আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রুপকথা: একটা হাতি পাখি হতে চেয়েছিলো..



(আমার সন্তান মুমিত। বয়স তিন বছর। প্রতিরাতে মুমিতকে আমার গল্প শোনাতে হয়। নতুন নতুন গল্প। সেইসব গল্পে অবশ্যই একটা হাতি আর প্রজাপতি থাকতে হবে।

তাই নিজের দায়িত্বে গল্প বানাতে হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে আমার বানানো এই গল্পটা মুমিতকে বারবার শোনাতে হচ্ছে। ওকে যেভাবে গল্প বলি আর ও যেভাবে রিঅ্যাক্ট করে সেভাবেই লিখে পোস্ট করলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করবার জন্য। সতত শুভ কামনা আপনার জন্য, সকলের জন্য। ) মুমিত: বাবা একটা গল্প বলো।

বাবা: কোন গল্প? মুমিত : ঐ যে গল্প.. কাল বলছো না... ঐ ওটা। বাবা: কাল তোমাকে তিনটা গল্প বলেছি। কোন গল্পটা বলবো বাবাই!! কিসের গল্প!! মুমিত: ঐ যে একটা হাতির গল্প... একটা লাল প্রজাপতি... বাবা: বুঝেছি... আচ্ছা আমরা যেন গল্পটার নাম কি দিয়েছিলাম... ” একটা হাতি.. মুমিত : পাখি হতে চেয়েছিলো.. বাবা : পুরোটা বলো... মুমিত : একটা হাতি পাখি হতে চেয়েছিলো.... বাবা: এক দেশ ছিলো। ঐ দেশে ছিলো একটা জঙ্গল। অনেক বড় জঙ্গল।

অনেক বড় বড় গাছ। লম্বা লম্বা ঘাস। মুমিত: ঘাস কি অনেক লম্বা.. ঐ যে ডিসকভারীতে দেখায়.. বাবা: হু.. তার চাইতেও বেশী লম্বা । ঐ জঙ্গলে ছিলো বাঘ, হরিণ, বানর, ঘোড়া, জিরাফ আর একটা বড় মুমিত : হা......তি.... বাবা: ঠিক। ঠিক।

ঠিক। একটা বড় হাতি। হাতিটার সুন্দর একটা শূড় ছিলো। ছোট্ট একটা লেজ ছিলো। মোটা মোটা চারটা পা ছিলো।

আর বড় বড় দুটো কান ছিলো। মুমিত: বাবা, হাতির দাঁত ছিলোনা? বাবা: ছিলো। সাদা সাদা দাঁত। দুইটা বড় দাঁত। মুমিত: হাতি কি দাঁত ব্রাশ করে? বাবা : না বাবা।

হাতিদের দাঁত ব্রাশ করতে নেই। মুমিত: আমি ব্রাশ করি। তুমি করিয়ে দাও। তারপর? বাবা: ঐ হাতিটার মন খুব খুব খুউউব খারাপ। মুখটাকে এক্কেবারে গোমড়া করে রেখেছে।

তাই দেখে জিরাফ বললো , ” ও হাতি ভাই, তোমার কি হয়েছে গো?” হাতি বললো, ” জিরাফ ভাই, দেখো আমি দৌড়াতে পারি। আমি সাঁতার কাটতে পারি। আমি লাফাতে পারি। আমি ঝাপাতে পারি। কিন্তু আমি উড়তে পারিনা।

” তখন জিরাফ বললো, ”হাতিদের উড়তে নেই। জিরাফদের উড়তে নেই। তাই আমিও উড়তে পারিনা। কই আমার দেখি মন খারাপ হয়না। ” এই কথা শুনে হাতি রাগ করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।

আর জিরাফটা লম্বা লম্বা পা ফেলে লম্বা গলাটা নেড়ে নেড়ে দূরে চলে গেল। মুমিত : ও হাতিটা রাগ করেছে। তারপর? বাবা: হাতিটা'তো রাগ করে বসে আছে। হাতিটার একটু একটু কান্না পাচ্ছে। তখন কোথা থেকে একটা জেব্রা এলো।

জেব্রার গায়ে সাদা কালো দাগ। হাতির কাছে গিয়ে জেব্রা বললো, ”বস্, আপনার কি মন খারাপ?” হাতি বললো, ” হুম জেব্রা মিয়া, দেখো আমি দৌড়াতে পারি। আমি সাতার কাটতে পারি। আমি লাফাতে পারি। আমি ঝাপাতে পারি।

কিন্তু আমি উড়তে পারিনা। ” তখন জেব্রা বললো, ”বস্, আমি সাদা কালো প্রানী। আমি সারাদিন ভাবি আহা আমি যদি আপনাদের মত রঙিন হতাম। কিন্তু যখন নদীতে পানি খেতে যাই তখন আমার ছায়া নদীতে পড়ে। আমি সেই ছায়া দেখি।

সেই ছায়া দেখে আমি ভাবি জেব্রাদের এই সাদাকালো রঙই ভালো। ” এই কথা শুনে হাতির রাগ আরো বেড়ে গেল। আবার হাতিটার কান্না শুরু হল। হাতির কান্না দেখে জেব্রাটা সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে সাদাকালো পা ফেলে ফেলে জঙ্গলের ভিতর চলে গেল। মুমিত: জেব্রাটা এখন ঘাস খাবে।

জেব্রাটার ক্ষিধে পেয়েছে? বাবা: হুম। জেব্রা ঘাস খেতে গেছে। আর হাতিটা শুড় দিয়ে চোখ মুছছে। তবু ওর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। চোখের পানিতে সাদা চকচকে দাঁতগুলো ভিজে যাচ্ছে।

এমন সময় একটা গাছের উপর একটা ময়ূর ডেকে উঠলো। হাতি বললো, ”এ্যায় ময়ূর শব্দ করোনা। আমার কিন্তু মন ভালো নেই। ” ময়ূর বললো, ” ভুল হয়ে গেছে হাতি কাকা। আর শব্দ করবোনা।

কিন্তু তোমার মন খারাপ কেন?” হাতি বললো, ” দ্যাখ ময়ূরসোনা, আমি কত জোড়ে দৌড়াতে পারি। নদীতে সাতার কাটতে পারি। আমি লাফাতে পারি। আমি ঝাপাতে পারি। কিন্তু পাখির মত উড়তে পারিনা।

” ময়ূর বললো, ”এইজন্য তোমার মন খারাপ, কাকা? আমি পাখি। আমিও’তো আকাশে পাখা মেলে কবুতরের মত উড়তে পারিনা। আমার কি মন খারাপ হয়? হয়না। হাতি কাকা তুমি মন খারাপ করোনা। ” কিন্তু হাতির মন আরো খারাপ হয়ে গেল।

মুমিত: প্রজাপতিটা বলো। লাল প্রজাপতি.. বাবা: ঐ জঙ্গলে ছিলো একটা লাল প্রজাপতি। মুমিত: আমি তোমার বাবাই প্রজাপতি। লাল প্রজাপতি। বাবা: তুমি'তো আমার সব।

ঐ প্রজাপতিটার কি যে সুন্দর দুটো পাখা ছিলো। লাল রংয়ের পাখা। তাতে সাদা, নীল, হলুদ আর গোলাপী রঙের ছবি আঁকা। ঐ প্রজাপতিটা উড়ছে আর খেলছে। খেলতে খেলতে উড়ছে।

আর উড়তে উড়তে খেলছে। হঠাত দেখে কি একটা হাতি খুব কান্না করছে। তখন প্রজাপতি বললো, ” তুমি এত্ত বড় হাতি। তুমি বাবুদের মত কান্না করছো কেন? তোমাকে কেউ বকেছে?” হাতি বললো, ” দেখো প্রজাপতি তুমি দৌড়াতে পারোনা। আমি দৌড়াতে পারি।

তুমি সাতার কাঁটতে পারোনা। আমি সাঁতার কাটতে পারি। তুমি লাফাতে পারোনা। আমি লাফাতে পারি। আমি ঝাপাতে পারি।

কিন্তু আমি তোমার মত উড়তে পারিনা। আমি প্রজাপতি হতে চাই না। আমি পাখির মত উড়তে চাই। ” প্রজাপতি বললো, ”হা:...হা:...হা:... এত্ত বড় হাতি নাকি পাখির মত উড়বে হা:...হা:..হা:...” হাতি রেগে কটমট করে তাকালো প্রজাপতির দিকে। প্রজাপতি হাসতে হাসতে উড়ে চলে গেল।

মুমিত: তারপর ? বাবা: তারপর? ঐ জঙ্গলের রাজা ছিলো একটা বাঘ। বাঘের কাছে গিয়ে জিরাফ, জেব্রা, ময়ূর আর প্রজাপতি বললো, ” রাজা মশায়, আমাদের জঙ্গলের বড় হাতিটা পাখি হতে চায়। উড়তে চায়। ” বাঘ বললো, ”হাতি হয়ে উড়তে চায়? হাতিকে এখুনি ডেকে আন?” রাজার ডাক শুনে হাতি এসে হাজির। হাতি বললো, ”রাজা মশাই, আমি দৌড়াতে পারি।

আমি সাতার কাটতে পারি। আমি লাফাতে পারি। আমি ঝাপাতে পারি। কিন্তু আমি উড়তে পারিনা। আমি পাখির মত উড়তে চাই।

” বাঘ বললো, ” সত্যি উড়তে চাও?” হাতি বললো,” সত্যি ... সত্যি... সত্যি...। ” বাঘ বললো, ” তবে তুমি এই জঙ্গলের পরে একটা লাল মাটির পাহাড় আছে। সেই পাহাড় থেকে অনেক দূরে একটা নীল নদী আছে। সেই নদীর তীরে একজন যাদুকর বাস করে। তুমি তার কাছে যাও।

সে তোমাকে উড়তে সাহায্য করতে পারে। ” এই প্রথম হাতির মুখে হাসি ফুটলো। মুমিত: বাবা হাতিটা কি যাদুকরের কাছে একা যাবে? বাবা: হুম। কেন? মুমিত: হাতিটা একা একা হারিয়ে যাবেনা? বাবা: না যাবেনা। হাতিটাতো অনেক বড়।

বড় হাতিরা হারিয়ে যায়না। মুমিত: তারপর? ঐ যে নদীর যাদুকর কি করেছিলো!! বাবা: হাতিটা এবার জঙ্গল থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে লালমাটির পাহাড়ের দিকে গেল। পাহাড় ডিঙিয়ে গেল নদীর কাছে। সেখানে সত্যিই একজন যাদুকর বসে ছিলেন। হাতি বললো, ”যাদুকর, আমি শুধ উড়তে চাই।

আপনি আমাকে একটা ঈগল পাখি বানিয়ে দেন। ” যাদুকর বললো, ”আমি তোমাকে উড়তে সাহায্য করবো। তবে তুমি কি পাখি হবে সেটা বলতে পারছিনা। ” হাতি বললো, ”ক্যানো?” যাদুকর বললো, ” আমি উড়বার মন্ত্র পড়ে তোমাকে ফুঁ দিবো। তোমার বুদ্ধি যদি বেশী থাকে তবে তুমি হবে ঈগল পাখি।

বুদ্ধি যদি কম থাকে তবে হবে চিল বা কাক। আর যদি বুদ্ধি আরো কম থাকে তবে তুমি হবে শালিক বা দোয়েল। তোমার বুদ্ধিই ঠিক করে দিবে তুমি কোন পাখি হবে?” হাতি বললো, ”আমি উড়তে চাই। উড়তে চাই। উড়তে চাই।

আপনি এখনই মন্ত্র পড়ে ফুঁ দিন। ” যাদুকর বললো,” ভেবে দ্যাখো হাতি একবার পাখি হলে আমি কিন্তু আর তোমাকে হাতি বানাতে পারবোনা। কারন হাতিদের উড়তে নেই। ” হাতি বললো,” আমি উড়বোই। আপনি মন্ত্র পড়ুন।

আপনি ফুঁ দিন। ” যাদুকর একটা কাঠি হাতে নিলো। তারপর আস্তে আস্তে মন্ত্র পড়ে অনেক জোরে একটা ফুঁ দিলো। ফুঁ দেওয়ার সাথে সাথে হাতিটা পাখি না হয়ে একটা তেলেপোকা হয়ে গেল। যাদুকর বললো, ”উড়ো।

এখন তোমার পাখা আছে। তুমি পাখা নাড়লেই তিরিংবিরিং করে উড়তে পারবে। ” হাতিটা বললো,” আমি পাখি হতে চেয়েছিলাম। তুমি আমাকে তেলেপোকা বানালে কেন?” যাদুকর বললো, ”আমি তোমাকে তেলেপোকা বানাই নাই। তোমার বুদ্ধি এক্কেবারে নাই।

তাই তুমি ছোট পাখি না হয়ে তেলেপোকা হয়ে গেছ। ” হাতি বললো,” আমি তেলেপোকা হবোনা। হবোনা। হবোনা। তুমি আমাকে হাতিই বানিয়ে দাও।

আমার আর উড়ার ইচ্ছা নাই। ” যাদুকর বললো, ” আমি তোমাকে আর হাতি বানাতে পারবোনা। অন্যকিছুও বানাতে পারবোনা। অন্য কোন মন্ত্রই আমার জানা নেই। ” হাতিটা তেলেপোকা হয়ে কান্না করে।

ফড়ফড়িয়ে উড়ে আর যাদুকরের চারপাশে ঘুরে। হাতিটা যাদুকরকে বলে ”আমি আবার হাতি হতে চাই। হাতি হতে চাই। হাতি হতে চাই। ” আর যাদুকর বলে, ” তেলেপোকাদের হাতি হতে নাই।

হাতি হতে নাই। হাতি হতে নাই। ” আচ্ছা মুমিত হাতি পাখি হতে চেয়েছিলো। হাতির পাখি হতে চাওয়া কি ঠিক? মুমিত বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে বলে,”না,,না..না..”। ওর চোখ ভর্তি ঘুম।

আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। ও ঘুমিয়ে যায়। কে জানে রাতে স্বপ্নে হয়তো দেখবো ওর প্রিয় হাতিটা তেলেপোকা হয়ে উড়ছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।