আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতপর: মাসুদ রানার ট্রেন মিস এবং আমার সিট হারানোর গল্প।



রোজার দিন , তাই সেহরী খেয়ে আর ঘুমাইনি। আমার একটা বদভ্যাস হলো কোন কারনে সকাল সকাল কোথাও যাওয়ার প্লান থাকলে রাতে ঘুমটা খুব হালকা হয়, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশেষ করে রোজা থাকার কারনে রাতে প্রায় ঘুমাইনি বলা চলে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসবো, টিকেটের বড় আকাল, অফিসের পিয়ন অনেক কস্টে মহানগর প্রভাতী'র একটা শোভন চেয়ার টিকেট যোগাড় করে দিয়েছে। বাসে চলাচল আমার ফেভারিট কিন্তু বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের অবস্থা ভয়াবহ আর জ্যামের কারনে ৮-১০ ঘন্টায় ও ঢাকা পৌছানো দায়।

অতএব ট্রেনই ভরসা। যাক , সকাল ৭:৩০ মিনিটে ট্রেন ছাড়বে, আমি প্রায় মিনিট বিশেক আগেই স্টেশানে পৌছে গেলাম, দুটো ট্রেন পাশাপাশি প্লাটফরমে দাড়ানো, মহানগর প্রভাতী এবং পাহারিকা এক্সপ্রেস। কামরা খোজে পেয়ে আমার নির্ধারিত ছ- কামরায় ৪৬ নাম্বার সিটে বসলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে একদম রাইট টাইমে ট্রেন ছাড়লো। রাতের ঘুমটা পুসিয়ে নেবার নিয়তে চোখ বুজে ঘুমানোর চেস্ঠা করলাম।

কিন্তু কপালে সুখ সইলোনা। কিছুক্ষন পরেই মাসুদ রানার আভির্ভাব!!! আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঘর্মাক্ত মাসুদ রানা আমাকে সিট ছাড়ার হুকুম জারি করলো কিছুটা ভ্যবাচেকা খেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি হয়েছে? এটা আমার সিট, আপনি বোধ হয় ভুল করেছেন। সে আরো রেগে গেলো, বললো আমার সিট নাম্বার ৪৬ , আর আপনি আমার সিটে বসে ঘুমাচ্ছেন, তাড়াতাড়ি উঠেন। আমি অনেক কষ্টে ট্রেনে উঠেছি, ষ্টেশানে ঢুকার আগেই ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, দেখছেন না ঘেমে একাকার হয়ে গেছি, যান আপনার সিটে যান, আর টিকেট না থাকলে দাঁড়িয়ে থাকেন, আমাকে বসতে দেন............... আমি কিছুটা বিব্রত বোধ করছি, কেননা আশেপাশের অনেকেই মাসুদ রানার পক্ষেই যাচ্ছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি। তবু ও শেষ চেষ্ঠা হিসেবে বললাম ভাই আপনার কামরা নাম্বার ঠিক আছেতো? হ্যা অবশ্যই ঠিক আছে ছ-৪৬।

আমি আবারো টাসকি খাইলাম, সবিতো ঠিক বলতাছে, নিশ্চয়ই টিকেট মাস্টার ভুল করেছে আমি উনার কাছে টিকেটটা চাইলাম, মিলিয়ে দেখি আসল ঘটনা কি? কিন্তু না, উনি দিবেন না। উল্টো আমার টিকেট চেয়ে বসলেন, কি আর করা নিজের টিকেট আবার চেক করলাম। না, কোন ভুল নেই, ছ-৪৬!!!! ততক্ষনে কামরায় ব্যাপারটা বেশ হইচই ফেলে দিয়েছে, রেলওয়ের টিকেট মাস্টারদের চৌদ্দগোস্ঠী উদ্ধারে সবাই ব্যস্ত, আমি সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলাম, কি করবো ভাবতেছি। মাসুদ রানা কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছে, সত্যিই বেচারা অনেকটা দৌড়ে ট্রেনে উঠেছে, ঘেমে একাকার। আমি তাকে বসতে বললাম, পরে একটা ব্যবস্থা করা যাবে।

হঠাৎ সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাবেন? আমি বললাম ঢাকা। মনে হলো মাসুদ রানা একটা ৪৪০ ভোল্টের শক খেলেন, লাফ দিয়ে দাঁড়ায়ে গেলেন, আবার একই প্রশ্ন করলেন। আপনি ঢাকা যাবেন? এই ট্রেন ঢাকা যাবে? আমি বললাম , হ্যা। ততক্ষনে মাসুদ রানা দ্বিতীয় দফা ঘামতে শুরু করেছে, বেচারা মাথায় হাত দিয়ে বোকার মতো আমাকে বললো, এটা পাহাড়িকা ট্রেন না? আমি সিলেট যাবো

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।