁচে থাকতে থাকতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ত? বিতৃষ্ণা ভর করত কি সেই একঘেয়ে জীবনটার প্রতি? এসব প্রশ্নের ব্যাখ্যা এক এক জনের কাছে হয়ত এক এক রকম।

একটু ভালোভাবে বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে আসলে অমরত্ব মানুষকে যতটুকু না শান্তি দিবে তারচেয়ে অশান্তিতে রাখবে বেশি। অমরত্ব শব্দটিকে শাব্দিকভাবে বিশ্লেশন করলে দাঁড়ায়, “অমরত্ব হচ্ছে মানুষের চিরকাল বেচে থাকার ক্ষমতা, অন্যভাবে বললে, মৃত্যুকে জয় করার ক্ষমতা”। মৃত্যুকে জয় করতে হলে যা করতে হবে তা হলো, যেসব কারনে মানুষের মৃত্যু হয় সেইসব কারনকে রুখে দেয়া। বার্ধক্য, বিভিন্ন ধরনের অসুখ বিসুখ, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নষ্ট হওয়া বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারনগুলোকে বিনষ্ট করা। এইসব কারনগুলোকে উৎখাত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা বিজ্ঞানীরা আগেও করেছেন, এখনো করে যাচ্ছেন।

হয়ত অদুর ভবিষ্যতে আমরা দেখতে পাব মানুষ বিজ্ঞানের কল্যানে অমরত্ব লাভ করে ফেলেছে। উদাহরন স্বরুপ বলা যায় ২০৪৫ সাল নাগাদ রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা মানুষের আর্টিফিসিয়াল ব্রেন বানাতে সক্ষম হবেন বলে তারা দাবি করেছেন, যে ব্রেন হবে ইমমর্টাল। তাহলে আমরা হয়ত এটা আশা করতেই পারি আগামী একশ বছরের মধ্যে এমন কিছু আবিষ্কার হয়ে যাবে যেটি মানুষকে এনে দেবে অমরত্ব। অমরত্ব মানুষের জন্যে যতটুকু না সুখকর হবে তারচেয়ে বেশী ঝামেলার হবে বলে আমার বিশ্বাস। একটু চিন্তা করে দেখুন, ১- বিবর্তন মানুষের জন্য একটি অত্যাবশ্যক প্রক্রিয়া।

একজন মানুষ যখন হাজার হাজার বছর বেঁচে থাকবে, তখন তার বিবর্তন ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। কারন ইমমর্টালিটির একটি অন্যতম শর্ত হচ্ছে, একই দেহ নিয়ে বেঁচে থাকা। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতেই মানুষের বিবর্তন হয়, ভবিষ্যতে আমাদের পৃথিবীর পরিবেশ কেমন হবে তা আমাদের অজানা, তাই বিজ্ঞানীদের এখনো কোন সুস্পষ্ট ধারনা নেই যে আসলে ভবিষ্যতের মানুষ কেমন হবে। তাই ভবিষ্যতের পরিবেশে মানুষের এই দেহের এবং মস্তিষ্কের আকৃতি বা গঠনে যে পরিবর্তন আসবে তা একজন ইমমর্টাল মানুষের খাপ খাইয়ে নিতে অনেক সমস্যা হবে। ২- মানুষের মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট ধারন ক্ষমতা আছে, মানুষের মস্তিষ্কে তথ্য প্রথমে সংরক্ষিত হয় পরে মানুষ সেটাকে উপযুক্ত সময়ে স্মরণ করে থাকে।

একটা জিনিস চিন্তা করুন, ধরুন আপনি প্রতি সপ্তাহে আপনার ফোন নম্বর পরিবর্তন করেন, পাঁচ ছ্য় সপ্তাহ আগে আপনার ফোন নম্বর কি ছিলো এটা মনে করতে কষ্ট হয়ে যাবে। তেমনি আপনি যত বড় হতে থাকবেন আপনার মস্তিষ্ক তত বেশী বেশী তথ্য সঞ্চয় করতে থাকবে, আপনার কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাও স্মরণ করতে কষ্ট হয়ে যাবে। অধিক তথ্য ধারন করার ফলে আপনার মস্তিষের বিকৃতি ঘটতে পারে। আপনি শারিরিকভাবে বৃদ্ধ না হলেও মানষিকভাবে বৃদ্ধ হয়ে যাবেন। ৩- যদি আপনি অমরত্ব পেয়ে যান তাহলে সময় আপনার জন্য দ্রুতগামী হয়ে যাবে।

আপনার শৈশব কৈশরের কথা আপনার কাছে অনেক দূরের মনে হবে, এবং অতীতের কোন ঘটনা মনে করতে বেশ কষ্ট হবে। আপনার কাছে কয়েক মিলিয়ন টাকা অনেক কিছু হলেও যেমন বিল গেটসের কাছে সেইটা তেমন কিছু না, তেমনি একজন মরনশীল মানুষের কাছে একটা বছর অনেক বড় হলেও একজন অমর মানুষের কাছে তা কিছুই নয়। মাস, ঋতু বা বার্ষিক কোন অনুষ্ঠানের কথা আপনার মনে থাকবে না, মনে হবে এইতো সেদিন গেলো, এত তারাতারি আবার চলে আসলো। ধরুন আপনি ১০০০ বছর বাঁচলেন, তখন আপনার ৫০ বছরের বিবাহিত জীবনকে স্বভাবিক অবস্থার একদিনের প্রেম করা মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৪- আপনি যদি অমর হয়ে যান, তাহলে আপনার কাছে জীবন হয়ে যাবে একঘেয়ে।

যেকোন প্রকার বিনোদনে আপনি আনন্দ হারিয়ে ফেলবেন। সময়ের সাথে মানুষের বিনোদনের ধরন পরিবর্তন হবে, কিন্তু আপনার কাছে বিনোদন জিনিসটার স্বকিয়তা হারিয়ে যাবে। তাছাড়া আপনার কাছে যৌনতা বিষয়টাও একঘেয়ে হয়ে যাবে। কোন কিছুতেই আর মজা খুজে পাবেন না। ৫- অমরত্বের কথা ভাবলেই আমরা ভাবি শক্ত সামর্থ অবস্থায় হাজার হাজার বছর জীবনযাপন করা।

কিন্তু পৃথিবী বড়ই নির্মম, এখানে মাঝে মাঝেই বাধ সাধে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ আর যুদ্ধ। ধরুন আপনি কোন এক ভূমিকম্পের সময় আপনার পা হারিয়ে ফেললেন, তাহলে পা ছাড়া অবস্থায় আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে সারাজীবন। যুদ্ধ বিগ্রহে মানুষ কেউ যেতে চাইবে না। কারন অমর মানুষের জীবন যে অমুল্য। স্বাভাবিক মানুষ চিন্তা করে মৃত্যু তো একসময় হবেই, এখন মরলে ক্ষতি কি, তাই তারা বিভিন্ন যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে ততটা ভয় পায় না যতটা ভয় পাবে একজন অমর মানুষ।

বেঁচে থাকার জন্য মানুষের অন্যকারো সাহায্যের তেমন দরকার পরবে না, তাই মানুষ হয়ে যাবে সার্থপর এবং একা। আসলে মৃত্যুই মানুষের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, আর যে জীবনের কোন লক্ষ্য নেই সে জীবন আসলে জড়বস্তুর মতই নির্জিব। তাই আসুন আমরা যতদিন বেঁচে আছি ততদিনই আনন্দের মাঝে বাঁচি। দুঃখ দুর্দশা মানুষের জিবনে থাকবেই। এই দুঃখকে যারা অতিক্রম করতে পারে তারাই মৃত্যুকে সহজ ভাবে দেখে।

মৃত্যু আসবেই সুতরাং ভয় পেয়ে আর কি লাভ? Life is short so Live it up ... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।