আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্প - গাঁজাখোর মিরাজ ভাই

তুমি আমি আমরা ......

( ক ) জীবনে একদিনের জন্য আকাশে উড়তে পারলাম না । আমার পাশে যে ছেলে হা করে বাতাস খাচ্ছে সে বেশ কয়েকবার আকাশে উড়েছে । কাহিনী এইখানেই দ্যা এন্ড নয় একদিন নাকি সে আকাশ থেকে আমার মাথায় পিচিক করে পানের পিক ছুড়ে দিয়েছে । । আমি অবশ্য কিছু টের পাই নি ।

এই ধরনের উড়াউড়ি একজন টের পায় । যে উড়ে সে একা । অন্য কেউ না । -অনু , দিবা নাকি একটা টান স্বঘোষিত পাইলট মিরাজ ভাই আমার দিকে কল্কী বাড়িয়ে দিল । আমার কল্কীতে টান দিতে ইচ্ছা করছে না , মিরাজের কানপট্টি বরাবর টেনে চড় দিতে ইচ্ছা করছে ।

কিন্তু আমি হাসি মুখে বললাম -- “ না ভাই , আমি টান দিব না । আপনি টানেন । দরকার পরলে বলবেন , আমি ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড দিব – আরও জোরে হেইউ ... জোরসে টানো হেইউ ... টানোরে টানো হেইউউ , টানায় জলিশা মুড আসবে “ -- তুমি মিয়া মানুষটা বহুত মজার আছো মিরাজ ভাই গদ্গদ করে হাসে । আরেকটা লম্বা দেখে টান দেয় । মুখ চেপে ধোঁয়া বুকে জমিয়ে রাখে ।

ধীরে ধীরে ধোঁয়া ছাড়ে ! তার দৃষ্টি এখন অন্যরকম । এ দৃষ্টি ঘাড় যেন বাঁকা করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় – আচ্ছা ব্রাদার ! কি আছে এই বালের দুনিয়ায় , বলতে পারেন ? আই থিং আছে শুধু টাঙ্গাইলের শাড়ি দিয়ে বানানো পাচ বাই সাড়ে তিন হাত খেতা আর বানানো শিমুল তুলার বালিশ । খেতা আর বালিশ । নাথিং এলস । এম’আই রাইট ? প্লিজ টেল মি ।

এম আই রাইট অর রং ! প্লিজ টেল মি ব্রাদার “ এই ধরনের মানুষকে কিছু বলে লাভ নাই । তিনি নিজে যেটা বলবেন সেটাই ঠিক । আমি বললেও ঠিক আমি না বললেও ঠিক । তবে ঠিক কথাটা নিজে কতোটা ঠিক সেটা নিয়েও একটা যুক্তি তর্কে বসা যায় । ‘ ঠিক ‘ জিনিসটা কিন্তু আসলে আপেক্ষিক ।

ঠিক শব্দটা নির্ভর করবে ব্যাক্তিবিশেষের নিজস্ব চিন্তাধারার উপর । মিরাজ ভাইয়ের দুনিয়া খেতা আর বালিশের দুনিয়া । এইকথাটা ভুল সেটা আমি , এই অনু কিভাবে বলবো ? আবার এই কথা ঠিক সেটাই বা কিভাবে বলবো ! আমার কাছে দুনিয়া মানে " রানু নামের মেয়েটি “ এই কথাটা ঠিক , কিন্তু সেটা কি মিরাজ ভাই স্বীকার করে নিবেন ? উত্তর নেগেটিভ । তাহলে এক দুনিয়া কয়ভাগে ভাগ হয়ে গেল ! মিরাজের দুনিয়া , অনুর দুনিয়া । আরও কেউ সাথে থাকলে তারও একটা দুনিয়া ।

অর্থাৎ দুনিয়া বাড়ছে , “ ঠিক “ মতাবাদের সঠিক রাস্তা বাড়ছে । সেইসাথে ক্যাচাল বাড়ছে ! মাথা ঘুরছে -- অনু , সাতার কাটতে পারস ? জি না মিরাজ ভাই । সাঁতার পারি না । --দূর চুদির ভাই , পারস কি ? সাতার কাটতে পারস না , আকাশে উড়তে পারস না , মাটিতে বুক দিয়ে দৌড়াইতে পারস ? না , এইটাও পারস না । তুই পারস কি ? বাল আমি মাটিতে বুক রেখে দৌড়াবো কেন ! আমি কি সাপ ? এই কথা এখন মিরাজ ভাইকে বলে লাভ নাই ।

তিনি এখন টালের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন । ধীরে ধীরে তার টালামী বাড়ছে । মিরাজ ভাই এখন আমাকে তুমি থেকে তুই করে বলা শুরু করেছে । বোনাস হিসেবে ‘ চুদির ভাই ‘ শুনিয়ে দিয়েছে । এই সময়টা মারাত্মক , এখন উনার কোন কথার বাইরে চুল পরিমান নড়াচড়া করা যাবে , করলেই ঠাশ করে চড় বসিয়ে দিবে ।

মিরাজ ভাইয়ের আসমানে উড়তে আর বেশীক্ষন দেরী নেই । -- তুই আগামী মাসে সত্য সত্য মেস ছেড়ে দিবি ? জী বস মাঝে মাঝে আসিস । একসাথে আকাশে উড়মু জী বস মাথা নষ্ট ! একবার এই মেস ছেড়ে গেলে আমাকে আর কে পায় ? গাঁজাখোর রুমমেটের সাথে প্রায় একমাস যাবত বসবাস করছি ; এইটা শুনেই তো বন্ধুবান্ধব আমার দিকে কামন ক্যামন করে জানি তাকায় । ক্লোজ আপ দিয়ে দাঁত ঘষে গেলেও বলে – এই তোর মুখ থেকে ভুড়ভুড় করে গাঁজার স্মেল আস্তাছে , পিছনের বেঞ্চে গিয়া ব । কয়েক অতি উৎসাহী কয়েকজন বলে রেখেছে – দুস !! তুই আমার মায়ের পেটের দুস ! একদিন তোগর আসরে দাওয়াত দে , দেখিস আমি কেমন ইশটীক ফাটাইতে পারি ।

তব্দা খাইয়া যাবি । মাগার , তুমি দিনে কয়টা ফাটাস ? আমি আর পারছি না । রুমে যাওয়া মাত্র গাঁজার গন্ধ ! যখন তখন মিরাজ ভাইয়ের টাকা ধার চাওয়া ( এখন পর্যন্ত তিনি কোন শোধ করে নাই , করবে বলেও মনে হয় না , এই টাকা Gone ) রাতে জোর করে ছাঁদে ঢেকে আসমানে উড়াউড়ি দেখানো । ভার্সিটির বড় ভাই । না পারছি সহ্য করতে না পারছে মুখ ফুটে কিছু বলতে ! আমি ফাস্ট ইয়ার ফাস্ট সেমিস্টারের ছেলে ফেল্টু মারতে মারতে কোন মতে ৪র্থ ইয়ারের সুবিখ্যাত গাঁজাখোর বড় ভাইকে কি বা বলতে পারি ।

আর কিছুদিন পরেই মেস ছেড়ে দিচ্ছি , ভাবতেই শান্তি । --অনু , এই অনু , ঘুমাই গেলি জী না । --একটা উপদেশ দিতাছি , মনোযোগ দিয়া শুন – জী বস -- “ কক্ষনো কোন কিছুতে বেশী মনোযোগ দিস না । সব কিছু আলগা আলগা রাখবি । আই মিন লুস ।

বেশী মনোযোগ দেয়া মানেই তুই কট । ডিরেক্ট আমার মতো কট । তা তো অবশ্যই । তুমি যে কতো ভয়াবহ কট সেটা ইতিমধ্যে জেনে গেছি । কোন এক মেয়ের জন্য তিন তিনবার সেমিস্টার ড্রপ ।

কয়েক বছর যাবত রাত দিন শুধু গাঁজা নিয়া পড়ে থাকা । কোন বন্ধু নাই । শুভাকাঙ্ক্ষী দূর হস্ত । মানুষজন চান্স পাইলেই দেনার দায়ে রাস্তা ঘাটে দেয় মাইর । বাসার সাথে সম্পর্ক প্রায় নষ্ট ।

এক মামা মাঝে মধ্যে এসে মেস ভাড়া আর কিছু টাকাপয়সা দিয়ে যায় । তুমি তো মিয়াভাই সেই মাপের কট । ভয়াবহ কট --এই অনু , আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবি ভাই । খুব কষ্ট লাগছে রে ভরপুর পিনিকে থাকা মিরাজ ভাইয়ের কণ্ঠে এতোটা আবেগ শুনে আমি হকচকিয়ে গেলাম । আমাকে কিছু বুঝতে না দিয়েই মিরাজ নামের একদম রোগা হাড় বের হওয়া ছেলেটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে মতো কাঁদছে ।

আমি ভালো থতমত খেয়ে গেছি । এমন কি হল ! আগে তো এমন কিছু দেখেনি কখনো ! এ বাচ্চাদের মতো কাদে কেন ? আমি মিরাজ ভাইকে জড়িয়ে ধরলাম । তিনি গুটিসুটি হয়ে আমার বুকে মাথা দিয়ে আছে । মিরাজ ভাইয়ের কান্নায় আবার গেঞ্জি ভিজে যাচ্ছে । মিরাজ ভাই কান্নার ধকল সামলাতে পারছে না ।

মিরাজ ভাই বারবার বলছে – “ অনু কখনো কোন কিছুতে বেশী মনোযোগ দিস না , আমার মতো হয়ে যাবি রে , একদম নষ্ট হয়ে যাবি “

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।