আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাইলাতুল বরাত-এর তাৎপর্য

সবাইকে সাথে নিয়ে এগুতে চাই।

লাইলাতুল বরাত-এর তাৎপর্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অতীব ভালবাসার কারণে মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর সৃষ্টি জগতের অত্যন্ত মূল্যবান সৃষ্টি জ্ঞানদান করে মানবজাতিকে সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। এ পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহতা’আলা মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ঘোষণা করেছেন: “হুয়াল্লাযী জা’আলা লাকুম মাফিল আরদে জামী’য়ান” (২:২৯)। অর্থাৎ “তিনি মহান আল্লাহ তোমাদের (মানুষের) জন্য এ পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।

” এতদসত্বেও মানুষ ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক অন্যায় করে, অপরাধ করে, ভুল করে। এসব অন্যায় অপরাধ ও ভুলের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ ও মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং জাগতিক ও চিরন্তন জীবনের সমৃদ্ধি ও শান্তি লাভ করার জন্য করুণাময় রাহীম, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের জন্য কতগুলো বিশেষ সুযোগ, সময় ও লগ্ন দান করেছেন। লাইলাতুল বরাত উক্ত সুযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই মহিমান্বিত রজনীতে কেউ যদি তার পাপের কথা স্মরণ করে লজ্জিত, অনুশোচিত ও অনুতপ্ত হƒদয়ে তওবা করে এবং এমন পাপ আর কখনো করবে না বলে মনেপ্রাণে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট অঙ্গীকার করে, তাহলে তিনি দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা করলে সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দিতে পারেন। এ বিষয়ে উল্লেখ করে আল্লাহতা’আলা রাসূলে পাক (স.) কে উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করেন: “কুল ইয়া ইবাদিয়াল্লাযিনা আসরাফু আলা আনফুসে হিম লা তাকনাতু মির রহমাতিল্লাহ ইন্নাল্লাহা ইয়াগ ফিরুয যুনুবা জামীয়ান”।

অর্থাৎ “হে রাসূল আপনি আমার সে সব বান্দাদেরকে বলুন যারা নিজের উপর নিজেরাই অপরাধ করে সীমা অতিক্রম করেছে তারা যেন আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয় (যদি তারা কায়মনোবাক্যে, অনুতপ্ত হƒদয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে তা হলে) নিশ্চয় আল্লাহ (ইচ্ছা করলে) সকল অপরাধ ক্ষমা করে দিতে পারেন” (৩৯:৫৩)। রহমত ও নৈকট্য লাভ করার মহামূল্যবান ও অনন্য সুযোগগুলোর একটি বিশেষ সুযোগ হলো লাইলাতুল বরাতের এই মহিমান্বিত রজনী। কারণ আল্লাহতা’আলা এই পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য আর মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য দুটি বিপরীতধর্মী শক্তি, পশুত্ব ও মানুষ্যত্ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষের পক্ষে অন্যায়, অপরাধ ও ভুলভ্রান্তি করা স্বাভাবিক। তবে ভুল করার পর মানুষ যদি ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে মহান প্রভুর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি তাতে খুশি হন এবং তাঁর অবারিত অনুগ্রহ দান করে থাকেন।

তাই আমরা দেখতে পাই আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টির পর মুয়াল্লিমূল মালাকুত বা ফেরেশতাগণের শিক্ষক ইবলিশ আল্লাহতা’আলার একটি নির্দেশের অবমাননা করে চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত হয়ে গেল অপরদিকে আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ও আল্লাহর একটি নির্দেশ পালন করতে না পারার কারণে ভুল বা ত্রুটি করেছিলেন অথচ তারপরও তিনি একজন শ্রেষ্ঠ নবী হয়েছিলেন। এই দুজনের মধ্যে পার্থক্য হলো ইবলিশ অপরাধ করার পর অনুতপ্ত না হয়ে অহংকার করে বলেছিল: ‘খালাকতানি মিন নারে ওয়া খালাকতাহু মিন ত্বীন’ অর্থাৎ “হে প্রভু তুমি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছ আর আদমকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছ” (তাই আমি শ্রেষ্ঠ, আদমকে আমি সিজদা বা সম্মান করব না) অনুশোচনা ও বিনয়ের পরিবর্তে অহংকার করার কারণে ইবলিশ অভিশপ্ত হয়ে গেল, অপরদিকে হযরত আদম (আ.) ভুল করার পর বিনয়াবনত হয়ে অনুতপ্ত হƒদয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছিলেন: “রাব্বানা যালামনা আনফুসানা ওইনলাম তাগফিরলানা ও তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খসেরীন। ” অর্থাৎ “হে আমার প্রভু আমি তো নিজের উপর যুল্ম করে ফেলেছি যদি তুমি ক্ষমা ও দয়া না কর তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো”। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর অসীম দয়ার কারণে আদম (আ.) কে ক্ষমা করলেন এবং তার ভুল স্বীকার, বিনয় ও দয়া প্রার্থনা করার কারণে তাঁকে নবুয়তের মর্যাদাও দান করলেন। আল্লাহতা’আলা তাঁর ভালবাসা ও দয়ার কারণে মানুষ সৃষ্টি করেছেন।

তিনি মানুষকে অত্যন্ত ভালবাসেন। তাই মানুষ অপরাধ করার পর যদি অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে তিনি ঘোষণা করেছেন: ‘আল্লাযীনা তাবু ওয়া আসলাহূ ওয়া বাইয়্যুনু ফাউলা ইকা আতুবু আলাইহিম ওয়া আনাত তাউয়াবুর রাহীম”। অর্থাৎ “যারা (অপরাধ করার পর অনুতপ্ত হয়ে) তওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করে ও সত্য প্রকাশ করে, আমি তাদের তওবা কবুল করি, আর আমি তওবা গ্রহণকারী করুণাময়” (২:১৬০)। তবে লাইলাতুল বারাতের বিশেষ তাৎপর্য হলো এই রাতে প্রিয় নবী সারওয়ারে কায়েনাত হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর কবর যিয়ারত করা।

এর মাধ্যমে তিনি মানুষকে যেমন পার্থিব জীবনের অবসান বা মৃত্যু চেতনার শিক্ষা দিয়েছেন তেমনি পূর্বের পাপ পংকিলতার জন্য অনুতপ্ত হয়ে পরবর্তীতে এমনটি আর কখনও না করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করে পার্থিব ও পারলৌকিক শান্তি লাভ করার জন্য নতুন শপথ গ্রহণ করার বাস্তব শিক্ষা দান করেছেন। বস্তুত লাইলাতুল বরাত জাগতিক জীবন এবং এই জীবনের পরিসমাপ্তি তথা এই সীমিত জীবনের উদ্দেশ্য ও সফলতা বিষয়ে হিসাব নেয়ার রজনী। লাইলাতুল বরাত সৌভাগ্যের রজনী তাদের জন্য যারা এই মহিমান্বিত রজনীর মাধ্যমে পূর্বকৃত গুনাহের জন্য লজ্জিত হয়ে কান্না ও বিনয়ের দ্বারা ক্ষমা ও মুক্তি অর্জন করতে পারে এবং পরবর্তী জীবন তথা চিরন্তন জীবন শান্তি ও সুখময় করার পথে চলার সুদৃঢ় অঙ্গীকার করে মনের তৃপ্তি লাভ করতে সক্ষম হয়। আর এর জন্য প্রয়োজন পরনিন্দা ও পরের সমালোচনা পরিহার করে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করা। মানুষের কৃত অন্যায় অপরাধ দুনিয়ার সকল মানুষ ও সবকিছু থেকে গোপন করা গেলেও আল্লাহর নিকট থেকে গোপন করা যায় না।

তিনি সবকিছুই দেখেন, শুনেন ও জানেন। এমনকি মানুষ মনে মনে কি চিন্তা করে তাও আল্লাহ জানেন। তিনি ঘোষণা করেছেন: “ইন্নাহু আলীমুম বিযাতিস সুদূর” অর্থাৎ “মানুষের মনে কি আছে তা আল্লাহ অবশ্যই জানেন” (১১:৫) তাই ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা না করে অকপটে পাপ ও ভুলভ্রান্তি স্বীকার করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং কৃত পাপ ও অপরাধ আর কখনও করব না এমন শপথ নেয়া হলো বৃদ্ধিমানের কাজ। আর এইজন্য লাইলাতুল বরাত হলো এক অনন্য সুযোগ যাতে দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অফুরন্ত রহমত বর্ষিত হয়। মনে রাখতে হবে এমন মহিমান্বিত রজনী হয়তো জীবনে আর নাও আসতে পারে।

আর এই পবিত্র রজনীতে পটকা ও বাজি ফুটিয়ে মুমিনের ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটানো জঘন্য অপরাধ। এই রাতে নফল ইবাদত ও গরীব-দুঃখীকে সাহায্য করার পরিবর্তে পটকা বা বাজি ফুটিয়ে পাপ পংকিলতায় লিপ্ত হওয়া কোনমতেই উচিত নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে লাইলাতুল বরাতের মাধ্যমে তাঁর অফুরন্ত রহমত লাভ করার এবং পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনের সুখ ও শান্তি লাভ করার শক্তি দান করুন, আমীন।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।