আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবনের পড়ন্ত সকালের উদীত স্মরণীয় ঘুটনা.।.।

হঠাত ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। এক চোখ বন্ধ রেখে আরেক চোখে মিটিমিটি করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৬ টা বেজে দশ মিনিট। এত সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গে না। যে দিন ভাঙ্গে সে দিন মনে হয় আজ বিশষ কিছু ঘটবে তাই প্রকৃতি ঘুম থেকে ডেকে তোলার কাজটা নিজেই নিয়ে নেয় । আর সত্যিই সেদিনটা ব্যতিক্রম কিছু ঘটে।

আজ ও মনে হচ্ছে ব্যতিক্রম কিছু ঘটবে। তাই প্রকৃতিকে বুঝতে চেষ্টা করছি তবে পারছি বলে মনে হয় না। কারণ প্রকৃতি খুব অদ্ভুত, আমি অদ্ভুত না খুব বেশী সাধারণ। তবে আমার মনে হয় আমার নামটা অসাধারণ। যত বার আমি কারো কাছে আমার নাম বলেছি সবাই অদ্ভুত করে তাকিয়েছে।

তাই সবার কাছে বশেষ নামটা বলি না। অবশ্য নামটা আমার নিজের দেওয়া, উদ্ভট নাম দিয়ে নিজেকে অদ্ভুত করার একটা ছোট্ট চেষ্টা... শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না। চোখ অর্ধেক খুলে ঝিমুতে ঝিমুতে বেসিনের দিকে গেলাম। হাতে ব্রাশ আর পেস্ট নিতেই ঠান্ডা মেজাজটা গেল বিগড়ে। পেস্টের মাঝ খানে চাপ দিয়ে কে যেন পেস্ট নিয়েছে।

এটার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে তার ঠিক পেটের উপর দিয়ে একটা ট্রাক চলে গেছে তাই টম এন্ড জেরি কার্টুনের মত পেটে ট্রাকের চাকার দাগ লেগে আছে। বাসার কেউ এ কাজ করবে না। বুঝতে সমস্যা হল না যে কাল রাতে কোন গেস্ট এসেছে আর সে পেস্ট নেওয়ার ভদ্রতা পর্যন্ত জানে না। গেস্ট রুমে উকি দিয়ে দেখলাম এক লোক মনের আনন্দে ছোট্ট এক চিরুনি দিয়ে মাথার চুল আর আনারস গাছ টাইপের দাড়ি আচড়াচ্ছে। শব্দ না করে ব্রাশ আর পেস্ট ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে আমার রুমে এসে কিছু না ভেবে রেডি হয়ে বাইরে বের হয়ে গেলাম।

যেদিন মেজাজ খুব বেশী খারাপ থাকে সেদিন ব্রাশ করি না। এটা ছোট বেলার অভ্যাস এখন ও রয়ে গেছে। ছোট বেলার কিছু কিছু অভ্যাস নাকি কখনো বদলানো যায় না এটাও তেমন একটা অভ্যাস। বাইরে বের হয়ে কিছুক্ষণ হাটার পর মনে হল আম্মু কে বলে আসা হয় নি মা ঘুম থেকে উঠা আমাকে বাসায় না দেখলে প্রেশার বেড়ে যাবে। সাথে সাথে একটা দোকানে গিয়ে ফোন করলাম, আম্মু ফোন রিসিভ করল না, মনে হয় এখনো ঘুম ভাঙ্গে নি।

দোকানির মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া লেগে গেল কারন তার প্রথম কাস্টমার আমি আর আমি কোন টাকা না দিয়ে বের হয়ে যাব, দিনের শুরুটা খারাপ হলে তার দিনটা ও খারাপ যাবে। মানি বেগ থেকে একটা ছেড়া দুই টাকার নোট বের করে দিলাম দিয়ে দেওয়ার পর দেখি নোটটার মধ্যে একটা মোবাইল নাম্বার লিখা আর নিচে সুন্দর হাতে লিখা "অনু" নোটটা সাথে সাথে দোকানির কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে আরেকটা নোট বের করে দিয়ে চলে আসলাম। দোকানি ভ্যবাচ্যাকা খেয়ে গেছে বলে মনে হল, কেন তাকে টাকা দিলাম তা ও বুঝল না আবার কেন দুই টাকা বদলে আবার পাচ টাকা দিলাম তাও বুঝল না। হাটতে হাটতে স্টেশনে চলে এলাম । স্টেশনের ঘড়িতে চোখ পড়ল ৮টা ১৪ মিনিট।

আর প্লাটফর্মের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিতাস ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে আমি কেন জানি দৌড়ে গিয়ে ট্রেনে উঠে গেলাম। অনেক ভীড় উফ! অস্বস্তিকর অবস্থা ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে নেমে যেতে ইচ্ছে করল কিন্তু ইচ্ছে করলেই সব কিছু পারা যায় না। আমি দাঁড়িয়ে থেকে টংগী স্টেশনে আসার পর ট্রেন প্রায় পুরোটাই খালি হয়ে গেল। জানালার পাশে গিয়ে বসলাম কিন্তু বাইরে তাকাতে ইচ্ছে হল না। মাথা নুয়িয়ে বসে রইলাম।

এয়ারপোর্টে থেকে কিছু স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী উঠল। একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে খানিকটা চমকে উঠলাম মেয়েটার নাম টুপুর, সত্যি কিনা জানি না তবে আমার ধারণা এটা ওর নিজের দেওয়া নাম। যাই হোক আমি জানতাম মেয়েটা ট্রেণ ছাড়ার সাথে সাথে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলবে, বসতে পারি? পৃথিবীতে অনেক বিচিত্র মানুষ আছে এই মেয়েটা তাদের মধ্যে একজন। সে নাকি খুব ভাল গান গায় তার ইচ্ছে সে একদিন ক্লোজ-আপ ওয়ানের মত কোন রিয়েলিটি শোতে প্রথম হবে, তখন তার প্রচুর এসএমএসের প্রয়োজন হবে। যার যত বেশী পরিচিত মানুষ থাকবে সে তত বেশী ভোট পাবে তাই সে প্রতিদিন দুই জন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হয়।

আর এ কাজটা করে ট্রেন দিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে। টুপুর ক্লাশ সেভেন থেকে এটা করা শুরু করেছে এখন ক্লাশ নাইনে পরে। আগে ওর সাথে আরো দু বার দেখা হয়েছে একবার কোন পাত্তা দেইনি আরেকবার ওর কথা অনেক আগ্রহ নিয়ে শুনেছি। আজ খেয়াল করলাম সাদা রঙের স্কুল ড্রেসে মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। ও পাশে আসতেই আমি ওকে বললাম কি খবর টুপুর? বসো... ও চমকে গিয়ে ১ ন্যনো সেকেন্ডের মধ্যে বসে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

কিছুক্ষণ পর হাজারটা প্রশ্ন করতে শুরু করল ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হঠাত আবিস্কার করলাম, কেন বা কোথাইয় যাচ্ছি সেটা আমি জানি না, আম্মুকে কিছু জানানো হয়নি আর সকালের নাস্তা ও হয় নি। যাইহোক পরের সময়টা ভালই কাটল টুপুরের ট্রেনের অনেক বিচিত্র ঘটনা শুনে বেশ মজা পেলাম। ঘটনা গুলো অন্য দিন শেয়ার করে দিব। কমলাপুরে টুপুরকে বিদায় দিয়ে আমার গুণধর মা কে ফোনে বলে দিলাম কোন রকম টেনশন না করতে। অবশ্য কাজটা খুব সহজ হয়নি।

তবে স্বস্তির নিঃস্বাস ফেললাম এজন্য যে আমি মোবাইল ব্যবহার করি না। মোবাইলকে আমার অদৃশ্য রিমোট কন্ট্রল বা গলার দড়ি মনে হয়। কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে একটা ফাস্টফুডের দোকান থেকে একটা অর্ধ বাসি বারগার আর চা খেয়ে কেমন জানি লাগতে শুরু করল আমি সচরাচর বারগার খাই না তবে আজ নিজের কন্ট্রোলের বাইরে। আমাকে প্রকৃতি কন্ট্রোল করছে বলে আমার ধারণা হচ্ছে তবুও আমি ফেরিওয়ালা কে চানাচুর বানাতে বললাম । চানাচুর ওয়ালা বেশ ভদ্র-হাসি খুশি।

চানাচুর বানানো এক্সপ্রেশন দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীতে চানাচুর বানানোই সবচে ইন্টারেস্টিং কাজ। আমি বেশ মজা পেলাম আর মনে মনে ঠিক করলাম চানাচুর শেষ করে আরেক বার বানাতে বলব। এভাবে ৫ বার এক্সপ্রেশন দেখার কাজটা করলাম। শেষবার বিরক্ত লাগল। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যও বেশীক্ষণ দেখতে ভাল লাগে না।

আমি তিন নম্বর প্লাটফর্মে পা ঝুলিয়ে চানাচুর খাচ্ছি ঠিক এ সময় একটা মানুষ এসে নরম স্বরে আমাকে বলল, আপনি কি শুভ? উত্তেজনা আর আনন্দে তার গলা কাপছে... তার দিকে চেয়ে আমার ও চিনতে দেরী হল না কিন্তু না চেনার ভান করে বললাম, ----ভাঙতি নাই! সে আবার গলা নামিয়ে আহত স্বরে জিঙ্গেস করল ----আপনি শুভ না? আমি অন্য দিকে চেয়ে থেকে হ্যা সূচক মাথা নেড়ে উঠে গেলাম। তার সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছে নেই। কিন্তু আমি জানি ইচ্ছে না থাকলেও আমি কথা না বলে বেশীক্ষন থাকতে পারব না। এই মানুষটা আমার জীবনের একটা কালো অধ্যায়। কালোর সাথে বেশীক্ষণ না থাকাই ভাল।

তবে তাকে আজই প্রথম দেখলাম। বুক ধর-ফর করছে। মনে হচ্ছে এখনি পরে যাব কিন্তু পরে গেলে গন্ডগোল হয়ে যাবে। মনে মনে একহাজার থেকে উলটা গোনা শুরু করলাম ৯৯৯, ৯৯৮, ৯৯৭, ৯৯৬, ৯৯৫...... পেছন থেকে অনেক বার শুভ প্লীজ! শুভ প্লীজ! বলতে শুনলাম কিন্তু তাতে আমার কোন কিছু আসে যায় না। নিজের মত করে চলে এলাম।

স্টেশন থেকে একটু দূরে রাস্তার পাশে দিয়ে হাটছি। নিজের উপর খুব রাগ উঠছে। আমার এক মন আরেক মনকে খুব করে শাসাচ্ছে। এই মনটার নামি দিয়েছি "শাসা"। তবে বারাক ওবামার মেয়ে শাসার নামের সাথে মিলিয়ে না।

"শাসানো" থেকে শাসা হয়েছে। এই মন সব সময় আমাকে শাসায়। তুমি এমন কেন, তেমন কেন, এটা করলে কেন, সেটা করলে কেন ইত্যাদি। কিন্তু তার শাসানো আমাকে আমার জায়গা থেকে নড়াতে পারে না। আমি যে সিদ্ধান্ত নেই সেটাই শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকে।

তবে কম্পাসকে ঝাকালে যেমন কিছুক্ষনের জন্য কাটাটা অন্য দিকে থাকে কিন্তু একটুপর নিজের জায়গায় ফিরে আসে। আমার সিদ্ধান্তও কিছুক্ষণের জন্য বদলায় কিন্তু একটু পরে যে লাউ সে কদু। নিজের প্রতি খুব রাগ উঠছে, ইচ্ছে করছে বাথরুমের কমডের ভিতর নিজেক ছুড়ে ফেলি তারপর ফ্ল্যাশ করে দেই। কিন্তু কিছুই করার নেই, এই কাজ করা সম্ভব না । আমার ধারনা চোখ দিয়ে পানি বের হলে কষ্ট দূর হয়ে যায়।

কিন্তু সেটাও সম্ভব না। মেয়েদের কোন কষ্ট থাকে না । তারা কথায় কথায় চটাত করে পানি বের করে দিতে পারে বলে। কিছুই ভাল লাগছে না। রিক্সা নিয়ে স্টেশনে এসে টিকেট কেটে ট্রেনে উঠে গেলাম।

১৮ নম্বর সিট খুজে পেতে দেরী হল না। পাশের সিটে একটা ছাগু ছানা টাইপ ১৮-১৯ বয়সের ছেলে বসে আছে, ছোট ছোট দাড়ি উঠছে আর বিশাল বিশাল গোফ হয়ে আছে তবে তা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হল না। ছেলেটাকে বেশ পছন্দ হয়েছে। চুপ-চাপ বসে আছি, সামনের সিটে এক মোটা মহিলা তার হাতে ধরা একটা ৫-৬ বছরের রোগা টাইপ ছেলেকে নিয়ে বসল। মোটা মহিলাদের বাচ্চাগুলো মোটা হয়, কিন্তু এই মহিলার ক্ষেত্রে ভিন্ন।

ছেলেটার নাম প্লাবন তবে শরীর দেখে মনে হচ্ছে নাম প্লাবন না রেখে প্লাবনে ভেসে আসা খর-কোটা রাখলে নামটা মানিয়ে যেত। অনেক্ষণ পর ট্রেন ছাড়ল। বুকটা ধর-ফর করছে। মনে হচ্ছে মনের ভিতরের জমানো কষ্ট গুলো বুকে লাথি বসাচ্ছে। সামুতে কার ব্লগে যেন পড়েছিলাম, "মনের কষ্ট গুলা পচা গ্যাসের মত, ফাক পেলে বের হয়ে চলে যায়।

আর মুখ দিয়ে বের করে দিলেই শেষ" মনে মনে ঠিক করলাম আজ সব কষ্টগুলো কারো সাথে শেয়ার করব। আর এমন কারো সাথে করতে হবে যার সাথে আর কখনো দেখা হবে না। আজ পর্যন্ত যে বন্ধুর কাছেই কোন দুঃক্ষ শেয়ার করেছি দেখা গেছে দু দিন পর সে আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চম্পট..... আমার পাশের ছেলেটাই হয়ত এজন্য সবচেয়ে উপযুক্ত তার সাথে কোন দিন দেখা হবে না আবার যাদেরকে নিয়ে আমার কষ্ট, তারাও জানবে না। কারো সাথে মিশতে আমার বেশী সময় লাগে না, ছেলেটার সাথে ও বেশী সময় লাগে নি। জীবনের যত কষ্ট ছিল সব বমি করে দিলাম।

অনেক না বলা কথা বললাম আজ। কেমন জানি হালকা লাগছে, অনেকটা হিলিয়াম গ্যসের মত আকাশে উড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। মনে হচ্ছে পেটে অনেক পেশাব জমে ছিল, এইমাত্র আমি নদীর স্রোতের মধ্যে পেশাব করে এলাম। সত্যিই কষ্ট পেশাবের মত, বের করে দিলেই শেষ। স্টেশনে চলে এসেছি।

ট্রেন থেকে নেমে কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা বাসায়......গোসল করে হাতে মগ ভর্তি কফি নিয়ে বসে সারাদিনের ঘটনা গুলো লিখছি, দিনটা স্মরনীয় করে রাখার জন্য......... ভাবছি সামুতে শেয়ার করে দিব, নিজেকে আরো হালকা মনে হবে...... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.