আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ান মার্ডার মেকস এ ভিলেন, মিলিয়নস এ হিরো!!!

নিজেকে নিয়ে ভাবছি

পুরোটুকু পড়ুন । ঠিক যেন জাঁ পল সার্ত্রের নাটকের নায়কের মতো। সে নায়ক নরহত্যা শুরু করেছিল। তার ইচ্ছা ছিল, সে লাখো মানুষ খুন করবে। যদি সে লাখো মানুষ খুন করতে পারে, তবে জাতীয় বীর হিসেবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে তার মর্মর মূর্তি স্খাপন করা হবে।

সেভাবে অমরত্ব অর্জন করবে। সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে সে দুয়েকটা হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল। এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী কাহিনী। এর মধ্যেই সে ধরা পড়ে যায়। বিচারের জন্য আদালতে তাকে হাজির করা হয়।

সে তো তাজ্জব। তাকে যত বলা হয়, তুমি তো খুনি। সে কিছুতেই তা স্বীকার করে না। সে বারবার বলে, সে খুনি নয়। সে ব্যবসায়ী।

আর ব্যবসায় সফল হতে দু-চারটা খুন করতে হয়। সেটাই যৌক্তিক। এরপর তার ডায়ালগ স্মরণীয়। সে বলে, যে একটি খুন করে সে খলনায়ক হয়, কিন্তু যে লাখো মানুষ খুন করতে পারে, তোমাদের বিচারে সে হয় মহাবীর (ওয়ান মার্ডার মেকস এ ভিলেন, মিলিয়নস এ হিরো) । এখন সমাজে হিরো বা মহাবীর হওয়ার প্রতিযোগিতায় খুনের উন্মত্ততা চলছে।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার রাজপথে প্রকাশ্যে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে নরহত্যার মাধ্যমে যে রক্ত-পিপাসা নিবারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, এখন তা সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে। সে দিনও আমরা লক্ষ করেছি যে, সেই গণহত্যাকে যৌক্তিক ভিত্তি দেয়ার জন্য কী রকম মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন আওয়ামী লীগ ও এর সাঙ্গাৎ দল। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবেই এই নরযজ্ঞ। হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড রহিত করার জন্য আইনগত পথে যাওয়ার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে ক্ষমা করিয়ে কারাগার থেকে বের করে আনা হয়েছে। এটুকু হলেও হয়তো হত্যাকারীরা সমাজে খানিকটা মাথানত করে চলত।

কিন্তু হত্যাকারীরা মাথনত করে চললে হবে কেন? আরো রক্তের তৃষäানিবারিত হবে কিভাবে? তাদেরকে তো আরো রক্তপাতের, আরো হত্যায় উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে। আর তাই সরকারের মন্ত্রীরা সেই সব হত্যাকারীদের সার্কিট হাউজে ডেকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিলেন। সোনার খুনিরা, তোমাদের কাছে যে আরো লাশ চাই, আরো খুন চাই, আরো রক্ত চাই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে আমাদের মর্মর মূর্তি চাই। কারণ আমরা জেনেছি, ‘মিলিয়নস এ হিরো।

’ লাখো মানুষের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমরা হিরো হয়ে উঠব। সাধারণ নাগরিকরা ভেবেছিল, হত্যাকারীদের সার্কিট হাউজে ডেকে সংবর্ধনা দেয়ায় নাগরিকদের মধ্যে যে ঘৃণার জন্ম হয়েছে, তা থেকে সতর্ক হবে সরকার। কিন্তু তার লক্ষণ দেখা গেল না। ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠা কায়দায় পুনরায় রাজপথে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করা হলো নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবুকে। আমরা ভেবেছিলাম আইনের স্বার্থে, স্বচ্ছতার স্বার্থে, জনমনে নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টির স্বার্থে সরকার এই হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্খা করবে।

কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন চিত্র দেখলাম। এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আছে, স্টিল ক্যামেরার ছবি আছে, শত শত প্রত্যক্ষদর্শী আছে। সেসব ফুটেজ টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিতও হয়েছে। সাধারণ মানুষ খুনিদের দেখতে পেয়েছে, চিনতেও পেরেছে। কিন্তু সরকার একেবারে ওল্টোমুখে খুনিদের পক্ষে দাঁড়িয়ে গেল।

প্রধানমন্ত্রী থেকে সরকারের মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা শতমুখে বলতে থাকলেন, সরকারি দলের লোকজন ও রকম কোনো ঘটনাই ঘটায়নি। সরকার দলের সদস্য এক কলেজের অধ্যাপক পেটাল, কোপাল, লাফাল; কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে বললেন, ওই লোকের বাবাকে বিএনপি’র লোকেরা হত্যা করেছিল। তার অর্থ কী দাঁড়াল? যেহেতু তার বাবাকে বিএনপি’র লোকেরা হত্যা করেছিল, অতএব বিএনপি’র লোকদের হত্যা করার অধিকার তার আছে। তারপর প্রধানমন্ত্রী বললেন, সম্ভবত ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে। এর ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।

গত ১৫ দিনে এত প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে একজনমাত্র গ্রেফতার হয়েছে। আর কোনো হত্যাকারীর সìধান মিলছে না। আমরা আরো লাশের জন্য অন্য কোথায়ও সম্ভাব্য নরহত্যাযজ্ঞের অপেক্ষায় উৎকণ্ঠিত হয়ে আছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.