আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসহ্য জটে অচল মহাসড়ক

এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই পাড়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার সড়কে যানজটে আটকে থাকে উত্তর জনপদের হাজার হাজার যানবাহন। ফলে শুক্রবার সারাদিন ঢাকা শহরে যেমন গাড়ি ঢুকতে পারেনি তেমনি ঢাকা থেকেও গাড়ি যায়নি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরে।
কোথাও কোথাও ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত যাত্রীদের মহাসড়কে বসে থাকতে হয় গন্তব্যে পৌঁছার জন্য। অনেকে জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ডে এসে সকাল থেকে অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে বিকালে টিকিট ফেরত দিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
মহাসড়কের পাশাপাশি মাওয়া-কাওড়াকান্দি ও আরিচা- দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটেও দিনভর ছিল প্রবল জানজট।

দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত এ দুই ঘাটকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানজট একটু কমলেও সন্ধ্যার পর থেকে ঢোকাগামী নৈশ কোচের কারণে তা আবার বাড়তে থাকে।
যানজটে আটকে থাকা যাত্রীরা জানান, গত ১০ অগাস্ট ঈদের সরকারি ছুটি শেষ হলেও ১৩ ও ১৪ অগাস্ট হরতাল ও বৃহস্পতিবার জাতীয় শোক দিবসের ছুটি থাকায় শিক্ষার্থীসহ অনেকেই ঢাকা ফিরতে শুরু করেছেন বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালে।
বিভিন্ন স্থান থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
পুলিশ ও যাত্রীদের বরাত দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী দুটি পণ্যবাহী ট্রাক বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় ওজন স্কেলের সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের আইল্যান্ডে উল্টে পড়ে। ফলে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং নকলা পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার এবং সেতুর পূর্বপাড় টাঙ্গাইলের করটিয়া পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার এলাকায় হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ে।
সেতুর পশ্চিমপাড় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কলাবাহী দুটি ট্রাক বিকল হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

ঘণ্টাখানেক পর রেকার দিয়ে একটি ট্রাক সরিয়ে ফেলার পর যান চলাচল শুরু হয়, তবে গতি কম। ”
রাত সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমোডর মুজাহিদ উদ্দীন জানান, তখন সেতুর উপর ও পশ্চিমপাড়ে তেমন কোনো যানজট ছিল না। তবে সারা দিন রাস্তায় আটকে থাকার পর গাড়িগুলো সড়কের পাশের ফিলিং স্টেশন থেকে তেল নিতে গিয়ে আবারো সমস্যার মধ্যে পড়ে।
এদিকে টাঙ্গাইলের জামুর্কী, পাকুল্লা, মির্জাপুর ও কালিয়াকৈরে দুটি বাস ও চারটি ট্রাক সড়কে বিকল হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় যানজট।
মহাসড়ক পুলিশের গোড়াই থানার ওসি জোবায়দুল আলম বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে যানবাহন চলাচল এমনিতেই বিঘ্নিত হচ্ছিল।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর থেকেই পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। এরমধ্যে বিভিন্ন স্থানে গাড়ি বিকল হওয়ায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত শুক্রবার সারাদিনই যানবাহন চলছে খুবই ধীরগতিতে।
বিকেল ৪টা থেকে চাপ কমায় আটকে থাকা যানগুলো ধীরে ধীরে চলে। তবে বিকেলে জেলা বাস টার্মিনালে শত শত যাত্রী থাকলেও কোনো বাস ছিল না।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সয়াবিন তেলের ড্রাম নিয়ে চালক মঞ্জু ঢাকা থেকে নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

শুক্রবার বিকেল ৫টায় তিনি টাঙ্গাইল শহর বাইপাস অতিক্রম করেন। পথে বিস্কুট ছাড়া আর খাবার জোটেনি বলে তিনি জানান।
টাঙ্গাইল শহরের থানা পাড়ার আজাহারুল ইসলাম বেলা ২টায় টাঙ্গাইল বাস টার্মিনালে গিয়ে ৫টা পর্যন্ত কোনো বাসে উঠতে পারেননি বলে আফসোস করেন।
টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা যাওয়ার বাস ছাড়াও ময়মনসিংহসহ অন্যান্য রুটের বাসগুলোও ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। তবে এক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হয়েছে তিনগুণ।

রেল স্টেশনেও শত শত যাত্রী অপেক্ষা করে ট্রেনে উঠতে পারেননি অনেকে।
দিনাজপুর থেকে বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া ইকবাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বাসে উঠার পর আট ঘণ্টায়ও তিনি টাঙ্গাইল পার হতে পারেননি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ্ প্রতিবেদক রিয়াজুল বাশার জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় তার কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় রওনা হওয়ার কথা থাকলেও শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত তার বাসই কুষ্টিয়ায় পৌঁছেনি।
“কাউন্টার থেকে বলেছে, যে বাস ঢাকায় যাবে সেটি এখনো কুষ্টিয়ায় ফেরেনি। বেলা ১২টার সময়ও সেটি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় যানজটে আটকে ছিল বলে কাউন্টার ম্যানেজার জানান।


রংপুর থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল হেলাল শুভ। শুক্রবার দুপর সাড়ে ১২টার সময়ও তিনি আটকে ছিলেন এলেঙ্গায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই পাশের মহ্সড়কে কয়েক হাজার গাড়ি কয়েক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। কিছু কিছু এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক এলোমেলোভাবে রাখায় যানজট আরো বেড়ে যায়। ”
ঠাকুরগাঁও থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় যাত্রা শুরু করে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ঢাকা পৌঁছাতে পারেননি কামাল হোসেন মিঠু।


মহাসড়কে যানজটের কারণ হিসেবে তিনিও পণ্যবাহী ট্রাককে দায়ী করেন।
মহাসড়ক পুলিশের ওসি জোবায়দুল আলম জানান, মহাসড়ক পুলিশের সঙ্গে জেলা পুলিশের সদস্যরাও যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন।
বগুড়ায় যাত্রী ছিল, বাস ছিল না
শুক্রবার সকাল ৭টার পর বগুড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে কোনো বাস রওনা হয়নি এবং ঢাকা থেকেও সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো বাস বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে যায়নি। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাত্র তিনটি গাড়ি ঢাকা থেকে বগুড়ায় পৌঁছে আর তিনটি গাড়ি ঢাকার দিকে ছেড়ে যায়।
এদিন ঢাকা অভিমুখী শত শত যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা বগুড়া বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করেন।

কিন্তু কখন বাস আসবে, কিংবা কখন তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারবেন তা কেউ বলতে পারেননি।
এরমধ্যে কোনো কোনো যাত্রী তাদের টিকিট ফেরত দিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার মো. মাছুদুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে ছেড়ে আসা শুধু একটি বাস বগুড়া পৌঁছেছে। সকাল ৭টায় বাসটি বগুড়ায় পৌঁছে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।
এছাড়া আর কোনো বাস আসেনি এবং ঢাকার উদ্দেশ্যে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।


তিনি আরো জানান, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের কোনো জেলা থেকে ঢাকায় বাস যেতে পারেনি। অনেক যাত্রী তাদের টিকিট ফেরত দিচ্ছে। আসলে বাস কখন আসবে তা নির্ভর করছে যানজটের উপর।
বগুড়ার মোটর মালিক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলে যানজটের কারণে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোনো বাস বগুড়া পৌঁছায়নি। এজন্য সকাল ৭টার পর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বগুড়া থেকে আর কোনো কোচ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়েনি।


এতে বাসের সময়সূচি ভেঙে পড়ে বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে বগুড়া কোচ টার্মিনাল ঠনঠনিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, শত শত যাত্রী বাস কাউন্টারের সামনে ভিড় করে আছেন বাসের অপেক্ষায়। নারী ও শিশুসহ যাত্রীরা অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েন।  
টার্মিনালে বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী মোমেনা জানান, তার ঢাকায় রওনা হওয়ার কথা ছিল সকাল ৭টায়। ছয় ঘণ্টা ধরে টার্মিনালেই অপেক্ষা করেন।

শিশু সন্তানদের নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাকে।  
আরেক যাত্রী চাকরিজীবী রায়হান জানান, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে তিনি টার্মিনালে অপেক্ষা করেন। বাস না আসায় তার যাওয়া হয়নি।
আরেক যাত্রী নববধূ ফারজানা তানিয়া জানালেন, তার স্বামী হরতালের কারণে আগেই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। শুক্রবার তার বাস ছিল সকাল ১১টায়।


বিকাল ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে বাস না পাওয়ায় টিকিট ফেরত দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
দুই ঘাটেও ছিল যানজট
এদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানীর সংযোগকারী মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-রুটের কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট থেকে পাঁচ্চর পর্যন্ত শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তায় তৈরি হয় তীব্র যানজট।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, যানজটের কারণে দক্ষিণের ২১ জেলা থেকে আসা যানবাহনগুলোকে যানজটের কারণে সড়কে আটকে থাকতে হয়। দুপুরের পর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয়ে আসলেও সন্ধ্যার পর থেকে আবার যানজট দেখা দিতে শুরু করে।
জেলা শহর থেকে আসা ঢাকাগামী নৈশ কোচগুলোর কারণে এ সমস্যা তৈরি হয় বলে জানান  বিআইডব্লিউটিসির কাওড়াকান্দি ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক এমএ বাতেন।


তিনি জানান, এরমধ্যে আবার এ নৌপথের চারটি ফেরি এদিন বিকল হয়ে যাওয়ায় যান পারাপারে কিছুটা সমস্যা হয়।
এছাড়া রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ সময় আটকে পড়া যানবাহনের শত শত ঢাকাগামী যাত্রী বাস থেকে নেমে ২/৩ কিলোমিটার পথ হেঁটে ফেরি ও লঞ্চে উঠেন।
দুপুরে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাঁচ শতাধিক ছোটবড় বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকার পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছিল।
তবে দুপুরের পর যানজট একটু কমলেও সন্ধ্যার পর নৈশ কোচের কারণে তা আবার বেড়ে যায়।


দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌপথে ১০টি রো রো এবং তিনটি কে টাইপ ফেরি পারাপারে নিয়োজিত রয়েছে।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।