আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ হোক সবার জন্য

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

আজ প্রথম আলোতে সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ একটা দারুণ কলাম লিখেছেন। একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের কত বেতন হওয়া উচিত, সেটা তিনি হিসেব কষে দেখিয়েছেন। লেখাটার লিংক মালিক দিতে চাইবেন কম মজুরি। শ্রমিক বেতন চাইবেন বেশি। এই টানাপোড়েন থাকবে সর্বকালে।

মালিকরা কখনই বেতন বাড়াতে চায় না। চলে শ্রম শোষণ। এই শ্রম শোষণ ঠেকাতেই সর্ব নিম্ন বেতন দেয়ার ধারণা। বিভিন্ন দেশে সরকার শ্রমিকের নূ্যনতম বেতন ধার্য করে দেয়। এই নূ্যনতম বেতন ধার্য করার দায়িত্বটা সরকারকেই চিরকাল নিতে হয়।

আমাদের মতো দেশে গার্মেন্টস শ্রমিকরা যেভাবে আন্দোলন করতে পারে, অন্য সেক্টরের শ্রমিকরা সেভাবে সংঘবদ্ধ নয়। ফলে কেবল গার্মেন্টস খাতে সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করার কথা বেশি আলোচিত হয়। অথচ সরকারের উচিত গোটা শ্রমিক শ্রেণীর জন্য নূ্যনতম বেতন নির্ধারণ করে দেয়া । শ্রম শোষণ বন্ধ করতে হলে এটা খুব জরুরী। সেই সাথে বেতনের সাথে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার সম্পর্ক নির্ধারণ করা জরুরী।

যে যত বেশি শিক্ষিত, তার বেতন স্কেল তত বেশি নির্ধারণ করা দরকার। তাহলে মানুষ শিক্ষিত হতে আগ্রহী হবে এবং চেষ্টা করবে। পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাগত ট্রেনিং ও কর্মশালায় অংশগ্রহণের কারণেও বেতন বাড়া উচিত। এতে করে মানুষ পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নানা ট্রেনিং ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ বাড়াবে। অন্য দিকে অভিজ্ঞতার কারণেও বেতন বাড়া উচিত।

যারা যত বেশি অভিজ্ঞতা তার তত বেশি বেতন হওয়া উচিত। বাস্তবে আমাদের দেশে বহু অশিক্ষিত মানুষের বেতন, শিক্ষিত মানুষের চেয়ে বেশি। ফলে অনেক শিক্ষিত মানুষ পেশাগত জীবনে হতাশায় ভোগে। শিক্ষার প্রতি তার ও তার পরিবারের এক ধরনের বিতৃষ্ণা তৈরি হয়। এই ধরনের বিতৃষ্ণা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণের প্রতিবন্ধক।

সরকারী চাকুরেদের মতো বেসরকারী চাকুরেদের প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে বেতন বাড়ার জন্য একটা নীতিমালা করা দরকার। বেতন বাড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা হলে দেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব হবে না। কয়েকটা উদাহরণ দেয়া যাক। যেমন : শিক্ষকদের বেতনও ভীষণ কম। সরকারী স্কুল শিক্ষকরা মোটামুটি বেতন পেলেও বেসরকারী স্কুলের শিক্ষকরা খুবই কম বেতন পান।

দিনের পর দিন তারা কাজ করে গেলেও বেতন বাড়ার নামগন্ধ থাকে না। এই রকম নানা ক্ষেত্রে যারা বিভিন্ন অফিসে কাজ করেন, তারা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার তুলনায় অনেক কম বেতন পান। বাস্তবে একটা লোক দিনের পর দিন খেটে মরলেও মালিক তার বেতন বাড়ায় না। ফলে এক সময় সেই লোকটির আর চাকুরি করতে ভালো লাগে না। তার কর্মদক্ষতা দিন দিন কমে যেতে থাকে।

নিজেকে তার বঞ্চিত ও অসহায় মনে হয়। কেবল গার্মেন্টস সেক্টর নয়, বাংলাদেশে বহু সেক্টরেই মালিকদের এই শোষণমূলক আচরণ বিদ্যমান। এই শ্রমশোষণের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বেতন বাড়ার একটা সুনির্দিষ্ট সরকারী নীতিমালা থাকার দরকার। শ্রমশোষণ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রথমে দরকার দেশের মোট কর্মশক্তি সম্পর্কে একটা ডাটাবেস। সরকারী চাকুরে বাদে বেসরকারী খাতে চাকুরি করছেন কতজন সেটা জানা জরুরী।

তাদের নাম ধাম ও কর্মস্থল ও বেতনের পরিমাণ জানিয়ে একটা তথ্য জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত সরকারের। আমাদের একটা জাতীয় তথ্য ভাণ্ডার আছে। সেই তথ্য ভাণ্ডারটি ব্যবহার করে এই তথ্যগুলো খুব সহজেই আপডেট করা যায। আর এই তথ্যগুলো জানা থাকলে সরকার খুব সহজেই নির্ধারণ করতে পারবে, কার বেতন কত হবে এবং কি পন্থায় বেতন বৃদ্ধি পাবে। জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারটি ব্যবহার করে খুব সহজেই আমরা শ্রমশোষণের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে একটা জনশক্তি নির্ভর দেশ গড়ে তুলতে পারি।

কেবল গার্মেন্টস নয়, সকল পেশার জন্যই সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি জানাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.