আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আফগান মাংশে


এই যে! হ্যাঁ আপনেকি বলছি আজকাল দুচার টুকরো লিথিয়াম ছাড়া আপনার মোটেই চলেনা। ফোনে রিং বাজলো? আচ্ছা, তার ব্যাটারি দিব্যি লিথিয়ামে চার্জ হয়। বিছানায় হেলান দিয়ে ল্যাপটপে লেখা পড়ছেন? তা পড়তেই পারেন কারণ আজকাল টেবিলযন্ত্রের চেয়ে কোলযন্ত্রের প্রতিই মানুষের আগ্রহ বেশী । সেটিকে ওল্টালেও দিব্যি আরেকটুকরো লিথিয়াম পাবেন। টেবিলের পাশে বাড়ির পিচ্চি বেশী তাফালিং করছে? ছবি তুলে রাখবেন? তার ব্যাটারীতেও লিথিয়াম।

আর বছর দশেকের মধ্যে যে গাড়িতে চড়বেন তাও লিথিয়াম ব্যাটারী চালিত হবার সম্ভাবনা ধরেন সিকিভাগ। কারণ হালকা, উচ্চ তাপ ক্ষমতাসম্পন্ন ধাতুটি সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটারীর এনোড হিসেবে সর্বক্ষেত্রে প্রচন্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাপী লিথিয়ামের সাম্প্রিতিক ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে সাথেই এর উৎসের সংখ্যা কিন্তু তেমন বাড়ছে না। আজকালকার সময়ে চিলি এবং আর্জেন্টিনা সাথে অজিরা মিলে অধিকাংশ চাহিদার যোগান দিচ্ছে। সম্প্রতি চীনেরাও কমবেশী উৎপাদন শুরু করেছে।

লিথিয়াম প্রাকৃতিকভাবে কমবেশী পাওয়া গেলেও তাকে বিশুদ্ধভাবে আলাদা করা মনে হয় বেশ ঝামেলার কাজ। লিথিয়াম মেশা নোনাপানি থেকেই সম্ভবত কিঞ্চিত কম খরচে এই বস্তু আহরন করা সম্ভব। আর এই রকম পানির বৃহত্তম উৎস হল বলিভিয়ার ইউনি হ্রদে। নাম শোনেন নাই? ম্যাটের নাচানাচির দ্বিতীয় ভিডিওটি দেখেছেন? না দেখলে প্রথম পনের সেকেন্ড দেখে নেন। শ্বাসরুদ্ধকর রকমের ভয়াবহ সৌন্দর্যের আধার এই হ্রদটি খুব অল্পদিনেই ছিড়েখুঁড়ে একাকার করে ফেলবে মনে হয় আন্তর্জাতিক চক্র।

কাছাকাছি রকমের একটা গল্প ছিল বন্ডের কোয়ান্টম অফ সোলেস মুভিটিতে। মনে পড়ে? তবে আসলেই কাছাকাছি রকমের চক্রান্ত সম্ভবত চলছে বলিভিয়াতে খাবার পানি নিয়ে। কই যেন একবার পড়েছিলাম বলিভিয়ার সরকার পরিকল্পনা করছে তাদের লিথিয়াম তারা নিজেরা উৎপাদন করে প্রয়োজনে রপ্তানী করবে। আমি বলব স্লিম চান্স! সমস্যা খানিকটা সেরকমই আফগানীদের। প্রাচীনকাল থেকেই কিছু আখরোট-বাদাম আর আজকালকার পপিচাষ ছাড়া তেমন কোন আয়ের উৎস নেই এই ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া দেশে।

কদিন আগেই ন্যুয়র্ক টাইমস বোমা ফাটালো (রিপোর্টটি না পড়তে পারলে এখান থেকে পাসওয়ার্ড দেখে নিন ) এই বলে যে মাটির তলায় লিথিয়ামের যেই পরিমাণ সংগ্রহ সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কার হয়েছে তাতে দিব্যি সাতপুরুষ পায়ের ওপরে পা তুলে খাবার জন্য যথেষ্ট। ভিন্ন রিপোর্টে যদিও বলা হচ্ছে যে, মার্কিন আর রাশান ভূবিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরেই আফগানিস্তানের এই ডিপোর কথা জানতো কিন্তু ওপর মহলে এই নিয়ে তেমন সাড়া না থাকায় আর এই নিয়ে আগানো হয়নি। দুর্বল ব্যাবস্থাপনার অস্থিতিশীল রাষ্ট্রের যখন বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ আবিষ্কার হয়, তখুনি আমি বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যাই। এমনিতেই ভোটাভুটির আগে থেকেই ওবামার নজর ছিল ইরাক থেকে সরিয়ে আফগানিস্তানের দিকে সামরিক শক্তি নিয়োগের। এখন আশঙ্কা করছি তার এই আকাঙ্খা বহুদূর আর বহুদিনের হবে।

যদি লিথিয়াম আহরণের দিকে যায় তাহলে যথারীতি ওপরমহলের হাতেগোণা পরিবার তারছিড়া রকমের পয়সাওয়ালা হয়ে যাবে আর পায়ে ধরে আমেরিকান কিছু মাইনিং কোম্পনী “সুলভে” কাজ করবে। আর গণতন্ত্র বলেন বা সুশাসনই বলেন তার পথ মোটামুটি চিরদিনের জন্য এই হার না মানা জাতির কাছ থেকে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে যুদ্ধবাজ এই প্রজাতি সেই আলেক্সান্ডারের সময় থেকে বিদেশীদের জন্য মাথাব্যাথা ছিল আছে এবং সম্ভব থাকবে। এখন এই মুহুর্তে আফগানিস্তানে কিন্তু ফুল স্কেল যুদ্ধ চলছে। আজকালকার মিডিয়া তেমন ফলাও করে প্রচার না করলেও মার্কিন জেনারেলদের এখনো ঘুম হারাম করে ছাড়ছে এই ভাঙ্গাচোরা বিরতিহীন পাগলারা।

অনেকেই হয়তো আগেই দেখেছেন কিন্তু সেই এলাকার অস্ত্রবাজীর প্রত্যক্ষদর্শী রিপোর্টটি আবার শেয়ার করলাম। আপনা মাংশে হরিণা বৈরি, আপনা লিথিয়ামে? বহুদিন আগে এক বুড়োর কাছে শুনেছিলাম তাদের ছেলেবেলায় কাবুলিওয়ালা আসতো। রাস্তায় ডেকে বেড়াতোঃ কাবুল কি আনার, আনে মে চার, খাও বাবু, বাড়া মযাদার সেই দিন কি আর কখনো আসবে মানুষ নিশ্চিন্তে বলতে পারবে? কাবুলিওয়ালা! তোমার ঝোলার ভেতর কি? (কন্সপিরেসি থিউরি হয়ে গেল নাকি? আগামী দশকে দেখা যাবে )
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।