আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

[এক্সক্লুসিভ] ঘরোয়া !! হ্যান্ডস্-অন-রিভিউ: Walton Primo NX [Mega Post]

প্রিয় টেকটিউনস্ বাসী, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে ভাল আছি। শিরোনামটি দেখে নিশ্চয়ই অনেকে ইতিমধ্যে ভ্রু-কুচকেছেন। যে ঘরোয়া হ্যান্ডস্-অন-রিভিউ আবার কি? অনেক ফোরাম পেজের লোকেরা আছে যারা ১টা সেট ঘন্টা খানেক চালিয়ে এটার উপরে একটা হ্যান্ডস-অন-রিভিউ তৈরী করে ফেলে। কিন্তু আমি পার্সোনালি এই সেটটা গত ১ মাস ধরে ব্যবহার করছি।

অবশ্যই ঈদ উপলক্ষ্যে কেনা। তাই ভাবলাম আপনাদেরকে এই সেটের হ্যান্ডস-অন-রিভিউ উপহার দিব। আগেই বলে রাখি এটা একটি মেগা পোষ্ট। তাই যারা এই সেটটি কিনবেন ভাবছেন তারা একটু ধৈর্য্য সহকারে পড়বেন।

দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে Walton ইতিমধ্যে আমাদের দেশে কতটা জনপ্রিয় এবং কতটা আলোচিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আর এরই ধারাবাহিকতায় Walton Primo N1 এর পরেই তারা নিয়ে এসেছে Walton Primo NX যা ইতিমধ্যেই Walton Primo N1 এর জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে গেছে। তাহলে দেখে নেয়া যাক কি কি থাকছে Walton Primo NX এ।
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইন এখন পর্যন্ত আনা ওয়াল্টন এর প্রায় সবগুলো ডিভাইসের মাঝে Walton Primo R2 এবং Walton Primo NX বিল্ড কোয়ালিটি আমার কাছে সেরা মনে হয়েছে। এর পেছনে গ্লসি ব্যাক কভার ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে স্ক্র্যাচ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কিন্তু আপনি পাতলা গ্লাস পেপার লাগিয়ে নিলে আর স্ক্র্যাচ পড়বে না। তাছাড়া গোরিলা গ্লাস ব্যবহার করায় সামনের দিকটাও দেখতে বেশ আকর্ষনীয় এবং অনেকটা স্যামসাং গ্যালাক্সী এস৩ এর মতো দেখায় যা সহজে যে কারো নজর কাড়তে সক্ষম।

সিপিইউ ও জিপিইউ Walton Primo NX ডিভাইসটিতে এবার থাকছে কর্টেক্স এ৭ ভিত্তিক মিডিয়াটেক এর ২৮ ন্যানোমিটার এমটিকে ৬৫৮৯ (MTK6859) কোয়াড কোর প্রসেসর। আর বরাবরের মত থাকছে পাওয়ারভিআর এসজিএক্স ৫৪৪ এমপি (PowerVRSGX 544MP) জিপিইউ।


র‌্যাম ও স্টোরেজ ওয়াল্টন প্রিমো এনএক্স ডিভাইসটিতে রয়েছে ১ গিগাবাইট ডিডিআর৩ র‌্যাম।

৯৭২ মেগাবাইট পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য। এছাড়া এতে রয়েছে ৪ গিগাবাইট রম। যার মাঝে ১ গিগাবাইট আপনি অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল এর কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। বাকি ৩ গিগাবাইটের ২.৭ গিগাবাইট থাকবে ফোনটির মূল এসডি কার্ড হিসেবে।
তবে আপনি যদি কোন এক্সটার্নাল এসডি কার্ড লাগিয়ে ব্যবহার করেন তবে আপনার এক্সটার্নাল এসডি কার্ডটিই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল এসডি কার্ডে পরিবর্তিত হয়ে যাবে।



ডিসপ্লে ও টাচ রেসপন্স Walton Primo N1 এর মত Walton Primo NX এও থাকছে ৫.৩ ইঞ্চি গোরিলা গ্লাস সমৃদ্ধ আইপিএস ডিসপ্লে। তবে ডিসপ্লের দিক দিয়ে যা Walton Primo N1 -এর থেকে Walton Primo NX কে আলাদা করেছে তা হলো এর পিওর ব্ল্যাক লেভেল আইপিএস ডিসপ্লে যা ডিভাইসটিকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে। এছাড়া ডিসপ্লের চারপাশে ৩.৯ মিলিমিটারের একটি ফ্রেমও রয়েছে। আর Walton Primo NX - এবার থাকছে 1280x720 রেজুলেশনের এইচডি ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটির টাচ রেসপন্স আমার কাছে যথেষ্ট ভাল মনে হয়েছে।

রেসপন্সের দিক থেকে আমি কোন রকম ল্যাগ পাইনি। আইপিএস ডিসপ্লের মাঝে রেটিং করলে ডিভাইসটিকে ৫ এ ৫ ই দেয়া যায়।

ক্যামেরা ক্যামেরার দিক থেকেও Walton Primo NX -কে Walton Primo N1 এর থেকে এগিয়ে রাখতে হবে। কারণ এতে দেয়া হয়েছে সিএমওএস সেন্সর বিশিষ্ট ফ্ল্যাশসহ ১৩ মেগাপিক্সেলের ব্লু গ্লাসের রিয়ার ক্যামেরা। ওয়াল্টন এর দাবি ব্লু গ্লাসের এই ক্যামেরা সমান মেগাপিক্সেলের অন্যান্য ক্যামেরার চেয়ে স্পষ্ট ছবি ধারণ করতে সক্ষম।

যা ইতিমধ্যে আমি ছবি তুলে প্রমাণ পেয়েছি। রিয়ার ক্যামেরা ছাড়াও এতে ৩ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরাও রয়েছে। এছাড়া উভয় ক্যামেরা দিয়ে ১০৮০ পিক্সেলের ভিডিও ধারণ করা সম্ভব। নিচে ক্যামেরায় তোলা ছবি দেয়া হলো।

ইউজার ইন্টারফেস্ বরাবরের মত ওয়াল্টন প্রিমো এনএক্স ডিভাইসটির ইউজার ইন্টারফেসেও ওয়াল্টন চোখে পড়ার মত কোন পরিবর্তন আনেনি।

অর্থাৎ বলতে গেলে তারা সরাসরি স্টক অ্যান্ড্রয়েড ৪.২ জেলি বিন-ই ব্যবহার করেছে। এছাড়া এর সাথে দেয়া ডিফল্ট লঞ্চারটিও বেশ রেসপন্সিভ, তাই কোন পরিবর্তন না করে আপনি চাইলে ডিফল্ট লঞ্চারটি ব্যবহার করতে পারেন।

বেঞ্চমার্ক একটি ডিভাইসের সার্বিক পারফরম্যান্স সম্পর্কে একটি মোটামুটি ধারণা পাওয়ার জন্যই মূলত বেঞ্চমার্ক অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই Walton Primo NX এর সার্বিক পারফরম্যান্স সম্পর্কে ধারণা পেতেই ডিভাইসটি আমি বেঞ্চমার্ক করে দেখেছি। নিচে আনতুতু বেঞ্চমার্ক এ ফলাফলটিই আমি দিয়েছি।



ছবিতে দেখা যাচ্ছে Walton Primo NX এর আনতুতু বেঞ্চমার্ক স্কোর 12845 যা প্রায় ১৩ হাজারের কাছাকাছি। অর্থাৎ এর বেঞ্চমার্ক স্কোরই প্রমাণ করে ডিভাইসটি গেমিং ও উচ্চ পারফরম্যান্সের কাজের জন্য কতটা উপযোগী।
গেমিং একটি ডিভাইস ঠিক কতটুকু পারফরম্যান্স দিতে পারে তার অনেকটাই এর গেমিং পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ধারণা পাওয়া যায়। স্মার্টফোন ইজারদের একটা বড় অংশ মূলত গেম খেলার জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের মোটেই হতাশ হতে হবে না কারণ গেম খেলার জন্য Walton Primo NX একটি আদর্শ ডিভাইস।


এর হার্ডওয়্যার এর দিকে খেয়াল করলে আমরা পাই কোয়াড কোর সিপিইউ, ১ গিগাবাইট র‌্যাম এবং পাওয়ারভিআর এসজিএক্স ৫৪৪এমপি জিপিইউ। এর জিপিইউটিকে বর্তমানে অন্যতম সেরা জিপিইউ বলা যায়। শক্তিশালী হার্ডওয়্যার এর কারণে যে কোনো ধরনের হাই ডেফিনিশন গেম এতে অনায়াসে খেলা যাবে। ছোটবেলা থেকেই আমি গেমস্ এর অসম্ভব ভক্ত। গেমস্ এর প্রতি এক প্রকার আসক্তি আছে আমার।

তাই আমি দেরি না করে ডিভাইসটিতে বেশ কিছু এইচডি গেম চালিয়ে দেখেছি, ফুল গ্রাফিক্স ডিটেইলস্ এ গেমগুলো কোন প্রকার ল্যাগ ছাড়াই স্মুথ চলেছে এবং আমি শিওর আপনারা এর গেম পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হতে বাধ্য। যেসব এইচডি গেম আমি চালিয়ে দেখেছি তার মাঝে উল্লেখযোগ্য গেমগুলো হলো: এনএফএস মোষ্ট ওয়ান্টেড, ডেড ট্রিগার, দ্যা ডার্ক নাইট রাইজেস্, জিটিএ ভাইসসিটি, এসফাল্ট ৭, আয়রন ম্যান ৩, আফটার আর্থ, পেস ২০১২, রিপটাইড জিপি ২ ইত্যাদি।
এসব গেমের মাঝে সবগুরো গেমই সর্বোচ্চ গ্রাফিক্সে খেলা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও সাধারণ জনপ্রিয় গেমগুলো যেমন টেম্পল রান ওজ, ফ্রুট নিনজা এইচডি, এ্যাংরি বার্ডস, রিপটাইড জিপি ইত্যাদি গেমগুলো অনায়াসেই খেলা গেছে। নিচে আমি আপনাদেরকে বেশ কিছু এইচডি গেমস্ এর স্ক্রিনশট দিলাম।

নিজেরাই দেখে নেন।






ব্যাটারি ব্যাকআপ যে কোন স্মার্ট ডিভাইসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর ব্যাটারি ব্যাকআপ। একে স্মার্টফোন প্রাণশক্তি বলা যায়। কোন ডিভাইস আপনি কিনবেন তা অনেকটাই নির্ভর করে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ এর উপর। আর ওয়াল্টন প্রিমো এনএক্স এক্ষেত্রে আপনাকে কোন অংশেই হতাশ হতে দিবে না।

কারণ এই ফ্যাবলেটটিতে দেয়া হয়েছে ৩০০০এমএএইচ ব্যাটারি। সাধারণ কাজের জন্য যদি আপনি ইউজ করেন তাহলে সর্বনি¤œ ২ দিন ব্যাকআপ আপনি নির্দিধায় পেয়ে যাবেন। আর আমি ব্যাটারী ব্যাকআপ পরীক্ষা করার জন্য একটানা একটি এইচডি গেমস্ (দ্যা ডার্ক নাইট রাইজেস) খেলে এবং নেট ব্রাউজিং করে ৭ ঘন্টা ব্যাকআপ পেয়েছি। তাই ব্যাটারী ব্যাকআপ নিয়ে আর কিছু বলার অপেক্ষা থাকে না। শুধু নেট ব্রাউজ করে আপনি মিনিমাম ৮ ঘন্টা ব্যাকআপ পাবেন নি:সন্দেহে।


সেন্সর ও মূল আকর্ষণ এবার ডিভাইসটির মূল আকর্ষণে আসা যাক।  Walton Primo N1 সফল হলেও অনেকেই ডিভাইসটি ব্যবহার করে পুরোপুরি খুশি হতে পারেনি এর সেন্সরের অভাবে। তবে সেই অভাবটি ওয়াল্টন এবার পূরণ করেছে তাদের নতুন ফ্যাবলেট Walton Primo NX -এর মাধ্যমে। কারণ এবার এই ডিভাইসটিতে তারা প্রায় সবরকম সেন্সরই যুক্ত করেছে। সেন্সরগুলো মাঝে জায়রোস্কোপ সেন্সর, ৩ডি অ্যাক্সেলেরোমিটার সেন্সর, গ্রাভিটি সেন্সর, লিনিয়ার অ্যাক্সেলেরেশন সেন্সর, অরিয়েন্টেশন সেন্সর, কারেক্টেড জায়রোস্কোপ সেন্সর, রোটেশন ভেক্টর, ব্রাইটনেস সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সর, ম্যাগনেটিক ফিল্ড সেন্সর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া এতে জিপিএস সহায়তকারী একটি বিশেষ সেন্সরও রয়েছে।
ডিভাইসটির আরেকটি মূল আকর্ষণ হলো এতে ওটিজি সাপোর্টও রয়েছে। দেশীয় ব্র্যান্ডের সম্ভবত এটাই প্রথম স্মার্টফোন বা ফ্যাবলেট যেটিতে ওটিজি সাপোর্ট রয়েছে। অর্থাৎ এই ফ্যাবলেটটিতে চাইলে আপনি পেনড্রাইভ, কীবোর্ড, মাউস ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন। আমি কিন্তু অলরেডি পেনড্রাইভ ইউজ করি।

চরম। এর বাইরে এতে MHL (Mobile High Definition Link) পোর্টও থাকছে যার সাহায্যে HDMI পোর্টে যুক্ত করে আপনি টিভি কিংবা মনিটরেও আপনার ডিভাইসটি ব্যবহার করতে পারবেন।
শেষকথা ডিভাইসটি কিনবেন না কি কিনবেন না সেটা নির্ভর করে ডিভাইসটির দাম। ওয়াল্টনের পক্ষ থেকে ডিভাইসটির দাম ধরা হয়েছে ১৭,৯৯০/- টাকা। তবে আমি শুধু একটা কথা বলবো যারা স্বল্প বাজেটের মধ্যে সবটুকু সাধ পেতে যান তাদের জন্য ওয়াল্টন প্রিমো এনএক্স আসলেই একটি আদর্শ ডিভাইস।

কারণ গ্যালাক্সী এস৩, এস৪, এক্সপেরিয়া জেড এসব দামী ডিভাইস ব্যবহার করার মতো সবার হয়তো সামর্থ নেই কিন্তু সিম্ফনী কিংবা ওয়াল্টন আমাদের জন্য যে সুযোগ টুকু তৈরী করে দিয়েছে তা কোন অংশে কম নয়।
আজকে আর নয়। আর হ্যা। একটা কথা। টেকটিউনস্ েএটি আমার প্রথম টিউন।

যদি আপনাদের কাছে আমার টিউনটি বিন্দুমাত্র ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাকে ভবিষ্যতে আরো সুন্দর টিউন করার জন্য উৎসাহিত করবেন। আর যদি আমার টিউন এ কোনো ভুলত্রুটি চোখে পড়ে তাহলে ছোট ভাই হিসেবে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং অবশ্যই আমার ভুলগুলো আমাকে ধরিয়ে দিবেন কিন্তু কোন বাজে কমেন্ট করবেন না প্লিজ। আজকের মত এখানে শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন, সুন্দর থাকবেন আর পারলে আমার জন্য একটু দোয়া করবেন।


সোর্স: http://www.techtunes.com.bd/     দেখা হয়েছে ৭৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.