আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে নজরুলের নাটিকা আলেয়া

আমি, কথা কম -কাজ বেশীতে বিশ্বাসী......

ডাঃ মিলন স্মরণে নাটিকার মুল চরিত্র ৬ টি। এর মধ্যে তিনজন পরুষ এবং তিনজন নারী। চরিত্রগুলি কাল্পনিক। বাংলদেশের বিভিন্ন সময়ের ৫ জন সরকারপ্রধান এবং ১ সাবেক ফাস্ট লেডির চরিত্রর সাথে মিলে যায়। নজরুলের রচনা থেকে ভূমিকাসহ প্রথম অঙ্কের কিছু অংশ আপনাদের সামনে পেশ করছি।

আপনারা সেই কাল্পনিক চরিত্রের সাথে বাস্তবের মিল খুজে বের করুন। ভাল লাগলে সবটা নাটিকা পড়ে নিতে পারেন। তিনটি পুরুষ উগ্রাদিত্য চন্দ্রকেতু মীনকেতু তিনটি নারী চন্দ্রিকা জয়ন্তী কৃষ্ণা প্রথম অঙ্ক [সম্রাট মীনকেতু প্রমোদ উদ্যানে আনন্দ করছিলেন এমন সময় প্রধানমন্ত্রী কৃষ্ণার প্রবেশ ] মীনকেতু : ও কে ? কৃষ্ণা ? প্রধান মন্ত্রী -তারপর ,এমন অসময়ে এখানে যে! কৃষ্ণা : বিশেষ প্রয়োজনীয় রাজকার্যে আপনার আনন্দের বাধা হয়ে এসেছি,সম্রাট ! মীনকেতু :আমি এখানে এসেছি মীনকেতু হয়ে -সম্রাট হয়ে নয়। কৃষ্ণা : আমিও ফুলবনে আসি। তবে আপনাদের মতো আয়োজনের আড়ম্বর নিয়ে আসিনে।

মীনকেতু :রাজ্যের ব্যপার রাজসভাতেই বলো কৃষ্ণা ,এখানে নয়। কিন্তু এসেছো যখন একটু ফুলেল হাওয়ার ছোঁয়া না -হয় লাগিয়েই গেলে। কৃষ্ণা : (ধীর স্হির কন্ঠে )সম্রাটের কী এটা জানা উচিৎ নয় যে ,তারঁ সাম্রাজের প্রধানমন্ত্রীর সাথে এই নটীদের সামনে এই ব্যবহার আমাদের সকলেরই মহিমা খর্ব করে। মীনকেতু :ওরা নটী নয় কৃষ্ণা ,ওরা আমোদ প্রমোদের সহচারী। কৃষ্ণা: মার্জনা করবেন সম্রাট !আমিও আপনার ঐ আনন্দ হাসির তরঙ্গে মাঝে মাঝে ভেসে যাই ,ভুলে যাই আপনি আমাদের মহিমাময় সম্রাট ;আর আমি তার প্রধান মন্ত্রী ।

মীনকেতু : তুমি আমায় জানো কৃষ্ণা ,আমি যখন সিংহাসনে বসি, তখন আমি ঐ -কেবল তোমরা যা বলো -মহিমাময় ,যুদ্ধক্ষেত্রে যখন যুদ্ধ করি তখন আমি রক্ত-পাগল সেনানী ,কিন্তু সুন্দর ফুলবনে আমিও সুন্দরের ধেয়ানী ,হয়তো-বা কবিই । যেখানে শুধো তুমি আর আমি। কৃষ্ণা : জানি না , তুমি কী ! এতদিন ধরে তোমায় দেখছি ,তবু যেনো তোমায় বুঝতে পারলিম না। আকাশের চাঁদের মতোই তুমি সুদূর ,অমনি জ্যোৎস্নায় কলঙ্কের মাখামাখি। মীনকেতু :তবুও ওই সুদূর কলঙ্কী-ই তো পৃথিবির সাত সাগরকে দিবা-রাত্রি জোয়ার -ভাটার দোল খাওয়ায়।

কৃষ্ণা : সত্যিই তাই। এসনি তোমার আকর্ষণ। (একটু ভাবিয়া) আচ্ছা মীনকেতু,তুমি কখনোও কাউকে ভালবেসেছিলে -মনে পড়ে ? মীনকেতু : (হাসিয়া) চাঁদ কাকে ভালবাসে কৃষ্ণা ? কৃষ্ণা :ও কলঙ্কী ,ও হয়তে াকাউকে ভালবাসে না। মীনকেতু : (হাততালি দিয়া) ঠিক বলেছো কৃষ্ণা ,ওই কলঙ্কীকে সবই ভালবাসে , ও কাউকে ভালবাসে না । [একটি মেয়ের প্রবেশ] মেয়েটি : রাজা ,কাল রাতে তোমার অনুরাগ দিয়ে আমায় বিকশিত করেছিলে ।

আমার সেই বিকশিত ফুলের অর্ঘ্য তোমায় দিতে এসেছি। তমি বলেছিলে... মীনকেতু : সুন্দরী ,রাত্রে তোমায় যে কথা বলেছিলুম ,তা রাত্রের জন্যই সত্য ছিল। দিনের আলোকেও তা সত্য হবে এমন কথা তো বলিনি। রাত্রে যখন কাছে ছিলে ,তখন তুমি ছিলে কুমোদিনী ,আমি ছিলুম চাঁদ। এখন দিন যখন এল ,তখনআমি হলুম সূর্য ,আমি এখন সূর্যমুখীর ,কমলের ! যাও।

কৃষ্ণা : (আহত স্বরে) মীনকেতু ! (মীনকেতু হো হো করে হেসে উঠল ) [গান করতে করতে একটি মেয়ের প্রবেশ । তার নাম মালা] মীনকেতু :তুমি আবার কে সুন্দরী ? মালা :সম্রাট , চিনতে পারেছেন না ? আমার নাম মালা !কাল সারারাত যে তোমার গলা জড়িয়ে ছিলুম। আমি ছুলুম কাঁটাবনের ছড়ানো ফুল ,তুমি তো আমায় মালা করে সার্থক করেছো। মীনকেতু :আঃ ,তুমি যদি সার্থকই হয়ে গেলে ,তবে আবার কেন ? কৃষ্ণা : উঃ !আমি আর থাকতে পারছিনে ! মীনকেতু !তুমি কী ? মীনকেতু : ( হাসিয়া )আমি মনুষ্যত্বের পূজা করি না , কৃষ্ণা !আমি যৌবনের পূজারী । ফুল আর হৃদয় দলে চলাই আমার ধর্ম ।

কৃষ্ণা : নিষ্ঠুর ! তোমার কি হৃদয় বলে -মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই ? [কৃষ্ণা অন্দর মহলে চলে যায় । সেখানে অপেক্ষা করছে তার মন্ত্রীরা ] সহকারী মন্ত্রী ১ : এসছেন জ্ঞান তাপসী মাননীয় প্রধান মন্ত্রী । কৃষ্ণা : দেখছেন সবাই। ,এই তার দৃপ্ত পদরেখা । (পথ হইতে একটি পদদলিত রাঙা গোলাব তুলিয়া লইয়া )এই তার পায়ে -দলা রক্ত গোলাব , এমনি করে ফুল আর হৃদয় দলে সে তার পায়ের তলার পথ রক্ত রাঙা করে চলে যায়।

সহকারী মন্ত্রী ১ :কেন ভাই আলেয়ার পেছনে ঘুরে মরছ ? কৃষ্ণা : ভুল বুঝবেন না আমাকে। আমি ওর কথা ভেবে কষ্ট পাই নারী বলে। তবু ও আলো কেন যেন কেবলি টানতে থাকে। আমি প্রাণপ্রণে বাধা দিই। মাঝে মাঝে হয়তো মনে হয় ,ওই মিথ্যার পেছনে ঘোরার চেয়ে বুঝি বড় আনন্দ আমার জীবনে আর নেই ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.