আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি: স্বপ্ন হবে কী সত্যি?

নীরব বয়ান

ইদানিং আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিয়ে পত্রপত্রিকায় বেশ আলোচনা চলছে। কয়েকদিন আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পার্বত্য চুক্তি ও আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়গুলো সমর্থন করা হয়েছে। সংবাদ ব্রিফিং-এ জানানো হয়েছে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংবিধান সংশোধন সংসদীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পেশ করবেন। আপাতত: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সংসদীয় কমিটিকে এজন্যে ধন্যবাদ জানাই। তবে শেষটা দেখার অপেক্ষায় সময় গুণতে থাকবো।

আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবী নতুন কিছু নয়। অনেক পুরানো। পুরনো কথা নতুন করে বলতে হয়। আদিবাসীদের দাবী ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিয়ে অনেক ভুল ধারনা রয়েছে অনেক মানুষের কাছে। তাই এ প্রসঙ্গে কয়েকটা কথা বলতে হয়।

১। আদিবাসী শব্দটা নিয়ে অনেক বাঙালি ভাইবোন আপত্তি তোলেন। অন্য কোন বিতর্কে না গিয়ে বলতে চাই তা হলো ইংরেজী indigenous peoples-এর বাংলা অনুবাদ আদিবাসী লেখা হচ্ছে। কারোর যদি আদিবাসী বলতে অসুবিধা হয় তাহলে তারা indigenous peoples বলতে পারেন। এখন indigenous peoples আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত একটি শব্দ ও প্রত্যয়।

তাই বাংলাদেশ সরকারও এ শব্দ বা প্রত্যয়কে অস্বীকার করতে পারবেন না। কারণ সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২। আন্তর্জাতিক আইনে indigenous peoples স্বীকৃত হলেও বাংলাদেশ সরকার মাঝেমাঝে বেতাল কথাবার্তা বলে থাকেন। বলে, বাংলাদেশে আদিবাসী নেই, যারা আছে তারা সংখ্যালঘু উপজাতি।

এ কথার মধ্যে সরকারের ফাকিঁবাজি ধরা পড়ে। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, ‘৭২ সালে এম.এন লারমা উপজাতি হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতির দেওয়ার দাবী জানিয়েছিলেন। তখন বাঙালি জাতির পিতা গোস্বা করেছিলেন। এম. এন লারমাকে বলেছিলেন, “তোরা উপজাতি না, তোরা বাঙালি। উপজাতির পরিচিতি ভুইলা যা।

তোদের উপজাতি থেইক্ক্যা জাতিতে প্রমোশন দিলাম”। সেই সময়ে এন.এন লারমা জাতিতে প্রমোশন নেননি। তিনি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্যে দেশের পবিত্র সংসদে আকুল আবেদন করেছিলেন, কিন্তু কেউই কর্ণপাত করেননি। ‘৭২ সাল থেকে ২০১০-এ এসে এখন কেন সরকার ‘উপজাতি’র পরিচিতি ফেরত দিতে চায়? এটা কি কথার কথা নাকি বুজরুকি? আশা করি, সরকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও আন্তর্জাতিক মেনে এখন উপজাতিদের জাতিতে প্রমোশন দেবেন না, আদিবাসীতে স্বীকৃতি দেবেন। এতেই দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

৩। আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির সাথে অনেকে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান, বিচ্ছিন্নতাবাদের গন্ধ পান। তাদের উদ্দেশ্য বলতে চাই, আদিবাসীরা কেউই বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন দেয়নি। অন্তুর্ভুক্তির পক্ষে থাকতে চায় বলেই এম.এন লারমা আদিবাসীসহ কৃষক, দিনমজুর, মাঝিমাল্লা ও খেটে খাওয়া মানুষদের কথা দেশের পবিত্র সংবিধানে লিপিবদ্ধ করার দাবী করেছিলেন ‘৭২ সালে। আজও আদিবাসীরা সেই একই দাবী জানাচ্ছে।

সংবিধানে আদিবাসীদের কথা লেখা হলে দেশের সংহতি ও গণতন্ত্র সুসংহত হবে। ৪। দেরীতে হলেও সরকারের অনেক মন্ত্রী এমপি এখন আদিবাসী পরিচিতিকে মেনে নিয়েছেন। আদিবাসী অভিহিত করে পত্রপত্রিকায় বিবৃতি দিচ্ছেন। এ শুভবুদ্ধি উত্তরোত্তর বাড়তে থাকুক।

কথার কথা নয়, বুজরুকি নয়, সত্যি সত্যি সৎ ও উন্নত মানসিকতা নিয়ে সরকার আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিক সেটাই কামনা করছি। সেই সাথে জোর গলায় বলতে চাই, উপজাতি নয়, আমরা আদিবাসী। এই পরিচিতি আমাদের মৌলিক মানবাধিকার। এ অধিকার কোনভাবে খন্ডিত করা যাবে না, যেমনভাবে যাবে না বাঙালিদের বাঙালি পরিচিতি। এই উপলব্ধি সকলের হোক।

বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাক।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.