আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিছু বিস্ময়কর গর্ভকাল এবং প্রসব !



মেয়ে জাতি হচ্ছে গর্বিত জাতি। কেন গর্বিত জাতি এতনিয়ে জ্ঞান বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই। মেয়ে জাতিরাই হচ্ছে মা জাতি , যে ১০ মাস ১০ দিন নিজের গর্ভে ধারণ করে , কতই না কষ্ট সহ্য করে আদরের সন্তান জন্ম দেন। এ নিয়ে বহুবার প্রবন্ধ আকারে , কবিতার ছন্দে বহু সাহিত্যিক , কবি তাদের মনের মাধুরী দিয়ে লিখে গেছেন,সেখানে নতুন করে কি বা লেখার আছে । পৃথিবীতে ১০ মাস ১০ দিন সন্তানকে পেটে ধারণ করে মা সন্তানকে জন্ম দেয় এটাই তো স্বাভাবিক কিন্তু এরপরেও গর্ভকাল নিয়ে কিছু অবাক-করা, পরম বিস্ময়কর কিছু ঘটনা পৃথিবীতে ঘটে যায় , তার খবর আমরা কয়জন জানি ? কত মা তার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে গিয়ে জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেন তার খবরও আমরা কয়জনে বা রাখি! তাহলে চলুন এমনি কিছু বিস্ময়কর গর্ভাকাল নিয়ে আলোচনা করা যাক ।

১.১.বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠা মা সেদিন পেরু বাসীরা হতবাক , হতভম্ব হয়েগিয়েছিল যথন তারা শুনলো ৫ বছর বয়সী একটি শিশু মা হতে যাচ্ছে। এমন একটি ব্যথা দায়ক ও দুঃখজনক কথা শুনে তারা কেন পৃথিবীর সকল বিবেকবান মানুষের হৃদয় ক্ষনিকের জন্য হলেও কেঁপে উঠার কথা। পেরুর তিকরাপো নামক গ্রামের ৫ বছর বয়সী এই শিশুটির নাম লিনা মেদিনা। পরবর্তী কালে পৃথিবীর সর্ব কনিষ্ঠা শিশু মা হিসেবেই পরিচিত । দিনে দিনে মেয়েটির পেট আকারে বৃদ্ধি পেতে দেখে বাবা মা স্থানীয় এক ডাক্তারের সরনাপন্ন হন।

প্রথম প্রথম এর কারণ হিসেবে টিউমার বলে সন্দেহ করা হলেও পরে শিশুটিকে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ৭ মাসের গর্ভবতী বলে সুনিশ্চিত করা হয় । ডাক্তার গেরহাড লোসাদা, যিনি প্রথম মেয়েটিকে গর্ভবতী বলে সনাক্ত করেন তিনি শহরের খ্যাতনামা শৈলচিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শের জন্য শিশুটিকে সাথে নিয়ে পেরুর রাজধানী লিমাতে চলে আসেন। সেখানকার পরীক্ষায়ও একই ফলাফল পান তারা। অবশেষে দেড় মাস পর ১৯৩৯ সালের ১৪ মে ডাক্তারদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বদৌলতে সিজারিয়ান অপারেশনের সাহায্যে লিনা মেদিনা একটি পুত্র সন্তান জন্মদিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়েসী শিশুমা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। পেরুর সে সময়কার চিকিৎসা বিষয়ক ম্যাগাজিন লা প্রেস মেডিক্যালএ শিশুমা লিনার গর্ভকালীন সময় থেকে প্রসবকাল পর্যন্ত একটি সার্বিক তথ্য তাদের পত্রিকায় তুলে ধরে।

সেখানে আরো বলা হয় লিনা মেদিনার ৮ মাস বয়স থেকেই মাসিক বা ঋতু শুরু হয় এবং ৪ বছর বয়স থেকেই তার স্তন বিকাশলাভ করতে থাকে। ২. অষ্টমামা (আট সন্তানের মা ) নাদিয়া ডেনিশ দাউদ-সুলেমান যিনি "অক্টো মামা" বলেই মিডিয়ায় পরিচিত। "অক্টোমামা" শব্দটি ল্যাটিন ভাষা যার অর্থ ৮ সন্তানের মা। ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে নাদিয়া পর পর ৮টি জীবিত পুত্র সন্তান জন্ম দিয়ে পূর্বের রেকর্ড ভঙ্গ করে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক সন্তান প্রসব করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। এর আগে ১৯৯৮ সালে নাইজেরিয়ার বংশভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক টেক্সাসের অধিবাসী চৌকূ পর পর ৬টি মেয়ে ও ২টি ছেলে প্রসব করে এই রেকর্ডটি গড়েছিলেন।

নাদিয়া একজন কর্মহীন বেকার মহিলা তার ৮ সন্তান ছাড়াও ঘরে ছোট ছোট আরো ৪ টি সন্তান বয়েছে এবং ভিটরো ফারটিলাইজেশনের মাধ্যমে গর্ভবতী হওয়ার জন্য তিনি সে দেশে প্রশ্নাতীত সমালোচিত ও বিতর্কিত হন। ৩.বিশ্বের সবচেয়ে বেশী সন্তানের জননী গিনেস রেকর্ড অনুযায়ী পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী সন্তান জন্ম দিয়েছেন রাশিয়ার সুইয়া গ্রামের কৃষক ফেওডোর বাসিলিয়েভের স্ত্রী। তিনি তার জীবনে ২৭ বার গর্ভবতী হয়ে সর্বমোট ৬৯টি সন্তান প্রসব করেন । ৪. বিশ্বের সবচেয়ে বয়োজোষ্ঠা মা ভারত বর্ষের হরিয়ানা প্রদেশের রাজু দেবী রোহান প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার ৪০ বছর পর ৭০ বছর বয়সে ২য় সন্তান জন্ম দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বয়োজোষ্ঠা মা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন । এর আগে ৬৭ বছর বয়স্কা এক স্পেনের নাগরিক ২০০৬ সালে জমজ সন্তান জন্ম দিয়ে বিশ্বের প্রবীন মা হওয়ার গৌরবটি ধরে আসছিলেন।

৫. বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সন্তানের জন্মদানকারীনি মা । ২০০৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মা শেখ মাহজাবিন যুক্তরাষ্টের ইলিনয়ের লয়োলা ইউনিভারসিটি মেডিকেল সেন্টারে মাত্র ৮.৬ আউন্স ওজন এবং লম্বায় ১০ ইঞ্চি কন্যা সন্তান রুমাইসা রহমানকে জন্ম দিয়ে পৃথিবীতে সবচেয়ে ছোট শিশু জন্ম দেয়ার রেকর্ড অর্জন করেন। এর আগে ১৯৮৯ সালে জন্ম নেয়া ফ্লোরিডার ম্যাডেলিন ম্যান এই পদটি ধরে রেখেছিল। রুমাইসা রহমান ম্যাডেলিন ম্যানের চেয়ে ১.৩ আউন্স কম অর্থাৎ একটি কোকাকোলা ক্যানের সমপরিমান ওজন নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে ম্যাডেলিনের স্হলে তার নামটি প্রতিস্থাপিত করে নেয় । ৬.বিশ্বের প্রথম গর্ভবতী পুরুষ বিশ্বে যে পুরুষ ব্যক্তিটি সন্তান গর্ভধারণ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল সে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের টমাস বেয়াতি।

বাস্তবে টমাস মেয়ে হয়েই জন্ম নিয়েছিল, পরে পুরুষে রূপান্তর হবার বাসনায় দীর্ঘ ১০বছর ধরে পুরুষের হরমোন গ্রহণ করতে থাকে। অবশেষে একটি সফল অস্ত্রপাচারের মধ্যে দিয়ে সে পুরুষে পরিনত হয়। এদিকে তার স্ত্রী নান্সি দুরারোগ্য ব্যধির কারণে সন্তান ধারণে অক্ষম। শেষে উভয়ের সম্মতিক্রমে টমাস হরমোন গ্রহণবন্ধ করে দেয়। এর ফলে তার গর্ভাশয় পুনরায় সচল হয় এবং ডিম্বানু তৈরী হতে থাকে।

পরবর্তিতে টমাস কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দানকৃত শুক্রানু দিয়ে গর্ভধারণ করে । ৭.বিশ্বের প্রথম সবচেয়ে বেশী অন্তর্বতী সময়ের ব্যবধানে জন্মদানকারীনি মা এলিজাবেদ আনা বুটল ইংল্যান্ডের কামার্থদেন শেয়ার এলাকার বাসিন্দা এবং দুই সন্তানের জননী। তার প্রথম সন্তানের জন্ম হয় ১৯৫৬ সালের ১৯ মে যখন এলিজাবেদ আনার বয়স ছিল ১৯ বছর। এখানে এ পর্যন্ত উল্লেখ করা বিষয়গুলোর মধ্যে অস্বাভাবিক কোনো কিছু নেই কিন্তু বিস্ময় এবং মাজার বিষয় হলো এলিজাবেদ আনার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম নিয়ে। তার দ্বিতীয় সন্তান যোসেফ জন্ম গ্রহণ করে ১৯৯৭ সালের ২০ শে নভেন্বর যা তার দুই সন্তানের জন্মের অন্তর্বতী সময়ের ব্যবধান হয় ৪১ বছর ১৮৫ দিন।

এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বেশী অন্তর্বতী সময়ের ব্যবধানে জন্ম এবং এই জন্মদানের মধ্যে দিয়ে এলিজাবেদ আনা বিশ্বের এই প্রথম সবচেয়ে বেশী অন্তর্বতী সময়ের ব্যবধানে জন্মদাতা মা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন । ৮. বিশ্বের সবচেয়ে খাটো মা পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রকায় মা যুক্তরাষ্ট্রের কানটুকির অধিবাসী স্ট্রাসী হেরাল্ড। উচ্চতায় তিনি মাত্র ৭৩ সে.মি. এবং তিন সন্তানের জননী। তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ডাক্তারগণ তাকে সন্তান ধারণ করতে বার বার নিষেধ করতেন। মৃত্যুর ভয়ও দেখাতেন ।

কিন্তু সকল বাধা ও মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে বরংবার গর্ভবতী হয়েছেন এবং তিন তিনটি শিশুর জন্ম দিয়েছেন। স্ট্রাসী হেরাল্ড হুইল চেয়ারের সাহায্যে চলাফেরা করেন, তার শরীরের হাড়ের অবস্থা নড়বড়ে ও ভঙ্গুর, এছাড়া তার শ্বাসযন্ত্র ঠিক ভাবে বিকশিত না হওয়ার কারণে দেহ বৃদ্ধি লাভও করে না। এরপরও স্ট্রাসী হেরাল্ড তার ১,৭৫মিটার উচ্চতা সম্পন্ন স্বামী উইল এবং তিন সন্তানকে নিয়ে মহাসুখী। ৯. প্রতিনিধি মা সন্তান জন্মদিয়ে মা ডাক শোনার মধ্যে দিয়েই বয়েছে মেয়ে জাতির সার্থকতা। আবার অনেক মেয়ের মা হবার আকুল ইচ্ছা থাকার পরও তাদের মা ডাক শোনার ভাগ্য থাকে না।

বিভিন্ন রকমের অসুখ, শারীরিক অক্ষমতার কারণে সন্তানের জন্য অধীর অপেক্ষা করার পরও তাদের কোল ভরে উঠে না। সন্তান না পাওয়ার অব্যক্ত বেদনায় সারাক্ষন তাদের মন গুমরে মরে। এমনি অবস্থায় এক মায়ের কোল কে ভরিয়ে দিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে ৪২ বছর বয়স্কা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ক্যারলি হরলক। শারীরিক অসুস্থতার কারণে যে সকল মায়েরা নিজের পেটে সন্তান ধারণ করতে অক্ষম, তাদেরই ভ্রুনু প্রতিনিধি মা হিসেবে ১০ মাস ১০ দিন নিজের গর্ভে রেখে পরিপূর্ণ সন্তান করে অক্ষম মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন এই ক্যারলি হরলক। বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়ে থাকেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার ডলার ।

গর্ভকালীন অবস্থায় বমি, মানসিক চাপ, বিছানায় বিশ্রাম, ভিটরো ফারটিলাইজেশন, সিজারিয়ান অপারেশন এবং সেলাইয়ের দাগ ইত্যাদি অন্তঃসত্ত্বাবস্থা কালীন প্রতিকুল অবস্থা ও ক্ষতির কথা চিন্তা করেই তিনি এই অর্থ নিয়ে থাকেন । ক্যারলি হরলক বিগত ১২বছরে এপর্যন্ত ১৩টি সন্তান এবং একসাথে ৩টি বাচ্চা জন্ম দিয়ে বিশ্বে প্রতিনিধি মা হিসেবে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক সন্তান জন্ম দেয়ার রেকর্ড অর্জন করেছেন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।