আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানুষ গড়ার কারিগর --- বিটলামী ও অন্যান্য- (১)

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ আমার হাবিজাবি লেখা পড়ে কারো মেজাজ খারাপ হলে আমি দায়ী নই!!

আমার এক স্যার আছেন খালি কারণে-অকারণে চিল্লাচিল্লি করেন। মানে স্বাভাবিকভাবে একটা কথা বললেও এমন হুলুস্থুল করেন মনে হয় এখনি ধরে মাইর লাগাবেন। যাই হোক একদিন ক্লাসে স্টাডি ট্যুর নিয়ে আলাপ হচ্ছিলো। স্যার ট্যুরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন। স্যার যাওয়ার পর সবাই বাস ভাড়া নিয়ে আলোচনা করছিলো তখন আমি যথাসম্ভব নির্লিপ্ত গলায় বললাম, এই স্যার গেলে আমাদের বাসের দরকার নেই, স্যারের মাথায় এত সিট (ছিট) আছে যে আমরা অনায়সে সবাই বসতে পারবো।

এটা যখন আমি বাসায় বলছিলাম, আমার ভাগ্নী বলে উঠলো, অন্তত একটা সিট তো লাগবেই, স্যার যাবেন কিসে করে? এই স্যার একদিন ক্লাসে কৌণিক গতিসূত্রের কি একটা থিওরী বোঝাতে গিয়ে একটা সার্কেল আঁকলেন। আঁকলেন না বলে বলি আঁকার চেষ্টা করলেন, কারণ বৃত্তটা হয়ে গেলো ডিমের মতো। আমি খাতায় নোট করছি আর বলছি, "ওহ্‌! একেবারে ডায়েট কন্ট্রোল করা বৃত্ত হয়ে গেলো দেখছি। " আমি অবশ্য ব্লগেই বকবক করি, ক্লাসে আমার মতো শান্ত মেয়ে আর একটা নেই তাই সবাই হেসে ফেলার বদলে খুব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আরেকদিন আরেকস্যারের ক্লাসের কথা বলি।

ঐদিন স্যার ফাঁকিবাজদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। রোলকলের সময় স্যার একটা মেয়েকে দাঁড়া করালেন, মেয়েটা অনেক অনিয়মিত। আর আমাদের সাথের দুইটা মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে। তো স্যার ভাবলেন এরও বিয়ে হয়ে গেছে তাই অনিয়মিত ক্লাস করে। স্যার মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলেন তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে কিনা।

মেয়েটা সলজ্জে না করলো। আরেকপাশ থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো, "তাহলে বোধহয় ওকে দেখতে (পাত্রী হিসেবে) এসেছিলো। " কিছুক্ষণ পর আরেকটা ফাঁকিবাজ ছেলেকে স্যার যেই জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি এত অনিয়মিত কেন?" সঙ্গে সঙ্গে আমরা বলে উঠলাম, "স্যার, ওকে তো দেখতে এসেছিলো" ইন্টারে পড়ার সময়, আমাদের ক্লাসের দুইটা মেয়ে ক্লাসে খুব কথা বলছিলো। স্যার তো ওদের একজনকে পড়া ধরলেন। মেয়েটা খুবই ভালো স্টুডেন্ট ( ঢাকা মেডিকেলে পরে এখন) কিন্তু তার একটা মুদ্রাদোষ ছিলো, একটা পড়া বলার মাঝখানে স্যার... স্যার... বা ম্যাডাম... ম্যাডাম... বলতো অনেকবার।

তো স্যার একজনকে পড়া ধরলেন আর অন্যজন হাসতে লাগলো দেখে স্যার ওই মেয়েকে বললেন, "এই মেয়ে, ও যে পড়া বলেছে ওটা সঠিক হয়েছে নাকি ভুল হয়েছে বল দেখি"। মেয়েটা বললো, "স্যার, পড়া ঠিকই ছিলো খালি মাঝখানে ১২ বার স্যার বলেছে, ওটুকু না বললে সম্পূর্ণ ঠিক হতো আরকি" আমি ছাত্রী হিসেবে কখনোই তেমন ভালো ছিলামনা। পড়াশোনা করেছি মোটে চার বছর, ক্লাশ নাইনের শেষ থেকে অনার্স ভর্তি পর্যন্ত। এর আগের ক্লাসগুলো যে কিভাবে পার করেছি আল্লাহই ভালো জানেন। কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকেই অকারণে সব স্যার ম্যাডামদের স্নেহ পেয়েছি অনেক।

রাগী রাগী টিচারদের সাথেও খুব নর্মাল ভাবে কথা বলতে পেরেছি। এক বদরাগী স্যার ছিলেন, সবাই তাকে যমের মতো ভয় পেতাম। আমি স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই চশমা পড়ি, সেজন্য মাথা ব্যাথা ছিলো ছোটবেলা থেকেই। ক্লাস টুতে থাকতে একবার এই বদরাগী স্যার পরম মমতায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন আর অন্যদিকে বাকী সবাইকে ধমকা ধমকি করছিলেন। আমি শুধু ভয়ে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

আজ এতদিন পরে প্রচন্ড মাথাব্যাথায় যখন ছটফট করি তখন এই বদরাগী স্যারের মায়ামাখা চেহারা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। আমার স্কুলের এক ম্যাডাম অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁকে দেখতে গেলাম। ম্যাডাম ধরা গলায় বললেন, "শিক্ষকতা পেশাটা এত্ত কষ্টের, এত্ত খাটুনি, কিন্তু তোরা যখন আমায় দেখতে আসিস, রাস্তায় সালাম দিস তখন মনে হয় আমার সৌভাগ্য যে আমি টিচার হতে পেরেছি। " ইন্টারে পড়ার সময় খুব অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম তখন স্যার-ম্যাডামরা মানসিকভাবে যে সাহায্য আমাকে করেছেন তা কোন দিনই ভোলার নয়। আমার এক ফিজিক্স স্যার সবাইকে আম্মু ডাকেন, স্যার আমাকে অনেক অনেক হেল্প করেছেন।

অসুস্থ হয়ে যখন হাল ছেড়ে দিচ্ছিলাম, বাসায় ঘোষণা দিয়ে দিয়েছিলাম যে, "পড়াশোনা শেষ! আর সম্ভব না"। তখনকার সময় এই স্যার মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিয়েছিলেন, আজ অনেক অসুস্থ হয়ে যখন পড়তে পারিনা তখন এই স্যারের কথাগুলো মনে করে মনে বল পাই। স্যার বলতেন, "হু মা তো ছেলের চেয়ে বুড়ো হবেই, এজন্যই আমার আম্মুটা এত অসুস্থ"। আসলে কি লিখতে কি লিখে ফেললাম জানি না। ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত সব টিচারকে খুব মনে পড়ছে।

কেন যেন আমাকে নিয়ে সব টিচারের আশা ছিলো বেশী, তাদের মনের মতো রেজাল্ট করতে না পেরে এখন কোন স্যার ম্যাডামদের সাথে দেখা করার সাহস পাইনা। আমার প্রিয় প্রিয় সব শিক্ষক-শিক্ষিকা, ভালো থাকুন চিরকাল, মঙ্গলময়ের কাছে এই প্রার্থনা চিরকালের জন্য। ( শিরোনামটা পালটে দিলাম, এজন্য দুঃখিত। আসলে টিচারদের নিয়ে অনেক কথাই বলা বাকী রয়ে গেছে তাই এই বিষয়ে আরেকটা পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা আছে। )


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.