আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এডলফ হিটলারের ফ্রান্স বিজয়- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর সাফল্য- শেষ পর্ব

আগের কাহিনী: ফ্রান্স আক্রমন করার জন্য হিটলার ১২ ই নভেম্বর ১৯৩৯ তারিখে সময় ঠিক করলেন। অথচ জার্মান জেনারেলরা তা চাইছিলেন না। তারা বুঝছিলেন পোল্যান্ড দখলের এত কম গ্যাপের মধ্যে আবার একটা বড় অপারেশন চালানো ঠিক হবেনা। তারা আবারো হিটলারকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু হলনা।

হিটলারের উদ্দেশ্য অনেক গভীর ছিল। ফ্রান্স দখল করা মানে বেলজিয়াম, হল্যান্ড সব নিজ আয়ত্বের মধ্যে চলে আসবে! জেনারেল হালডের- চীফ অফ জেনারেল স্টাফ, জেনারেল ব্রাউচটিশ যিনি কমান্ডার ইন চীফ জার্মান আর্মী ছিলেন এইসব বাঘা বাঘা জার্মান জেনারেলরা হিটলারকে বোঝাতে চেস্টা করলেন যেন সময়টা পিছিয়ে দেন, হিটলারের এক কথা। বিরক্ত জেনারেলরা তখন ভাবলেন সেই ভয়ংকর জিনিসটা-- এই একগুঁয়ে ফুয়েরারকে -- হিটলারকে সরিয়ে দিলে কেমন হয়! কিন্তু পুরো পরিস্হিতি পর্যালোচনা করে দেখলেন জার্মান সেনা বাহিনীতে হাজার হাজার তরুন অফিসার রয়েছে যারা ১৯৩৩ এর পর ভর্তি হয়েছে তারা হিটলারের নাজী আদর্শে পুরো অনুপ্রানিত সেই --স্কুল কলেজ থেকেই। তারা হিটলারের নাজী আদর্শে অন্ধের মত বিশ্বাস করে, নাজী আদর্শে তারা বিমোহিত, মুগ্ধ! তারা কখনোই হিটলারের বিরুদ্ধে কেোন ক্যুতে যোগ দিবেনা। অর্থাৎ ক্যু সফল হবেনা।

সুতরাং ক্যু করবার চিন্তা বাদ। বেঁচে গেলেন হিটলার, আর এরকম অনেকবারই বেঁচে যাবেন ভবিষ্যতে! জেনারেলদের আর যাই দোষ থাক তাদের দেশপ্রেমের কোন ঘাটতি ছিলনা। তারা দেখলেন ফ্রান্স আর ব্রটেন দ্রুত পশ্চিম প্রান্তে তাদের শক্তি বাড়াচ্ছে, বিপদ তো! তারাও পোল্যান্ড থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে পশ্চিম দিকে জড়ো করলেন। কিন্তু হিটলারের আক্রমনের ডেডলাইন ১২ ই নভেম্বর ১৯৩৯ কিছুই হলনা, চুড়ান্ত আক্রমনের অর্ডারটা আসলনা! কেন কে জানে। হিটলার আক্রমনটা ৩ দিন পেছালেন আর এভাবেই আরো ১৪ বার পেছানো হল।

হিটলার ও জার্মান আর্মীর সিইনসি জেনারেল ব্রাউচতিশ এর ছবি নীচে: পৃথিবীর অন্যতম সেরা মিলিটারী কমান্ডার-- জার্মান ফিল্ড মার্শাল আরভিং রোমেল এর ছবি নীচে: আক্রমনটা কিভাবে হবে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হল বহুরকম প্লান আসলো। অবশেষে একজন তুখোড় জার্মান জেনারেল, জেনারেল ম্যানস্টেইন একটা প্লান দিলেন। সেটা ছিল ফরাসী লাইনের ভিতর দিয়ে মেজিনো লাইন এড়িয়ে (বাই পাশ করে) ট্যাংক বাহিনীকে দিয়ে (পানযার ডিভিশন) ফরাসী ও বৃটিশদের পিছন দিকটা আক্রমন করা। সবাই সেটা পছন্দ করলো। --পিছন দিয়ে পানযার ডিভিশনের জার্মান ট্যাংক যাচ্ছে লক্ষবস্তুর দিকে, ফরাসীদের দিকে-- যুদ্ধ শুরু হলে জার্মানদের কোন নড়াচড়াই দেখলানা ফরাসীদের ফ্রন্টলাইন সৈন্যরা! ১৯৪০ এর শীতকাল গেল (মা্র্চ এপ্রিল) আর তখন জার্মানরা একটু মার খেল।

অত্যন্ত উন্নতমানের পৃথিবীখ্যাত বৃটিশ নেভী জার্মানদের সমুদ্রপথে সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে দিল। অন্যদিকে রাশিয়ার ফিনল্যান্ড আক্রমন করার ফলে জার্মানদের লোহা সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেল। রেগে মেগে হিটলার রাস্তা খোলার জন্য ৯ই এপ্রিল ১৯৪০ ছোট্ট দেশ নরওয়ে আর ডেনমার্ক দখল করে ফেললেন। নরওয়ের রাজা হাকুন লন্ডনে পালিয়ে বাঁচেন। এরপর হিটলার ১০ ই মে ১৯৪০ মুল ফ্রান্স আক্রমন করলেন।

১৩৬ টা বৃটিশ ফরাসী আর বেলজিয়ান ডিভিশন প্রতিরক্ষায় ছিল। কিন্তু এসব পাশে রেখে জার্মান জেরারেল গুদেরিয়ান আর জেনারেল আরভিং রোমেল ম্যানস্টেইন প্লান মোতাবেক ফ্রান্সের ভিতরে ঢুকে পড়লেন। একই সাথে জার্মান বিমান বাহিনী লুফটওয়াফে হল্যান্ডে বোমা ফেলে একেবারে কাবু করে ফেলে, হল্যান্ডের রানী উইলহেলমিয়া তাঁর সরকার নিয়ে লন্ডনে কেটে পড়েন। হিটলারের হল্যান্ড দখল হলো। ২০শে মে ১৯৪০, মিত্রবাহিনী বেলজিয়ামের ডানকার্কের কাছে একেবারে অবরুদ্ধ হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

তখন জার্মানরা থামল। ২৪ শে মে ১৯৪০। ঠিক তখনই হিটলারের বিমান প্রধান গোয়েরিং বাহাদুরী নেয়ার জন্য বললেন তার বিমান বাহিনী অবরুদ্ধ মিত্রবাহিনীকে ধ্বংশ করতে সক্ষম, জার্মান সেনাদের একটু বিশ্রাম দেয়া হোক!! হিটলার রাজি হলেন, আর এই অদ্ভুত সিদ্ধান্তে জার্মান জেনারেলরা স্তম্ভিত! এ তো জয়ের সুযোগ পুরো নস্ট করার পায়তাড়া! গোয়েরিং তার বিমান আক্রমন শুরু করলেন। কিন্তু বাজে আবহাওয়ায় তাদের খুব অসুবিধা হচ্ছিল। এছাড়া গোয়েরিংএর পুরোনো ধীর গতির মেসারস্মিট বিমান বৃটিশদের উন্নত মানের স্পিটফায়ার প্লেনের কাছে উড়তেই পারছিলনা! গোয়েরিংএর চরম ব্যার্থতা দেখে হিটলার ক্ষেপে গিয়ে তার বিখ্যাত পানযার ডিভিশনের ট্যাংক বাহিনীকে আক্রমনে পাঠালেন।

জার্মান বাহিনীর হাতে প্রচুর ফরাসী সৈন্য ধরা পড়ে, তবে জার্মানদের এই দেরী হওয়ার জন্য সমুদ্রপথে প্রায় ২,৬০,০০০ ইঙ্গ ফরাসী সৈন্য নৌপথে পালাতে সক্ষম হয়। ফরাসী যুদ্ধবন্দী জার্মানী ইতিমধ্যে ডানকার্ক, ফ্রান্সের উত্তর ভাগ, বেলজিয়াম, হল্যান্ড এবং লুক্সেমবার্গ দখল করে নয়। বাকি ফ্রান্স দখল তখন সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। অবস্হা বেগতিক দেখে ১০ই জুন ১৯৪০ ফরাসী সরকার ধ্বংশের হাত থেকে প‌্যারিসকে বাঁচাবার জন্য সেটাকে খোলা নগরী বা ওপেন সিটি ঘোষনা করে, আশা যে জার্মানরা বোমা মেরে প‌্যারিস ধ্বংশ করবেনা। ১৪ই জুন ১৯৪০, জার্মানীরা বিনা বাধায় প‌্যারিসে প্রবেশ করে।

প্রায় ২২ বছর আগে জার্মানী যেখানে মিত্রবাহিনীর কাছে সারেন্ডার করে ফরাসীরা সেখানেই জার্মানীর কাছে সারেন্ডার করে। নীচে জার্মান ফিল্ড মার্শাল কাইটেলের কাছে ফরাসীদের সারেন্ডার: ফরাসীরা সারেন্ডার করলেও হিটলারের পরিচিত ফরাসী মার্শাল হেনরী পেতাঁ ফরাসী সরকার প্রধান হলেন। উপরে মার্শাল পেতাঁ ও হিটলার এছাড়া উত্তরাংশ জার্মান দখলে থাকলেও দক্ষিন অংশ স্বাধীনই রইল। ফ্রান্স হিটলারের দখলে আসার সাথে সাথে অস্ট্রিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ ও হল্যান্ড হিটলারের অধীন হল। স্পেন ও ইতালি হাটলারের সাথে রাজনৈতিক সখ্যতা স্হাপন করলো।

ইউরোপের বড় শক্তির মধ্যে একমাত্র বৃটেন ছাড়া সবই হিটলারের অধীন হলো। (প্রথম অংশটুকু পড়লে নীচে দেখুন): Click This Link  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।