আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুগল্প ঃ মন পরানের নাও



অনুগল্প ঃ মন পরানের নাও রুবেল আশরাফ এক. লাল, হলুদ, সবুজ আলোর ট্যাফিক সিগন্যাল। শিমুল তুলোর মতোন মেঘবালিকায় ঢেকে যাচ্ছে পোয়াতী চাঁদ। ঘুমহীন নগরীর ফুটপাতে পলিথিনের খুপড়ি। টিমটিমে সোডিয়াম আলো জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্বে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোষ্টের নিচে নিঃস্ব মা, ব্যস্ত রান্নার চুলায়। পাশে ময়লা মাখা শিশুটি হামাগুড়ি দিয়ে ছুঁতে চায় মায়ের আঁচল।

বাঁধ সাধে পধের বেওয়ারিশ বন্ধু কুকুরটা। বড়লোকি উচ্ছিষ্ট খেলনায় মাতে আবার সাড়া না পাওয়া শিশুটি। লাল চোখে বাসা বেঁধেছে একরাশ ক্ষুধা। রান্নাশেষ। খেতে বসার প্রস্তুতি... ঠিক তখনি শিশুটার মুখে ফুটে ওঠে হাসির আভা।

মায়ের স্নেহ বিলীন হয় শিশুটির রন্দ্রে রন্দ্রে। মা আঁচলে ঢেকে শিশুটিকে দুগ্ধদানে মাতে। মুখোমুখি ভাত আর শিশুটি। ...সাদা ভাতের নোংরা থালে, একটা সময় এসে বসে পড়ে ফুটপাতের বিদগ্ধ বাবা। মা.. বসে নির্বাক তাকিয়ে থাকে অন্যদিকে... অন্য স্বপ্নের পরাবাস্তব হাতছানিতে...।

হয়ত এভাবেই সময় চলে... এভাবেই আমাদের বেড়ে ওঠা...যাপিত বাস্তবতায়... দুই. নিরাশার দোলাচলে ব্যথিত আমার পরানপাখি। সকাল, দুপুর, সাঝেঁ চোখে তার একরাশ অভিমান। মন পরানের নাও ভাঙ্গে বুকের ভেতর। একটু চাওয়ার মাঝে কেন লক্ষ যোজন দুরত্ব! আকাশের সীমানা কেন এতটা প্রসারিত। কেনই বা প্রহরী ভবিষ্যত হাটে নির্লিপ্ত হয়ে।

মনের মন্দিরে দীপাবলীতে, দেবী আরাধ্য শুধু রোদনের অর্ঘ্য। পরানপাখি আমার একলা একা চোখ রাখে কোন এক টেলিভিশন চ্যানেলের বাহারী বিজ্ঞাপনে... কেঁদে চলে একটি সুর.. ‘আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই রইলা রে...’ । সিক্তচোখে আকেঁ না কোন স্বপ্নাঞ্জন। সেখানে শুধুই নিয়তির সাথে বোঝাপড়া করার এক পৃথিবী অবিশ্বাস। আমার পরানপাখি বিষ্ন্নতার সুতোয় গাঁথে একটি স্বপ্ন, তারপর..একটি কষ্ট, এরপর..একটি আকুতি, অতঃপর..একটি না বলা দীর্ঘশ্বাস... তিন. অবাক বসুন্ধরা।

আকাশ লাগোয়া বসুন্ধরা সিটি’র দামী আয়নায় এসে প’ড়ে, আট পৌড়ে রোদ্দুর। আমান্তের বসতে নিঃসঙ্ঘ জীবনবোধের নীলাচল। কর্মস্থানের বহুতল থেকে দৃষ্টি আটকে যায় রোমন্থনের নাটকে। বিস্মৃতির অতলে ভেসে ওঠে একটি নিঃষ্পাপ মুখচ্ছবি অতলান্তে। আমি স্বম্বিত ফিরে পাই, বোধের সীমান্তে।

অবিচল পথচলা, বেড়ে ওঠা , আবার নতুন করে আশায় বুক বাঁধা। এভাবেই নিয়ত বাতাসের ঘুর্ণিপ্রবাহে আমি থেকে আমান্তের চলে পোষ্টমর্টেম। স্বপ্নলোকে ভাসে আমার প্রজন্মের আকুতি, একটু স্পর্শ, ফেলে আসার শেষ অঙ্ক...টা। ‘বাবা... তুমি আসবে কবে... বাবা... আমার ভু..গাড়ি কই..বাবা...’। নিজেকে সামলে নিজের মাঝে, আমি গুনতে থাকি... নিঃসঙ্গ প্রহর... এক, দুই, তিন করে ঘড়ির কাঁটার অলস লীলায়...


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।