আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘটনা ও ঘটনা থেকে উতসারতি গল্প-৪: লেখক হাসান আহমেদ সাহেব মহা ফাঁপড়ে পড়ে গছেনে।



ঘটনা: গত ১৬ অগাস্ট রাত ৮টা ৪৩ মিনিটে জনপ্রিয় ব্লগার হাসান মাহমুদের পোস্ট করা ‘গল্প যদি শুনতে চাও, আমার কাছে এসো!’ গল্পটি পড়েছিলাম। গল্প: লেখক হাসান আহমেদ সাহেব মহা ফাঁপড়ে পড়ে গেছেন। একটা গল্প যে তাকে এমন একটা বিদঘুটে অবস্থায় ফেলে দিবে তা তিনি কখনো ভাবেননি। গল্পটা এরকম গল্প কথক যিনি তিনি একজন লেখক। তার স্ত্রীর নাম জেনি যা বাস্তব জীবনে লেখকেরও স্ত্রীর নাম বাস্তব জীবনের মতোই লেখক ও তার স্ত্রী - দুজনেই মধ্য বয়েসি।

প্রধান চরিত্র লেখক উপলদ্ধি করছেন যে তার স্ত্রীর ক্রমশ স্ফীত হয়ে উঠা শরীর আর তার ভাল লাগছে না এ কথাটি তিনি তার স্ত্রীকে বলতে চাইছেন কিন্তু ভদ্রতা ও লজ্জার কারনে পারছেন না। তিনি ছাড়াছাড়ি চাচ্ছেন। পত্রিকায় প্রকাশের পর গল্পটা তার স্ত্রীর চোখে পড়ল। তখন থেকেই ঘটনার শুরু। তার স্ত্রী মনে করলেন ব্যাপারটা লেখকের নিজের মনের কথা।

তাই তিনি চরম অপমানিত বোধ করলেন এবং হাসান সাহেবের সাথে ঘর করতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং তার বাপের বাড়ি চলে যেতে উদ্যত হলেন। স্ত্রীর কথা শুনে হাসান সাহেবের তো আক্কেল গুড়ুম অবস্থা। প্রথমে ভেবেছিলেন কপট অভিমান প্রকাশ করে লেখকের সাথে তার স্ত্রী মজা করছেন। কিন্তু পরদিন ভোরবেলা যখন জেনি তার বাক্স পেট্রা বেঁধে সত্যি সত্যি বাবার বাড়ি রওনা দিলেন তখন ঘামে তার সারা শরীর ভিজে উঠল। এ যে দেখি সত্যি সত্যি চলে যাচ্ছে! হাসান সাহেব একজন জনপ্রিয় লেখক ও ব্লগার।

তার ব্লগে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিজিট করে। কোন গল্প পোস্ট করলে তাতে কমেন্টের সুনামি ছোটে। রূপক কোন গল্প হলে পাঠকদের আবার সেটার ব্যাখ্যা দিতে হয়। বই প্রকাশ পেলে প্রথম হপ্তাতেই প্রথম এডিশন শেষ হয়ে যায়। পত্রিকাওয়ালারা তার কলাম পাবার জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করে থাকে।

কোন সভা সমিতি অথবা মিডিয়ায় কোন পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান তার উপস্থিতি ও বক্তৃতা ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। সমাজে তার যখন এমন একটা অবস্থান তৈরী হয়ে গেছে তখন পারিবারিক জীবনে এমন একটি ঘটনা ঘটা মাত্রই তিনি লোকজনের কাছে এন্টি হিরোতে পরিণত হয়ে যাবেন। তার কাটতি অনেকখানি কমে যাবার সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে। তাই তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা শুরু করলেন তার বউকে আটকানোর। দেখো এটা নেহাত একটা গল্প ছাড়া তো আর কিছুই না।

তুমি অতোটা রেগে যাচ্ছো কেনো? নেহাত গল্প? নেহাত গল্প! আমার খুব ভালো করে পুরুষ মানুষদের চেনা আছে। বেশি কথা বাড়াবা না। কথা বাড়ালে খুব খারাপ হবে। তুমি তো আমার আগের গল্পগুলাও পড়সো। অনেক গল্পেই তো তোমার নাম ব্যবহার করসি।

করসো, বাট ওগুলো ছিল আমার প্রতি তোমার প্রেম প্রকাশের গল্প। এটাতে কি লিখসো? দাও বইটা দাও। আমিই না হয় পড়ে শুনাই। হ্যা, লিখসি। কিন্তু সবটাইতো ভুয়া কথা।

নেহাত বানানো গল্প। আমার পাঠকদের রিয়েলিটি আর কল্পনার জগতে দোল খাওয়ানোর জন্যই ওমনটা করসি। বিশ্বাস করো, পাঠকের মনে যাতে সত্য আর কল্পনার জগতে ঘুরতে ঘুরতে একটা কনফিউশনের সৃষ্টি হয় সেজন্য এমনটা করসি। কসম তোমার জেনি। এই যে তোমার মাথা ছুঁয়ে বলছি।

মাথা ছুঁতে হবে না। গল্পে তুমি লিখসো, তোমার আর আমাকে পছন্দ না। এটাতো আমার কথা না, এটাতো গল্পের চরিত্রের কথা। হাহ! গল্পের চরিত্রের কথা! আমাকে গল্প লেখা শিখায়েন না। তোমার মনের মধ্যে কথাটা না আসলে এটা তুমি লিখতে পারতা না।

বাস্তব জীবনে এটা আসছে বলেই তুমি এমনটা লিখতে পেরেছো। না সোনা, আমার মনে এটা আসতেই পারে না তোমার মতো রূপবতী একটা মেয়ে আর কোথায় খুঁজে পাবো বলো? শুনো তোমারে বুঝায়া বলি। একজন প্রফেশনাল গল্পকার সারাক্ষণ চিন্তা করে। সে যে কেবল নিজের জীবন থেকে ঘটনা নিয়ে লিখে সেটা না; সে আশেপাশের মানুষগুলোরেও নিয়া লিখে থাকে। ব্যাপারটা তুমি আমাদের ব্লগার কয়েস সামীর রিসেন্ট সিরিজগুলা যদি পড়ো তবে একেবারে ফকফকা বুঝতে পারবা তিনি যে ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গল্প লিখেন সে ঘটনা আগে পাঠকদের জানিয়ে দেন, পরে গল্প শুরু করেন।

মি. হাসান! ঐ যে বল্লেন; গল্পকার সবসময় তার নিজের জীবন থেকে লেখে না। আপনি তো বলতে পারলেন না গল্পকার কখনোই নিজের জীবন থেকে লেখে না, এখান থেকেই বুঝা যায় এ গল্পটার ক্ষেত্রে কি হয়েছে। পড়াশুনা আমরাও করি, অনেক করসি, আমিও আপনাকে অনেক গল্প উপন্যাস পড়ে শুনাতে পারি যেখানে লেখক তার নিজ জীবনকে কেন্দ্র করেই লিখসেন। তোমরা লেখকরা যতো সব নষ্টের জাত। থুঃ শেষ কথায় এসে হাসান সাহেবের রাগ হল।

তিনি বলে উঠলেন, কা..কা..কাজটা কিন্তু ঠি..ঠি..ঠিক হচ্ছে না। একটা নিছক গল্প নিয়ে এমনটা করলে আমি কিন্তু লে..লে..লেখালেখিই ছেড়ে দেব। হ্যা, তাই করো। সেটা করলেই কেবল আমি ফিরে আসবো। চললাম।

জেনি গটগট করে হেটে বেরিয়ে গেল হাসান সাহেবের চোখের সামনে দিয়ে। জেনি যেয়োনা, যেয়োনা লক্ষী সোনা। লোকে কী বলবে বলো? তুমি বুঝতে পারেছো না; জানাজানি হয়ে গেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে, অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। জেনি কর্ণপাত না করেই দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। হাসান সাহেব ও বের হলেন পিছু পিছু।

জেনি টেক্সিতে উঠে যাচ্ছে। হাসান সাহেবও আরেকটা টেক্সি ডাকলেন। টেক্সিটা কাছে আসতেই তার হঠাত মনে হলো আজকের এ ঘটনা নিয়েই তো ফাটাফাটি একটা গল্প লেখা যায় তার আবার একটা প্রবলেম আছে। কোন গল্প মাথায় এলে সাথে সাথে না লিখলে ওটা আর লেখা হয় না কখনো। তিনি টেক্সিটা বিদায় করে দিয়ে যতোটা দ্রুত জেনির পেছন পেছন ছুটে এসেছিলেন তার থেকেও তাড়াতাড়ি বাসার দিকে ছুটলেন।

কম্পিউটারের সামনে বসলেন। কি-বোর্ডেও কিগুলা অনবরত আঙুলের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হতে থাকল। কম্পিউটার স্ক্রীনে ভেসে উঠতে থাকলো, লেখক হাসান আহমেদ সাহেব মহা ফাঁপড়ে পড়ে গেছেন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.