আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভিবাসন ও অস্ট্রেলিয়া

আওরঙ্গজেব

অভিবাসী (Immigrant) বা নাগরিক (Citizen) হয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে স্হায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রতিবছর কয়েক লাখ মানুষ ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। ভারত ও চীনের মতো উন্নয়নশীল ও শতকোটির উপরের জনসংখ্যার দেশ হতে এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ থেকে এ সংখ্যা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্হার (International Organization for Migration) মতে সমগ্র বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট অভিবাসীর সংখ্যা ২০ কোটির উপরে। জাতিসংঘের হিসেব মতে এ সংখ্যা ২০ কোটি ১৪ লাখ।

২০০৫ সালের হিসেব অনুসারে ইউরোপে অভিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (৭ কোটি ৬ লাখ), এরপর উত্তর আমেরিকা (৪ কোটি ৫১ লাখ), এশিয়া (২ কোটি ৫৩ লাখ) এবং অস্ট্রেলিয়া (৫০ লাখ)। এক জরিপ অনুসারে বিশ্বের কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সী ৭০ কোটি মানুষ এমূহূর্তে অপেক্ষায় আছেন যারা সুযোগ পেলেই অন্যদেশে পাড়ি দিয়ে স্হায়ী ভাবে বসবাস করবেন। এদের মধ্যে ১৬ কোটি ৫০ লাখের প্রথম পছন্দ আমেরিকা। এর পরের পছন্দগুলো ইউরোপ (১৩ কোটি), কানাডা (সাড়ে ৪ কোটি), সৌদি আরব (৩ কোটি) এবং অস্ট্রেলিয়ায় (আড়াই কোটি)। ইউরোপের মধ্যে পছন্দের শীর্ষে বৃটেন অথবা ফ্রান্স (মোট সাড়ে ৪ কোটি), স্পেন (সাড়ে ৩ কোটি) এবং জার্মানী (আড়াই কোটি)।

অভিবাসনের কারন গুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে উন্নত জীবন যাপন। দক্ষ শ্রমিকরা মূলত বেশি আয়ের আশায় উন্নত দেশের মাইগ্রেশন করেন। ঊনিশ ও বিশ শতকে ইউরোপ-আমেরিকার প্রবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে প্রচুর দক্ষ শ্রমিক এসব দেশে পাড়ি জমান। এর পরের কারণ গুলোর মধ্যে আছে দারিদ্র থেকে মুক্তি, উচ্চশিক্ষা, চাহিদা অনুযায়ী চাকুরী প্রাপ্তি, বিয়ে, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ। শেষোক্ত দুটি কারণে মানুষ প্রথমে শরণার্থী হয়ে আসেন ও পরে স্হায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পান।

এছাড়া বেশি বয়সী মানুষ অবসর নেয়ার সময় বেশি খরচের দেশ হতে কম খরচ ও ভাল আবহাওয়ার দেশে স্হায়ী ভাবে চলে যান। যেমন, বয়স্ক মানুষরা বৃটেন থেকে ষ্পেন ও ইটালীতে এবং কানাডা থেকে আমেরিকার ফ্লোরিডা ও টেক্সাসে চলে যান। অনেকের মতে অভিবাসনের এই ব্যবস্হা মূলত মানবশক্তি পাচার (Human capital flight) বা মেধা পাচার (brain drain)। যেসব উন্নত দেশে অভিবাসীরা আসেন সেসব দেশের জন্য এ ব্যবস্হাকে বলা হয় মেধা আহরণ (Brain gain)। কারণ, মূলত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ হতে মেধাবী ও দক্ষ জনশক্তি উন্নত বিশ্বে পাড়ি জমান উন্নত জীবন ও সুস্বাস্হ্যের আশায়।

মেধাবী এসব অভিবাসীকে তাদের নিজেদের দেশের সরকার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলে, কিন্তু দূ:খের বিষয় জনগনের বিপুল রাজস্ব ব্যয়ে শিক্ষিত এসব মানুষ তাদের মেধা ও দক্ষতা কাজে লাগায় অন্য আরেকটি দেশের উন্নয়নে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনিময়ে কিছু পরিমাণ বিদেশী মূদ্রা ছাড়া আর কিছুই জোটেনা দূর্ভাগা মাতৃদেশগুলোর। এসব দূর্ভাগা দেশে সবসময় প্রচুর পরিমাণে মেধা ও দক্ষতার অভাব থাকে, ফলে অযোগ্য লোকেরা গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকে ও দেশের উন্নয়নে কোন সম্ভাবনা থাকে না। অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন শুরু হয় ৫০ হাজার বছর আগে যখন এখনকার আদিবাসীদের পূর্বপূরুষরা আসেন মালে দ্বীপপূঞ্জ (মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউগিনি) হতে। ইউরোপীয়রা প্রথম আসেন ১৭৮৮ সালে এবং এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় তাদের উপনিবেশ গড়ে তোলেন।

এই বছরের ২৬শে ফ্রেব্রুয়ারী বৃটেনের প্রথম জাহাজ দাগী আসামীদের নির্বাসন দেয়ার জন্য সর্বপ্রথম সিডনীতে আসেন। এই দিনটি এখন সরকারী ভাবে অস্ট্রেলীয়া দিবস (Australia Day) হিসেবে পালিত হয়, কিন্তু আদিবাসীদের কাছে পরিচিত টিকে থাকার দিন (Survival Day) বা অনুপ্রবেশ দিবস (Invasion Day) হিসেবে। ভ্রমণ খরচ বেশি হওয়ার কারণে এরপর থেকে খুব কম মানুষ এখানে আসত। ১৮৯১ সালের পর থেকে স্বর্ণের খনিতে কাজ করার জন্য বৃটেন, আয়ারল্যান্ড, জার্মানী ও চীন থেকে প্রচুর লোক আসতে শুরু থেকে। এসময়টি স্বর্ণযুগ (Gold rush era) হিসেবে পরিচিত।

এর মধ্যে চীনের অভিবাসীরা সাদা ইউরোপীয়দের থেকে নানান রকম বিপদের সম্মূখীন হন এবং তাদের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ১৯০১ সালে সর্বপ্রথম অভিবাসন আইন (Immigration Restriction Act 1901) জারী করা হয় যা ইউরোপীয় সাদা মানুষ ছাড়া অন্যদের অস্ট্রেলিয়ায় আসা ও থাকার উপর নিয়ণ্ত্রণ আরোপ করে। এজন্য এই আইন সাদা আইন হিসেবে পরিচিত (The White Australia policy)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অস্ট্রেলিয়ায় জাপানের অনুপ্রবেশ টেকানোর জন্য সরকার বিপুলসংখ্যায় অভিবাসী আনার সিদ্ধান্ত নেন। এসময় লাখ লাখ ইউরোপীয় এবং ১ লাখের উপর ব্রিটিশ অভিবাসী হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন।

শর্ত ছিল শুধু ভাল স্বাস্হ্যের অধিকারী ও বয়স ৪৫ এর নিচে হতে হবে। কিন্তু সাদা আইনের কারণে ইউরোপের বাইরের অসাদা মানুষরা আসতে পারেননি। ১৯৭০ সালে অভিবাসন আইনের বড় ধরনের পরিবর্তন ও পরবর্তীতে সুযোগ-সুবিধা তুলে নেয়ার কারণে অনেকে আসতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েন। ২০০১ সালের পর থেকে শরণার্থী হিসেবে প্রচুর মানুষ এখানে আশ্রয় নেন। গত দশকে বিশেষ করে জন হাওয়ার্ড প্রধানমণ্ত্রী থাকাকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী আসেন।

২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের হিসেব অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ৫০ লাখ অধিবাসীর জন্ম অস্ট্রেলিয়ার বাইরে। এর মধ্যে প্রথম বৃটেন (সাড়ে ১১ লাখ), দ্বিতীয় নিউজিল্যান্ড (পৌনে ৫ লাখ) এবং তৃতীয় চীন (পৌনে ৩ লাখ)। আরো উল্লেখ্য ইটালী (সোয়া ২ লাখ), ভারত (দেড় লাখ), জার্মানী (সোয়া ১ লাখ), মালেশিয়া (১ লাখ), লেবানন (পৌনে ১ লাখ), শ্রীলংকা (৭১ হাজার), আমেরিকা (৬৫ হাজার), আয়ারল্যেন্ড (৫৭ হাজার) এবং বসনিয়া-হার্জেগোভিনিয়া (৪৭ হাজার)। যা বলছিলাম, গত দশকে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ১৯৯৩ সালে মাত্র ৩০ হাজার লোক অস্ট্রেলিয়ায় আসলেও ২০০৩-০৪ সালে এ সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার, ২০০৫-০৬ সালে ১ লাখ ৩১ হাজারের বেশি এবং ২০০৬-০৭ সালের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার, ২০০৭-০৮ সালের লক্ষ্য ১ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ এবং ২০০৮-০৯ সালের লক্ষ্য ৩ লাখ যা দ্বিতীয় বিশ্ব যু্দ্ধের পরে এক বছরে সর্বোচ্চ।

কিন্তু ২০০৮-০৯ সালে সরকার অর্থনৈতিক মন্দার কারণে উল্লেখিত লক্ষ্য হতে শতকরা ১৪ ভাগ কম অভিবাসী আনার সিদ্ধান্ত নেন। মূলত দক্ষ শ্রমিকারাই এখানে আসেন। ২০০৫ সালে আফ্রিকা থেকে ১৮ হাজার, এশিয়া হতে ৫৫ হাজার (মূলত: ভারত ও চীন থেকে), দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হতে ২১ হাজার, বৃটেন হতে ১৮ হাজার, দক্ষিণ আমেরিকা হতে দেড় হাজার এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে প্রায় আড়াই হাজার। আপনারা যে দেশের অভিবাসী হতে চান সেদেশের সরকারী ওয়েবসাইটে গেলেই সকল তথ্য পাবেন। আপনাকে যে কোন এজেন্ট বা মিডিয়া সরকারী ওয়েবসাইটের চেয়ে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারবে না।

অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খবরাখবর পাওয়া যাবে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে (http://www.immi.gov.au/)। অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনে প্রতারনা সম্পরকে সচেতন হতে দরকারী টিপস পাবেন http://www.immi.gov.au/migration-fraud/। আবেদন পত্র অনলাইনে বা ডাকযোগে পাঠানো যায়। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হতে চাইলে মূলত: আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা হয়। সব ধরনের ভিসার ক্ষেত্রে ১৬ বছরের অধিক বয়সী সকল আবেদনকারী নিজেদের দেশসহ যেসব দেশে ১২ মাসের বেশি বসবাস করেছেন সে সব দেশ হতে চারিত্রিক সনদ প্রদান করতে হবে।

এদেশের সরকার প্রতিবছর যেসব ক্ষেত্রে দক্ষ লোকের প্রয়োজন ষেগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রতিটি প্রদেশ তাদের নিজস্ব তালিকাও প্রকাশ করে থাকে। এই দুটি তালিকা Skilled Occupation Lists (SOL) নামে পরিচিত। আবার যে সব প্রতিষ্ঠান কাজের জন্য বাইরে থেকে দক্ষ লোক আনতে চায় তাদের আলাদা তালিকা (Employer Nomination Scheme Occupation List, ENSOL) আছে। জুলাইর ১ তারিখ থেকে কার্যকর নতুন তালিকাগুলো অনলাইনে পাওয়া যাবে (http://www.immi.gov.au/skilled/sol/)।

এই তালিকাগুলো অনুসারে বাংলাদেশ থেকে যেসকল ক্ষেত্রে বেশি লোক যেতে পারে সেগুলো হলো ইন্জিনিয়ার (কম্পিউটার, সিভিল, ইলেক্ট্রিকাল, মেকানিকাল, মেরিন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, এগ্রিকালচার, কেমিক্যাল ইত্যাদি), আর্কিটেক্ট, ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, মেডিকেল সার্জন, কম্পিউটার (আইটি) প্রোগ্রামার, একাউন্টেন্ট এবং নার্স। আরো বেশি জানার জন্য উপরের অনলাইন লিন্কে দেখুন। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় মূলত: দু'ধরনের ভিসার আবেদন করা যায়। প্রথমত: সাধারণ (General Skilled Migration, GSM) ও এম্প্লয়ার স্পন্সরড (Employer Nominated Scheme, ENS বা Regional Sponsored Migration Scheme, RSMS) ভিসা। একজন আবেদনকারী এই দু'টির যেকোনটিতে আবেদন করতে পারেন।

GSM ভিসার আবেদনকারীর আবেদনের সময় উপরের প্রদত্ত SOL তালিকা দু'টির যে কোনটিতে দক্ষতা দেখাতে হবে। আবেদনের পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার কোন প্রতিষ্ঠান হতে চাকুরীর নিশ্চয়তা (Offer letter) পাওয়ার প্রয়োজন নেই। ভিসা পাওয়ার বা অস্ট্রেলিয়ায় আসার পরে চাকুরী খোঁজে নিতে পারেন। আবেদনকারীকে অবশ্যই ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী হতে হবে, ইংরেজীতে ভাল দক্ষ হতে হবে এবং সাম্প্রতিক কাজের অভিজ্ঞতা অথবা সাম্প্রতিক অস্ট্রেলীয় ডিগ্রীর অধিকারী হতে হবে। GSM ভিসা আবার দু'ধরনের - স্বাধীন (Independant) এবং স্টেট (State sponsored) বা ফ্যামিলি স্পন্সরড (Family sponsored)।

স্বাধীন GSM ভিসার আবেদনে শুধু আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা তাঁর দক্ষতায় বিবেচনা করা হবে। এক্ষেত্রে প্রদেশ, পরিবার বা অন্য কোন ধরনের স্পন্সরশীপের প্রয়োজন নেই। তবে তাকে অবশ্যই পয়েন্ট টেস্টে কমপক্ষে ১২০ পয়েন্ট পেতে হবে। বয়সের জন্য ১৫ (৪০-৪৪ বছর) থেকে সর্বোচ্চ ৩০ (১৮-২৯ বছর) পয়েন্ট, ইংরেজী ১৫ (IELTS সব band এ ৬) বা ২৫ পয়েন্ট (IELTS সব band এ ৭), শিক্ষা ও অভিজ্ঞতায় (nominated occupation এবং অবশ্যই SOL এ আছে) থেকে সর্বোচ্চ ৬০ (ডিপ্লোমা, ডিগ্রী ও অভিজ্ঞতা) পয়েন্ট, সাম্রতিক কাজের অভিজ্ঞতায় (গত ৪ বছরের মধ্যে ৩ বছর) ১০ (nominated occupation) বা ৫ (SOL এর অন্য যেকোন occupation) পয়েন্ট, অস্ট্রেলিয়ায় সাম্রতিক কাজের অভিজ্ঞতায় ১০ পয়েন্ট, কমপক্ষে দু'বছরের অস্ট্রেলীয় ডিগ্রী ২৫ (পিএইচডি) বা ১৫ (মাস্টারস বা ব্যাচেলর) পয়েন্ট, কমিউনিটি ভাষায় ৫ পয়েন্ট (বাংলাও একটি কমিউনিটি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত), অস্ট্রেলিয়ার কোন কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পড়ালেখা করলে ৫ পয়েন্ট এবং স্ত্রীর শিক্ষা, ইংরেজী দক্ষতা ও কাজের অভিজ্ঞতার জন্য আরো ৫ পয়েন্ট। এছাড়া একধরনের GSM ভিসা (Regional Residence visa) আছে যার আবেদনকারীকে আবেদনের পূর্বে আত্নীয় বা কোন প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক স্পন্সরশীপের কারণে অস্ট্রেলিয়ার কিছু নির্ধারিত এলাকায় কোন Provisional ভিসায় কমপক্ষে ২ বছর বসবাস করবেন এবং এই সময়ে সে জায়গায় কমপক্ষে ১ বছর full time কাজ করবেন।

GSM ভিসার আবেদনকারীর প্রয়োজনীয় দক্ষতায় ঘাটতি থাকলে তিনি কোন প্রদেশের সরকার বা নিজের কোন নিকটাত্নীয় দ্বারা বাছায় হতে পারেন। তাঁকে পয়েন্ট টেস্টে কমপক্ষে ১০০ পয়েন্ট পেতে হবে, কিন্তু ১২০ পয়েন্টের নিচে বলে তাঁর স্পন্সরশীপ প্রয়োজন। স্পন্সরশীপের আবেদনকারীকে আগে সেই প্রদেশের সরকারের সাথে যোগাযোগ করে স্পন্সরশীপের ব্যবস্হা করতে হবে। অথবা Family sponsored হলে স্পন্সরকারী ও আবেদনকারীকে অনেকগুলো শর্ত মানতে হবে। আবেদনকারী অভিবাসী অস্ট্রেলিয়া আসার পরে স্পন্সরকারী তাঁকে প্রথম ২ বছর থাকা-খাওয়ার খরচ দেবেন, আবেদনকারীর সন্তানদের দেখাশুনা যদি তিনি ইংরেজীতে দক্ষতা বাড়ানোর ক্লাশে যোগ দেন এবং চাকুরী পেতে সম্ভাব্য সাহায্য করবেন।

মূল আবেদনকারী বা মূল আবেদনকারীর স্ত্রী বা স্বামীর নিকটাত্নীয় (ছেলে-মেয়ে, বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-চাচী, ভাইপো-ভাইঝি, খালা-খালু, ভাগ্নে-ভাগ্নী) স্পন্সর করতে পারবেন। স্পন্সরকারীকে অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসী, কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সী এবং অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসী অথবা অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের নাগরিক হতে হবে। উল্লেখ্য, State sponsored ভিসায় আসলে অভিবাসীকে সে প্রদেশে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকতে হবে। এর পরে তিনি স্বেচ্চায় সে প্রদেশে বা অন্য প্রদেশে থাকতে পারেন। অধিকাংশ GSM ভিসার আবেদন ফি ২৫৭৫ ডলার, কিন্তু Regional Residence ভিসার ফি ২৩৫ ডলার।

১৮ বছরের বেশি বয়সী Dependant (স্বামী বা স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে) ইংরেজিতে অদক্ষ (IELTS score গড়ে ৪.৫ এর কম) হলে প্রতিজনের জন্য আরো ৩৫৭৫ ডলার দিতে হবে। আরো বিস্তারিত দেখুন অনলাইনে Click This Link ENS ভিসার আবেদনকারীকে অবশ্যই আবেদনের পূর্বে তার দক্ষতা (nominated occupation) ENSOL লিস্টে দেখাতে হবে এবং অস্ট্রেলিয়ার কোন প্রতিষ্ঠান হতে চাকুরীর (Full time, কমপক্ষে ৩ বছর) নিশ্চয়তা (Offer letter) ও স্পন্সরশীপ পেতে হবে। RSMS ভিসার আবেদনকারীকেও অবশ্যই আবেদনের পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার কোন কম জনবসতিপূর্ণ এলাকার প্রতিষ্ঠান হতে চাকুরীর (Full time, কমপক্ষে ২ বছর) নিশ্চয়তা (Offer letter) ও স্পন্সরশীপ পেতে হবে। উভয় ধরনের ভিসার মূল আবেদনকারীকে ৪৫ বছরের কম বয়সী এবং তাঁর সংশ্লিষ্ট কাজটি করার প্রয়োজনীয় শিক্ষাঘত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ENS ভিসার ক্ষেত্রে nominated occupation এ কমপক্ষে ৩ বছর অথবা পূর্বে কোন অস্হায়ী ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় ২ বছর, এর মধ্যে কমপক্ষে সাম্প্রতিক ১ বছর স্পন্সরকারীর সাথে অথবা অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্ত নতুন চাকুরীতে বেতন ১৬৫০০০ ডলারের বেশি হতে হবে এবং আবেদনকারীকে আবেদনের পূর্বেই তাঁর দক্ষতা কোন উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে যাচায় (Assessment) করতে হবে।

যেমন, কম্পিউটার বা আইটি প্রোগ্রামারদের জন্য Australian compute society এবং মেকানিকাল, সিভিল, ইলেক্ট্রিকাল ইন্জিনয়ারদের জন Engineers Australia। অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে আবেদন করলে এই উভয় ধরনের ভিসার আবেদনে মোট খরচ হবে ২১৯০ ডলার, অস্ট্রেলিয়ার ভিতরে থেকে আবেদন করলে খরচ ৩০৩০ ডলার। মূল আবেদনকারী ইংরেজিতে অদক্ষ (IELTS score গড়ে ৪.৫ এর কম) হলে অতিরিক্ত ৭১৬৫ ডলার দিতে হবে। ১৮ বছরের বেশি বয়সী Dependant (স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে) ইংরেজিতে অদক্ষ (IELTS score গড়ে ৪.৫ এর কম) হলে প্রতিজনের জন্য আরো ৩৫৭৫ ডলার দিতে হবে। আরো বিস্তারিত অনলাইনে দেখুন Click This Link এবং Click This Link ডাক্তারী পেশার কেউ অস্ট্রেলিয়ায় ষ্হায়ী ভাবে থাকতে চাইলে তাঁকে অবশ্যই মেডিকেল রেজিস্ট্রেশন (Full medical registration) করাতে হবে।

মেডিকেল রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে সরকারী সংস্হা ডক্টর কানেক্ট (DoctorConnect) এর সাথে যোগাযোগ করুন: http://www.doctorconnect.gov.au/। মেডিকেল রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে তাঁকে উপরে বর্ণিত ENS বা RSMS ভিসার যেকোনটির জন্য আবেদন করতে হবে। নার্সিং পেশার চাহিদা অস্ট্রেলিয়ায় খুবই বেশি। একজন নার্সের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় ষ্হায়ী ভাবে বসবাসের জন্য GSM, ENS বা RSMS ভিসার যেকোনটির জন্য আবেদন করতে পারেন। আগ্রহী নার্সরা The Australian Nursing and Midwifery Council Limited (ANMC)এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন: http://www.anmc.org.au/।

পরিশেষে বলব, আপনি যে ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করুন না কেন, মুটামুটি নিচের পয়েন্ট গুলো অনুসরন করুন: (১) আপনার পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কোন ধরনের ভিসা আপনার জন্য সবচেয়ে উপযোগী তা ঠিক করুন। সবচেয়ে ভাল হয়, মানে ঝামেলা সবচেয়ে কম হয়, যদি আপনি Independant GSM ভিসার জন্য আবেদন করেন। (২) ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ইংরেজী দক্ষতা দেখানোর জন্য IELTS পরীক্ষায় অংশগ্রহণ। Dependant (১৮ বছরের বেশি বয়সী স্বামী বা স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে) এর ইংরেজী দক্ষতা অনেক সময় পরে দেখালেও চলে, সাধারণত আপনার ভিসা যখন হয়ে যাবে সে সময় আপনাকে হয় Dependant এর জন্য ইংরেজী দক্ষতা (IELTS score গড়ে ৪.৫ এর কম) দেখাতে হবে বা প্রতিজনের জন্য আরো ৩৫৭৫ ডলার দিতে হবে। এই টাকায় অস্ট্রেলিয়ায় আসার পরে সরকার কিছু ইংরেজী কোর্স করতে বলবে।

তবে Dependant স্বামী বা স্ত্রীর জন্য GSM ভিসায় পয়েন্ট দাবী করলে তাঁর ইংরেজী দক্ষতা আগে দেখাতে হবে। (৩) যদি স্পন্সরশীপের প্রয়োজন হয় তবে তা তৈরী করুন। আত্নীয় স্পন্সর করলে ঝামেলা কম। প্রাদেশিক সরকারের স্পন্সরশীপের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রদেশের সাথে যোগাযোগ করুন। তাদের দক্ষতা যে সব ক্ষেত্রে অভাব আছে সেগুলোর কোন একটিতে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে।

এম্প্লয়ার স্পন্সরশীপের জন্য আগে চাকুরীর দরখাস্ত করুন। চাকুরী হয়ে গেলে এম্প্লয়ার তখন আপনাকে স্পন্সর করার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে। (৪) ভিসার জন্য প্রয়োজন হলে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা Assessment করানোর জন্য প্রয়োজনীয় সংস্হায় পাঠান। উপরে বর্ণিত তালিকা গুলোতে আপনার পেশার সংশ্লিষ্ট সংস্হার খোঁজ পাবেন। (৫) ১৬ বছরের অধিক বয়সী সকল আবেদনকারী ১২ মাসের বেশি যে সব দেশে বসবাস করেছেন সে সব দেশের পূলিশ বা স্বরাষ্ট্র মণ্ত্রনালয় হতে চারিত্রিক সনদপত্র সংগ্রহ করুন।

অনেক ক্ষেত্রে এই সনদগুলো আপনার ভিসা যখন হয়ে যাবে তখন লাগবে, তাই এজন্য তাড়াহুড়ো করে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। (৬) অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ঠিক করুন, যেমন: সব আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজ ছবি, পাসপোর্টের কপি, জন্ম সনদ, মূল আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও অভিজ্ঞতা সনদ। (৭) মেডিকেল পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। তবে সাধারণত ভিসা হয়ে গেলে ভিসা অফিসার সকল আবেদনকারীকে নির্দিষ্ট ডাক্তারের কাছে গিয়ে মেডিকেল করতে বলবেন। মেডিকেলের সকল খরচ আবেদনকারীর।

ডাক্তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট ভিসা অফিসারের কাছে পাঠিয়ে দেন। কিছু কিছু ভিসার ক্ষেত্রে (অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালীন সময়ে আবেদন করা হয় এমন ভিসার জন্য) মেডিকেল পরীক্ষা আগে করার প্রয়োজন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার Medibank Health Solutions (http://www.medibankhealth.com.au) প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও রিপোর্ট ভিসা অফিসে পাঠয়ে দেয়। তাই আপনি শুধু মেডিকেল পরীক্ষার রশীদ আবেদনের সময় জমা দিবেন। (৮) আবেদন অনলাইনে বা ডাকযোগে করা যাবে।

প্রয়োজনীয় ফি ক্রেডিট কার্ড বা মানি অর্ডারে পরিশোধ করতে হবে। অনলাইন আবেদনে সকল কাগজ পত্রের কপি colour scan করে upload করতে হবে। ডাকযোগে আবেদন করলে কাগজ পত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। (৯) ভিসা অফিস আবেদনের পরে আপনাকে একটি রেফারেন্স নাম্বার (Transaction Reference Number, TRN) দিবে। অনলাইনে এই TRN দিয়ে আপনার অবেদনের স্ট্যাটাস সময় সময় চেক করুন: Click This Link প্রয়োজনে ই-মেইল করুন।

(১০) ভিসা প্রসেসিং হতে ৩ থেকে ১২ মাস বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগতে পারে। এম্প্লয়ার ও প্রাদেশিক স্পন্সরশীপের আবেদন দ্রুত প্রসেস হয়। সময় যাই লাগুক, যেহেতু অভিবাসন আইন দ্রুত পরিবর্তন হয় এবং সে কারণে আপনার আগের আবেদনে কোন সমস্যা হবে কিনা তা খোঁজ খবর নেয়ার জন্য মাঝে মধ্যে http://www.immi.gov.au/ ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন। বিস্তারিত জানার জন্য প্রয়োজনে TRN দিয়ে ই-মেইল করুন। (১১) ভিসা হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট অফিসে পাসপোর্ট নিয়ে গিয়ে ভিসার লেভেল লাগিয়ে ফেলুন।

ভিসায় কোন শর্ত থাকলে সেগুলো ভালভাবে জেনে নিন এবং সে শর্তগুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে। একজন স্হায়ী অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। তাঁকে আবেদনের অব্যবহিত পূর্বে কমপক্ষে ৪ বছর বৈধভাবে অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে হবে, এর মধ্যে কমপক্ষে ১ বছর স্হায়ী অভিবাসী হিসেবে। বিস্তারিত দেখুন অনলাইনে http://www.citizenship.gov.au/। [লেখাটি প্রকাশিত: ২৩.১০.২০১০ এবং ৩০.১০.২০১০]


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.