আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডারউইন বনাম ঈশ্বর



(এই লেখাটা কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়। প্লীজ কেউ দয়া করে ভুল বুঝবেন না। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। ) সারাদিন আজ বাইরে ঘোরাঘুরি করলাম।

এখন রাত প্রায় ১১ টা। যদিও আমার কখনও বাড়ি ফেরার জন্য ব্যস্ততা থাকে না। রাতে হোটেল থেকে খেয়েই বাসায় যাবো। কাজী ভাইয়ের অফিসে বিকেলে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তখন,গভীর ঘুমে স্বপ্নে দেখলাম- বিশাল একটা জঙ্গলের গভীরে আমি।

কোন পথ খুঁজে পাচ্ছি না। চারিদিকে ভয়ংকর সব মানুষ। তাদের হাতে বিচিত্র সব অস্ত্র। তারা সবাই আমার দিকে তেড়ে আসছে। (স্বপ্নের আবার কোন মাথা মন্ডু আছে নাকি?) আমি মদ্যপান করি না।

কিন্তু সিগারেটের প্রতি দুর্বলতা আছে আমার এবং আমার বন্ধু ইমরানের। সেদিন ইমরানের বহু কালের বিশ্বাস ও সংস্কারে একটা প্রবল ধাক্কা লেগেছে। তার মূলে রয়েছেন একজন অধ্যাপক। ইমরান প্রায়ই এই অধ্যাপকের বাড়ি যায়। অধ্যাপক নিজে ইমরান কে কফি বানিয়ে খাওয়ান।

আজ সন্ধ্যায় আমি ইমরানের মেছে যাই। ইমরান আমাকে বলল,তুই চার্লস ডারউইন এর নাম শুনেছিস?আমি বললাম,ছাপার অক্ষরে নামটা কোথাও পড়েছি। কেন,উনি কি আজ তোর মেছে আসবেন?বলেই আমি খুব হাসলাম....। ডারউইন যা বলেছেন,তা যদি সত্যি হয় তাহলে এতকাল ধরে আমরা যা সত্যি বলে জেনে এসেছি তা সব মিথ্যে। ডারউইন বলেছেন- এই যে জীবজগৎ,এই যে সব গাছপালা,পশুপাখি,মানুষ এর কিছুই আল্লাহ সৃষ্টি করেন নি?মুসলমানরা মনে করেন আল্লাহ,হিন্দুরা মনে করেন ভগবান আর খ্রিস্টানরা মনে করেন গড।

তিনিই সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু ডারউইন বলেছেন,কোনও পরমেশ্বরই এসব সৃষ্টি করেন নি। প্রকৃতির সব কিছুই নিজস্ব সৃষ্টি। বিবর্তনবাদ নামে ডারউইন একটা তত্ত্বের কথা বলেছেন। মানুষ ও প্রানীজগৎ বিবর্তনবাদের মধ্য দিয়েই চলছে।

সেখানে পরমেশ্বরের কোন ভূমিকা নেই। এখন,ডারউই্নের কথা মানতে গেলে কোরআন,বাইবেল সব মিথ্যা!ইসলাম ধর্মের বয়স তেরো শো বছর। মহাম্মদ আল্লাহর বানী প্রচার করলেন। সেই 'আল্লাহ' সর্বশক্তিমান। মানুষের পাপ-পূর্নের নিরামক।

তাহলে তেরো শো বছর আগেকার মানুষ গুলোকে সৃষ্টি করলো কে?কিংবা এতদিন আল্লাহ কোথায় ছিলেন? মানুষের বয়স যদি বাইবেলের মতে,পাঁচ হাজার আটশো নব্বই বছর হয়,তাহলে তো প্রথম চার হাজার বছর কোন খ্রিস্টান ছিল না। খ্রিস্টানদের গড ও ছিলো না। কোথায় লুকিয়ে ছিলেন তিনি?বৌদ্ধ ধর্ম আরও পুরনো। গৌতম বুদ্ধ জন্মেছিলেন প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। তার প্রমান আছে।

হিন্দু ধর্ম তারও আগে,কারণ হিন্দু ধর্ম থেকে বেড়িয়ে এসে বুদ্ধ তার ধর্ম প্রচার করেছিলেন। হিন্দু ধর্মও কত আগে?বড় জোর ছয় সাত হাজার। কিন্তু তারও হাজার হাজার বছর আগে মানুষ ছিল,তাদের কোন ধর্ম ছিল না। ঈশ্বরও ছিল না!পাহাড়ের গুহায়,বনে জঙ্গলে মানুষ বাস করত। পাথরের অস্ত্র দিয়ে পশু শিকার করে আগুনে পুড়িয়ে খেত।

তাদের কোন ঈশ্বর ছিল না! চার্লস ডারউইন ইংল্যান্ডের এক ডাক্তারের ছেলে। প্রথমে তিনি ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার মন বসে নি। তারপর ডারউইন তার বাবার ইচ্ছায় ধর্মতত্ত্ব পড়তে শুরু করলেন। ডারউইন এর যখন ২২ বছর বয়স,তখন তিনি একটি জাহাজে ঘোরার আমন্ত্রণ পান।

সেই জাহাজে নানান রকম লোকজন ছিল। ডারউইন কে নির্বাচন করা হলো প্রকৃতি বিজ্ঞানী হিসেবে। জাহাজ টা সমদ্রে ভাসবে পাঁচ বছর ধরে। কোন বিজ্ঞানীকেই টাকা দেওয়া হবে না। ডারউইন ধনী ডাক্তারের ছেলে...।

পাঁচ বছর ধরে বহু দ্বীপ ঘুরে ঘুরে ডারউইন অনেক জন্তু-জানোয়ার,পোকা-মাকড়,লতা-পাতা সংগ্রহ করে আনেন। তারপর সেগুলো নিয়ে গবেষনা করতে করতে অনেক বছর পরে একটা বই লিখেন। সেই বইটির নাম- 'দা অরিজিন অফ স্পিসিজ'। এই বইটির মধ্যেই রয়েছে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব। জন্তু-জানোয়ার আর মানুষের চেহারা চিরকাল এক রকম ছিল না।

পরিবেশ অনুযায়ী বদলেছে। অনেক প্রানী হারিয়ে গেছে চিরতরে। ভগবান,আল্লাহ,ঈশ্বর বা কোন ধর্মেরই সর্বশক্তিমান সৃস্টার ইচ্ছেতে মানুষের সৃস্টি হয়নি। বিবর্তনের ধাক্কায় মানুষ এসেছে বানরের মতন এক প্রানী থেকে। এখন,ইনকুইজিশানের যুগ তো আর নেই।

এটা আধুনিক যুগ। বিজ্ঞানের যুগ। ডারউইন কে অনেকেই অনেক গালমন্দ করেছেন। কিন্তু পৃথিবীর আশি ভাগ বৈজ্ঞানিক ডারউইনের যুক্তি-প্রমান মেনে নিয়েছেন। ডারউইন এর বই হাজার হাজার সাধারন মানুষ পড়ে,কোরআন-বাইবেল সম্পর্কে এতকালের বিশ্বাস অনেকেরই ভেঙ্গে গেছে।

তবে,এখন সবচেয়ে দুঃখের বিষয় এখনও কতকগুলো মানুষ অন্ধ-বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে বসে আছে। দেড় হাজার দু'হাজার বছরের পুরনো ধর্মগ্রন্থের বানী গুলোকে অমোঘ সত্য বলে মনে করে!সেই অনুযায়ী সমাজ চলে! আল্লাহ নিরাকার,বর্ননার অতীত। (আমার নিজের একটা অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছি,নিরাকার রুপ গুনের অতীত কোনও শক্তি যদি থেকেও থাকে,তার সঙ্গে মানুষের জীবনের কোনও সম্পর্ক নেই। তার জন্য মানুষের এত পুজো-আচ্চা,প্রার্থনা,কান্নাকাটির দরকার কী?)এই নিরাকার কোনও শক্তিকে বহু মানুষ ঈশ্বর বলে বিশ্বাস করে,তার মধ্যে কিছুটা ভন্ডামি থাকতে বাধ্য। সত্যিকারের নিরাকার কোনও কিছু কী মানুষের পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব?নিরাকারের কাছে প্রাথনা!আসলে এই নিরাকারেরও চোখ-মুখ-কান সবই আছে।

সব ধর্মের এই নিরাকাররাই মাঝে মাঝে কথা বলেন। তিনি মানুষের পাপ-পূর্ন দেখতে পান। ব্রাহ্মরা গান গায়,হিন্দুরা জোরে জোরে মন্ত্র পড়ে,মুসলমানরা আল্লাহ হু আকবর বলে চেচ্যায়। যার কান নেই,তাকে কিছু শোনাবার জন্য কি মুখে কিছু উচ্চারণ করতে হয়?এত রকম কারুকার্য করা মসজিদ,নিরাকারের প্রার্থনার জন্য দরকার?এগুলো কি নিরাকারের বাসস্থান?না পুতুলের খেলা ঘর?কত পরিবার রাস্তায় রাস্তায় জীবনযাপন করে! ডারউইনের আর একটা তত্ত্ব হচ্ছে- 'স্টাগল ফর একজিসটেন্স'। পৃথিবীতে যত মানুষ জন্মায়,পঁচিশ বছরে তার সংখ্যা দ্বিগুন হয়ে যায়।

বন্যা,খরা,ভূমিকম্প,দুর্ভিক্ষ,যুদ্ধে বহু মানুষ ও প্রানী মারা যায়। এর মধ্যে যারা বাঁচে,তারাই টিকে থাকে। সারভাইভাল অফ দা ফিটেস্ট!সমস্ত প্রানী কুলের মধ্যে অবিরাম জীবন যুদ্ধ চলছে। যারা জয়ী হয়,শুধু তাদেরই অধিকার আছে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার। তাহলে ঈশ্বর-আল্লাহ ,যে পিতার মতন আমাদের রক্ষনাবেক্ষণ করেছেন বলে এতকাল জেনে এসেছি,তা ঠিক নয়?মানুষের সৃস্টির সঙ্গেও আল্লাহর কোনও সম্পর্ক নেই।

শিব,কালী,দুর্গা,গনেশ,বিষ্ণু-ইত্যাদি এইসব মূর্তির কোনও কিছুর মধ্যেই ঈশ্বরের প্রকাশ নেই। সবই মানুষের কল্পনা। সেই কল্পনা দিয়ে মানুষ কতকগুলো পুতুল বানিয়ে পুঁজো করে। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষ ঈশ্বর বিশ্বাস নিয়ে মেতে আছে,তাদের এক কথায় উড়িয়ে দেবার অধিকার কারো নেই। বিশ্বাসে,শ্রদ্ধায়,ভক্তিতে কেউ যখন নিমগ্ন থাকে তখন তাকে দেখতে বড় ভালো লাগে।

যে যার ধ্যান করুক না কেন,তাতে তো কোন ক্ষতি নেই। নাস্তিকরাও এক ধরনের নিরাকার। বিবর্তনের কথা বাদ। ডারউইন এর খপ্পরে পড়ার কোনও দরকার নেই। সবাই নামাজ পড়ুন।

রোজা রাখুন। সৎ থাকুন আর বেশি বেশি করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন। আমার দুই-তিন ধরে মাথার মধ্যে যেন ঝড় বইছে সর্বক্ষন। এক এক সময় চক্ষে অন্ধকার দেখি। মনে হয় পাগল হয়ে যাবো।

পাগল হওয়ার চেয়ে ঈশ্বরে বিশ্বাসী,ভক্ত হয়ে থাকা অনেক ভালো। বাঁচতে হবে তো। বেঁচে থাকাটাই বড় কথা।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.