আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শব্দের পোস্টমর্টেম-১৭২ (গোটা)



সাধারণ ভাবে বাংলা গোটা শব্দের মূল সংস্কৃত 'একটা'। শব্দটির সম্ভাব্য বিবর্তন হচ্ছে একটা > এগটা > গটা > গোটা। তবে বাংলা একাডেমীর অভিধান সংস্কৃত 'গোষ্ঠক' শব্দটিকেই প্রাধান্য দিয়েছে। গোটা অর্থ অখণ্ডিত বা একটা, আস্ত (ইরানে ও বাহরায়েনের মাঝখানে যে রহিয়াছে গোটা পারস্য উপসাগর - বেগম শামসুন্নাহার মাহমুদ)। প্রাচীন বাংলায় গোটা অর্থে 'গুটী' শব্দটি চালু ছিল।

একই অর্থে শূন্যপুরাণে 'গটা' ও 'গটী' পাওয়া যায় (গট দশ কুআ দিআ সাজাইল মই, কারে দেন গুটী গুটী কারে দেন মুটীমুটী, দরিদ্রকে ধন দেন তরাজু ধরিআ)। চৈতন্যচরিতামৃতেও গুটী শব্দটি রয়েছে (এক গুটী পট্ট ডুরী)। তবে মানিকগাঙ্গুলীর ধর্মমঙ্গলে গোটা শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায় (পোড়াবে যতনে যেন থাকে গোটা গোটা, চারি গোটা চাবুক মারিল বাম হাতে)। আসামি ও ওড়িয়া ভাষাতেও গোটা শব্দটি রয়েছে। আবার সংস্কৃত 'গুণ্ডি' বা 'কুট্টিত' থেকে আসা গোটা মানে গুড়া, বিশেষত নানা মসলার চূর্ণ।

এক্ষেত্রে শব্দ দুটির বিবর্তন (বাংলা একাডেমীর অভিধান মতে) হচ্ছে : গুণ্ডি > গোটা ; কুট্টিত > কোটা > গোটা। গোটার মসলা মানে মানে বিবিধ মসলার মিশ্রণ যা যা ভেজে গুড়া করে তরকারিতে ব্যবহার করা হয়। সংস্কৃত গোষ্ঠ থেকেও বাংলায় গোটা শব্দটি এসেছে। এ গোটা অর্থ ছোট ছোট ফল, বিষফল (সাধ করিয়া খাই পীরিত গাছের গোটা - পূর্ববঙ্গ গীতিকা)। এ গোটা থেকেই বাংলায় গোটানাল শব্দটি এসেছে।

গোটানাল মানে লালাস্রাব, গাঁজলা (বালিসটে ময়লা তাতে আবার তোমার গোটানালে রাতদিন রসবতী - দীনবন্ধু মিত্র)। গোটানাল শব্দের আরেকটি অর্থ হচ্ছে ফেনা। বিষফল, মরিচ, ওল ইত্যাদি মুখে দিলে যে গাঁজলা ওঠে, তাও গোটানাল (জিভ চার আঙ্গুল বেরিয়ে পড়ে মুখে গোটানাল ভাঙছে - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। হিন্দি 'গোটা' থেকেও বাংলায় গোটা শব্দটি এসেছে। আর এ গোটা মানে সোনা বা রূপার জরি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।