আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রচণ্ড কষ্ট এবং ক্ষোভ থেকে লিখছি।

ফিরিংগিদের কামলা

প্রচণ্ড কষ্ট এবং ক্ষোভ থেকে লিখছি। গত পরশু চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম আমি ,জুয়েল, মিন্টু এবং প্রীতি বউদি। বউদি বসেছিলেন জানালার পাশে। মিন্টু উনার পাশে। দেখা হওয়া মাত্রই শুভেছা বিনিময় করেছিলেন আমার সাথে।

জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমার বাচ্চা কেমন আছে, পরিবার কেমন আছে? আমরা আনুমানিক ১১;১৫\ ১১;২০ মিনিটের দিকে ভাটিয়ারী ভাঙ্গা ব্রিজের কাছে পৌঁছাই। আমি, জুয়েল গল্প করছিলাম। মিন্টু তার আগে আমাদের থেকে বিদায় নেয় ঘুমাবে এবং airport ষ্টেশন এ দেখা হবে বলে। মিন্টু বউদি কে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছিল সাপ্তাহ দুএক রাখবে বলে। আর ভালো না লাগলে ১৪ তারিখ ঢাকা থেকে ফেরার কথা ছিল।

হঠাৎ "ঠাস" করে একটা শব্দ শুনি। সাথে সাথে একটা পাথর ছিটকে পড়ে কোচের সামনা সামনি আসন গুলোর মাঝে। বউদি শুধু একটা আর্তনাদ করে। মিন্টু কি হয়েছে, কি হয়েছে বলে ভাবিকে ধরে। বুঝতে পারি পাথরটা ভাবীর মাথার বাম পাশে আঘাত করেছে।

মিন্টু মাথায় পানি ঢালে। সম্ভব সব রকমের চেষ্টা করা হয় ভাবীর জ্ঞান ফেরানর জন্য। ভাবীর বাম গালে একটু লাল দাগ লক্ষ্য করি। কিন্তু, আমাদের এতো চেষ্টার পরেও ভাবী কোন কথা বলছিলেন না। চোখ দুটো বন্ধ ছিল।

চোখের কোন দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু। ২/৩ মিনিট পর পর হেচকি তুলছিলেন। নিঃশ্বাস নেওয়ার নেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করছিলেন। এতোটা খারাপ কিছু আমি তখনো ভাবিনি। ভেবেছিলাম একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।

আমি চলে যাই ট্রেনের শেষ মাথায় কোন ডাক্তার থাকলে আসতে বলার জন্য। ফিরে আসতে আসতে ঘোষণা শুনি। এসে দেখি ভাবী নেতিয়ে পড়েছেন। মিন্টু বলছে আমি pulse পাচ্ছি না। আমিও চেক করি।

পাইনি। মনে করেছিলাম অতিরিক্ত উত্তেজনার কারনে pulse পাচ্ছি না। আছে নিশ্চয় হয়তো মৃদু ভাবে। আমি ধরতে পারছি না। সিদ্দান্ত নেয়া হয় সীতাকুণ্ড নেমে যাওয়ার।

কোনোমতে মিন্টু, আমি মিলে ভাবী কে ধরা ধরি করে নামাই। জুয়েল সব ব্যাগ নামায়। ভাবিকে বেঞ্চে শুইয়ে আমি দৌড়াই একটা taxi ঠিক করার জন্য। পথে একটা রিক্সা পাই যাত্রী সহ। উনাদেরকে অনুরোধ করলে উনারা রিক্সাটা ছেড়ে দেন।

আমি মিন্টু ভাবিকে নিয়ে মূল রাস্তায় পৌঁছে taxi নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স , সীতাকুণ্ড -তে পৌঁছাই। আল্লার কাছে শুধু কায়মনোবাক্যে একটা প্রাথনা করছিলাম। ইয়া আল্লাহ, আমি যদি একটা ভালো কাজ করে থাকি, আমার যদি একটা এবাদত তুমি কবুল করে থাকো , যদি একটাও ন্যায় বিচার করে থাকি, আল্লাহ, তুমি ভাবী কে নিয়ো না। ফিরিয়ে দাও। এটা ওর যাওয়ার সময় নয়।

হয়তো প্রাথনা করতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। হয়তো বা আমি এতটাই পাষণ্ড, পাপী যে আল্লাহ শুনেন নি। মিন্টু তখন শুধু ভাবীর হাত ধরে বসেছিল। আর বলছিল, প্রীতি, ও প্রীতি... কথা বল। কথা বল।

ভাবী তখন নিশ্ছুপ,নির্বাক । দৃষ্টি যেন কোথায়!!!!!!!! ডাক্তার যখন পরীক্ষা করছিলেন, oxyzen mask লাগাচ্ছিলেন মিন্টু তখনো ভাবীর হাত ধরেছিল। আর বলছিল 'আমি শক্ত আছি। ডাক্তার সাহেব আপনি বলেন'। ডাক্তারের চোখে তখন রাজ্যের অসহায়ত্ত।

ডাক্তার শুধু আমাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন আর অপ্রয়োজনীয় ভাবেই সময় নিচ্ছিলেন। ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে আমাদেরকে হৃদয় বিদারক সংবাদ টি দেন। ভাবী আর নেই!!!!!!!! মিন্টু হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে। বলে, আমি ওর বাবা মাকে কি জবাব দেবো!!!!! এই মেয়েটা শুধু আমার সাথে থাকার জন্য কি না করেছে। একটা বাবু, শুধু একটা বাবুর জন্য তার সে কি আকুতি!!!!!!!! হায়রে ঢাকা!!!! হায়রে চাকুরী!!!!! আমি কি জবাব দেবো!!!!!! ......................................................................................................।

.............................................................................................। । ............................................................................................................................................................... না । আমরা কেউ ওকে সান্তনা দেইনি। সান্তনা দেওয়ার কোন ভাষা কারো তখন কারো জানা ছিল না।

আমরা তখনো আশাবাদী ছিলাম। ডাক্তার কে বলে ভাবিকে নিয়ে আমরা চট্রগ্রাম মেডিকেল হসপিটালের দিকে যাই। পুরো জাত্রা পথে আমার বন্ধু ভাবীর হাত ধরে নির্বাক বসেছিল। চট্রগ্রাম মেডিকেল হসপিটালের ডাক্তার ও একই কথা বললে সবার মাঝে নেমে আসে কবরের নিস্তব্দতা। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন ভাবীর মা, বাবা, ভাই,মিন্টুর বাবা, মা সহ উপস্তিত সকলে।

আমরা সবাই নিশ্ছুপ। হতবাক। তবে বুক ভেঙে কান্না আসছিলো। ১৫ মিনিটে একটা মানুষের জীবন কি ভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে। !!!!!! আমরা মামলা রুজু করেছি GRP থানায়।

আজ সকালে ৩০৪/৩৪ ধারায় আর একটা মামলা হয়েছে। police সরবচ্ছ চেষ্টা করছে আসামিদেরকে ধরার। আমরা আশাবাদী। আসামি ধরা পড়বে। বিচার হবে।

কিন্তু, মিন্টু কি ফিরে পাবে তার প্রিয়তমা জীবন সঙ্গিনীকে ??? ভাবীর ভাইয়েরা কি ফিরে পাবে তাদের একমাত্র বোনকে ? মা বাবা কি ফিরে পাবে তাদের আদরের কন্যা কে?? মিন্টুর বাবা মা কি ফিরে পাবে তাদের প্রিয় কন্যাসম পুত্র বধু কে?? এই সব গুলো প্রস্নের উত্তর হল 'না'। এটা নিছক কোন দুর্ঘটনা নয়। মানুষের জীবন কোন ছেলে খেলা নয়। কারো নিছক খেয়ালের কারনে অন্য কারো জীবন প্রদীপ থেমে যেতে পারেনা। ইতিমধ্যেই police সন্দেহভাজন ১ জনকে আটক করেছে।

আমরা চাই আর কারো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়, কোন ভাই যেন তার বোনকে,স্বামী যেন তার স্ত্রীকে , বাবা-মা যেন তার মেয়েকে, শ্বশুর শাশুড়ি যেন তাদের আদরের বউমাকে না হারায়। জীবন শুরু করার বা মেহেদির দাগ মুছে যাওয়ার আগেই যেন কারো জীবনে নেমে না আসে নির্বাক দুঃসহ নির্মম নির্জনতা। আমার বন্ধুর মতো কারো জীবন যেন শ্মশানের চিতার আগুনে দাউ দাউ করে না জ্বলে। আমরা পারি সচেতন হতে। পারি অপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।

সেই উদ্দেশ্য কে সামনে রেখেই আমরা তৈরি করেছি এই গ্রুপ। বন্ধুরা আপনারা সবাই আপনাদের বন্ধুদের এই গ্রুপের সদস্য করে আমাদের পাশে দাঁড়ান। আগামী শনিবার সকাল ১০;০০ ঘটিকায় চট্রগ্রাম PRESS CLUB এ আমরা সবাই সমবেত হবো এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে । সেখানে এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে মানব বন্ধন, কালো ব্যাজ ধারন, সংবাদ সম্মেলন ও স্মারক লিপি প্রদান করা হবে। বন্ধুরা, এই সামাজিক আন্দোলনে আমরা আপনাদের সহযোগিতা এবং সবান্দব অংশগ্রহন চাই।

এই পোষ্ট টি সকল বন্ধুকে শেয়ার করার অনুরোধ করছি। - Abdullah Al Mamun Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.