আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকারের উচিত দেশী-বিদেশী অপশক্তির চাপে পিছপা না হয়ে যালিম যুদ্ধাপরাধী ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের বিচার করে ইনছাফ কায়িম করা এবং জনগণকে দেয়া ওয়াদা পালন করা।



মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন- কোন প্রাণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করো না। শরীয়তের দৃষ্টিতে স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীরা যালিম ও দোষী আর সংবিধান মতে রাষ্ট্রদ্রোহী। তাই শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের সরকারের জন্য ফরয ওয়াজিব হচ্ছে দেশী-বিদেশী অপশক্তির চাপে নতি স্বীকার না করে যালিম যুদ্ধাপরাধী ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের বিচার করে ইনছাফ কায়িম করা ইসলামের দৃষ্টিতে ’৭১-এর রাজাকার, আল বাদর, জামাতী, ওহাবী, খারিজীরা অত্যন্ত ঘৃণিত অপরাধী। আর সে অপরাধের বিচার না করাও ইনছাফের খিলাফ। তাই দেশী-বিদেশী যত চাপই আসুক না কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা থেকে পিছপা হওয়া যাবেনা।

সূরা মায়িদা-এর ৪৫ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আমি এ কিতাবে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমসমূহের বিনিময় সমান জখম। অতঃপর যে ক্ষতিগ্রস্তদের বিনিময় প্রদান করে সে গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ পাক যা অবতীর্ণ করেছেন, তদানুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই জালিম। ” ১৯৮১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণায় বলা হয়েছে, মানব ইতিহাসে যত গণহত্যা হয়েছে তার মধ্যে স্বল্পতম সময়ে সব থেকে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যায়। দৈনিক গড়ে ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার মানুষকে তখন হত্যা করা হয়।

আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ ফরমান, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কিসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।

হে জ্ঞানীগণ! কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার। ” (সূরা বাক্বারা- ১৭৮,১৭৯) বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারের তথ্য প্রমাণাদি নেই যে তা নয়। যা আছে তা যথেষ্ট। এর থেকেও কম প্রমাণ নিয়ে আর্জেন্টিনায় নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। এর বাইরে সম্প্রতি চিলি, কম্বোডিয়া ও কসোভোর গণহত্যার বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ প্রমাণে বিভিন্ন দেশের গোপনীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোকেও পেশ করা যায়। ১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট এখনো বহাল আছে। একই সঙ্গে ১৯৭৩ সালের প্রশাসনিক নির্দেশে ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণাকে নতুন একটি প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে অকার্যকর করা যায়। সম্প্রতি জার্মান ও জাপানের যুদ্ধাপরাধীদের সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশেও এটি সম্ভব।

যারা বলছে এদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই তারা পক্ষান্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকেই অস্বীকার করছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তারা অভিযুক্ত। কাজেই রাষ্ট্রদোহী হিসেবেও তারা বিচারের উপযুক্ত। সূরা নিসা-এর ২৯ ও ৩০ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ।

আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে খুব শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এটা আল্লাহ পাক, উনার পক্ষে খুবই সহজসাধ্য। ” বিদায় হজ্জের খুৎবায়, আল্লাহ পাক, উনার হাবীব নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরাফার ময়দানে ‘পবিত্র খুৎবা শরীফ’-এ বলেন, “আজকের এ দিন যেমন পবিত্র তেমনি প্রতিটি মুসলমানের জান-মালও পবিত্র।

এমনকি তিনি মুসলমানের জান-মাল রক্ষার জন্য জিহাদের অনুমতিও দেন। ” রাজাকার, আল বাদররা যে নরহত্যা, সম্ভ্রমহরণ ও লুণ্ঠন করেছে তাতে তারা লাখ-লাখ বান্দার হক্ব নষ্ট করেছে, অর্থাৎ হক্কুল ইবাদ নষ্ট করেছে। আর আমভাবে হক্কুল ইবাদের গুনাহ আল্লাহ পাক ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত বান্দা তা ক্ষমা না করে। নরহত্যার বদলা সম্পর্কে কুরআন শরীফ-এ এত আয়াত শরীফ ও কঠোর নির্দেশ থাকার পরও আজও যারা যুদ্ধাপরাধী জামাতী, ওহাবী, খারিজীদের বিচার করছে না তারাও শরীয়তের দৃষ্টিতে ইনছাফ ক্বায়িমকারী নয়। মূল কথা হলো- শরীয়তের দৃষ্টিতে স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীরা যালিম ও দোষী আর সংবিধান মতে রাষ্ট্রদ্রোহী।

তাই শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের সরকারের জন্য ফরয ওয়াজিব হচ্ছে দেশী-বিদেশী অপশক্তির চাপে পিছপা না হয়ে যালিম যুদ্ধাপরাধী ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের বিচার করে ইনছাফ কায়িম করা এবং জনগণকে দেয়া ওয়াদা পালন করা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.