আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আফগান শরণার্থী সমস্যা

শরণার্থী সমস্যা বর্তমান পৃথিবীতে বহুল আলোচিতো এবং ভয়াবহ সমস্যা। সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শরণার্থীরা। সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এই শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় ১ পঞমাংশই আফগান শরণার্থী। অধিকাংশ আফগান শরণার্থী পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং ইরানে আশ্রয় গ্রহণ করে। আফগানিস্তানের এই ভয়াবহ শরণার্থী সমস্যার জন্য কিছু কারণকে দায়ী করা হয়।

এর মধ্যে আফগানিস্তানের ভৌগলিক অবস্থান, অভন্তরীণ রাজনৈতিক অস্তথিরতা এবং বিদেশী হস্তক্ষেপ অনত্যম। আফগানিস্তান পরিচিতিঃ আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় নাম ইসলামিক রিপাবলিকা অব আফগানিস্তান”। এটি একটি ভূমিবদ্ধ দেশ। এটি দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ার কিছু অঞ্চল নিয়ে গঠিত। আফগানিস্তানের দক্ষিণ ও পূর্ব সীমান্তে রয়েছে পাকিস্তান, পশ্চিমে ইরান, উত্তরে তু্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজাকিস্তান এবং উত্তর পূর্বে রয়েছে চীন।

আফগানিস্তানের রাজধানী - কাবুল , আয়তন-৬,৪৭,৫০০বগকি,মি জনসংখ্যা-৩৫,৩২০,৪৪৫(২০১১)বিশ্বব্যাংক সরকার-রাষ্ট্রপতিশাসিত,ইসলামি প্রজাতন্ত্র ভাষা-পশ্তু স্বাধীনতালাভ-১৯১৯সাল,১৯আগষ্ট জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ - ১৯ নভেম্বর ১৯৪৬ আফগান শরনার্থী সমস্যার উৎপত্তি - আফগান শরনার্থী সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে কয়েকটি ধাপে । মূলত ' স্নায়ু-যুদ্ধ ' (cold-war) চলাকালীন সময় থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বিভিন্ন ধাপে ধাপে এই সমস্যা মারাত্মক আকার ধারন করে । স্নায়ু যুদ্ধ চলাকালীন সময় ব্রিটেন যখন ১৯৪৭ সালে ভারত থেকে কতৃত্ব তুলে নেয় , তখন আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয় রাষ্ট্রি আফগানিস্তানে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা শুরু করে । এর মূল কারন ছিল আফগানিস্তানের ভৌগলিক অবস্থান। আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ই আফগানিস্তানে তাদের প্রভাব বলয় গড়ে তোলার প্রতি আগ্রহী হয় ।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আমেরিকার মধ্যে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারন ছিল মূলতঃ আফগানিস্তানের মুল সড়ক পথ , বিমান বন্দর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা গুলো থেকে সুবিধা গ্রহনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান শক্ত করা । উভয় রাষ্ট্র চেয়েছিল আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে । স্নায়ু যুন্ধ (cold-war) চলাকালীন সময়েই ১৯৭৩ সালে আফগানিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট হন '' দাউদ খান '' (Darul khan) । এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৮ সালের এপ্রিলে সমাজতান্ত্রিক ''Peoples Democratic party of Afghanistan '' আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতায় আসেন । ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান এক ভয়াভ যুদ্ধের মুখে পড়ে - যার একদিকে ছিল আমেরিকা সমর্থিত ''মুজাহিদিন '' (Mujahideen ) এবং সোভিয়েত সমর্থিত আফগান সরকার।

এই ভয়াবহ যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং অসংখ্য মানুষ হয়ে পড়ে বস্তুহারা। সমাজতান্ত্রিক অভ্যূত্থান এবং আফগানিস্তান সোভিয়েত যুদ্ধঃ ১৯৭৮ সমাজতান্ত্রিক PDPA (People Democratic Party of Afganistan) ক্ষমতা গ্রহনের কয়েকমাস পরই সামাজতান্ত্রিক সরকার এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম পর্যায়ে আফগান শরণার্থী সমস্যা উদ্ভব হয়েছিল ১৯৭৮ সালে যখন সমাজতান্ত্রিক সরকার একটি বৃহৎ কৃষি পুনর্গঠন কার্যক্রম হাতে নেয়। যার ফলে গ্রামীণ জনগণ ক্ষিপ্ত ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে একটি পুতুল সরকার ব্যবস্থা চালু করে এবং সামরিক বাহিনীতে প্রভাব বিস্তার করে এবং আফগানিস্তানের সাধারন জনগণের ওপর অত্যাচার শুরু করে।

ফলে হাজার হাজার আফগান জনগণ শরণার্থী হিসেবে পাকিস্তানে আশ্রয় গ্রহণ করে। ১৯৭৮-১৯৭৯ সালের মধ্যেই আফগানিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসী কে আফগানিস্তান থেকে সাময়িক কিংবা স্থায়ী ভাবে নিরাপত্তা অন্বেষণের জন্য চলে জেতে হয়েছিল। আফগানিস্তানের সোভিয়েত ইউনিওনের দুবছর অবস্থানের কারনেই প্রায় ১.৫ মিলিয়ন আফগান, শরণার্থীতে পরিণত হয়। ১৯৮৬ সালের মধ্যেই আফগান শরণার্থীদের সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ৫ মিলিয়নে। ১৯৭৯ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই আমেরিকা “মুজাহিদিন”দের সহায়তা প্রদানের কর্মসূচি শুরু করে।

আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলো “মুজাহিদিন”দের পক্ষ নেয়, কারণ মুজাহিদিনদের কার্যক্রম ছিল সোভিয়েত সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে। একদিকে পাকিস্তান শরণার্থী মুজাহিদিনদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করে এবং পশ্চিমা বিশ্ব শরণার্থী শিবিরগুলোতে অর্থ সরবরাহ শুরু করে, যার অধিকাংশ ব্যয় করা হত ‘মুজাহিদিন’ সংগঠনটির ভিত্তি গঠনে। অর্থাৎ আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রত্যক্ষ ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ইরাকে অবস্থানরত আফগান শরণার্থীদের সেরকম সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করেনি। কেননা সে সময় ইরানে পশ্চিমা বিরোধী শাসন ব্যবস্থা ক্ষমতায় ছিল।

১৯৭৯-১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের এই যুদ্ধে ১০ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং প্রায় ৬ মিলিয়ন আফগান, পাকিস্তান এবং ইরানে পালিয়ে যায়। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। অপরিসীম ক্ষতি এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তানের উপর থেকে হস্তক্ষেপ প্রত্যাহার করে। কিন্তু ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আফগান সরকার নাজিবুল্লাহ কে সহায়তা করে। আফগানিস্তান গৃহযুদ্ধঃ অনেক বছর যুদ্ধের পর “মুজাহিদিন” নাজিবুল্লাহ সরকারকে পরাজিত করে।

আফগান জনগণ এবং শরণার্থীরা “মুজাহিদিন” এর এই বিজয়কে স্বাগত জানায়। এবং এর ফলে ১৯৯২ এ ১.৫ মিলিয়ন শরণার্থী আফগানিস্তানে ফিরে আসে। কিন্তু “মুজাহিদিন” আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়। আফগানিস্তানে যুদ্ধের এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন হয়। সেখানে যুদ্ধের নেতারা নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট অঞ্চলের কর্তৃত্ব নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে।

(চলবে........) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।