আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি বাস্তব নির্ভর স্ক্রিপ্ট

নীল পত্র আমার চরিত্রসমূহ - মুমু ,বাবলি খালা, কাজের মেয়ে ফরিদা সিকোয়েন্স – ১ সাল – ১৯৯৭ বাবলি খালা – মুমু, তর মায় বেশি আদর করে না বাহে (বাবা) ? মুমু – আব্বু । আব্বু । আব্বু আমাদের সবাইকে বেশি আদর করে । আপার চেয়েও আমাকে বেশি আদর করে জানো ? বাবলি খালা – এহ ! তর যে বাপ ! ...তর বাহের লাইগগা গরে কাজের মাইয়া রাহন যাইত নি ? ...মাইনসের এদ্দুরা (ছোট) ঝি আইন্না দি কামের লাইগগা হে ফোয়াতি (পোয়াতি) কইরা বারিত ফাডায় দেয়... । আফার জীবনডা স্যাস কইরা লাইছে তর বাহে ।

হেরে আমরা গনায় ধিরিনি ? বজ্জাত ব্যাডা কোনহানকার ... মুমু খেলা ফেলে উঠে যায় । সে বোঝে না পোয়াতি কি ? বাবাকে খালা কেন বকছে ! মুমু বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় ...তার খুব কষ্ট হচ্ছে ... বাবাকে বকবে কেন ? বাবা ভালো । বাবলি খালা মটেও ভালো না ... সিকোয়েন্স – ২ সাল – ২০১২ মুমু ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে ফেরে । ব্যাগটা বিছানায় ফেলে ফরিদাকে ডাকে । মুমু – ফরিদা ... চা দাও তো কিছুক্ষন কেটে যায় ।

ফরিদা আসে না । মুমু – ফরিদা কই তুমি ? কি ব্যাপার ? রান্নাঘর থেকে কান্নার ফোঁপানো আওয়াজ আসে । মুমু উঠে যায় । মুমু – কি ব্যাপার ফরিদা কাঁদছ কেন ? এই ফরিদা ? কি হয়েছে বলো আমাকে । বাসায় একা থাক দেখে মন খারাপ লাগে ? বোলো কি হয়েছে ... ফরিদা –আন্টি , আমি এনো কাম করতাম না ।

এনো কাম করলে আমার মান থাকতো না । আমি বাইত যামু আন্টি । মুমুর চোয়াল শক্ত হয়ে যায় । মুমু – বাবা কিছু করেছে ফরিদা ? কি হয়েছে বলো... ফরিদা মুখ তোলে অবাক হয়ে । কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে... ফরিদা – আফনেরা বাসায় থাহেন না ।

নানায় একলা হারা দিন আমারে জালাইত । আমি ডরে রান্নাঘরে জরজা লাগায় কাম করতাম । শরমে আফনেরে ,নানীরে কইতারি না । মুমুর মাথাটা টলে ওঠে । তবু স্থির দাঁড়িয়ে থেকে বলে মুমু – আগে বল নি কেন ? আজ কি হয়েছে ? ফরিদা – আন্টি... আজকা... আজকা নানায় ... আমি কইতে পারুম না... মুমু – ফরিদা বলো ... ফরিদা –আমি... আমি না ফাইরা আজকা বডি লইছি আন্টি ।

নাইলে আজকা আমার মান ইজ্জত যাইত আন্টি... । আফনেরে আজকা কই... বরো আফার ভাষের (ভাসুরের) মাইয়ারে , আফনের যেই খালত বইন মেটটিক ফরিক্ষা দিয়া আইছে হেরে , আফনের ছোডো খালার ফিচ্চি মাইয়া রাইসা হেরে এরুম জালাইত । আমি সব সময় নানারে বাসায় চোখে চোখে রাখছি । নাইলে হেগো লগে নানায় এডি করার চেসটা করছে । আফনেরা কেউ দিনে থাহেন না বাসাত ।

নানায় বাসায় মাইয়া ফাইলেই এরুম করে । তাও বরো মাইয়াডির লগে না । আমরার মত ছোডো মাইয়াডির লগে নানায় এরুম করে । আমি সুরুথিকাই দিকছি হের নজর বালা না । আমি ডরে আফনেগো কই না ।

আমরার গরীবের ঝিয়ের কফালডাই খারাপ । জেনো যাই হেনই এরুম ... । মুমু দাঁড়িয়ে থাকে । নির্বাক । তার মন চায় ফরিদার পা ধরে ক্ষমা চাইতে ।

ইচ্ছে করে ফরিদাকে চিৎকার করে বলতে – “ফরিদা কপাল তোর খারাপ না রে ফরিদা । কপাল খারাপ আমাদের । অমন পিতার সন্তান হয়ে আমরা যারা জন্মেছি তাদের কপাল খারাপ । আমার মায়ের কপাল খারাপ । স্বামীকে জীবন ভর ক্ষমা করে এসেছেন শুধু সংসারটা বাঁচানোর জন্য, আমাদের জন্য ।

আমরাও বেঁচে আছি মায়ের জন্য ,নয়তো এতদিনে আত্মহত্যা করতাম । বাবার নামে নোংরা বিচার গুলো শুনতে শুনতে আমরা বড় হয়েছি । আমরা তোদের সামনে বারবার ধুলোয় মিশে গেছি অপমানে ,লজ্জায় । এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো রে ফরিদা...। বাবাকে ‘বাবা’ ডাকতে আমাদের ঘেন্না করে ।

সন্তান হয়ে বাবার কুকর্মের বিচার শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত রে ফরিদা... আমাদের ক্ষমা করে দিস। যদি পারিস ... ’’ --------------------------------------------------------- মুমুদের জীবনের সিকোয়েন্স গুলো লিখে শেষ করবার মত নয় । এত কিছুর পরেও মুমুরা বেঁচে থাকে , মুমুর মায়েরা বেঁচে থাকে জীবন্ত লাশের মত । আর মুমুর বাবারাও বেঁচে থাকে শকুনের দৃষ্টি নিয়ে ...শিকারের আশায় । জীবনে কাছের মানুষদের ভালবাসার চেয়ে ‘শিকার’ এর মূল্য যে মুমুর বাবাদের কাছে অনেক বেশি ! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.