আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্তরালে



"তাহার স্পর্শে তাহার গন্ধে তাহার কন্ঠস্বরে আমার স্পর্শ আমার গন্ধ আমার কন্ঠ মিশে তাহার সময় হয় না তো শেষ, তাহার সময় জুড়ে আমি শুধু আমিই থাকি, শুরু এবং শেষে...." সময় সন্ধ্যা ৭ টা। খুব অস্থির লাগার কারনে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে যাই। ঘরে ঢুকে দেখি,হিমি আমার ঘরে ঘুমিয়ে আছে। গভীর ঘুম। স্বপ্ন দেখছি নাতো?আমি অনেকটা দূরত্ব রেখে হিমির পাশে গিয়ে বসি।

মায়াময় একটি মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেও অনেক ভালো লাগে। মুখের উপর চুল এসে পড়েছে হিমির। আমি আঙুল দিয়ে সরিয়ে দিলাম চুল গুলো। সেই সামান্য স্পর্শেই চোখ মেলে তাকালো হিমি। চমকে উঠলো না,উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রইল আমার দিকে।

আমি হিমির ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে দিলাম। তারপর হিমির নাক ও চোখের পাশে আঙুল দিয়ে আঁকতে লাগলাম ছবি। হিমি আমার আঙুলটা এক সময় চেপে ধরতেই আমি হিমিকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করতে শুরু করলাম। রাত ৯ টায় হিমির সাথে আমার দেখা হয় বাংলা মটর। আজ কৃষ্ণপক্ষ।

কোনও কারনে আজ রাস্তার সব নিয়ন বাতি জ্বলছে না। সমস্ত নগরী অন্ধকার বলে মনে হচ্ছে। তারপর একসাথে রিকশায় উঠলাম। আমার বাম হাতে জলন্ত সিগারেট। ডান হাত হিমির ডান হাত ছুঁয়ে আমি বিড় বিড় করে বললাম, "You did wish, that I would make her turn: Sir,she can turn ,and turn, and yet go on, And turn again and she can weep,sir weep..." হিমি বলল, চুপ করে আছো কেন?আমি বললাম,বেশি কথা বললে রোগ হয়।

সেই রোগের নাম 'ক্লার্মিম্যানস সোর থ্রোট'। হিমি হেসে ফেলল। বড় ভালো লাগে এই বোকা মেয়েটির হাসি। আমি অনেক গবেষনা করে দেখেছি- বাংলাদেশের নারী জাতির মধ্যে যে কত মহৎ ,অসাধারন হৃদয় রয়েছে,তা অনেকেই জানে না! আমি হিমির দিকে না তাকিয়েও খুব বুঝতে পারছি,হিমি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আকাশের দিকে তাকাই।

চাঁদ নেই,দু-একটি নক্ষত্র দেখা যাচ্ছে। হিমি বলল আকাশে কি দেখ?আমার দিকে তাকাও। হিমি জানে না,আকাশের দিকে তাকালেও আমি হিমিকেই দেখতে পাই। আকাশের একটি জ্বল জ্বল করা তারার নাম 'হিমি'। হিমি বলল কথা বলো,রাজিব নূর চুপ করে থাকবে না।

কথা বলো। তুমি চুপ করে থাকলে আমার ভালো লাগে না। হিমির মুখে এক আকাশ অস্থিরতা। আমি বললাম- আমি আমার মায়ের মুখ পেয়েছি,বুঝলে?মাতৃমুখী ছেলে জীবনে অনেক উন্নতি করে। এইবার দেখ না কি করি।

রাত ১০ টায় আমি হিমিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরি। হিমিকে আমার অনেক কথা বলতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আমি বলি না। কেন আমার এত সংশয়?হিমিকে বলতে ইচ্ছা করে- নানান ঝামেলায় থাকি। তবুও যখনই একটু ভালো থাকি,তখনই হাস্যময় এবং কৌতুকপ্রবন থাকি।

সব প্রিয় মানুষদের কাছে নিয়ে আনন্দে থাকতে চাই। আমি খ্যাতি চাই না,প্রতিষ্ঠা চাই না। কোন কিছুতেই আমার লোভ নেই,মোহ নেই। চমক দেখাবার কোন প্রয়াস নেই। আমি শুধু আদর-ভালোবাসা চাই।

ভালোবাসার জন্য যে এত কাঙাল,তাকে কি ভালোবাসা না দিয়ে পারা যায়?হিমি ভালোবাসা পেলেই আমি অনেকদিন বেঁচে থাকব। রাত ২ টা। গভীর রাত। আমি ব্যালকনিতে। আমার হাতে সিগারেট।

এখন মধ্যরাতে আর আকাশের দিকে তাকাতে ইচ্ছা করে না। বার বার সেই দৃশ্য চোখে ভাসছে। ঘর আলোকোজ্জল। বড় একটা খাটে শুয়ে আছে হিমি। হিমির ঘুমন্ত সারা শরীরে প্রচুর অলংকার।

জরির চুমকী বসানো নীল শাড়ি পরা। পায়ে নূপুর। দু'গালে লাল রঙ। একজন ফটোগ্রাফারের চোখ দিয়ে হিমির মুখ ও শুয়ে থাকার ভঙ্গি লক্ষ করলাম। এমন সাজে কেউ ঘুমোয়?ইচ্ছে করছিল গান গেয়ে হিমির ঘুম ভাঙ্গাই।

ঠিক যেন রুপকথার মতন। পরে অবশ্য আমি হিমিকে বলেছিলাম- তুমি এত সাজ করে ঘুমোও কেন?হিমি ঊওরে বলেছিল,স্বপ্নের মধ্যে আমি তোমার হাত ধরে কত জায়গায় ঘুরে বেড়াতে যাই। সেই জন্য আমি সেজে থাকি। আমি হেসে বললাম-মানুষ যেদিন যে পোশাক পড়ে ঘুমোতে যায়,স্বপ্নে সেই পোশাকই দেখা যায় নাকি?কথা শেষ করে আমি হিমির মুখের দিকে তাকাই। হিমির মুখখানি চতুর নয়,সারল্য মাখানো।

আমি যদি কবি হতাম তাহলে লিখতাম- "এই অপরুপ ছায়া ঘিরিতেছে কী যে মায়া স্বর্গ হতে ভেসে আসে কুলকুল ধ্বনি তবুও দেখি না কিছু,তবুও শুনি না কিছু মনে পড়ে তার মুখ তার সেই নিবিড় চাহনি...."

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।