আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমিও জ্বীন দেকসি!!! জ্বীন আমারে দৌড়ানি দিসিলো

থিংক সিম্পল।

মাদ্রাসায় পোলাপানগো এই জ্বীন জাতি নিয়া কুনো সন্দেহ নাই। শিক্ষিত মানুষেরা যত যাই বলুক, তাদের কাছে জ্বীনের হাজার রকম গল্প শুনতে পাবেন। আমাদের অনেক হুজুর জ্বীন নিয়া নানা রকম গল্প শুনাইতো। জ্বীনেরা নাকি সন্ধ্যা বেলায় মিষ্টির দোকানে যায়, অনেক সময় দোকানদারেরা তাই দুই একটা মিষ্টি কম পায়।

তারা টাকা পয়সা ব্যবহার করে না। তাই মুসলিমদের মিষ্টির মুল্য পরিশোধের জন্যে হিন্দু দোকান থেকে মিষ্টি এনে মিসিং মিষ্টি গুলা পুরন করে দিত। এছাড়া জ্বীনেরা কাঁচা মাছ পছন্দ করে। তাই সন্ধ্যার পর কেউ কাঁচা মাছ নিয়া বাসায় গেলে পথে কেউ চাইলে দিয়া দেয়াই নাকি ভাল। জ্বীনেরা মাঝে মাঝে মানুষের রুপ ধারণ করে, আবার মাঝে মাঝে আসর করে।

তবে জ্বীনদের আসল রুপ নাকি সাদা। জ্বীনদের দিয়া নাকি অনেক কাজ করানো যায়, এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া যায় মুহুর্তের মধ্যে। আবার কেউ ইতরামী করলে জ্বীন মামা দিয়া তারে এক থাবরা দেয়ান নাকি যায়। তবে ভাল জ্বীনেরা ভাল কাজে সাহায্য করে। এসব শুইনা আমার বড়ই খায়েশ জাগ্রত হইল যে জ্বীন বশে আনব।

একটা জ্বীন বশে আনতে পারলে হাসান পোলাটারে সাইজ করুম। হিন্দু মালাউনের গাছের সব কয়টা আম পাইরা বাজারে নিয়া বেচুম, আরো কত কি প্ল্যান করতে শুরু করলাম। কিছু দিনের মধ্যে জনৈক হুজুরের কাছ থেকে জ্বীন বশে আনার আমল শিখা নিলাম। আমার কপাল খারাপ ছিল যে শীতকালে নিয়মটা শিকসিলাম। তবে জ্বীন ধরার স্বপ্নে সেটার কথা আর মনে ছিল না।

হুজুর আমারে শিখাইসিলেন, জ্বীন ধরতে হইলে রাত বারটার পর মসজিদের পেছনের পুকুরে যায়া ডুব দিতে হবে। তিনবার ডুব দিয়া উঠে গা মুছে কবরস্থানের পাশের মসজিদে যায়া বসতে হবে। জ্বীনেরা গভীর রাতে নামাজ কালাম পরে। তারা আলো পছন্দ করে না। তাই কোন টর্চ লাইট বা মোম নেয়া যাবে না।

তারপর দুরুদ শরিফ, আয়তুল কুরসি ইত্যাদি পরে সুরা জ্বীন সুললিত কন্ঠে সাত বার করে সাতদিন পাঠ করতে হবে। প্রতিদিন সুরা জ্বীন পাঠে জ্বীনেরা নিজেদের প্রকাশ করবে এবং তাদের মন অতি দয়াদ্র হবে। এভাবে সাতদিনের মাথায় জ্বীন পুরা প্রকাশিত হবে, তখন তারে তাবিজের ফিতা দিয়া বেধে ফেলতে হবে। ফিতাতে বান থাকায় জ্বীন সহজে ছুটতে পারবে না, প্রথম কিছু দিন রাগ করবে, কিন্তু খুদা লাগলে খাওয়াইলে আস্তে আস্তে বশে এসে যাবে। উল্লেখ্য এ বিশেষ বানওয়ালা ফিতা আবার হুজুরের কাছ থেকে কিনসিলাম।

নিয়ম অনুযায়ী কাজ শুরু করলাম। প্রথম দিন কোন সারা পাওয়া গেল না। তবে বিশ্বাস রাকলাম যে তারা সুরা জ্বীন পাঠ শুনতে পাবে। এভাবে শীতের মাঝে আমার সাধনা চলতে লাগল। পঞ্চম দিনে এসে সাতবার সুরা জ্বীন পাঠ যখন শেষ করলাম।

হঠাৎ মসিজিদের জ্বানালা দিয়া তীব্র আলো দেখলাম। আমারতো ভয়ে হাত-পা পুরা ঠান্ডা। আস্তে আস্তে দেকলাম আলো বারতেসে! পেছন থেকে ঠাস করে একটা শব শুনতে পেলাম। তারপর আর মনে নাই। ভোর বেলা মুয়াজ্জিন সাব মুখে পানির ছিটা দিয়া আমারে জাগালেন।

অতীব ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেসিলাম আরকি। তবে ভয় পাইলেও সাধনা বন্ধ রাকলাম না। সাতদিনের সাধনা শেষে শেষরাতে আবার জ্বীন দেখার প্রত্যাশায় বসে আছি, কিন্তু জ্বীন মামার খবর নাই। দেখতে দেখতে সকাল হয়া গেল। মেজাজ পুরাই চরমে, হুজুররে যায়া বললাম, কই? জ্বীনতো আসল না।

হুজুর আমারে কয় এ কয়দিনে কি কি ঘটসে তা বলতে, আমি পঞ্চম দিনের ঘটনা বলার পর হেতে কইল তুমি ভয় পায়সো দেখে জ্বীন বাবা রাগ করসে, অহন তোমারতো খবর আছে! হে তোমারে সারাজীবন ভয় দেখাইব। শুইনাতো আমার আত্মারাম আবার খাচাছাড়া! ভয়ে ভয়ে চলা শুরু করলাম। আমাদের থাকার ঘর আর মসজিদের মাঝে একটা অন্ধকার রাস্তা ছিল। প্রতিদিন মসজিদ থেকে বাইর হয়ে জোরে জোরে আয়তুল কুরসি পরে এক দৌড় দিতাম। আসলেই জোরে শব্দ করে পরতাম! এরই মধ্যে একদিন দৌড় দিয়া আসার সময় পায়ে কিসের যেন ব্যাথা পাইলাম।

ঘরে এসে দেখি রক্ত! আমার পা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। বুঝলাম জ্বীন আমারে খামচি দিসে! রুমের অন্য ছাত্ররা আমারে ধইরা ফার্মেসীতে নিয়া গেল। আসার পর হুজুররে বললাম হুজুর! আমারে তাবিজ দেন। হুজুর আমারে পাচঁশত টাকার একটা তাবিজ দিল। পরদিন সকালে ঐ রাস্তা দিয়া খুরায় খুরায় যাবার সময় হঠাৎ চোখে পরল একটা কাঠের মধ্যে খাড়া পেড়েক।

তাতে রক্তের হালকা দাগ আছে। সাথে সাথে বুঝলাম জ্বীন মিয়া আসলে কে ছিল! তাবিজটা খুলে ফেলে দিলাম। নিজের মধ্যে উপলব্ধি আসল যে জ্বীন বলে আসলে কিছু নাই। ছোট কালের ভুতের গল্পের মতই একটা ব্যাপার। প্রত্যেকটা জিনিষের পেছনেই বাস্তব ব্যখ্যা আছে, কোনটা জানার সুযোগ হয়, এবং কোনটা হয় না।

আলোর ব্যাপারটিও হয়ত সেরকম একটা কিছুই। গাড়ির হেড লাইটের আলো হতে পারে। আমার বিশ্বাস আর জ্ঞান তাকে ভয়ংকর কিছু একটাতে পরিণত করেছে। অথচ ভয় না পেয়ে যদি তলিয়ে দেখতে যেতাম। তাহলে আরো দুদিন আমাকে কস্ট করতে হত না।

সে দিনের পর থেকে আমার কোন তাবিজ লাগে নি। আজ পর্যন্ত কোন জ্বীনও আমাকে তাড়া করেনি। বরঞ্চ হুজুররে জ্বীন নিয়া বড়ই ভুগাইসি। মিলাদের যে মিষ্টি আসত, সেটা সাবার করে দিতাম। হুজুর জিজ্ঞাসা করলে বলতাম কোহেকাফের জ্বীন খায়া ফেলসে


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।