আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশকে কিভাবে ভালবাসা উচিত।



গত কয়েক দিন ধরে প্রথম আলোতে লক্ষ্য করছি দেশ কে মায়ের সাথে তুলনা করা হচ্ছে, দেশকে মা বলতে হবে, দেশকে মায়ের মতো ভালবাসতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। খুব ভাল উদ্যোগ, নিঃসন্দেহে। দেশের প্রতি মানুষের ভালবাসা বৃদ্ধি করার প্রয়াস। তবে আমার এতে একটু মতভেদ আছে। আমি কোন ধর্মের পক্ষ নিয়ে বলছিনা, প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না।

আমার মনে হয়- দেশকে দেশের মতই ভালবাসা উচিত। কারণ, দেশের প্রতি ভালবাসা মায়ের প্রতি ভালবাসার মতই সহজাত। মাকে যেমন মায়ের মতই ভালবাসতে হবে, বাবাকে যেমন বাবার মতই ভালবাসতে হবে, মাকে বাবার মত ভালবাসার দরকার নেই, বাবাকেও মায়ের মতো ভালোবাসার দরকার নেই। ভাইবোনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ভাইবোনকেও তাদের মতই ভালবাসতে হবে, যেটা তাদের প্রতি সহজাত।

তারা কখনোই মা কিংবা বাবার জবাব দিতে পারবে না। তেমনি দেশও মায়ের জবাব দিতে পারবে না, মাও দেশের জবাব দিতে পারবে না। তাই দেশকেও মা, বাবা বা অন্য কারো মতো ভালবাসতে হবে না। আমার মনে হয়, তেমন তুলনা করাটাও ঠিক হবে না। এতে যথাযথ সম্মান দেয়া হবে না।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও অনেক যোদ্ধা মায়ের বাধা, ভালবাসার বন্ধন ছেড়ে দেশের ডাকে চলে গিয়েছিলেন। আমাদের এটা বুঝতে হবে, মায়ের প্রতি ভালবাসা যেমন কোন উদাহরণ দিয়ে বুঝানো যাবেনা, তেমনি দেশের প্রতি ভালবাসাও কোন উদাহরণ দিয়ে বুঝানো যাবেনা। মায়ের প্রতি ভালবাসা অন্তরের অন্তস্থল থেকে উঠে আসে। দেশের প্রতি ভালবাসা ঠিক সে জায়গা থেকেই উঠে আসে। আমার মনে হয়, পৃথিবীর বেশীর ভাগ লোকই এই ভুলটা করে।

তাই বলে যে আমরাও করব তার তো কোন মানে হয় না। আজ থেকে ২০০-৩০০ বছর আগে তো পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ মনে করতো পৃথিবী সমতল। তো আজ কি আমরা সেই ভুল শুধরে নেইনি? অনেকে বলতে পারেন- দেশের প্রতি ভালবাসা যদি সহজাতই হয়, তবে কেন আজ দেশপ্রেমের এতো অভাব? দেখুন- মায়ের প্রতি ভালবাসারওতো তেমনি অভাব। না হলে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা কেন দিন দিন বাড়ছে। আসলে এটা খুব ছোট উদাহরন।

দেশের প্রতি ভালবাসা আসলে অনেক বড় ব্যাপার। দেশের প্রতি ভালবাসা আসলে দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা, দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের প্রতি ভালবাসা, দেশের নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা তথা দেশের যা কিছুর উপর ভিত্তি করে আমাদের জীবন চলছে এদের সবার প্রতি ভালবাসা। যারা দেশকে ভালবাসেনা তাদের সমস্যাটা হচ্ছে তারা স্বার্থপর। এ প্রকৃতির লোক নিজের মাকেও ভালবাসে না। অনেকে আবার যতক্ষণ স্বার্থের বিপক্ষে যাচ্ছেনা ততক্ষণ মাকে ভালবাসেন কিন্তু বিপরীতে সেই মেকী ভালবাসাটা আর থাকে না।

কেউ কেউ আগে ভালবাসলেও হয়তো বিয়ে, সম্পত্তি, পরিপার্শ্ব ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে সেই ভালবাসাটা পরে ভুলে যায়। আমরা যদি আমাদের চারপাশে একটু ভাল করে তাকাই, তাহলে আমরা সেটা সহজেই বুঝতে পারব। এখন প্রশ্ন হলো আমরা কিভাবে মানুষকে দেশের প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি করার কথা বলবো। মায়ের প্রতি ভালবাসার যদি কারো ঘাটতি থাকে তবে তাকে তার পেছনে মা যে কষ্ট, পরিশ্রম করেছেন, তাকে যেভাবে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভ ধারণ করেছেন, স্তন্যপান করিয়েছেন, লালন-পালন করেছেন সেগুলো মনে করাতে হবে- অন্য কোন ভালবাসার উদাহরণ দিয়ে এটা বুঝানো যাবে না। তার মধ্যে যদি একটুখানি মনুষ্যত্ব থেকে থাকে তবে সে ঠিক হয়ে যাবে।

তেমনি দেশের প্রতি ভালবাসার ব্যাপারেও তাকে বুঝাতে হবে যে সে যেখানে জন্মেছে, যে দেশের আলো-বাতাসে সে বেড়ে উঠেছে, যে মাটি তাকে আশ্রয় দিয়েছে, তার মাকে আশ্রয় দিয়েছে, যার মাটি ও মানুষেরা তার বৃদ্ধি-বিকাশে সহযোগিতা করেছে, যে দেশের প্রকৃতি তার সৌন্দর্য্য দিয়ে তার হৃদয় মন ভরিয়ে দিয়েছে, যে দেশের মানুষের রক্তের বিনিময়ে সে স্বাধীনতা পেয়েছে, যে দেশে পাওযা নিরাপত্তার বদৌলতে সে সহি-সালামতে বেঁচে আছে সে দেশের প্রতিও তার কিছু দায়িত্ব আছে, সে দেশকেও তার কিছু দেওযা উচিত, তার এর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা উচিত, এর প্রতিদান দেওযার চেষ্টা করা উচিত, যদিও সে তা কখনও পারবে না। এভাবে আরো অনেক কিছু বলা যায়- যেগুলো বললে আশা করা যায়- সে ঠিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মা-বাবা বা এরকম অন্য কোন উদাহরণ দেয়া নিষ্প্রয়োজন। আসলে মা আর দেশ উভয়ের প্রতি ভালবাসা স্বতন্ত্র, সহজাত, অতুলনীয় এবং উভয়ের প্রতি দায়িত্বও ভিন্ন। তাই আসুন আমরা আমাদের ভেতরে লুক্কায়িত স্বদেশপ্রেম জাগিয়ে তুলি।

স্বার্থের কালো-পাথরের নিচ থেকে দেশের প্রতি ভালবাসাটাকে উদ্ধার করি এবং যথাযথ দায়িত্ব পালন করি। আর প্রথম আলোর স্লোগানটাকেও একটু এভাবে পরিবর্তন করলে কেমন হয়- আসুন, আমরা দেশকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসি। অথবা আসুন, আমরা দেশকে মায়ের চেয়েও বেশী ভালবাসি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।