আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোটা জাতিই এখন গোলকধাঁধার মধ্যে -----হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক ফল রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জাতীয় পার্টি

গোটা জাতিই এখন গোলকধাঁধার মধ্যে -----হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিদিনের অভ্যাস মতো অতি প্রত্যুশে দৈনিক পত্রিকাগুলো পড়ছিলাম। ২১ মে ২০১০ তারিখের সকাল। দি ডেইলি স্টারে দেখলাম আমার নাম উহ্য রেখে আমাকে নিয়েই একটি উপ-সম্পাদকীয় লেখা বেরিয়েছে। লেখাটির শিরোনাম-' অ মবহবৎধষ রহ যরং ষধনুৎরহঃয'। তাৎক্ষণিকভাবেই এ লেখা সম্পর্কে কিছু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার ইচ্ছা আমার জাগ্রত হলো।

কিন' হাতে একদম সময় ছিলো না। কারণ আগের দিন সিলেটে একটি সেমিনারে যোগদান করে ঢাকায় ফিরেছি বিকেল বেলা। তার দু’দিন আগে ফিরেছি রংপুর থেকে। পরের দিন অর্থাৎ ২২ মে তারিখে ছেলেকে ডাক্তার দেখানোর জন্য যেতে হবে সিঙ্গাপুরে। তাই সময়ের সাথে পেরে উঠবো না বলে ওই সময়েই আলোচিত শিরোনামের লেখাটি নিয়ে লেখা হয়নি।

তবে লেখার জন্য ২১ মে তারিখের ডেইলি স্টার পত্রিকাটি আলাদাভাবে রেখে গিয়েছিলাম। প্রথমেই বলে রাখি- আমি কোনো গোলকধাঁধার মধ্যে নেই। জটিল কঠিন-কুটিল কোনো রাজনৈতিক পথ-মত ও আদর্শও আমার রাজনীতির মধ্যে নেই। কোনো নীতি আদর্শ বা মত ধার করেও আমার দলের নীতি-আদর্শ নির্ধারণ করা হয়নি। খুবই সহজ ও সরলভাবে দেশ ও জনগণের কল্যাণ সাধন এবং উন্নয়ন অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে নীতি-আদর্শ ও লক্ষ্য রচিত হয়েছে।

এখানে কোনো গোলকধাঁধার কিছু নেই। কিংবা আমিও কোনো জটিল সমস্যার মধ্যে নেই। এটা আমার ব্যক্তি-শারীরিক বা রাজনৈতিক কোনোটাতেই নেই। তার জন্য আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জানাই। তবে আমাকে নিয়ে যে আলোচিত উপ-সম্পাদকীয়তে এত কিছু ভাবা হয়েছে তার জন্য আনন্দবোধ করছি।

কিন' যেসব অভিযোগে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে সেগুলো যেমন সঠিক নয়, তেমনি যথার্থও নয়। এসব বিষয়ে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু আলোচনা করতে চাই। হ্যাঁ, স্বীকার করি আমার মিশন ও ভিশন উভয়ই আছে। একজন রাজনৈতিক নেতার জন্য এটা অপরিহার্য বিষয়। শুধু রাজনীতিকের জন্য কেনো-সমাজবদ্ধ প্রত্যেক মানুষের একটা না একটা ভিশন থাকেই- একমাত্র উন্মাদ বাদে।

আমারও ভিশন ছিলো এবং আছে। আমার মিশন এবং ভিশন ছিলো বলেই নয় বছরে দেশকে অনেক কিছু উপহার দিতে পেরেছি। এখনো আমার ভিশন আছে বলেই তো আমি রাজনীতি করে যাচ্ছি। কারণ আমি এখনো ফুরিয়ে যাইনি। এখনো আমি সার্বক্ষণিক রাজনীতিক।

আমি বর্তমানে বসে ভবিষ্যতকে গড়ার রাজনীতি করি। আর তাইতো বিশ বছর পরের বাংলাদেশকে দেখে বিশ বছর আগে উপজেলা ব্যবস'া প্রবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। আর এখন বর্তমানে বসে পঞ্চাশ বছর পরের বাংলাদেশের কথা চিন-া করে শাসনতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের প্রস-াব দিয়েছি। আমি তো এমনিভাবে সব সময় ভবিষ্যতের রাজনীতিই করে এসেছি। ভিশন না থাকলে এটা কি সম্ভব হয়? আলোচিত উপ-সম্পাদকীয়’র ভাষ্যমতে, আমার ভবিষ্যৎ পরিণতি বা মৃত্যু চিন-া সম্পর্কে উপলব্ধির কথা বলা হয়েছে- তা নিয়েও কিছু কথা বলতে চাই।

মৃত্যু সে তো জীবনের সামনে এক অবধারিত বিষয়। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই তো এই চিন-াটা থেকেই যায়। যিনি এটা লিখেছেন-তার মধ্যেও কি এটা নেই? কেউ জানে না মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সন-ান-সন'তি, স্ত্রী-পরিজনের কি হবে। তারপরও তো মানুষ একটা ছঁক এঁকে রেখে যেতে চায়। হঠাৎ করে “গত সপ্তাহে” (লেখা অনুসারে) আমার মধ্যে এটা জাগ্রত হবে কেনো।

নিঃশ্বাসের উপর কি মানুষের এতটুকু বিশ্বাস আছে? জীবনে বহুবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। শাসকদের নির্যাতনেও মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। আমার সামনে যেমন মৃত্যু অপেক্ষা করছে-এটা বাস-ব। আর এখন যে বেঁচে আছি এটাও বাস-ব। তাই বাস-বতার আলোতেই পথ চলি।

আমি বয়সের শেষ প্রানে- পৌঁছে গেছি- এটা বাস-ব, কিন' আর একটা বাস-ব কখন আমার সামনে উপসি'ত হবে তা আমি জানি না। তারপর কি হবে সেটা নির্ধারণের দায়িত্ব শুধু একজনের। এখানে তো আমার গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ার কিছু নেই। আলোচিত উপ-সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র থেকেই যাচ্ছে। রাজনীতির উত্তারাধিকার হিসেবে কন্যা-স্ত্রী এবং পুত্রের আগমন হয়েছে বা হচ্ছে।

আমি নাকি ব্যতিক্রম হিসেবে আমার ছোট ভাইকে উত্তরাধিকার মনোনীত করে ফেলেছি। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি উপ-সম্পাদকীয়তে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। প্রথম কথা হলো- আমার অবর্তমানে কে আমার পার্টির নেতা বা আমার স'লাভিসিক্ত হবেন- তা আমি ঘোষণা করিনি। এটা আমি করতেও পারি না। কারণ আমার পার্টি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়।

আমি যতবার পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি-তা কাউন্সিলের মাধ্যমেই হয়েছি। আমি পার্টিতে যতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করি তা গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই করে থাকি। গঠনতন্ত্র প্রণয়ন আমি করে দিইনি। এটা করেছে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি। সেটা অনুমোদন দেয় দলীয় কাউন্সিল।

সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র মোতাবেক দল পরিচালিত হয়। পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব গঠনতন্ত্র মোতাবেক কার্যভার চালিয়ে যান। আমার পার্টির উত্তরাধিকার মনোনীত করার ব্যাপারে কিছু পত্রিকায় বিভ্রানি-কর খবর পরিবেশিত হয়েছে। সব বিভ্রানি-কর ও অসত্য খবরের প্রতিবাদ দিয়েও পারা যায় না। আবার কিছু কিছু পত্রিকা আছে তারা প্রতিবাদ ছাপেও না- আবার ছাপলেও তা অত্যন- গুরুত্বহীনভাবে কিংবা এমনভাবে ছাপা হয় যা চোখেও পড়ে না।

কিন' উপ-সম্পাদকীয় লেখার ব্যাপারে একটু বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। অন-ত এ ব্যাপারে আমি কি বলেছি- তা ভালোভাবে যাচাই করে দেখা প্রয়োজন ছিলো। আমি রংপুরে যাওয়ার পথে বগুড়ায় যাত্রা বিরতির সময় সাংবাদিকদের এ সংক্রান- প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম- আমার স'লাভিশিক্ত কে হবেন, সেটা মনোনীত করবে দলীয় কাউন্সিল। যদি কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে না পারে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রেসিডিয়াম নির্ধারণ করে দেবে কে দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করবেন। রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চেও আমার পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার কাউন্সিলে একই কথা বলেছি।

পত্র-পত্রিকায় এসব কথা ছাপাও হয়েছে। কলামিষ্ট আমার এই কথা বিবেচনায় না এনে বিভ্রানি-কর তথ্য উপজিব্য করে তার লেখাটি লিখেছেন। আমি রংপুরে কি বলেছিলাম, সে কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। আমি বলেছিলাম, “রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির দায়িত্ব আমি জিএম কাদেরকে দিলাম। তিনি একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে চার মাসের মধ্যে জেলা কাউন্সিল করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন।

” রংপুর জেলা জাতীয় পার্টিতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমি বলেছিলাম- আমার সিদ্ধান- যে মানতে পারবে না, সে দল ছেড়ে চলে যেতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস কেউ আমার সিদ্ধান- অমান্য করবে না। ” আমি যে ক্ষমতা প্রয়োগ করেছি, তা গঠনতন্ত্র মোতাবেকই করেছি। গঠনতন্ত্রে দলীয় চেয়ারম্যানকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যে, তিনি কোনো জেলা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দিতে পারেন। এর জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করতেও পারেন।

কিন' কিছু পত্রিকায় খবর ছাপানোর সময় “রংপুর জেলা” শব্দ দুটি বাদ দিয়ে শুধু “জাতীয় পার্টির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে”- মর্মে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ এটুকু বিষয় বিবেচনা করা হলো না যে, এ ধরনের একটা সিদ্ধান- কেনো জেলা কমিটির কর্মিসভায় কোনো ঘোষণা করা হবে। উত্তরাধিকার রাজনীতির কথায় ফিরে আসি। উকিলের ছেলে উকিল, ডাক্তারের ছেলে ডাক্তার, ব্যবসায়ীর ছেলে ব্যবসায়ী হতে পারলে রাজনীতিকের সন-ান বা তার আত্মীয়-স্বজন রাজনীতি করতে পারবে না কেনো? সেখানে অবশ্য দেখতে হবে নেতৃত্ব গ্রহণটা কী উত্তরাধিকার সূত্রে হয়েছে না যোগ্যতার ভিত্তিতে হচ্ছে। পার্টিতে রানিংমেট তৈরি করার প্রভিশন থাকতেই হয়।

আমি যখন রাষ্ট্রপতি ছিলাম, তখন উপরাষ্ট্রপতি কিন' আমার ভাইকে করতে যাইনি। আমি যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন কিন' আমার ভা-ব্রাদার, বোন-ভগ্নিপতি বা আত্মীয়-স্বজনের নাম দেশের মানুষ জানতো না বা তাদের চিনতোও না। অথচ তারা কেউ প্রকৌশলী, কেউ ব্যাংকার, কেউ শিক্ষাবিদ বা কেউ উচ্চপদে আসীন আমলা ছিলেন। তারা নিজ নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতা বলে কিংবা শিক্ষায় স্ব-স্ব ক্ষেত্রে মর্যাদার সাথে অবস'ান করেছেন। আমার সময়ে দুইবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে কিন' আমার পরিবারের কেউ সরকারি দলের সুযোগ নিতে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আসেননি।

অথচ এই দেশেই উত্তরাধিকার হিসেবে নাবালক কিংবা সবেমাত্র সাবালকরাও রাজনৈতিক নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। বিপরীতে আমার কারা নির্যাতনের প্রতিবাদে আমার পরিবারের সদস্যরা রাজনীতিতে আসতে বাধ্য হয়েছেন। আমার ওপর এবং আমার পার্টির ওপর যখন অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন চলে সেই অবস'ার মধ্যে আমার পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সবাই বিজয়ী হয়েছেন। আমার এক ভাই ইঞ্জিনিয়ার, এক ভাই অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা, এক ভগ্নিপতি ভার্সিটির অবসরপ্রাপ্ত ভিসি, আমার স্ত্রী সাবেক ফার্স্ট লেডি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। আমি জেলে থেকে ২ বার ৫টি করে আসনসহ আমার পরিবারের ৫ জন সদস্য এদেশের জনগণের ভোটে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

আমার ভাই জিএম কাদের বর্তমান সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন-উত্তরাধিকার সূত্রে বা আমার ভাই হিসেবে নয়, তিনি তার যোগ্যতা বলেই হয়েছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে একজন প্রকৌশলী, সেটা তার মেধার বলেই হয়েছেন। আমার মন্ত্রিসভায় আমার ভাইদের বয়সের অনেক কম বয়সের মন্ত্রী ছিলেন। তাদের চেয়ে আমার ভাইয়েরা শিক্ষা-দীক্ষায় অনেক উপরে ছিলেন। কিন' তাদের আমি মন্ত্রী বানাতে চাইনি।

কারণ তারা তখন রাজনীতিবিদ ছিলেন না। আমি রাজনীতির জায়গায় রাজনীতিবিদদের স'ান দিয়েছি। জিএম কাদের রাজনীতিতে এসেছেন- নির্বাচন করেছেন। দুইবার এমপি হিসেবে সংসদে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তৃতীয়বারের মতো এমপি হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন।

আমার দল যদি মনে করে জিএম কাদের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য উপযুক্ত তাহলে তাই হবে। দল যদি মনে করে অন্য কেউ উপযুক্ত তাহলে- তিনি নেতৃত্ব গ্রহণ করবেন। আমার দলের নিয়মিত কাউন্সিলেই তো নেতা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। আলোচিত উপ-সম্পাদকীয়তে আমার শাসনামলে ট্রাকচাপায় ছাত্রহত্যা, নূর হোসেন, ডা. মিলন, বসুনিয়া হত্যাকাণ্ডের কথা বলা হয়েছে। আমি একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে পারি, হত্যার রাজনীতি করে কেউ বাঁচতে পারে না।

ওটা করলে আমিও বাঁচতে পারতাম না। এক সময় আমার মৃত্যু কামনা করেছেন, এমন কেউ এখন আমার জন্মদিনে দীর্ঘায়ু কামনা করে শুভেচ্ছা জানান। আদালতে আমাকে শাসি- দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছেন- এমন জনকে আদালতের বারান্দায়ই মরে যেতে দেখেছি। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, রক্তের দাগ আমার হাতে নেই। কোনো দেশের রাষ্ট্রপতি ট্রাক চালাতে যায় না।

ট্রাকচাপা দিয়ে ছাত্র মেরে ক্ষমতার পথ পরিস্কার করা যায় না। আমি মনের দিক থেকে পরিস্কার ছিলাম বলেই, ট্রাকচাপায় নিহত ছাত্রদ্বয়ের বাড়িতে যেতে পেরেছিলাম। ডা. মিলন ভার্সিটি এলাকায় দুই দল ছাত্রের ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ে নিহত হয়েছেন। মিলন আমার চেনা-জানা রাজনৈতিক নেতাও ছিলেন না। আন্দোলন বেগবান করার জন্যই হয়তো এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।

আমি ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পরই তো মিলন হত্যার বিচার হয়েছে। আমাকে তো দোষী করা হয়নি। বুকে পিঠে গণতন্ত্র মুক্তিপাক লিখে নূর হোসেনকে কারা সাজিয়েছিলো, কোরবানি দেয়ার জন্য- তা অনুৎঘাটিতই থেকে গেছে। একজন নূর হোসেনকে মেরে যে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না, এটা হয়তো নাবালক শিশুও বুঝবে। রাউফুন বসুনিয়া ভার্সিটি ক্যাম্পাসে গুলিতে মারা গেছে।

কে মারতে গেলো তাকে। একজন ছাত্র মারলেই আন্দোলন থেমে যায়? না-কি আরও জ্বলে ওঠে? ভার্সিটি ক্যাম্পাসে কি শুধুমাত্র একজন বসুনিয়াই মারা গেছে? শত শত বসুনিয়ার জীবন-প্রদীপ নিভে গেছে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে, সেসব মৃত্যুর জবাব দেবে কে? গাইবান্ধায় সারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে গিয়ে ১৮ জন কৃষক শহীদ হলো, কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে ২০ জন মানুষ শহীদ হলো-এসবের জন্য কোনো একনায়কের কাছে জবাব চাওয়া হচ্ছে? কার দুঃখবোধ আছে এর জন্য? পরিশেষে বলতে চাই, ভুল মানুষ মাত্রেই হয়। মানবিক গুণাবলীর মধ্যে ভুলের জন্য অনুশোচনা করার বিষয়টিও জড়িত থাকে। কাজের মধ্যে ভুল হতে পারে, তা হয়তো কিছুটা হয়েছে। কিন' জ্ঞানত অন্যায় বা দোষ করার মতো অপরাধ আমি করিনি।

ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার কি এবং কাকে বলে তার প্রকৃত সংজ্ঞা বোঝার জন্য আমার পূর্ববর্তী শাসনামলের সাথে একটু তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে হবে। সুদক্ষভাবে দেশ পরিচালনার নাম যদি ক্ষমতার অপব্যবহার হয়ে থাকে তাহলে প্রার্থনা করুন-সে রকম অপব্যবহার যেনো হতেই থাকে। আমার নয় বছরের শাসনামলের পত্রিকাগুলো- একটু ঘেটে দেখুন, সেখানে টেন্ডারবাজি শব্দের কোনো অসি-ত্ব আছে না-কি। ঘেটে দেখুন তো তখন সন্ত্রাস দমন করতে কোনো ক্রস ফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, সন্ত্রাসীর হার্ট অ্যাটাক হওয়ার খবর আছে না-কি? সবচেয়ে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে আমার ‘সরকারের আমলে।

তখন কি টেন্ডার জমা দেয়া নিয়ে যুদ্ধ হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যেতো? তখন কি গ্যাস বিদ্যুৎ পানি নিয়ে জনজীবনে নাভিশ্বাস ওঠার খবর পাওয়া যেতো? তখন তো খবরের পাতাজুড়ে থকাতো হরতালের খবর। জঙ্গিবাদ কি জিনিস কেউ কি জানতো? সুতরাং আমার সময়কার কথা নিয়ে কেনো অনুশোচনা হবে? আমি তো এখন বর্তমান সময়ের দর্শক। এখানে বসে এখন দেখছি মানুষের আপসোস। গোটা দেশের মানুষ এখন গোলকধাঁধার মধ্যে। কোনপথে এগুবে তারা।

সবাই যে দিশেহারা!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.