আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন নাসির আলি মামুন

জীবনের অর্থ খুজিনা,তাই জীবনকে অর্থহীন মনে হয়না
একজন নবীশ আলোকচিত্রী হিসেবে বাংলাদেশ আলোকচিত্রের অন্যতম প্রবাদ পুরুষকে নিয়ে কিছু লেখা একই সাথে অনেক সম্মানের এবং ভয়ের। ভয়ের কারণ উনি এমন একজন মানূষ,যাকে নিয়ে কিছু বলার মত উপযুক্ত শব্দভান্ডার খুবি কম। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে,এখানে ফটোগ্রাফি নিতান্তই বাহুল্যতার প্রতীক বলেই মনে করা হয় এই একবিংশ শতাব্দীতেও। সেই দেশের একজন মানুষ,সেই ৬০ এর দশক থেকে আলোকচিত্রী হিসেবেই শুধু নয় বরং এক নতুন ঘরাণার আলোকচিত্র সৃষ্টি করেছেন,কঠিন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জীবন যুদ্ধের রুঢ়তাকে বৃদ্ধঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ সব পো্ট্রেইট,ভাবতেই শিহড়িত হতে হয়। হতে হয় বাকরুদ্ধ।

অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে হয় স্রষ্টা আর তার অপু্ব সাদাকালো কম্পোজিশন আর আলো-ছায়ার খেলা দিয়ে তৈরী সৃষ্টিকে। বলছি বাংলাদেশের “পোর্ট্রেইট গুরু” নাসির আলি মামুন এর কথা। যার হাত ধরে বাংলাদেশের আলোকচিত্র জগতে এসেছে বিপ্লব,এসেছে প্রাণ,জন্ম হয়েছে পোর্ট্রেইট ফটোগ্রাফির। আর যেই আলোকচিত্রগুলি তাঁকে নিয়ে গেছে এমন এক উচ্চতায়,যে উচ্চতাকে শুধু সম্মান দেখানো যায়,সেই উচ্চতাকে নিয়ে আমাদের মত মানুষ শুধু স্বপ্নই দেখতে পারে। ভাষা আন্দোলনের পরের বছর পৃথিবীর আলো দেখা এই মানুষটার ছবি তোলার শুরু ৬০ এর দশকের শেষভাগে এসে।

কতই বা বয়স তখন। সদ্য কৈশর্ত্তীর্ণ বয়স। রক্ত গরম। অস্থির মন। উত্তাল দেশ।

যে বয়সে শুধুই পাগলামো করে বেড়ানোর কথা,শুধুই রংগীন স্বপ্ন দেখার কথা। সেই বয়সে একটা ছেলে বুঝে গিয়েছে প্লেইন ব্যাকগ্রাউন্ডে পোর্ট্রেইট না তুলে একটু টেক্সচার আনলে বরং ক্ষতি কি!!!সেই বয়সেই ছেলেটা বুঝে গিয়েছে বইয়ের মলাটে যেসব ছবি থাকে সেগুলির সাথে বাস্তব মানুষের মিল খুবি কম!!! নিজের ভাইবোন বনধুদের ছবি তুলে তার আলোকচিত্রী হিসেবে যাত্রা। ধানমন্ডি চষে বেড়িয়েছেন শুধু তারুণ্যের তাড়ণা থেকে নয়,ছবি তোলার কিংবা সংগ্রহ করার প্রচন্ড ইচ্ছা থেকে। পেপার কাটীং যোগাড় করা,সেগুলি দেখা,নিজের মনে ভেতরে কম্পোজিশন করা,আলো নিয়ে খেলা করা। সম্ভব???সম্ভব।

কারণ তিনি নাসির আলি মামুন। যার সৃষ্টী হয়েছে সৃষ্টি করার জন্য। স্বাধীনতার পর উনি পাকাপাকি ভাবে আলোকচিত্র নিয়ে ভাবতে থাকলেন। উনি ছিলেন মেধার পূজারী। তাই রাস্তাঘাটের সাধারণ মানুষের পোর্ট্রেইট তুলে উনি সময় নষ্ট করেননি।

একে একে তুলে এনেছেন বিখ্যাত সব মানূষের মুখচ্ছবি। কেউ বাদ যায়নি তার ক্যামেরার সেন্সর থেকে। কেউ বাদ পড়েননি তার কম্পোজিশন থেকে। শেখ মুজিবুর রহমান থেকে ড.মুহাম্মাদ ইউনুস,শামসুর রহমান থেকে এস এম সুলতান। একের পর এক দুর্দান্ত কম্পোজশন,আলো ছায়ার খেলা,আর ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট পোর্ট্রেইট।

হয়ত ভেবে থাকবেন ধনীর আদরের দুলাল ছিলেন উনি। কিংবা বাবা অনেক ক্ষমতাধর ব্যাক্তি,এগুলি তার কাছে ব্যাপার না। । তবে জেনে রাখুন,অর্থের অভাবে আজো তার একটির বেশী ক্যামেরা নেই। গ্রীনরোডের “স্টুডিও নাহার” নামের এক স্টুডিও থেকে বিকেলে ক্যামেরা ধার নিয়ে সারারাত কাজ করে সকালে ক্যামেরা ফিরিয়ে দিয়ে আসতেন তিনি।

খালাতো বোনকে বিয়ে করেছেন। এমনই দুর্ভাগা আর অর্থকষ্টে ছিলেন,বিয়ের দিন শ্বশুর তাকে বলেই বসেন,বাবা আমার মেয়েটাকে খেতে দিও!!!জীবনযুদ্ধে শামিল হতে পাড়ি দিয়েছেন আমেরিকা। ট্যাক্সি চালিয়েছেন। স্বপ্নের দেশে খুব ছোট ছোট কাজ করে সামান্য কিছু পেয়েছেন। সেগুলি নিয়ে কোনো আক্ষেপ ছিলনা তার।

কারণ মনের চোখে দেখেছেন শুধুই আলো ছায়ার খেলা। শুধুই ৩৫ এম এম ক্যানভাস। যেখানে তার হাতের ছোয়ায়,জীবন্ত ছবিগুলিকে করেছেন কিংবদন্তী। অনেক স্বপ্ন দেখেন উনি। কিছু বাস্তবতার মুখ দেখেছে কিছু দেখেনি।

ফটোজিয়াম এমন এক স্বপ্ন। যাকে বাস্তবতার মুখ দেখানোর জন্য তিনি সংগ্রাম করে চেলছেন দিনের পর দিন। অকপটে স্বীকার করেন ভালো ইংরেজী পারেননা। খুব লাজুক প্রকৃতির। কথা বলেন মৃদুস্বরে।

থাকেন ঢাকার বাইরে সাভারের এক নিভৃত গ্রামে। নিজেকে বলেন উনি মেধার পূজারী। অসাধারণ এক ব্যাক্তিত্ব। নাসির আলি মামুন এর মত মানুষ এই আলকোচিত্র জগতের আলো। আমরা গর্বিত,নাসির আলি মামুনের মত একজন কিংবদন্তীকে আমরা পেয়েছি।

ক্ষণজন্মা পুরুষ নাসির আলি মামুনকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। স্যারের কিছু কথা, "In 1972, I introduced portrait photography in Bangladesh. I work with famous people from different backgrounds. I try to capture their mood, personality, characteristics and feelings in my camera," "In the first six years of my career, I did not have a personal camera. I couldn't muster even Taka 500 to buy a camera. My work is the combination of my subject's chemistry with my own chemistry. My pain, agony, longing, yearning got mixed up with the pain of my subjects. That's why my work is so dark and so painful. It all came spontaneously. I didn't do it intentionally," photo courtesy: Ashik Masud
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.