আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমপি ও গুণধর পুত্রদের নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়ার প্রশাসন

পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী"

Click This Link ০০ আবুল খায়ের ও মোসত্দাফিজুর রহমান মঞ্জু কুষ্টিয়া জেলার ৪টি আসনে ৪ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন এমপির এলাকায় সুনাম অৰুণ্ন থাকলেও অপর তিন এমপির মধ্যে দুই এমপির দুই গুণধর পুত্র এবং এক এমপি জেলার প্রশাসন থেকে শুরম্ন করে উপজেলা প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদ পর্যনত্দ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে। এক এমপি ও দুই এমপির দুইপুত্রের নির্দেশনার বাইরে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালন দুরূহ ব্যাপার। দুই এমপি পুত্রদ্বয়ের পিছনে থেকে শক্ত সেস্নাগান দেন। এই কারণে দুই এমপির চেয়ে দুইপুত্রই ৰমতাধর।

এই দুই পুত্রই এলাকার স্বঘোষিত এমপি হিসাবে পরিচিত। টেন্ডার, চাঁদা, ভর্তি, নিয়োগ ও বদলি, দখল বাণিজ্য চলছে ওপেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের এক শ্রেণীর নেতাকমর্ীর টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখল, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য থেমে নেই। তারা বেপরোয়া হয়ে এই সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য এমপিদের দুনর্ীতিই দায়ী।

প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ রীতিমত অসহায় হয়ে পড়েছেন। কাজ না করে কিংবা তিন ভাগের এক ভাগ কাজ করে পুরা বিল তারা উঠিয়ে নিয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছে। এমপি ও দুইপুত্রের সঙ্গে সখ্যতা করে এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুনর্ীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের এই অপকর্মের দায়ভারও গিয়ে পড়ছে উক্ত এমপি ও দুই পুত্রের উপর।

স্থানীয় প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, টেন্ডার ছাড়াও হাট-বাজার ইজারা উক্ত এমপি ও দুই পুত্রের নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া টিআর-কাবিখার প্রকল্পের চাল-গম নিয়ে চলছে হরিলুট বলে কর্মকর্তারা জানান। দুইটি সংস্থা কুষ্টিয়া জেলায় অনুসন্ধান চালিয়ে এক এমপি ও দুই এমপির পুত্রদ্বয় সম্পর্কে একই তথ্য পেয়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা বলেন, কুষ্টিয়া জেলা থেকে উপজেলার সকল প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদ পর্যনত্দ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে টেন্ডার, চাঁদা, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য ও ত্রাণের চাল-গম বিতরণে পুকুর চুরির মত অবস্থা ছিল। প্রশাসন ছিল বিএনপির এমপি ও তাদের সংগঠনের নেতাকমর্ীর নিয়ন্ত্রণে।

বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলেও একই অবস্থা। তবে বর্তমান সরকার ২২ মাসে অতীতের সরকারের চেয়ে ভাল কাজ করেও এমপি ও তাদের পুত্র এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের এক শ্রেণীর নেতাকমর্ীর টেন্ডার, চাঁদা, নিয়োগ ও বদলি, দখল বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ায় সরকার জনপ্রিয়তা হারাতে বসেছে বলে উক্ত কর্মকর্তারা জানান। জানা যায়, এক এমপির পুত্র ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা পিতার ৰমতা ও নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। পিতা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তার সকল কাজকর্মই পরিচালনা ও সমন্বয় করেন পুত্র। আর এই কাজ করতে যেয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন চরম ৰমতাধর।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এমপির কাছ থেকে কোন সুপারিশ কিংবা কাজ উদ্ধার করতে হলে প্রথমে ধরনা দিতে হবে তার পুত্রের কাছে। এলাকার হাট-ঘাট ইজারা ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরম্ন করে টিআর, কাবিখার প্রকল্প বাসত্দবায়নের কাজ কে পাবে তা তিনি নির্ধারণ করেন এবং চাল-গমের টন প্রতি নির্ধারিত হারে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। এছাড়া থানায় মামলা রেকর্ড এবং আসামি ধরা ও ছাড়ার বিষয়টিও নির্ভর করে এমপি ও তাদের পুত্রদ্বয়ের দেয়া সিদ্ধানত্দের উপর। ভারত সীমানত্দ সংলগ্ন দৌলতপুর উপজেলায় ৰমতাসীন দল ও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-সদস্যের আশীর্বাদেই চলে চোরাচালান ও মাদকের রমরমা ব্যবসা। এই চোরাকারবারী ও মাদকের টাকার ভাগ ৰমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতার পকেটেও যায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

সমপ্রতি বিষাক্ত স্পিরিট খেয়ে এক এমপির ভাই ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ চার জনের মর্মানত্দিক মৃতু্য ঘটে। ঐ ঘটনার পর মাদক ব্যবসা বন্ধে পুলিশের সাময়িক তৎপরতা দেখা গেলেও পরবর্তীতে তা থেমে যায়। উক্ত এমপির পুত্রের চেয়ে অপর এমপির পুত্র বেশি প্রভাবশালী ও ৰমতাধর। সরকারি কাজে হসত্দৰেপ, বেসরকারি স্কুল-কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য, টিআর- কাবিখার পছন্দের পিআইসি নিয়োগ ও প্রকল্প বাসত্দবায়নে সরকারি খাদ্য বরাদ্দের প্রতিটন মালের জন্য পিআইসিদের কাছে থেকে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা আদায় করেছেন বলে বিসত্দর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৰমতার দাপটে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের কাউকে তোয়াক্কা করেন না।

এমপির সকল কাজের নীতিনির্ধারক ও সমন্বয়ক হিসাবে পুত্র কাজ করেন। এমপিকে দিয়ে কোন কাজ হাসিল করতে হলে আগে পুত্রের অনুমতি নিতে হয়। এহেন কর্মকাণ্ড ও আচরণে দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা ৰুব্ধ ও দ্বিধা- বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদিকে গত ২০০৯ সালে এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডিগ্রী কলেজের সভাপতি হিসাবে কলেজে প্রভাষক নিয়োগ বোর্ড গঠন করলে এমপি ও তার পুত্র ঐ কর্মকর্তার উপর চরমভাবে নাখোশ হন। এমপির অনুমতি ছাড়া কলেজে শিৰক নিয়োগ বোর্ড গঠন করায় ঐ কর্মকর্তাকে মৌখিক কৈফিয়ত তলব করেন।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমপি পুত্রের কথায় কর্ণপাত না করায় পুত্রের নির্দেশে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১০/১২ ক্যাডার লাঠিসোঁটাসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস কৰে প্রবেশ করে হামলা ও চেয়ার-টেবিল ভাংচুরসহ তাকে বেধড়ক লাঠিপেটা ও গুরম্নতর জখম করে বীরদর্পে চলে যায়। এরপর ঐ কর্মকর্তাকে গুরম্নতর অবস্থায় স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করা হয়েছিল। ঐ ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসনে চরম অসনত্দোষ দেখা দেয়। হামলার ঘটনায় প্রশাসনের পৰ থেকে থানায় মামলা দায়েরের পর আসামিরা গ্রেফতার হলেও ৰমতার জোরে তারা জামিনে বেরিয়ে আসে। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় বদলি হয়ে চলে যাওয়ায় মামলাটি ধামাচাপা পড়ে যায়।

এছাড়া সমপ্রতি এক উপজেলার প্রকল্প বাসত্দবায়ন কর্মকর্তার সাথে এমপি পুত্রের বনিবনা না হওয়ায় তাকে রাজবাড়ি জেলায় বদলি করে দেয়া হয়। তবে এমপি পুত্রের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরম্নদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। দলের কিছু নেতা-কর্মী তার বিরম্নদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। এক এমপির অসুস্থতা ও অনুপস্থিতির সুযোগে দলীয় এক শ্রেণীর নেতারাই নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার ভাগাভাগি ও টিআর-কাবিখার কাজ কাগজে-কলমে বাসত্দবায়ন দেখিয়ে ঐ প্রকল্পের খাদ্যসামগ্রী হরিলুট করেছেন। সমপ্রতি সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৮ কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ শীর্ষ কয়েকজন নেতার উপস্থিতিতে দলীয় ঠিকাদাররা ভাগাভাগি করে নেয়।

এছাড়া গত বছর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২৮ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে দলের প্রভাবশালী এক নেতাসহ স্থানীয় নেতারা মোটা অংকের নিয়োগ বাণিজ্য করেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী দলীয় প্রভাবে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও টিআর-কাবিখার কাজে কোন অনিয়ম করা হয়নি বলে দাবি করেন। এদিকে অতি সমপ্রতি কুষ্টিয়া শহরের ঐতিহ্যবাহী একটি কলেজে ২৯ জন শিৰক নিয়োগের নামে প্রায় দেড় কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। শূন্য পদে ৮ জন এবং নতুন সৃষ্ট পদে ২১ জন প্রভাষক নেয়া হয়েছে। কলেজে অনার্স কোর্স খোলার নামে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য জনবল কাঠামোর বাইরে অতিরিক্ত শিৰক নিয়োগ দেয়া হয়।

এছাড়া প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয় ধার্যে বিনা টেন্ডারে কলেজের দ্বিতল বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় তলা নির্মাণ ও দোতলা মার্কেট ভবনের তৃতীয় তলা নির্মাণ চলছে। ঠিকাদার হিসাবে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্য ঐ নির্মাণ কাজ করছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়। এদিকে কলেজের এই নিয়োগ ও বিনা টেন্ডারে নিম্নমানের কাজ করে গভর্নিং বডির সাথে সংশিস্নষ্টরা টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন এমপির অতি ঘনিষ্ঠ এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তিনি অবশ্য নিয়োগ বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করেছেন।

এছাড়া পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধানত্দে বিনা টেন্ডারে নির্মাণ কাজ করতে কোন বাধা নেই বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে অতি সমপ্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক এমপি ও দলীয় নেতাদের সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুনর্ীিতগ্রসত্দ প্রশাসন প্রজ্ঞাপিত ৬টি শাখা কর্মকর্তার বিপরীতে ৪৬ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের শিৰক চরম অসনত্দোষ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করেন। এই ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন কোন মনত্দব্য করতে নারাজ। কুষ্টিয়ার এমপি শাহাবুদ্দিন খান বলেন, কোন এমপি ও তাদের পুত্রের নির্দেশে থানায় মামলা নেয়া এবং আসামি গ্রেফতার করার অভিযোগ আসেনি।

এমপিদের পুত্র সম্পর্কে এই ধরনের অভিযোগ আসলে সত্যতা যাচাই করে অভিযুক্তদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এমপি জানান। স্থানীয় প্রকৌশলীরা কোন মতামত দিতে নারাজ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.