আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভিনন্দন মাহমুদুর রহমান



ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন, ‘‘তোমার মতামতের সাথে আমি একমত নাও হতে পারি কিন্তু তোমার মতামত প্রকাশের অধিকার আমি জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব। ’’ সংবাদপত্র হলো একটি জাতির দর্পণ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূলভিত্তি জনমত। এই জনমত প্রকাশের অবাধ অধিকার থাকতে হবে। যেন জনগণ ইচ্ছামত সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করতে পারে।

এতে কেউ বাধা দিতে পারে না। কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকার ভুল করলে সাংবাদিকরা সত্য বিষয়টি লিখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেন। আর এভাবে জনমত তৈরীতে ভূমিকা রাখে সংবাদপত্র। এটি সংবাদপত্রের অধিকার ও সামাজিক এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা। সাংবাদিকতাকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।

একটি গণতান্ত্রিক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের অনুপস্থিতির কথা ভাবাই যায় না। কিন্তু সেখানে থাকতে হবে দেশপ্রেম, সামাজিকতা, সততা, স্বচ্ছতা, মানবিক মূল্যবোধ ও সাংবাদিকতার সর্বজনীন নীতিমালা এবং পেশাদারী মনোভাব একান্তই অপরিহার্য। আমার দেশ সেই প্রত্যয় নিয়ে জনগণের মুখপত্র হিসেবে এগিয়ে চলছে। হঠাৎ একদিন শুনলাম আমার দেশ-এর ডিক্লারেশন বন্ধ, পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার। কথাটি শুনে অাঁৎকে উঠেছিলাম কিন্তু হতবাক হয়নি।

কারণ কথায় বলে, শিয়ালের লেজ বার বছর বাঁশের কঞ্চিতে রাখলেও নাকি সোজা হয় না। আওয়ামী লীগেরও বাকশালী অভ্যাস বদলায়নি। এই আওয়ামী লীগই তো ৪ পত্রিকা বাদে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। চ্যানেল ওয়ানও একটি খোঁড়া অজুহাতে বন্ধ করে দিয়েছে এ সরকার। এ সরকারের সময় আরও মিডিয়া বন্ধ হলে আশ্চর্য হবার হয়ত কিছুই থাকবে না।

ইতোমধ্যেই সরকার টক শোগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, বন্ধ হওয়ার তালিকায় আছে আরো অনেক চ্যানেল ও পত্রিকা। চলছে গোপনে কন্ট্রোলিং। অনেককে ইতোমধ্যে রেডসিগন্যালও নাকি দেয়া হয়ে গেছে। সরকার আমার দেশ-এর ডিক্লারেশন বন্ধ ও পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে মিডিয়ার ওপর যে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখার মধ্য দিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আবার সু-প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এ বিজয় সত্য ও ন্যায়ের, এ বিজয় আমার দেশ পত্রিকা ও তার পরিবারের, তাই আমার দেশ পত্রিকাকে অভিনন্দন। দুই. প্রতিটি জাতিই কিছু মানুষকে নিয়ে গর্ব করে। তারা দেশ ও জাতির সম্পদ। যারা নিঃস্বার্থভাবে একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে থাকেন। যিনি দেশ ও জাতির প্রয়োজনে নিজের জীবন বাজি রেখে এগিয়ে চলছেন, অকুতোভয় সৈনিক, সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা, আমার দেশ পাবলিকেশন্স-এর চেয়ারম্যান, পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান।

ব্যক্তি জীবনে সততা আর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে অসামান্য অবদান রয়েছে তার। বিগত দিনের সেনাসমর্থিত অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে যিনি এক ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছেন। এ রকম নিঃস্বার্থ অকুতোভয় কিছু সৈনিক একটি জাতির শক্তির উৎস। দেশ ও জাতি যখন বিশেষ ক্ষেত্রে সৎ ও দক্ষ মানুষের প্রয়োজন অনুভব করেন তখন এমন লোকরাই সে অভাব পূরণ করতে সচেষ্ট হয়। বিগত সেনাশাসন আমলে যখন আধিপত্যবাদীদের বিরুদ্ধে কলম ধরার মত লোক ছিল না তখন জাতি প্রকৌশলী থেকে সাংবাদিক হিসেবে তাকে কাছে পেয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের কথা বলা পত্রিকা দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক যখন হাল ছেড়েছিলেন তখন আমার দেশ পরিবার মাহমুদুর রহমানকেই সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মাত্র দুই বছরে দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলে দেশ ও বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছে পত্রিকাটি। আর ঠিক সেই সময়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী দুর্বৃত্তরা বিমানবন্দর এলাকায় তার গাড়িতে হামলা চালিয়েছে। অবশ্য হামলাকারীর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। বিগত জরুরি অবস্থায় বাংলাদেশকে রাজনীতিশূন্য করার হীনচক্রান্তের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন বজ্রকঠোর।

তার লেখনীর মাধ্যমে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ করে তুলেছেন দেশের জনগণকে। জরুরি অবস্থার সময় বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী যখন ফখরুদ্দীন ও ম. উ আহমদ স্তুতিতে ব্যস্ত, তখন মাহমুদুর রহমান তার শক্ত লেখনী দিয়ে কাঁপিয়ে তুলেছেন তাদের অবৈধ ক্ষমতার মসনদকে। শুধু তাই নয়, তিনি বাংলাদেশের তথাকথিত সুশীল ও ভারতের অনুচর ‘‘র’’ এর এজেন্টদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা-উত্তর সর্বপ্রথম কলমই ধরেননি বরং তথাকথিত সুশীলদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। জরুরি অবস্থার অবৈধ সরকারের যম ছিলেন মাহমুদুর রহমান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন এর মতে, ‘‘জনসাধারণের সম্মতি ব্যতীত তাদেরকে শাসন করার অধিকার কারো নাই’’।

জনগণের রায় যেহেতু ক্ষমতার মূলভিত্তি তাই গণতন্ত্রে সরকার স্বৈরাচারী আচরণ করতে পারবে না। জনসাধারণের মতের বা স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করলে সরকার শাসন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আবার সরকার স্বৈরাচারী হলে জনগণ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে তাদেরকে উৎখাত করতে পারে। প্রয়োজনে জনগণ বিদ্রোহ ও সংগ্রামের পথ বেছে নিতে পারে। এ জন্য আজ সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি নব্য স্বৈরাচারী মইন উ আহমদের বিচার।

কেননা, বিগত সেনাসমর্থিত অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দেশ ২০ বছর পিছিয়েছে, আর তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখছে বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। বিরোধী দল ও মতের অস্তিত্বকে মেনে না নিলে তা গণতান্ত্রিক শাসন হতে পারে না। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ভাষায় দলই রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করবে। কিন্তু দল ও রাষ্ট্রের পার্থক্যের জায়গাটি তো এখানেই যে, কোন দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবে, কিন্তু দল যখন শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করবে তখন সে আর দল নয় সে নিজেই রাষ্ট্র। তখন, তাকে হিংসা-বিদ্বেষের ঊর্ধ্বে ওঠে ভূমিকা রাখতে হবে।

নিজেকে করতে হবে সবার জন্য উদার আর পরিহার করতে হবে দলীয় সংকীর্ণতা। আর যে সরকার দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারবে না, তার নিকট ফ্যাসিস্ট আচরণ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। সেই ফ্যাসিস্ট দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। সেই দলনের শিকার বিরোধী দল ও দলীয় কণ্ঠ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। মাহমুদুর রহমানের মত মানুষদের এই অবহেলিত জাতির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

যিনি একাধারে প্রশাসক, সংগঠক, লেখক, সততা এবং সাহসের ধারক ও বাহক। এতোগুলো গুণের সমন্বয় একজন মানুষের জীবনে সত্যিই দুর্লভ। এটি আল্লাহর বিরাট বড় নিয়ামত ছাড়া আর কিছ নয়। আল্লাহ তাকে দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেকে আরও ভূমিকা পালনের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন। সম্প্রতি লন্ডনেও তার ওপর হামলা হয়ে গেল।

তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেন। কথায় বলে, রাখে আল্লাহ মারে কে। দেশের মানুষ তার জন্য দোয়া করছে। মাহমুদুর রহমান আদালত অবমাননার জন্য, ক্ষমা না চেয়ে বীরপুরুষের পরিচয় দিয়েছেন। যে রত্নগর্ব মা এমন সন্তান পেটে ধারণ করেছেন তাকে মোবারকবাদ! এই সাহসী মা'কে দেখেছে জাতি সারারাত ডিবি অফিসের সামনে বসে থাকতে তসবিহ হাতে সন্তানের সাক্ষাতের প্রত্যাশায়।

পরের দিন সকল জাতীয় পত্রিকার ঐ ছবিটি অনেককে কাঁদিয়েছে, কিন্তু হাজারো আকুতি নাড়া দেয় না আমাদের ডিবি কর্তাদের। তারাও তো কোন না কোন মায়ের সন্তান তাই নয় কি? কত মানুষের চোখের পানি পড়ে এ ডিবি অফিসের সামনে তাতো আল্লাহই ভালো জানেন। যাক বিশিষ্ট কলামিস্ট ফরহাদ মজহার স্যারের-লেখার অংশ দিয়েই শেষ করতে চাই, তিনি লিখেছেন- মাহমুদুর রহমান এখন বিবেকের বন্দী। তিনি আদালত অবমাননার জন্য ক্ষমা না চাইবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার কারণে আজ সারা দুনিয়ার মানবাধিকার কর্মীরা তার পক্ষে সারি বেধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। নির্যাতন ও মানুষের প্রতি অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণের বিরুদ্ধে লডাই এই সময়ের প্রধান কর্তব্য।

দেশে সেই আন্দোলনের সামনের কাতারে চলে এসেছেন মাহমুদুর রহমান; সাবাস! মাহমুদুর রহমান। আরো দেখুন : ) Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.