আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটদের লালন (পর্ব ১)

জোর হোক শুধু গলার আওয়াজ, গায়ের জোরটা তোলাই থাকুক

গড়াই সেই কবে কোলে করে বয়ে এনেছিলে তাঁরে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাববাদী দরবেশ তাঁকে ঘুম পাড়ায়ে রেখেছো কালীগাঙের পাড়ে এক তারাতে যাঁর সুর আজ জাগায় বাংলাদেশ। গড়াই নদী কাকে বয়ে এনেছিল? কাকে বিশ্বেও শ্রেষ্ঠ ভাববাদী দরবেশ বলা হয়? কালীগাঙের পাড়ে ঘুমিয়ে আছেন কে? কার এক তারার সুরে বাংলাদেশ জাগে? এই চারটি প্রশ্নের উত্তর কিন্তু একটি। তা হলো বাউল সম্রাট লালন শাহ্‌। যাঁর আরেক নাম ফকীর লালন সাঁই। তবে শিষ্যরা ডাকে সাঁইজী নামে।

আজ থেকে প্রায় ২৩৫বছর আগের কথা। ১৭৭৪ সালে তিনি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ভাড়ারা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তখন কুষ্টিয়া জেলা ছিল না। অবিভক্ত ভারতবর্ষেও নদীয়া জেলার অন্তর্গত মহকুমা ছিল। আর কুমারখালী ছিল ইউনিয়ন।

লালন গড়াই নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ভাড়ারা গ্রামের সম্ভ্রান্ত হিন্দু ধর্মের ভৌমিক পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর বাবা ছিলেন শ্রী মাধব কর আর মা ছিলেন শ্রীমতি পদ্মাবতী। লালন বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান ছিলেন। শৈশবেই লালন তাঁর বাবাকে হারান। একমাত্র মায়ের আদও স্নেহে বেড়ে উঠেন তিনি।

পরিবারের প্রধান বাবা বেঁচে না থাকায় সংসারের দায়-দায়িত্ব পড়ে লালনের কাঁধে। মা ছাড়া তখন তাঁর আর পৃথিবীতে কেউ ছিল না। মায়ের সেবার কথা ভেবে লালন বিয়ে করেন। লালন ব্যক্তি জীবনে ছিলেন নীতিবান ও ধার্মীক। পরিবারের অন্যান্য আত্মীয় ¯^Rb‡`I সাথে তাঁর বনিবনা না হওয়ায় মা ও স্ত্রীকে নিয়ে একই গ্রামের দাসপাড়ায় নতুন করে বসতি গড়েন।

সংসার চালাতে গিয়ে লালনের আর লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। তবে তিনি শৈশব থেকেই ছিলেন গান বাজনার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ভাড়ারা গ্রামে কবিগান,পালাগান, কীর্তন সহ নানা রকম গানের আসর বসতো। লালন সেই আসরের একজন প্রিয়জন ছিলেন। তাঁর গান শুনে মানুষ মুগ্ধ হতো।

ধর্মপরায়ণ লালন পূন্যলাভের আশায় যৌবনের শুরুতে একদিন তাঁর ভাড়ারা গ্রামের দাসপাড়ার প্রতিবেশী বাউলদাস সহ অন্যান্য সঙ্গী-সাথী নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে গঙ্গা স্নানে যান। সে সময় রাস্তা ঘাটের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। মাটির রাস্তা বর্ষায় কাদা আর গৃষ্মে ধুলো। তার উপর পায়ে হাঁটা ছাড়া কোন বাহন ছিলনা। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে মানুষ তার গন্তব্যে যেত।

তবে সমাজের হাতে গোনা কয়েকটি উঁচু পরিবারের জন্য ঘোড়া কিংবা গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল। তাও সংখ্যায় খুবই কম। গঙ্গা স্নান সেেও লালন সঙ্গীদেও নিয়ে বাড়ী ফেরার পথে আকস্মিকভাবে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। রোগের যন্ত্রনা ক্রমেই বেড়ে গেলে এক পর্যায়ে লালন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এই দেখে সঙ্গী-সাথীরা তাঁকে মৃত ভেবে মুখাগ্নি করে নদীর জলে ভাসিয়ে দেয়।

সঙ্গীরা বাড়ি ফিরে তাঁর মা ও স্ত্রীকে পথের মধ্যে লালনের করুন মৃত্যুর কথা জানায়। অসহায় মা ও স্ত্রী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অদৃষ্টের করুণ পরিহাস বলে তাদের এই মৃত্যুকে মেনে না নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। ধর্মমতে সমাজকে নিয়েই লালনের অন্ত্যষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এদিকে নদীর জলে ভাসতে ভাসতে লালনের দেহ পৌছায় পাড়ে।

এক মহিলা কলস কাখে নদীতে জল আনতে গিয়ে দেখে একজন জীবন্ত মানুষ পানিতে ভাসছে। তাঁর চোখের পাতা পড়ছে, হাত-পা নড়ছে এই দেখে মহিলা তাঁকে নদী থেকে তুলে বাড়িতে নিয়ে যায়। মহিলা ছিলেন মুসলিম ধর্মের এক কারিকর পরিবারের রমনী। সেখানে সেবা শশ্রুষা পেয়ে লালন সুস্থ্য হয়ে ওঠেন। তবে বসন্ত রোগে লালনের এক চোখ নষ্ট হয়ে যায় এবং মুখমন্ডলে গভীর ক্ষত’র সৃষ্টি হয়।

সুস্থ্য লালন নতুন জীবন ফিরে পেয়ে মনের আনন্দে ফেরেন তাঁর প্রিয় গ্রাম,প্রিয় মায়ের কাছে। সন্তানকে জীবিত দেখে তাঁর মা আনন্দে আত্মহারা। স্ত্রী তাঁর ¯^vgx‡K ফিরে পেয়ে সৃষ্টিকর্তাকে জানায় কৃতজ্ঞতা। কিন্তু সকল আনন্দ কিছুক্ষণের মধ্যে হারিয়ে যায়। লালন জীবিত ফিরেছে শুনে গ্রামের লোক দলে দলে তাঁকে দেখতে আসে।

সেই সাথে আসে সমাজপতিরা। তাঁরা সাফকথা জানিয়ে দেয় লালনের অন্তুষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এছাড়া সে মুসলমান বাড়ির জল খেয়েছে তাঁকে আর এই সমাজে থাকতে দেয়া হবে না। সেদিন ধর্মের অজুহাতে লালনকে সমাজ থেকে বিচ্যুত করা হয়। বিচ্যুত করা হয় মা ও স্ত্রীর কাছ থেকেও। দারুন কষ্ট আর মর্মবেদনা বুকে চেপে লালনকে চলে যেতে হয় বাড়ি ঘর সংসার মা স্ত্রী পরিবার পরিজন ছেড়ে।

জন্মভূমির মায়া ছেড়ে যাওয়ার সময় তাঁর যে বেদনার সৃষ্টি হয়েছিল তা নাড়ি ছিড়ে যাওয়ার মতই। লালনের সাথে তাঁর স্ত্রী গৃহত্যাগী হতে চেয়েছিলেন কিন্তু সমাজের শাসন,লোকচক্ষুর ভয়,ধর্মের বেড়াজাল তার সে পায়ে শিকল পরিয়ে দেয়। এই দু:খ যন্ত্রনা সইতে না পেরে কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। যে ধর্মের জন্য লালন গঙ্গা স্নানে গিয়েছিলেন,যে গঙ্গা স্নানে গিয়ে লালনের জীবন বিপন্ন হতে চলেছিল সেই ধর্মের অজুহাতে তাঁকে সমাজপতিরা সমাজ বিচ্যুত করে এই মর্মবেদনা লালনকে দারুনভাবে পীড়া দেয়। মূলত: এখান থেকেই লালন ভাবনার বিকাশ ঘটে।

সমাজ বিচ্যুত লালন মরমী সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সাথে যোগাযোগ ঘটে । সিরাজ সাঁই ছিলেন কাহার সমপ্রদায়ের একজন সাধক পুরুষ। এই সাধকের সান্নিধ্যে এসে লালন দিনে দিনে হয়ে উঠেন আধ্যাত্বিক চিন্তা চেতনার প্রধান পুরুষ। সিরাজ সাঁইকে গুরু হিসেবে গ্রহন করে লালন হয়ে উঠেন ফকীর লালন সাঁই । ফকীর লালন ছিলেন গুরুবাদে বিশ্বাসী।

তাঁর গানে সে কথায় ফুটে ওঠেছে। তিনি বলেছেন- গুরু,তুমি তন্ত্রের তন্ত্রী গুরু,তুমি মন্ত্রের মন্ত্রী গুরু,তুমি যন্ত্রের যন্ত্রী না বাজাও বাজবে কেনে॥ লালনের ধারনা গুরু ঈশ্বরেরই প্রতিচ্ছায়া। গুরুকে ভক্তি শ্রদ্ধা জানালে তা ঈশ্বরকেই জানানো হয়। গুরু ছাড়া কোন সাধনা সাধ্য হয় না। গুরু সিরাজ সাঁই এর নির্দেশে লালন কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামে আখড়া করেন।

প্রথম দিকে লালন ছেউড়িয়া গ্রামের কালীগাঙের পাড়ে গহীন বনের মধ্যে একটি আম গাছের নীচে বসে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। ধ্যান মগ্ন লালন কখনও জঙ্গল থেকে বের হতেন না। তিনি জঙ্গলের মধ্যেই আনমেল নামের এক প্রকার কচু খেয়ে থাকতেন। জঙ্গলের মধ্যে এই সাধক পুরুষের কথা এক কান দু’কান করে ছেউড়িয়া গ্রামের সবার কাছে পৌঁছে যায় । ছেঁউড়িয়া গ্রামটি ছিল কারিকর সমপ্রদায় প্রধান গ্রাম।

কারিকরদের অনেকে লালনের পাশে এসে দাঁড়ায় । সাঁইজীর অনুমতি নিয়েই কারিকর সমপ্রদায় লালনের একটি আখড়া বাড়ি তৈরী করে দেয় এবং সবাই তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করে । লালনের প্রথম পর্যায়ের শিষ্যত্ব গ্রহন করে ছেউড়িয়ার এই কারিকররাই। আধ্যাত্মিক সাধক লালন সাঁইয়ের সাধনার কথা কিছুদিনের মধ্যেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। লালন প্রথমদিকে আখড়ায় খুব কমই থাকতেন।

শিষ্যদের নিয়ে তিনি পার্শ্ববর্তি অঞ্চল পাবনা,রাজশাহী,যশোর,ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁর মতবাদ গানের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এই সময় তাঁর গানের জ্ঞান ছড়িয়ে পড়ে। সাধারন মানুষ সে হোক হিন্দু কিংবা মুসলিম সবাই তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করতে থাকে। কারন লালনের গানের মধ্যে তারা মানবমুক্তির ঠিকানা খুঁজে পায়। জাত-পাতহীন.ধর্ম-বর্নহীন সমাজের কথাই ছিল লালনের গানের মূল কথা।

লালন সাধক জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও ভুলে থাকতে পারেননি তাঁর মাকে। মায়ের আদর স্নেহের কথা স্মরণ করেছেন বারে বার। আধ্যাত্মিক জীবনের মধ্যেও বুকের পাঁজরে লুকিয়ে রেখেছিলেন তাঁর মাকে। দূর থেকেও তিনি ছিলেন তাঁর মায়ের অন্তর জুড়ে। এটা প্রমান হয় লালনের মায়ের মৃত্যু সংবাদ যখন তাঁর কানে আসে তখন তিনি আখড়া বাড়ি থেকে মায়ের শেষ কৃত্যানুষ্ঠানের সব কিছু পাঠিয়ে দেন।

খাবার দাবার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব। লালনকে সমাজ থেকে বিচ্যুত করার পর তাঁর অসহায় মা ভেকশ্রিতা হয়ে ভাড়ারা গ্রামের বৈরাগী কুম্ভ মিত্রের আখড়ায় আশ্রয় নেন এবং জীবনের বাকি সময়টা এখানেই কাটিয়ে দেন । জাতের কারনে লালন সমাজ বিচ্যুত হয়। যার কারনে জাত-পাতের বিরুদ্ধে লালন গানের মাধ্যমে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি তাঁর গানে উল্লেখ করেছেন- জাত না গেলে পাইনে হরি কি ছার জাতের গৌরব করি ছুঁসনে বলিয়ে।

লালন কয় জাত হাতে পেলে পুড়াতাম আগুন দিয়ে ॥ মধ্যযুগীয় কুসংস্কার আর ধর্মীয় গোঁড়ামীর সেই অন্ধকারের সময় যে সময় শিক্ষা নয় জাত-কুলই প্রধান বিষয় ছিল। সেই সময় লালন জাত-পাত,ধর্মীয় গোড়ামীর উর্ধ্বে উঠে মানুষের ভেতরের মানুষকে জাগানোর জন্য গান গেয়েছেন মাঠে ঘাটে পথে প্রান্তরে। মানবতাবাদী মতাদর্শ প্রচার করতে গিয়ে লালনের শিষ্যরা নানা রকম বিপদের মুখে পড়েছেন। হিন্দু ও মুসলমান দুই ধর্মেরই উঁচু জাতের সমাজপতিরা তাদের বিপক্ষ অবস্থান নেয়। বিভিন্ন জায়গায় তারা বাউলদের মাথার চুল কেটে, হাতের একতারা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে ।

তবুও বাউলরা তাদের আদর্শ থেকে পিছিয়ে যায়নি। বিশেষ করে লালনের মৃত্যুর পর বাউল নির্যাতনের সংখ্যা বেড়ে যায়। বাউল শীতল শাহ্‌ ও ভোলাই শাহ্‌’র মৃত্যুর পর এর সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। লালনের আখড়া বাড়ির জন্য তাঁর ভক্ত মলম শাহ্‌ কারিকরের দেয়া ১৬ বিঘা জমিসহ আখড়া বাড়ি ১৯৪৫সালের ১১ wW‡m¤^i নিলামে উঠে যায়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে লালনের ভক্ত ইসমাইল শাহ ১’শ সাত টাকায় চার আনায় উক্ত আখড়াবাড়ি লালনের নামে খরিদ করে তা রক্ষা করেন।

এভাবে যুগে যুগে লালন ভক্তরা তাদের সাঁইজীর আদর্শ স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার জন্য সাহসী ভুমিকা পালন করেছেন। লালন কোন ধর্মের এ নিয়েও চলেছে নানা জল্পনা কল্পনা। মুসলমানরা দাবী করেছে লালন মুসলিম ছিলেন আর হিন্দুরা ভেবেছে তাদেও ধর্মের। বিশেষ করে হিন্দু সমাজপতিরা লালনকে ধর্মেও অজুহাতে সমাজচ্যূত করার কারনে লালনের মধ্যে ধর্মেও প্রতি দারুন ক্ষোভের সৃষ্টি হয় । লালন গবেষকদের ধারনা লালন যখন সিরাজ সাঁই এর সান্নিধ্যে আসেন তখন ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে থাকতে পারেন।

তবে এ বিষয়ে লালন তাঁর গানের মাধ্যমে নিজের ধর্মীয় অবস্থান পরিস্কার কেও গেছেন। তিনি বলেছেন- সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে লালন বলে জেতের কি রুপ দেখলাম না এ নজরে ॥ এছাড়াও তিনি আরও পরিস্কার করেছেন তাঁর মৃত্যুপরবর্তি আচার আচরণ এর মাধ্যমে। ভক্তদের প্রতি তাঁর যে দিক নির্দেশণা ছিল তা দেখে এবং শুনে । তিনি জীবদ্দশায় বলে গেছেন তাঁর মৃত্যুও পর যেন কোন ধর্মীয় শাস্ত্র অনুযায়ী দাফন করা না হয়। জানাযা কিংবা শ্মশানে হরির কীর্তন কোনটিই না করার নির্দেশনা দিয়ে যান।

বরং যে ঘেও উনি বাস করেন সেই ঘরেই দাফনের কথা বলেন। এই মাজারকে ঘিেও বাউল উৎসবের কথা বলেছেন। লালনের সেই নির্দেশণা মোতাবেক তাঁর ভক্তরা বর্তমানে যেখানে মাজার সেটিই ছিল লালনের শোবার ঘর। আর সেই ঘরেই তাঁকে সমাহিত করা হয় কোন ধর্মীয় শাস্ত্র ছাড়াই। এ থেকেও প্রমাণিত হয় যে, লালন কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন না।

তবে সব ধর্মের মানুষের সাথে তাঁর ছিল ভাল সম্পর্ক। সকল ধর্মের মানুষ তাঁকে আপন বলে জানতো। যার কারনে সকল ধর্মেও মানুষই লালনকে তাদেও ধর্মেও ভেবেছে। মুসলমানের সাথে তাঁর আহার-ব্যবহার থাকায় মুসলমানরা ভাবতো তিনি মুসলমান, বৈষ্ণব ধর্মেও মত পোষণ করতে দেখে হিন্দুরা তাঁকে বৈষ্ণব মনে করতো। আবার জাতিভেদ মানতেন না নিরাকার পরমেশ্বেও বিশ্বাস দেখে ব্রাম্মদিগের মনে হতো তিনি eªv¤§ag©vej¤^x বলে মনে হতো।

কিন্তু আসলে লালন বড় গুরুবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর শিষ্যরা লালনের উপাসনা ছাড়া আর কারও উপাসনা শ্রেষ্ঠ বলে মানতো না। সর্বদা ‘সাঁই’ছাড়া মুখে আর কোন কথা শোনা যেত না। আধ্যাত্মিক ফকীর লালন সাঁই গানের মাধ্যমে সমাজের জাতিভেদ, উচু-নীচু,ধর্মীয় গোঁড়ামী,স্যুঁৎ প্রথার বিরুদ্ধে মানুষের চেতনা ফিরিয়ে আনেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে মানুষের বিবেককে জাগিয়েছেন ।

মানুষের ভেতরের পশুত্বকে হত্যা কেও মানবতার জয়গান গেয়েছেন। লালন ছিলেন ¯^wkw¶Z| তবে তিনি বিবেকের পাঠশালা থেকে যে শিক্ষা নিয়েছিলেন তা আজও বিশ্বব্রম্মান্ডে চলছে গবেষনার পর গবেষণা। তাঁর পান্ডিত্য,তার জ্ঞানের যে গভীরতা তা আজ মানব জাতির কল্যানে ব্যবহার হচ্ছে। লালনকে কেউ কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলে কিংবা জানতে চাইলে তিনি তৎক্ষনাৎ গানের মাধ্যমে জবাব দিতেন। আকস্মিকভাবে তাঁর হৃদয় থেকে উৎসারিত যে গান আর সুর তা মানুষের অন্তরকে বিকশিত করতো।

লালনের মনে যখন কোন ভাবের উদয় হতো তৎক্ষনাৎ তিনি ‘পোনা মাছের ঝাক’বলে সংকেত দিলেই শিষ্যরা দৌড়ে আসতো একতারা আর ডুগডুগি হাতে। সাথে সাথে খাতা-কলম নিয়ে ছুটে আসতেন মানিক শাহ পন্ডিত ও মনিরুদ্দিন শাহ । সাথে সাথে তারা লালনের কন্ঠের গান খাতায় লিখে ফেলতেন। লালনের ভক্তরা দাবী করে সাঁইজীর ১০হাজারের মত গান রয়েছ্ে‌ তবে গবেষকদেও ধারনা তা হবে এক হাজারের মত। লালনের গান তাঁর কন্ঠ থেকে শিষ্যদের মাধ্যমে গনমানুষের কন্ঠে ছড়িয়ে পড়ে।

যে গান এখন বাংলার সবখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।