আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতপর ভালোবাসা

গত চার দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো ঝিরিঝিরি তো কখনো মুষলধারে। একটু দেরিতে হলেও আষাঢ়ের কাঙ্খিত বৃষ্টির ছোঁয়া পেল সবাই। হতাশ চাষীদের মুখে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছে। সেই সাথে মহা উল্লাসে কোমর বেঁধে আমন চাষে মেতে উঠেছে।

ক’দিন আগেও পত্রিকায় হতাশাগ্রস্থ চাষীদের ছবিসহ সংবাদ বেরিয়েছিল। হতাশা আর বিষণœতা ঘিরে ছিল সবার মাঝেই। উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদসহ দেশের আপামর জনসাধারণ। আসলে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতই অবস্থা চলছে প্রকৃতিতে, ষঢ় ঋতুর এই দেশটির অনেক ঋতুর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বৈশ্ব্যিক বিবর্তনের অশুভ স্পর্শে বিশ্ববাসী আতঙ্কিত।

প্রকৃতির এই বিপর্যয় রোধে বিশ্বব্যাপি চলছে গবেষণা, আলোচনা, পর্যালোচনা। এই সব ভাবনার সাথে নিরব নিজের পরিবর্তনের কথা ভাবে। পরিবর্তনের অস্পষ্ট ছায়া দেখতে পায়। বিশেষ করে উর্মির সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকেই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার চিত্র অনুভূত হতে থাকে। যদিও তখন সে এ নিয়ে মাথা ঘামায়নি।

কিন্তু আজ কেন জানি ভীষণ ভাবে উপলব্ধি করছে। ঋতুর পরিবর্তনের মত তার নিজের মাঝেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। নিরবের বল্গাহীন ছুটে চলার গতি হঠাৎ করেই যেন থমকে গেছে। এটা তার চারিত্রিক বৈশিষ্টের সম্পূর্ণ বিপরীত। সামনের খোলা জানালার ওপাশে আষাঢ়ের বৃষ্টির অঝোর বর্ষণের ধারা উপভোগ করছে।

থেমে থেমে বর্ষণের বিচিত্র রূপ তাকে মুগ্ধ করে তুলেছে। ওর কাছে বৃষ্টিকে পবিত্রতার প্রতীক বলে মনে হয়। জ্বরাজীর্ণতা, ময়লা-আবর্জনা সব কিছু ধুয়ে মুছে ঝরঝরে তকতকে নির্মল সজীব করে তোলে প্রকৃতিকে। এই অপরূপ সৌন্দর্য্য কেবল প্রাণ ভরে উপভোগ করা যায়। এমন দূর্লভ মুহুর্তে উর্মিকে ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে।

সেদিন এমনিভাবে তারও চোখের জল থেমে থেমে গড়িয়ে পড়ছিল। এদিকে বিয়ের কথা শোনার পর থেকে উর্মির বুকের ভিতর অব্যক্ত যন্ত্রনা ছড়িয়ে যেতে থাকে। খাঁ খাঁ করে বুকের জমিন। প্রিয়জনকে হারাবার ব্যথার অশ্র“ অবিরাম ঝরে পড়ে। কোনভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

যতবারই এটাকে একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে নিজেকে নিবৃত করার চেষ্টা করেছে; ততবারই আরো প্রবলভাবে তার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। বারবার নিরবের মুখটা ওর চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। বন্ধুত্বের আবরণে নিজের অজান্তে কখন যে ওকে ভালবেসে ফেলেছে তা সে নিজেই জানে না। যদিও কখনো কখনো মনের মাঝে নিরবের প্রতি এক অজানা আকর্ষণ, নিবিড় ভালবাসার সংকেত দিত। তখন সে নিবৃত করতো নিজেকে।

কারণ সে তো জানে, নিরবের সাথে তার শুধু বন্ধুত্বের সম্পর্ক; শ্রেফ বন্ধুত্ব। কিন্তু সে কি শ্রেফ বন্ধুত্বের জন্যই তার কাছে ছুটে গিয়েছিল? না কি অন্য কিছু? উর্মি ভাল ভাবেই চিনতো নিরবকে। বন্ধুত্বের ছদ্মাবরণে মেয়েদের দেহ সম্ভোগই তার একমাত্র উদ্দেশ্য। এমন হীন মানষিকতা সম্পন্ন একটা ছেলের সাথে নিজে উপযাজক হয়ে বন্ধুত্ব করলো কিসের মোহে? কি আছে ওর মাঝে, যার প্রবল আকর্ষণকে সে এড়াতে পারে নি? বন্ধুত্বের সূত্র ধরে একে অপরের কাছাকাছি হয়েছে এবং নিজের অজান্তে তার প্রেমে পড়ে যায়। বিচ্ছেদের কথা ভাবতে কষ্ট হয়।

বুকের মাঝে কষ্টের পাখি ছুটোছুটি করে। শেষবারের মত নিরবের ঘুমন্ত চেতনা জাগিয়ে তুলতে সে ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। নিরব তাকে সান্তনা দিয়ে বলেছিল, দেখ, জীবনে এমন অনেক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হ’তে হয়। সে সময় সাহসের সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়। তুমি ভুল বুঝো না।

তোমাকে কষ্ট দেয়া বা তুমি কষ্ট পাও এমন কাজ আমি করিনি। তাছাড়া তোমাকে আমি বারবার বলেছি। সব কিছু বুঝে শুনে আমার সাথে মেলামেশা করবে। উর্মি ভেজা কণ্ঠে বলে, তারপরও একবার ভেবে দেখো। মানুষ অনেক কিছুই তো খেয়ালের বশবর্তী হয়ে করে থাকে।

যদিও আমি জানি, তুমি তোমার সিদ্ধান্ত বদলাবে না। তবুও আমি মিনতি করছি, অন্তত আমার দিকটা ভেবে; তোমার সিদ্ধান্তটা কি পরিবর্তন করতে পারো না? “দেখ উর্মি, আমি বুঝি, তোমার কষ্টটা কোথায়। তুমি আমার ভাল বন্ধু। তোমার কষ্ট, আমারও কষ্ট। আসলে আমার কাছে প্রেম-ভালবাসা মূল্যহীন।

জীবনের অদৃশ্য সুতার বন্ধনে নিজেকে আবদ্ধ করার কথা আমি কখনোই ভাবি না বা ভাবতে চাই না। উর্মি মোটেও অবাক হয়নি তার কথায়। শুধু নির্মম কষ্ট তাকে আক্রান্ত করেছিল। বুকের ভিতর নিংড়ানো জল চোখের প্রাচীর ছাড়িয়ে গড়িয়ে পড়েছিল। নিরব ওর চোখের অশ্র“ মুছে বাড়ী পাঠিয়েছিল।

যাওয়ার সময় ওর অসহায় দৃষ্টি নিরবের উপর আছড়ে পড়েছিল। বুক ভাঙ্গা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বাতাসকে ভারি করেছিল। শুধু বলে গেল, ‘তুমি পাষান। একদিন কষ্টের বৃষ্টি তোমাকেও ভেজাবে। ’ ওর কথাগুলো নিরবের বুকের ভিতর একটা কম্পন সৃষ্টি করেছিল।

মুহুর্তকাল দাঁড়িয়ে উর্মির চলে যাওয়া দেখছিল। উর্মি কি তাকে ভালবাসে? ভালবাসতেই পারে। তার কথাবার্তায়, আচার আচরণে, চলনে বলনে, ভালবাসার স্পষ্ট চিত্র দেখেছিল। যে কোন মেয়ের ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। ও একটা ভাল মেয়ে।

ওর পবিত্র মনকে সে উপলব্ধি করেছিল। কিন্তু তারপরও তার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি। মনের মাঝে প্রশ্ন ওঠে, তবে কি সেও তাকে......? প্রশ্নই আসে না। সে সব সময় ভালবাসার শৃঙ্খল থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছে। বিথি, লাবনী, অবন্তী, লতিকা এরা সবাই ওর জীবনে এসেছে।

এবং এখনো রীতিমত মেলামেশা করে। তবে শর্ত একটাই, কোন প্রেম-পিরীতির রোগ বালাইর সাথে জড়িও না। জীবনকে শুধু উপভোগ করে যাও। সোৎসাহে ওর আহবানে সাড়া দিয়েছে সবাই। ওর বন্ধুরা ওকে ঈর্ষা করতো।

তারা নিরবকে কলির কেষ্ট বলে আখ্যায়িত করে বলতো, শালা তোর মধ্যে কি আছে যে মেয়েরা তোর সাথে সম্পর্ক করার জন্য হুমড়ী খেয়ে পড়ে। এমন কি বিছানায় যেতেও দ্বিধা করে না। “আমি শালা ছয় মাস ধরে কম চেষ্টা করি নি উর্মির জন্য। কিন্তু পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে। ” আক্ষেপ করে কমল।

- ‘আমার কাছে যাদু আছে’- মৌসুমীর ডিটারজেনের বিজ্ঞাপন ষ্টাইলে জবাব দেয়। নিবর নিজের মনে হেসে ওঠে। ভাবতে ভালই লাগে। আসলে এসব নিয়ে ওর ভাবার সময় কোথায়? ওর ছন্ন ছাড়া জীবনে একান্ত অবসর খুব কমই উপভোগ করেছে। যতটুকু সময় পেয়েছে, আনন্দ ফুর্তিতেই কাটিয়ে দিয়েছে।

ধনীর দুলাল। পিতার একমাত্র উত্তরাধিকার সে। ইচ্ছামত দু’হাতে টাকা উড়িয়েছে। তার ঐ টাকা ভোগের জন্য একের পর এক মেয়েরা ওর সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তবে সে মেয়েদেরকে ভোগ করলেও তার মাঝে একটা বৈশিষ্ট্য ছিল।

তা হলো, কোন মেয়ে গায়ে পড়ে সেক্সচুয়াল এপ্রোস করলে, তাকে সে সাথে সাথে প্রত্যাখ্যান করতো। এ রকমই একটা ঘটনা ঘটেছিল মলির সাথে। একদিন মলিকে ওর রুমে নিয়ে এসেছিল। হালকা নাস্তা করার পরপরই মলি পাগলের মত নিরবকে জড়িয়ে চুমু খেতে লাগলো। আর অব্যক্ত কণ্ঠে বলতে লাগলো, প্লিজ নিরব, আমি আর ধৈর্য্য ধরতে পারছি না।

’ এক ঝটকায় সে মলিকে সরিয়ে দিয়ে বলে, ‘এক্ষুনি চলে যাও। ’ ঘটনার আকস্মিকতায় থতমত খেয়ে যায় মলি। তারপর নিরবে মুখ লুকিয়ে চলে আসে। এতগুলো দোষের মাঝে ওর একটা ভাল গুনও ছিল। ছাত্র হিসাবে সে ছিল অত্যন্ত মেধাবী।

পরীক্ষায় সব সময় ভাল রেজাল্ট করেছে। যে কারনে টিচাররাও তাকে খুব ভালবাসতো। কোথাও বাজ পড়লো বোধ হয়। বিকট শব্দে কেঁপে উঠলো নিরবের শরীরটা। সেই সাথে বৃষ্টির গতিও বেড়েছে।

নিরব উপুড় হ’য়ে বুকের মাঝে বালিশটা চেপে খোলা জানালায় এভাবেই বৃষ্টি পড়ার দৃশ্য উপভোগ করছিল। মাঝে মাঝে হাওয়ার ঝাপটায় ওর চোখের পাপড়ি ভিজে যায়। আজকের এই বৃষ্টির দিনে দু’মাস আগের একটা ঘটনা মনের মাঝে জেগে ওঠে। উর্মি আর নিরব প্রায়ই বিকালে পার্কে বেড়াতে যেত। সেদিন একে অপরের কথার মাঝে এমনভাবে হারিয়ে গিয়েছিল যে, হঠাৎ করেই মুষলধারে বৃষ্টি ওদের ঢেকে ফেললো।

ভিজে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরব উর্মির হাত ধরে দৌড়াতে দৌড়াতে বড় বটগাছের তলায় এসে থামে। ততক্ষনে ওরা সম্পূর্ণ ভিজে গেছে। দুজনেই হাঁফাচ্ছে। বিশেষ করে উর্মির বুকটা হাফরের মত উঠানামা করছে। নিরব বেশ কৌতুক অনুভব করছে।

সে ওর দিকে চেয়ে মিটমিট করে হাসছে। ওর হাসি দেখে উর্মি জানতে চায়- ‘হাসছো যে’? একটু দম নিয়ে বলে, ‘বলছি। ’ মিনিট খানেক অপেক্ষার পর বলে, ‘বৃষ্টি ভেজা ডাঁসা পেয়ারা কখনো দেখেছো?’ তখনো ওর ঠোটের কোনে দুষ্টুমির হাসি লেগে আছে। ‘না। তাছাড়া এখানে পেয়ারা দেখার কি হলো!’ ‘তোমাকে দেখতে ঠিক ঐ বৃষ্টি ভেজা ডাসা পেয়ারার মত লাগছে।

ঐ সময় যেমন পেয়ারা খাওয়ার লোভ সামলানো মুশকিল। এখনকার আমার অবস্থাও তেমন। ’ উর্মি লজ্জা পায়। কিল উঠায় মারার জন্য। নিরব দ্রুততার সাথে ওকে থামিয়ে বলে, ‘একদম নড়বে না, একেবারে স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে থাকো।

’ উর্মি থমকে যায় ওর কথায়। কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। ওকে অবাক করে ওর মুখের উপর জমে থাকা বৃষ্টির ফোটা শুষে নিতে থাকে। শিহরন জাগে উর্মির শরীরে। কিছু বুঝে উঠার আগে ওর মুখের সমস্ত জল শুষে নিয়ে তৃপ্তি সূচক শব্দ তোলে- ‘আহ্ ! অমৃত সুধা পান করলাম।

এই তৃপ্তির কথা সারা জীবন মনে থাকবে। ’ এদিক ওদিক চেয়ে বলে, চলো এখানে আর দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই। ভিজেই যখন গেছি, তখন শুধু শুধু ঠান্ডা লাগানোর কোন যুক্তি নেই। তার চেয়ে বাসায় চলো, আয়রণে কাপরটা শুকিয়ে নিলে হবে। ’ রাস্তার পাশে চটপটি দোকানের সামনে রাখা মটর সাইকেল নিয়ে সোজা ওদের বাসায় চলে আসে।

বাড়িতে আজ কেউ নেই। ওর মা বাবা নানা বাড়ি গেছে সকালে। নিরব ওর মায়ের শাড়ী উর্মির হাতে দিয়ে বলে- ‘ভিজে কাপড়টা ছেড়ে এটা পরে ফেলো। ততক্ষনে তোমার কাপড়টা শুকানোর ব্যবস্থা করি। ’ উর্মি শাড়ীটি নিয়ে যেতে উদ্যত হলে নিরব তাকে ডেকে বলে, ‘একটা কথা বলবো?’ -কি -‘কোনদিন কোন মেয়েকে আমার বাড়ি আনিনি।

শুধু তোমাকে আনলাম। কারণ, তুমি আর সবার থেকে আলাদা। আমি কখনো ওদের সাথে তোমাকে একাত্ম করিনি। ’ উর্মি ক্ষনেক ওর দিকে চেয়ে থাকে। তারপর মাথা নিচু করে চলে যায়।

ততক্ষনে নিরবের মাথার ভিতর দুষ্টু পোকারা কিলবিল করতে শুরু করেছে। ফাঁকা বাড়িতে উর্মিকে নিবিড়ভাবে পেতে চাইছে ওর দুষ্টু মনটা। দ্বিধাগ্রস্থ মন কই মাছের মত লাফালাফি করছে। নষ্টের বিষ ছড়িয়ে পড়ছে রক্ত কনিকায়। হৃৎপিন্ডের গতি ক্রমশ বাড়ছে।

নিঃশ্বাষে উষ্ণতা অনুভব করে। চোখের মনি স্থির হয়ে যায়। উর্মির শরীরের প্রতিটি অঙ্গ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে- চোখের সামনে। ওর সব কিছুই খুটিয়ে খুটিয়ে পরখ করে। সব কিছু যেন তার ভীষণ পরিচিত।

শিকারী বাঘের মত কামনার স্পৃহা ওকে আক্রমন করে। যৌন উত্তেজনার উত্তাপ ছড়িয়ে যায় সমস্ত শরীরে। অজানা কম্পন সৃষ্টি হয়। যেন মহা মিলনের পূর্বস্থিতি। উর্মি ওর সামনে এলে, উন্মাদনার প্রলয় নাচনে কথার খেই হারিয়ে ফেলে নিরব, অনেকটা নেশাগ্রস্তের মত।

নেশাইতো, কামনার নেশা। সুরা পানের মত নারী যৌবনের সুধাপান করা এক অদ্ভুত নেশা। এ নেশার কোন সীমা পরিসীমা নেই, সমাপ্তিও নেই। বাঘ যেমন মানুষ্য রক্তের স্বাদ পেলে মরিয়া হয়ে যায়। সমস্ত প্রতিরোধ, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে ঝাপিয়ে পড়ে তার শিকারের উপর।

এ যেন তার চেয়েও ভয়ংকর। উর্মির শরীরেও কামনার ছোঁয়া লেগেছিল, যখন নিরব ওর মুখের উপর থেকে বৃষ্টির জল শুষে নিচ্ছিল, তখন ওর শরীরে দ্রুতলয়ে রক্তের স্রোত ওঠা নামা করছিল। সেই রেশ তার এখনো কাটেনি। সে নিজেও যেন মোহগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল। একান্ত সান্নিধ্যের প্রতীক্ষায় চেয়ে থাকে নিরবের দিকে।

নিরব এক পা দুপা করে এগিয়ে যায়। দু’বাহুর মাঝে চেপে ধরে। চুম্বনের বৃষ্টি ঝরে উর্মির মুখের উপর। উভয়ের ঘন নিঃশ্বাসে বাতাস ভারী হয়। এক সময় নিরবের হাতের বাঁধন শিথিল হয়।

থেমে যায় চুম্বনের পদচারনা। ওর বাহুর মাঝে লাউয়ের ডগার মত উর্মির মাথাটা ঝুলে থাকে। এই প্রথম অপরাধ বোধ ওকে খোঁচা দেয়। তার ভেতর হতে একজন সত্যিকারের মানুষের সত্ত্বা জেগে ওঠে। থেমে যায় প্রবাহমান রক্তের গতি।

উষ্ণতা হারিয়ে যায় শীতলতার কাছে। বৃষ্টিও থেমে গেছে। মেঘের আবরণমুক্ত আকাশ জেগে উঠেছে। উর্মিকে বাসায় পৌছে দেয়। কি হলো, কেন হলো এর কিছুই বুঝে উঠতে পারে না উর্মি।

কেবল এক সুখস্বপ্নের স্মৃতি বুকে নিয়ে বাসায় ফিরেছিল। নিরবের ভেতরও অন্যরকম অনুভূতির স্পর্শ পেয়েছিল। পরিতৃপ্তির ছোঁয়া। বুকের মাঝে সুখের আবহ সৃষ্টি করেছিল অসুস্থ্য মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা সুস্থ্য মনের ছোঁয়া। তার জীবনে এত ভাল বোধ হয় আর কখনো লাগে নি।

মাঝে মাঝে সে উর্মিকে বলতো, ‘জানো উর্মি, আমি যখন তোমার সাথে থাকি, তখন আমার শরীরে এক উদ্ভুত তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। হৃদয় এক অনাস্বাদিত পুলকে পুলকিত হয়ে ওঠে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গে শিহরণ অনুভব করি। তুমি তো জানো, কত মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক। কিন্তু তাদের সঙ্গ আমার মাঝে কখনো এমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি।

সবচেয়ে বড় কথা তাদের প্রত্যেকের মাঝেই লোভ লালসার অস্তিত্ব ছিল। তারা নিজেদের স্বার্থেই আমার সাথে মেলামেশা করতো। তাদেরকে শুধুমাত্র ব্যবহারিক পণ্য মনে হয়েছে; অনেকটা পারফিউমের মত। যখন যেটা ভাল লেগেছে ব্যবহার করেছি। আবার দুরে সরিয়ে দিয়েছি।

কিন্তু তুমি যখন পাশে থাকো, তখন মনে হয়েছে আমি যেন সদ্য প্রস্ফুটিত কোন ফুলের বাগানে বসে আছি। তখন সুগন্ধী ফুলের সুবাসে মন প্রাণ ভরে যায়। আমি উতলা হয়ে উঠি। আমি যেন তখন এক স্বপ্নপুরীতে অবস্থান করি। নিরবের কথায় উর্মির শরীর শির শির করে।

আবেগ উচ্ছ্বাস তার হৃদয় হতে বিস্ফোরিত হতে চায়। সবাই জানে নিরব চরিত্রহীন। নারী শরীর ছাড়া সে কিছুই বোঝে না। তাদের ভোগই একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু তার কাছে কেন জানি মনে হয়েছে নিরবের ভেতরে প্রেম সমৃদ্ধ এক সুন্দর মনের মানুষ লুকিয়ে আছে।

সেই ভালোবাসার মানুষটাকে শুধু জাগিয়ে তোলা দরকার। নিরবের কথায় তার প্রতি ভালবাসা প্রবল হয়ে ওঠে। কিন্তু তার হৃদয়ের মাঝে জেগে ওঠা এই উচ্ছ্বাস তাকে বুঝতে দেয় না। শুধু তার কথার জবাবে বলে, “এটা তোমার খেয়ালীপনা। অনেকটা দিবাস্বপ্নও বলতে পারো।

” সেদিন ওর কথার কোন জবাব দিতে পারেনি। আজ এই অঝোর ধারা বর্ষনের মাঝে নিরবের বুকের মাঝে মোচড় দেয়া কষ্ট; কেন জানি তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তবে কি সে উর্মিকে ভালবাসে? যদি তাকে ভালবেসে থাকে, তবে কেন এতদিন তার হৃদয়ে প্রেমের আগুন জ্বলেনি? হৃদয়ের মাঝে প্রেমের ঢেউ কেন উথাল পাথাল করেনি? কেন সেদিন তার শেষ অনুরোধ সহজ ভাবে প্রত্যাখান করেছিল? সেদিন কেন তার বুকের প্রাচীরে ভালবাসার কম্পন সৃষ্টি হয়নি? কেন সে পাষানের মত উর্মির হৃদয়ের সব চাওয়া পাওয়াকে দুমড়ে মুচড়ে হাসি মুখে বিদায় জানিয়েছিল? এখন কেন তার কাছে সব কিছু এলোমেলো লাগছে? নিষ্ঠুর কষ্ট ক্রমান্বয়ে তাকে বেঁধে ফেলছে। আগামীকাল উর্মির বিয়ে। কথাটা যতবার মনে পড়ছে।

ততবারই বুকের ভিতর খচ্ খচ্ করে উঠছে। অজানা ব্যথার অস্তিত্ব ক্রমশই সমস্ত বুক জুড়ে বিষক্রিয়ার মত ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আজ সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে। উপভোগের খেলা খেলতে গিয়ে উর্মি তার মনে প্রেমের প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই উপলব্ধি আগে কেন হয় নি? এই ভাবনা তাকে অস্থির করে তুলছে।

আজ অনেক কিছু হারানোর কষ্ট শৃঙ্খলের মত তাকে আষ্টে পৃষ্টে বেঁধে ফেলছে। নিঃশ্বাসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। চোখ দুটো কেমন জ্বালা করছে। জলে ভেজার অস্তিত্ব অনুভব করে। তবে এটা বৃষ্টির জল না কষ্টের অশ্র“ বুঝতে পারে না।

বার বার উর্মির সেই বেদনাক্লিষ্ট উদাস দৃষ্টি তাকে ক্ষত-বিক্ষত করছে। শেষ বিদায়ের পূর্বক্ষণে তার বুকের জ্বালা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। একদিন পরই উর্মি চিরদিনের মত তার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। শুধুমাত্র বেদনাময় স্মৃতির প্রদীপ বুকের মাঝে জ্বলতে থাকবে। নিরব হাতের কাছে থাকা মুঠো ফোনের দিকে তাকায়।

হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে। উর্মিকে ফোন দেবে না কি? কি বলবে তাকে? কিছুই বুঝতে পারে না। রেখে দেয় মোবাইল। কিন্তু মনকে স্থির রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। মোবাইলটা আবার হাতে নেয়।

মেমোরি থেকে উর্মির নাম বের করে ইয়েস বাটনে চাপ দেয়। অপর প্রান্ত হতে রিংটোনে গানের কলি ভেসে আসে “আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়” থমকে যায়। উর্মির মোবাইলে তো এ গান ছিল না। তবে কি অন্য কারো নাম্বারে গেল না কি? কয়েক সেকেন্ড পর লাইনটা কেটে যায়। উত্তেজনা আরো প্রবল হয়।

নামটা ভালো করে দেখে। ঠিকই তো আছে। তাহলে রিসিভ করলো না কেন? তবে কি তার প্রতি ঘৃনায় সে তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে? পুনরায় রিং দেয়। এক সেকেন্ড, দু’ সেকেন্ড করে প্রায় পনের সেকেন্ড পার হয়ে যায়। হার্টবিটের গতি দ্রুত হচ্ছে, হাতটা কাঁপছে।

অস্বস্তিকর অস্থিরতায় ডুবতে থাকে। এক সময় উর্মি রিসিভ করে বলে, “কেন রিং দিলে?” অনেকটা রুক্ষ শোনালো ওর কণ্ঠস্বর। -‘আগে রিসিভ করলে না যে?’ -‘তোমার কথা বলো। কেন রিং দিয়েছো?’ কি বলবে সে। কিছু বুঝে উঠতে পারে না।

তাছাড়া কেনই বা ফোন দিল। তাও সে জানে না। তারপরও কয়েক সেকেন্ড কি যেন ভাবলো। তারপর দৃঢ়তার সাথে বললো, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি উর্মি’ বিশ্বাস করো, ‘আমি তোমাকে ভীষণ ভালবাসি। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।